চুক্তি না হলেও রাশিয়াকে অনেক কিছু দেবেন ট্রাম্প
Published: 25th, March 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ইউক্রেনে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ‘মৃত্যুর মিছিল’ থামানোর দিকে নজর দিচ্ছেন। তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য ট্রাম্পের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি আলোচনা এর চেয়েও বেশি কিছু। রাশিয়া ও মার্কিন কর্মকর্তারা আরও গভীরভাবে আলোচনা করতে গতকাল সোমবার সৌদি আরবে বৈঠক করেন। তারা সাময়িক যুদ্ধবিরতির নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন। সেখানে জ্বালানি স্থাপনায় হামলা বন্ধ ও কৃষ্ণসাগরে জাহাজ চলাচলে বাধা না দেওয়ার প্রসঙ্গ ছিল।
গতকাল সোমবার দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। এরই মধ্যে ইউক্রেন জানিয়েছে, তারা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তুত। আর পুতিন বলেছেন, তিনি প্রথমে বেশ কিছু ছাড়ের বিষয়ে নিশ্চিত হতে চান। কার্যত ক্রেমলিন ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি চুক্তির কথা বলে ট্রাম্পের কাছ থেকে যতটা সম্ভব সুবিধা নিতে চায়। মস্কো মনে করে ওয়াশিংটনের সঙ্গে অপেক্ষাকৃত ভালো সম্পর্ক অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক আশীর্বাদ। এটা এমন একটা বিষয়, যা ইউক্রেনে রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের অব্যাহত আঘাত সত্ত্বেও তারা হয়তো অর্জন করতে যাচ্ছে।
নয়াদিল্লিতে নিরাপত্তা সম্মেলনে রাশিয়ার একজন জ্যেষ্ঠ পররাষ্ট্রবিষয়ক কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার সূত্রে জানা যায়, ক্রেমলিন মনে করে ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা ও যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার মধ্যে সংলাপ দুটি ভিন্ন ধারায় এগোচ্ছে। পুতিন অব্যাহতভাবে ইউক্রেনে দীর্ঘস্থায়ী বিজয় চান। তবে তিনি যুদ্ধবিরতিকে কেন্দ্র করে ওয়াশিংটনের কাছ থেকে কিছু সুবিধা অর্জনেরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। রুশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের পররাষ্ট্র সম্পর্কবিষয়ক কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান
ভিয়াচেস্লাভ নিকোনোভ বলেন, ট্রাম্প ও পুতিন ‘দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট’ বিষয় নিয়ে কথা বলছেন, যা ইউক্রেনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়।
হোয়াইট হাউস সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, তাদের লক্ষ্য কৃষ্ণসাগর নিয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো, যেন জাহাজ চলাচল স্বাভাবিক থাকে। অবশ্য ওই এলাকাটি কয়েক মাস ধরে যুদ্ধের কেন্দ্রস্থলে নেই। ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, এটি মূলত নৌচলাচলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য।
সৌদি আরবের রিয়াদে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার প্রতিনিধিদের মধ্যে যে যুদ্ধবিরতির আলোচনা হয়েছে, তাতে মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ পরিচালক এন্ড্রু পিক ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মাইকেল অ্যান্টন। রাশিয়ার পক্ষে ছিলেন সাবেক কূটনীতিক গ্রিগরি কারাসিন। বর্তমানে তিনি রাশিয়ার উচ্চকক্ষে পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
রুশ বার্তা সংস্থা ইন্টারফেক্সকে কারাসিন জানান, রিয়াদে তিন ঘণ্টার আলোচনা ‘গঠনমূলক’ হয়েছে। দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে যেসব বিষয় বিরক্তির কারণ হিসেবে রয়েছে, সেগুলো আলোচনায় উঠে এসেছে। ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি চাওয়া ট্রাম্প রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যেভাবে আলোচনা এগোচ্ছে, তা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
তবে ইউক্রেন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার আলোচনা এগোলেও আস্থা রাখতে পারছে না ইউরোপ। তারা রাশিয়ার সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন এবং বলছেন, মূল দাবি থেকে হয়তো পুতিন সরে আসবেন না। ২০২২ সালের ২৪ ফ্রেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পর থেকে রাশিয়ার দাবি, কিয়েভ যেন ন্যাটো থেকে দূরে থাকে। এ প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি পুতিন বলেন, তিনি শান্তি আলোচনায় প্রস্তুত। তবে ইউক্রেনকে আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাটোভুক্ত হওয়ার উচ্চাশা ছাড়তে হবে। সেই সঙ্গে ইউক্রেনের যেসব অঞ্চল রুশ বাহিনী দখলে নিয়েছে, সেগুলোর দাবিও ছাড়তে হবে।
শান্তি আলোচনার মধ্যেই সম্প্রতি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা বেড়েছে। এসব হামলায় প্রায়ই লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে জ্বালানি স্থাপনা। এগুলোতে হামলা বন্ধের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পরর ষ ট র ইউক র ন ব ষয়ক ক
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।