বিশ্বকাপ বাছাইয়ে আর্জেন্টিনা ম্যাচের আগে কোনোপ্রকার রাখঢাক না রেখেই ব্রাজিলিয়ান তারকা ফুটবলার রাফিনিয়া রোমারিওর সঙ্গে ‘রোমারিও টিভি’ পডকাস্টে বলেছিলেন, ‘আমরা ওদের (আর্জেন্টিনা) গুঁড়িয়ে দেব। কোনো সন্দেহ নেই। একদম গুঁড়িয়ে দেব মাঠের ভেতরে, দরকার পড়লে মাঠের বাইরেও।’

রাফিনিয়ার ওই মন্তব্য যে আর্জেন্টিনা ভক্তদের গায়ে জ্বালা ধরিয়ে ছিল তা অনুমেয়। তবে খেলার মাঠে রাফিনিয়ার কথার জবাব যেন ফুটবলে দেখালেন লিওনেল স্কালোনির আর্জেন্টিনা। ভক্তদের মনকে গোলবৃষ্টিতে সিক্ত করলেন আলভারেজ সিমিওনেরা।

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে সুপার ক্লাসিকোতে জেতার জন্য মাঠে নামলেও খেলার শুরুতেই সে স্বপ্ন ভেস্তে যায় ব্রাজিলের। প্রথমার্ধেই তিন গোল হজম করে খেলার ফলাফল যেন নির্ধারণই করে দেয় দরিভাল জুনিয়রের দল। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ব্রাজিলের অসহায় আত্মসমর্পণ দেখতে হয়েছে ভক্তদের।

বুয়েন্স‌ আইরেসের মনুমেন্তালে বাংলাদেশ সময় বুধবার সকালের ম্যাচে ৪-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে লিওনেল স্কালোনির দল।

খেলা শুরুর চতুর্থ মিনিটে প্রথম সুযোগ পেয়েই ব্রাজিলের ওপর আঘাত হানে আর্জেন্টিনা। দুই ডিফেন্ডার গিয়ের্মে আরানা ও মুরিলোর মাঝে বল পেয়ে গোল করেন আলভারেজ। ম্যাচের ২০ মিনিট পেরোনোর আগেই সেলেসাওদের বিপক্ষে জোড়া গোলের লিড নেয় আর্জেন্টিনা।

হুলিয়ান আলভারেজ আর এনজো ফার্নান্দেজের কৃতিত্বে খেলা শুরুর আগেই মনোবল ভাঙে ব্রাজিলের ডিফেন্সে। ব্রাজিলের হয়ে কুনহা এক গোল শোধ করলেও ম্যাক অ্যালিস্টার ৩৮ মিনিটে ফের লিড দ্বিগুণ করেন। আর পুরো ৪৫ মিনিট শেষে স্কোরলাইন ৩-১। এই গোলের পরেই তর্কযুদ্ধে জড়ান দুই দলের ফুটবলাররা। এজন্য দেখতে হয়েছে হলুদ কার্ডও।

ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে ৭১তম মিনিটে আর্জেন্টিনার হয়ে চতুর্থ গোলটি করেন আলমাদার বলদি হিসেবে নামা গুইলিয়ানো সিমিওনে। নিজেদের স্কোর বাড়িয়ে ব্রাজিলের বিপক্ষে ৪র্থ‌ গোলের লিড নিয়ে আসেন তিনি। ম্যাচের ৭১ মিনিটে ব্রাজিলের রক্ষণভাগ ভেদ করে এগিয়ে যান তিনি। অবশ্য তার ক্ষিপ্রতার কাছে একপ্রকার পরাস্তই হতে হয়েছে ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক বেনতো ম্যাথিউসকে। আর্জেন্টিনার হয়ে সবশেষ গোলটি ব্রাজিলের জালে জড়ান সিমিওনে। আর তার গোলেই ৪-১ ব্যবধানে বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে মেসিবিহীন আর্জেন্টিনা।

যদিও প্রথমার্ধে এক গোল দিয়ে ম্যাচে ফেরার কিছুটা ইঙ্গিত দিয়েছিল ব্রাজিল। ৩০তম মিনিটে ব্রাজিলের হয়ে গোল করেন ম্যাথিয়াস কুনহা। তবে সে আশায় পানি ঢেলে দেন ম্যাক অ্যালিস্টার।

অবশ্য মনুমেন্তালে নামার আগেই সুখবর পেয়েছিল আর্জেন্টিনা দল। ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত করেছে দলটি। যা নিজেদের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ইতিহাসে দ্রুততম। যদিও ব্রাজিলের ম্যাচে ড্র করলেও তারা বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত করতে পারতো। তবে বলিভিয়া ও উরুগুয়ের মধ্যকার ম্যাচ গোলশূন্য ড্র হওয়ায় আগেভাগেই বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করেছে আর্জেন্টিনা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আর জ ন ট ন ব র জ ল ফ টবল আর জ ন ট ন র ব শ বক প

এছাড়াও পড়ুন:

দখলদারদের কাছে প্রশাসনের আত্মসমর্পণ

বরিশালের আগৈলঝাড়া ও গৌরনদী উপজেলার কয়েক হাজার কৃষকের জীবন-জীবিকার উৎস ঐতিহ্যবাহী টরকী–বাশাইল খালটি করুণ মৃত্যুর প্রহর গুনছে। নাব্যতাসংকট, নির্বিচার দখল, দূষণ ও কর্তৃপক্ষের লাগাতার অবহেলার শিকার হয়ে প্রায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই খালের এমন পরিণতি খুবই দুঃখজনক। এটি পরিবেশের ওপর কাঠামোগত আগ্রাসনের ধারাবাহিকতারই চিত্র।

খালটি যখন প্রবহমান ছিল, তখন তা ছিল দুই উপজেলার কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ। কিন্তু প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কৃষকদের এখন সেচের
জন্য ‘ডাবল লিফটিং’ (দুবার পানি উত্তোলন) করতে হচ্ছে। প্রথমে পাম্প দিয়ে কোনোমতে খালে পানি আনতে হয়। এরপর সেই পানি আবার পাম্প দিয়ে জমিতে দিতে হয়। এই প্রক্রিয়ায় কৃষকের সেচ খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০ শতক জমিতে যেখানে খরচ হতো ৭০০ টাকা, সেখানে এখন গুনতে হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা। লাভের মুখ দেখতে না পেয়ে অনেক কৃষক বোরো আবাদ ছেড়ে মাছের ঘের বা পানের বরজ তৈরি করতে বাধ্য হচ্ছেন, নয়তো আবাদি জমির পরিমাণ কমিয়ে দিচ্ছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে স্থানীয় খাদ্যনিরাপত্তা ও কৃষি অর্থনীতিতে মারাত্মক ধস নামতে বাধ্য।

এ বিপর্যয়ের মূল কারণটি অত্যন্ত স্পষ্ট—অবৈধ দখলদারত্ব ও প্রশাসনিক দুর্বলতা। খালের উৎসমুখ, অর্থাৎ টরকী বন্দরসংলগ্ন পালরদী নদীর মোহনা দখলদারেরা পুরোপুরি রুদ্ধ করে দিয়েছেন। প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে খাল ভরাট করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য পাকা ও আধা পাকা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। গৌরনদী ভূমি কার্যালয়ের পক্ষ থেকে ‘খালের জমি কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি’—এমনটা বলা হলেও দখলদারেরা কীভাবে খালের জায়গাকে ‘রেকর্ডীয় সম্পত্তি’ বা ‘ইজারা নেওয়া জমি’ দাবি করেন? এর মধ্য দিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রকাশ্যেই সরকারি সম্পত্তি দখল করে অবৈধভাবে ইমারত নির্মাণ করছেন।

এই দখলদারদের দাপট এতটাই বেশি যে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) গত বছর খাল খননের আবেদন পেয়েও কাজ শুরু করতে পারেনি। বিএডিসির উপসহকারী প্রকৌশলী সাহেদ আহমেদ চৌধুরী জানিয়েছেন, অবৈধ স্থাপনার কারণে খননযন্ত্র চালানো বা খনন করা মাটি রাখার মতো সামান্য জায়গাও সেখানে নেই। অর্থাৎ মুষ্টিমেয় অবৈধ দখলদার একটি সরকারি উন্নয়ন সংস্থাকে তার আইনি দায়িত্ব পালনে পঙ্গু করে রেখেছেন এবং স্থানীয় প্রশাসন এই দখলদারত্বের সামনে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ কেন এই অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না? কার ইশারায় এই দখলদারত্ব এত বছর ধরে চলতে দেওয়া হলো? টরকী–বাশাইল খালকে পুনরুদ্ধার করতে এখন কি কোনো আন্তরিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে, নাকি আমরা এ জলধারার উৎসের পুরোপুরি মৃত্যু নিশ্চিত হতে দেখব?

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দখলদারদের কাছে প্রশাসনের আত্মসমর্পণ