বাংলাদেশের আকাশে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। রাত পোহাইলে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদের খুশি ছড়িয়ে পড়েছে দেশে। অবশ্য তার মধ্যেই শেষ মুহূর্তে বাড়ি ফিরছে বহু মানুষ। ঢাকার সদরঘাটে দেখা গেছে ঘরমুখো মানুষের চাপ।

সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে রবিবার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন রুটে যাত্রীবোঝাই করে লঞ্চ ছাড়তে দেখা গেছে। 

এদিন সন্ধ্যায়  সদরঘাটে গিয়ে দেখা ঘুরমুখো মানুষের ভিড়; সেই চিরচেনা দৃশ্য। ঈদের আগের আগে পন্টুন থেকে ঘাটে ভেড়া লঞ্চ সর্বত্রই যাত্রী। 

আরো পড়ুন:

ঈদের চাঁদ উৎসব

রংপুরের প্রধান ঈদের জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় 

লঞ্চ টার্মিনালে দেখা গেল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন। ঈদদযাত্রার শুরু থেকে এবার সেখানে শৃঙ্খলাজনিত সমস্যার কথা শোনা যায়নি। 

ঘাটে ভেড়া প্রতিটি লঞ্চের প্রবেশমুখে দেখা গেছে চার-পাঁচজন করে আনসার সদস্যকে। তারা যাত্রীদের ওঠা নির্বিঘ্ন করতে কাজ করছেন, সেই সঙ্গে হুড়োহুড়ি যাতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখছেন।

নৌ পথে ঈদযাত্রা নিয়ে সতর্ক বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সংস্থাটি জানিয়েছে, অতিরিক্ত ভাড়া কিংবা বাড়তি যাত্রী নিলেই লাইসেন্স বাতিল করার হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখা হয়েছে।

রবিবার সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ৪৮টি যাত্রীবাহী লঞ্চ সদরঘাট টার্মিনাল ছেড়ে গেছে। দুপুরের মধ্যে বেশকিছু লঞ্চ যাত্রী নিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছেও গেছে।

পন্টুনে নোঙর করা লঞ্চগুলোর সামনে কর্মচারীরা যাত্রীদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন সুবিধার কথা ঘোষণা করছেন। দেখা গেল, লঞ্চের ডেকে যাত্রীরা বসে আছেন। আগেই বুকিং করা কেবিনগুলোতে যাত্রীরা উঠে বসেছেন। নির্দিষ্ট সময়েই লঞ্চগুলো ছেড়ে যেতে দেখা গেল।

পারাবত-৭ লঞ্চের  সামনে কথা হয় ওবায়দুল হক নামে এক যাত্রীর সঙ্গে। তিনি বলেন, “লঞ্চে বাড়ি যাচ্ছি বৃদ্ধ মা-বাবাকে নিয়ে। গ্রামের বাড়িতে ঈদ করব।  আমাদের কেবিন বুকিং করা ছিল। বাবা-মাকে নিয়ে প্রতিবছরই লঞ্চে বরিশালে গ্রামের বাড়িতে যাই। রাত ৯টায় ছেড়ে ভোর ৫টায় পৌছে দেয়। কোন কষ্ট নাই। ক্লান্তিহীন যাত্রা তাই নদী পথে বাড়ি যাচ্ছি।”

রবিবার সন্ধ্যার আগে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের অবস্থা। ছবি: রাইজিংবিডি

পটুয়াখালীগামী এমভি সুন্দরবন-৯ লঞ্চে কথা হয় হাসান মাহমুদ রিপনের সঙ্গে। তিনি বলেন, “এই তো সেদিনের কথা। ঈদের সময় লঞ্চে জায়গা পাওয়া যেত না। অনেক সময় ছাদে ঝুঁকি নিয়ে যেতে হতো। আজ আগের মতো ভিড় না থাকলেও যাত্রীর চাপ আছে। লঞ্চ বলা হলেও এটা তিনতলা জাহাজ। হাজার হাজার লোক উঠলেও বোঝা যায় না। ডেকে শুয়ে-বসে যাওয়া যায়। এ কারণে লঞ্চে আমি বাড়ি যাই।”

এমভি পারাবাত-৭ লঞ্চের সুপারভাইজার মনির হোসেন বলেন, “আমাদের লঞ্চে ৯০টি কেবিন আছে। এরই মধ্যে সব বুকিং হয়ে গেছে। যাত্রীর চাপ ভালোই আছে।”

অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল সংস্থার সদস্য ও এমভি অভিযান লঞ্চের মালিক হামজা লাল শেখ বলেন, “আজ (সোমবার) যাত্রীর চাপ মোটামুটি। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে পর্যাপ্ত লঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।”

মের্সাস সুরভি শিপিং লাইনস কোম্পানির পরিচালক রেজিন উল কবির বলেন, “ঢাকা সদরঘাট থেকে বরিশাল রুটে  ২৬টি লঞ্চ তিন ভাগ করে ঈদে বিশেষ সার্ভিস পরিচালনা করছে। বরিশাল ও ঢাকার কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহের ব্যবস্থা রয়েছে।”

বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক মোবারক হোসেন বলেন, “নৌপথে চলাচলকারী যাত্রীদের সেবা ও নিরাপত্তার জন্য বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা–কর্মচারীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দিনরাত কাজ করছেন। নির্ধারিত সময়ে পন্টুন থেকে লঞ্চ ছাড়ছে। এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে।”

পদ্মা সেতু হওয়ার পরও দক্ষিণাঞ্চলের একাংশের মানুষ লঞ্চে যাতায়াত করে থাকে। তবে এখন আগের মতো তেমন ভিড় নেই। যাত্রী কম, লঞ্চও কম। তবে এখন যে পরিমাণ যাত্রী আছে, তাদের জন্য সুন্দর ব্যবস্থাপনা দেখা গেছে সদরঘাটে।
বিআইডব্লিটিসির তথ্য অনুযায়ী, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে ঈদযাত্রায় দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৩৫ শতাংশ নৌপথ ব্যবহার করলেও বর্তমানে সেটি ১৫ শতাংশে এসে ঠেকেছে। 

ঈদ বাদে ঢাকা থেকে আগে ৪৩টি রুটে ২২৫টির মতো লঞ্চ নিয়মিত চলাচল করত। তবে বর্তমানে দিনে ৬০ থেকে ৬৫টির মতো লঞ্চ সদরঘাটে ছেড়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যায়। অবশ্য এবার ঈদের পর্যাপ্তসংখ্যক লঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়। যে কারণে ঈদের আগের দিনও যাত্রীদের তরফে সে অর্থে কোনো অভিযোগ নেই।

বরিশালগামী এমভি সুন্দরবন-৯ লঞ্চের যাত্রী আফসানা মিম বলেন, “পদ্মা সেতু চালুর পরও আমাদের বরিশালের মানুষ ঈদে পরিবার-পরিজন নিয়ে  লঞ্চে যেতে পছন্দ করে। এই সময় বাসে ভাড়া বেশি থাকে। তাই বেশিরভাগ মানুষ স্বস্তির যাত্রার জন্য সড়ক ছেড়ে নৌপথ বেছে নেয়। আমি সবসময়ই লঞ্চে যাওয়া-আসা করি। লঞ্চের মতো শান্তির যাত্রা আমার কাছে আর কিছুতেই হয় না।”

ভোলাগামী এমভি কর্ণফুলী লঞ্চের যাত্রী তানজিল চৌধুরী বলেন, “আমাদের ভোলায় যাওয়ার জন্য একমাত্র পথ হল নৌপথ। লঞ্চগুলোও খুব আরামদায়ক। এবারের যাত্রাটা আমার কাছে অন্যবারের তুলনায় একটু ব্যতীক্রম মনে হলো। আগে এই শেষ সময়ে এসে বাড়িতে ফিরতে হলে আমাদের বাড়তি ভাড়া গুনতে হতো। কিন্তু এবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় লঞ্চ মালিকরা বেশি সুবিধা করতে পারছে না।”

“লঞ্চের ধারণ ক্ষমতার বেশি যাত্রীও তারা নিতে পারছে না। ফলে সাধারণ যাত্রীরা নির্বিঘ্নে, স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদযাত্রা করছে। এজন্য অবশ্য সরকার ধন্যবাদ পেতে পারে,” বলেন তানজিল চৌধুরী।

ঢাকা/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঈদ ব আইডব ল ঈদয ত র র সদস য সদরঘ ট র জন য আম দ র বর শ ল

এছাড়াও পড়ুন:

দৌলতদিয়ায় ফেরির ধাক্কায় ভেঙে গেছে পন্টুনের কবজা, যানবাহন পারাপার ব্যাহত

তীব্র স্রোতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেরির ধাক্কায় ভেঙে গেছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের ৩ নম্বর পন্টুনের কবজা। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে ঘাটটি। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

বর্তমানে দৌলতদিয়ায় শুধু ৪ নম্বর ঘাট চালু আছে। এতে যানবাহন পারাপারে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে এবং সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ যানজটের।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় ও ঘাট-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গতকাল বিকেল থেকে দৌলতদিয়া প্রান্তে পদ্মায় তীব্র স্রোত দেখা দেয়। সন্ধ্যার পর এর তীব্রতা আরও বাড়ে। রাত ১১টার দিকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া থেকে ছেড়ে আসা রো রো ফেরি শাহ পরান দৌলতদিয়ায় পৌঁছে নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারায় ফেরিটি প্রচণ্ড বেগে ৩ নম্বর ঘাটের পন্টুনে ধাক্কা দিলে কবজা ভেঙে যায়। এর পর থেকে ঘাটটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এর আগে ২৩ আগস্ট থেকে তীব্র স্রোতের কারণে দৌলতদিয়ার ৭ নম্বর ঘাটও বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে চারটি ঘাটের মধ্যে কেবল ৪ নম্বর ঘাট সচল রয়েছে। সেখানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাত্রীবাহী পরিবহন এবং জরুরি কিছু পণ্যবাহী গাড়ি পার করা হচ্ছে। তবে সাধারণ পণ্যবাহী গাড়ি পারাপার বন্ধ রাখা হয়েছে।

দৌলতদিয়া জিরো পয়েন্টে (৩ নম্বর ঘাট) দায়িত্বরত বিআইডব্লিউটিসির নিরাপত্তা পরিদর্শক ইদ্রিস আলী ভূঁইয়া বলেন, গতকাল রাতে ফেরি শাহ পরান ঘাটে ভেড়ার সময় প্রচণ্ড ধাক্কায় পন্টুনের কবজা ভেঙে যায়। তখন থেকে ঘাটটি বন্ধ রাখা হয়।

এদিকে সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় কয়েক দিন ধরে সড়ক অবরোধ করা হচ্ছে। এতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা থেকে অনেক গাড়ি দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে পারাপার হচ্ছে। এ কারণেও দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় গাড়ির চাপ পড়ছে। আজ মঙ্গলবার সকালে দৌলতদিয়া প্রান্তে প্রায় দুই কিলোমিটার লম্বা গাড়ির লাইন তৈরি হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির লাইন আরও লম্বা হচ্ছে। দীর্ঘ সময় আটকে থাকায় চালকসহ যাত্রীদের বাড়তি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

সৌহার্দ্য পরিবহনের ঘাট তত্ত্বাবধায়ক মনির হোসেন বলেন, ‘শুধু একটি ঘাট চালু থাকায় যানবাহন স্বাভাবিকভাবে পার হতে পারছে না। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা ঢাকামুখী গাড়ি আটকে দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়েছে। আমাদের চারটি যাত্রীবাহী বাস চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আটকে আছে। বাসগুলো ফেরিতে উঠতে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার মতো সময় লাগছে।’

বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, তীব্র স্রোতের কারণে ফেরি পারাপারে অনেক বেশি সময় লাগছে। গতকাল রাত পৌনে ১২টার দিকে ৩ নম্বর ঘাটের পন্টুন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখন শুধু ৪ নম্বর ঘাট চালু রয়েছে। যাত্রীবাহী বাস ও কিছু জরুরি গাড়ি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার করা হচ্ছে। সাধারণ পণ্যবাহী গাড়ি আপাতত পার করা যাচ্ছে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চার মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ১৭ জনকে বেলার চিঠি, বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধের অনুরোধ
  • ভাঙ্গায় আন্দোলন: দৌলতদিয়ায় যানবাহনের দীর্ঘ সারি
  • দৌলতদিয়ায় ফেরির ধাক্কায় ভেঙে গেছে পন্টুনের কবজা, যানবাহন পারাপার ব্যাহত