মজলুম মুসলিমদের জন্য দোয়া চাইলেন সারজিস আলম
Published: 31st, March 2025 GMT
পঞ্চগড়ে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। মুসল্লিদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে সারা বিশ্বের মজলুম মুসলমানদের জন্য দোয়া চেয়েছেন তিনি।
সোমবার (৩১ মার্চ) পঞ্চগড় কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামাতে অংশ নেন সারজিস আলম। নামাজ আদায় শেষে তিনি মুসল্লিদের উদ্দেশে বলেন, “ফ্যাসিস্টমুক্ত নতুন বাংলাদেশে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।”
পরে সারজিস আলম সাংবাদিকদের বলেন, “পৃথিবীতে অনেক মজলুম মুসলিম ভাই-বোন আছেন। তারা আমাদের মতো করে ঈদ করতে পারছেন না। ভারতে উগ্র সাম্প্রদায়িক কিছু হিন্দুত্ববাদি গোষ্ঠী আছে, তাদের কাছে আমাদের মুসলিম ভাইরা মজলুম। ফিলিস্তিনসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে মুসলিম ভাইয়েরা মজলুম হিসেবে আছেন। আমাদের দেশে মিয়ানমারের অনেক মুসলিম মজলুম ভাইয়েরা রয়েছেন। আমরা পৃথিবীর সকল মুসলিম ভাইয়ের জন্য দোয়া করব। পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য দোয়া করব। যেন আমরা একসাথে আমাদের মনের সংকীর্ণতা আমাদের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে দেশের জন্য মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারি। এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে যেন এমন কিছু করে যেতে পারি, যাতে ইহকাল-পরকালে শান্তি পাই।”
তিনি বলেন, “রমজানের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো—তাকওয়া অর্জন করা, সকল নেতিবাচক কাজ থেকে দূরে থাকা। আল্লাহর প্রতি যেমন বান্দার হক আছে, তেমনই বান্দার প্রতি আল্লাহর হক আছে। এই হক যেন আমরা আমাদের জায়গা থেকে আদায় করতে পারি।”
ঈদের নামাজ আদায় করতে আটোয়ারী উপজেলা থেকে পঞ্চগড় জেলা শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে আসেন সারজিস আলম। নামাজ শেষে মুসল্লিদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় ও কোলাকুলি করেন তিনি।
ঢাকা/নাঈম/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য দ য় আম দ র মজল ম
এছাড়াও পড়ুন:
শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই
বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।
একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।
আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।
ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।
ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।
পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল