ঢেকে রাখা সেই মুক্তিযুদ্ধের ম্যুরালের শেখ মুজিবের স্মৃতিচিহ্ন ভেঙে ফেলা হলো
Published: 1st, April 2025 GMT
লালমনিরহাট শহরের শিশুপার্ক সংলগ্ন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিমঞ্চে স্থাপিত ম্যুরালের কিছু অংশ ভেঙে ফেলেছে জেলা প্রশাসন। ২৬ মার্চ জেলা প্রশাসন ওই ম্যুরালটি কাপড় দিয়ে ঢেকে অনুষ্ঠান পরিচালনা করে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি ও গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কাপড় দিয়ে ম্যুরাল ঢেকে দেওয়ার ঘটনায় মুখোমুখি অবস্থান নেয় জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম পার না হতেই রোববার জেলা প্রশাসন মুক্তিযুদ্বের স্মৃতিচিহ্ন ম্যুরাল ভাঙার কাজে হাত দেয়।
এর আগে শনিবার দুপুুরে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি মঞ্চে দু’টি পক্ষ একই সময়ে সংবাদ সম্মেলনের ডাক দিলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দুপুর সাড়ে ১১টায় ওই এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করলেও জাতীয় নাগরিক পার্টি করতে পারেননি।
মুক্তিযুদ্ব স্মৃতি মঞ্চে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লালমনিরহাট শাখার প্রধান সমন্বয়ক হামিদুর রহমান ম্যুরাল অপসারণ ও শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরাতে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন। এ সময় তিনি দাবি করে বলেন, ‘এই ম্যুরালটি স্বাধীন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস বহন করে না। বাকশাল প্রতিষ্ঠাকারী স্বৈরাচার শেখ মুজিবুর রহমানকে অতিরঞ্জিত উপস্থাপন ও ইতিহাস বিকৃতি করায় এর আগেও ১৬ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসন ম্যুরালটি ঢেকে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছিল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫২, ৭১ এর সকল সত্য ইতিহাস অক্ষুণ্ণ রেখে অতিরঞ্জিত অংশ ও স্বৈরাচারের চিহ্ন ঢেকে দেওয়ার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট তা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পুরো দেয়াল ঢেকে দেয়, যা অনাকাঙ্খিত। কিছু স্বৈরাচারের দোসর তাদের ব্যক্তিগত আক্রোশ, স্বার্থ উদ্ধার ও বর্তমান সরকারের কার্যক্রমকে বিতর্কিত করতে জেলা প্রশাসনের কার্যক্রমকে ভুলভাবে প্রচার করতে থাকে এবং বিদ্বেষবশত মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। ম্যুরাল ঢেকে দেওয়ার বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অবগত ছিল না, তাঁরা এমন কোনো দাবিও করে নাই। স্বৈরাচারের সকল চিহ্ন ও ম্যুরাল অপসারণ ছাত্রজনতার দাবি ও গণআকাঙ্খা।’
সংবাদ সম্মেলন শেষে জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের মুক্তিযোদ্ধারা স্মৃতিসৌধ এলাকায় যান। সেখানে জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি হাফিজুর রহমান হাফিজ জানান, ম্যুরালের মধ্যেই বৈষম্য রয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমানে যেমন অবদান রয়েছে তেমনি স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানেরও অবদান রয়েছে। অথচ ম্যুরালে জিয়াউর রহমানের কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই। এটা বৈষম্য। এই ম্যুরাল রাখা ঠিক নয়।
শনিবার জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) রাসেল আহমেদ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে গেলে তোপের মুখে পড়েন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা তাঁকে ঘিরে ধরেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এই ম্যুরালে ৫২ ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার গঠন, চরমপত্র পাঠ, ৭১ এর গণহত্যা, বিজয় উল্লাসে মুক্তিযোদ্ধা, সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ ও পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্মৃতিচিহ্ন ঢেকে দিয়ে চরম ধৃষ্ঠতা দেখিয়েছেন জেলা প্রশাসন। পরে তাঁরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওপর দায় চাপিয়েছেন। ৭১ ও ২৪কে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে জাতিকে বিভাজিত করে আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নের ষড়যন্ত্র চলছে। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ৭১ এর অস্তিত্ব ধরে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বাদ দিয়ে অন্যগুলোর সঙ্গে আমাদের কোনো মতানৈক্য নেই।
২৬ মার্চ বুধবার সকালে সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্বাঞ্জলি দিতে গেলে কাপড় দিয়ে মুরাল ঢেকে রাখার বিষয়টি চোখে পড়ে। সনাক সদস্যরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ফিরে যান। পরে লালমনিরহাট রেলওয়ে শহীদ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্বাঞ্জলি দেন তাঁরা। গত ১৬ ডিসেম্বরও একই রকম ঘটনা ঘটায় জেলা প্রশাসন। ১৪০ ফুট দীর্ঘ ওই ম্যুরালে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ, মুজিবনগর সরকার গঠন, চরমপত্র পাঠ, উদিত সূর্য, ৭১ এর গণহত্যা, মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানি, সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ ও পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দারের বক্তব্য জানতে তাঁর ফোনে মেসেজ এবং ফোন দিলে কোনো সাড়া মেলেনি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ খ ম জ ব র রহম ন র রহম ন র
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনায় ‘সেরা সাঁতারুর খোঁজে বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতা শুরু
তৃণমূল থেকে প্রতিভা তুলে আনার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে খুলনায় শিশুদের নিয়ে শুরু হয়েছে ‘সেরা সাঁতারুর খোঁজে বাংলাদেশ- ২০২৫’ প্রতিযোগিতা।
সোমবার (১৬ জুন) সকাল থেকে দিনব্যাপী নগরীর সোনাডাঙ্গাস্থ বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের রেজাউল সুইমিং একাডেমিতে এ প্রতিযোগিতা শুরু হয়।
নৌবাহিনীর সহযোগিতায় বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশন প্রতিযোগিতার আয়োজনে করে। বয়স ভিত্তিক এ প্রতিযোগিতায় খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলা থেকে শিশু-কিশোররা অংশ নিচ্ছে।
আরো পড়ুন:
ফুলকুমার নদে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু
টাঙ্গাইলে পুকুরে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু
সরেজমিনে ভেন্যুতে গিয়ে দেখা যায়, খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকা থেকে সন্তানদের নিয়ে সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য অভিভাবকরা এসেছেন। প্রতিযোগিতা শুরুর আগে নৌবাহিনী সদস্যরা প্রতিযোগীদের বুক ও হাতের মাপসহ রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করছেন।
অভিভাবকরাও সন্তানদের প্রতিযোগিতায় সেরা হওয়ার প্রত্যাশায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। ক্ষুদে সাঁতারুরাও তাদের সেরাটা প্রদর্শনের জন্য অপেক্ষা করছেন। সব মিলিয়ে খুলনার এ আয়োজন শিশু সাঁতারুদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
খুলনা ভেন্যু প্রতিনিধি ও সুইমিং ফেডারেশনের সাবেক সদস্য জি এম রেজাউল ইসলাম বলেন, “তৃণমূল থেকে প্রতিভা তুলে এনে তাদের লম্বা ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে সেরা সাঁতারু খুঁজে বের করার যে পরিকল্পনা বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশন নিয়েছিল, তারই অংশ হিসেবে খুলনায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘সেরা সাঁতারুর খোঁজে বাংলাদেশ-২০২৫’ প্রতিযোগিতা। এখানে অংশ নিয়েছে খুলনা বিভাগের খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার শিশু-কিশোররা।”
তিনি আরো বলেন, “বয়সভিত্তিক ‘ক’ গ্রুপে ৯-১১ বছর বয়সী এবং ১২-১৫ বছর বয়সী সাঁতারুরা অংশ নিয়েছে ‘খ’ গ্রুপে।”
“তিন ধাপে বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। চূড়ান্ত পর্যায়ের বাছাইকৃত সাঁতারুদের দুই বছরের জন্য দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আশা করি, এই ট্যালেন্ট হান্টের মাধ্যমে খুলনাসহ সারা দেশে সাঁতারুদের যে ক্রাইসিস চলছে, তা থেকে আমরা বের হয়ে আসতে পারব”, যোগ করেন তিনি।
এর আগে ‘সেরা সাঁতারুর খোঁজে বাংলাদেশ ২০২৫’ প্রতিযোগিতার বিষয় নিয়ে রবিবার (১৫ জুন) সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে প্রতিযোগিতার বিস্তারিত তুলে ধরেন খুলনা ভেন্যু প্রতিনিধি, সুইমিং ফেডারেশনের সাবেবক সদস্য ও রেজাউল সুইমিং একাডেমির পরিচালক জি এম রেজাউল ইসলাম।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন- সেরা সাঁতারুর খোঁজে বাংলাদেশের খুলনা ভেন্যুর নির্বাচন কমিটি ও সুইমিং ফেডারেশনের সদস্য মাহাবুবুর রহমান, মো. সোলাইমান, এম এইচ ঢালী, নাজিমুদ্দিন জুলিয়াস, জ্যোতিন্দ্রনাথ বিশ্বাস, মো. আলাউদ্দিন, শাহাজাহান রনি, মাহফুজুর রহমান শিলা ও জুয়েল আহম্মেদ প্রমুখ।
ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ