বাংলাদেশের সম্মানসূচক নাগরিকত্ব পেলেন কিহাক সাং
Published: 9th, April 2025 GMT
বাংলাদেশের শিল্প খাতের বিকাশ ও বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান এবং বৈদেশিক আয়ে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (কেইপিজেডে) পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাংকে বাংলাদেশের সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৯ এপ্রিল) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনের’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তার হাতে এ স্বীকৃতি তুলে দেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) ও বস্ত্র খাতে অসামান্য অবদান রাখছেন কিহাক সাং। তিনি ১৯৯০-এর দশকে বাংলাদেশে আসার পর থেকে এ শিল্প খাতে সহায়তা করে আসছেন। বিদেশি বিনিয়োগকারী হিসেবে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্য তিনি পেলেন ‘সম্মানিত নাগরিক’ মর্যাদা।
কিহাক সাংয়ের হাতে বাংলাদেশি নাগরিকত্বের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট তুলে দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়ে কিহাক সাং তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘সম্মানসূচক নাগরিকত্ব পেয়ে আমি সত্যিই গর্বিত।’
কিহাক সাং বাংলাদেশে সর্বোচ্চ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অন্যতম। ১৯৮০ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। কিহাক সাং বাংলাদেশের শিল্পের সঙ্গে যে যাত্রা শুরু করেছিলেন, এখন তা এক শিল্পসামাজ্যে রূপ নিয়েছে। শুধু তাই নয়, আশির দশকে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে তিনি ছিলেন প্রধম বিদেশি বিনিয়োগকারী।
ইয়াংওয়ান ১৯৮০ সালের মে মাসে টেক্সটাইল ও অ্যাপারেল রপ্তানি খাতে প্রথম বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং এই শিল্পে নারীদের কর্মসংস্থানের পথিকৃৎ হিসেবে পরিচিত।
অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড.
যা জানালেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব
কেন এবং কীভাবে কিহাক সাংকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেওয়ার ধারণাটা এলো, তা নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, কিহাক সাংকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেওয়ার ধারণাটি প্রথম আলোচনা হয়েছিল চীনের হাইনানে, মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে। তখন বিওএও ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে অধ্যাপক ইউনূস। সেখানে এক বৈঠকে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন প্রধান উপদেষ্টাকে জিজ্ঞাসা করেন, কিহাক সাং, যার হৃদয়ে বাংলাদেশ এবং যিনি কোরিয়ান ব্যবসায়ীদের মধ্যে বাংলাদেশকে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত করেছিলেন, তাকে সম্মানিত করার কোনো পরিকল্পনা বাংলাদেশের আছে কি না?
এরপরই ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাংকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে উপস্থিত কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন ড. ইউনূস। বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেয়ে আজ বিনিয়োগ সম্মেলনে কিহাক সাং বলেন, “আমি সম্মানসূচক নাগরিকত্ব পেয়ে সত্যিই সম্মানিত বোধ করছি।”
তিনি লিখেছেন, “আজ আমরা একজন আবেগাপ্লুত সাংকে দেখেছি, যিনি তার হৃদয়ের কথা বলছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, বাংলাদেশের নাগরিকত্ব একদিন না একদিন পাবেনই। তিনি পেয়েছেন এবং সেটি এসেছে তার প্রত্যাশার পাঁচ বছর আগেই।”
“সম্মানসূচক নাগরিকত্ব পাওয়ার মাধ্যমে কিহাক সাং মর্যাদাপূর্ণ এক গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হলেন। তিনি যাদের সঙ্গে আছেন, তারা হলেন—কাজী নজরুল ইসলাম, মোহাম্মদ আলী, ফাদার মারিনো রিগন ও গর্ডন গ্রিনিজ। এদের প্রত্যেককেই বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের একজন বলেই গণ্য করেন,” লিখেন আজাদ মজুমদার।
ঢাকা/হাসান/রফিক
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বিতর্কিত তিন নির্বাচনে জড়িতদের ভূমিকা তদন্তে কমিটি গঠনের নির্দেশ
বিতর্কিত তিন জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে জড়িত সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনারগণ ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিবদের ভূমিকা তদন্তে অবিলম্বে একটি কমিটি গঠনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার (১৬ জুন) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বৈঠকে আলোচনা শেষে এ নির্দেশ দেন তিনি। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
আরো পড়ুন:
প্রধান উপদেষ্টা অনেক বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন: ফখরুল
ইউনূস-তারেক বৈঠক
রমজান শুরুর আগের সপ্তাহেও নির্বাচন হতে পারে: যৌথ বিবৃতি
বৈঠকে কমিশন সদস্যগণ জুলাই সনদ তৈরির কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন।
কমিশনের সহ-সভাপতি প্রফেসর আলী রীয়াজ বলেন, “বেশকিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। খুব শিগগিরই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সনদ চূড়ান্ত করে ফেলা সম্ভব হবে।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “সবাই জুলাই সনদের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আমি আশা করি, আগামী জুলাই মাসের মধ্যে আমরা এটি জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারব।”
বৈঠকে লন্ডন সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, “লন্ডনে বাংলাদেশি কমিউনিটির যাদের সঙ্গেই দেখা হয়েছে, তারা সংস্কার নিয়ে জানতে চেয়েছে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা খুব আগ্রহী। তারা বিস্তারিতভাবে ঐকমত্য কমিশনের কাজ নিয়ে আমার সঙ্গে আলোচনা করেছে, মতামত দিয়েছে। যেখানেই গেছি, সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিরা আমাকে জিজ্ঞেস করছেন, ‘আমরা আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে পারব তো?’ আমাদের প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। পোস্টাল ব্যালট এবং আর কী কী অপশন আছে সেগুলো নিয়ে ভাবতে হবে, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।”
বৈঠকে নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশন প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “সব রাজনৈতিক একমত হয়েছে যে, অতীতের তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন আয়োজনে কর্মকর্তাদের ভূমিকা তদন্ত ও জবাবদিহিতার আওতায় আনা প্রয়োজন।”
ঢাকা/হাসান/মাসুদ