নেত্রকোনায় হেফাজত নেতার বাড়িঘরে হামলা ও মারধর, অভিযোগ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে
Published: 11th, April 2025 GMT
নেত্রকোনায় মাদ্রাসা সুপারকে মারধর করার প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে হেফাজতে ইসলামের এক নেতার বক্তব্য দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাঁর বাড়িঘরে হামলা ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় সদর উপজেলার মৌগাতি ইউনিয়নের ছোট গরদী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল বৃহস্পতিবার দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি মিছিল ও মানববন্ধন করেছে।
অভিযুক্ত বিএনপি নেতার নাম আবুল কালাম আজাদ ওরফে রেনু মিয়া। তিনি মৌগাতি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও ছোট গরদী গ্রামের বাসিন্দা। পাশাপাশি আমলী মধুপুর উচ্চবিদ্যালয়ের অফিস সহকারী। আর ভুক্তভোগী হলেন আবুল কালামের প্রতিবেশী ও একই ইউনিয়নের হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং বড় গরদী বাগানবাড়ী মসজিদের ইমাম আনিসুর রহমান।
স্থানীয় বাসিন্দা এবং ওই নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গরদী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন নিয়ে বিএনপি নেতা আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে ওই মাদ্রাসার সুপার আবদুল খালেক খানের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। আবুল কালাম প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি হতে চাইছিলেন। কিন্তু তিনি তা না হতে পারায় সম্প্রতি এই বিরোধ চরম পর্যায়ে রূপ নেয়। গত মঙ্গলবার দুপুরে আবুল কালাম তাঁর লোকজন নিয়ে মাদ্রাসায় সুপারের কক্ষে যান। পরে উভয়ের মধ্যে কথা–কাটাকাটির এক পর্যায়ে আবুল কালাম সুপারকে টেনেহিঁচড়ে কক্ষ থেকে বের করে দেন বলে অভিযোগ ওঠে।
মাদ্রাসার সুপার আবদুল খালেকের অভিযোগ, আবুল কালাম মাদ্রাসার সভাপতি হওয়ার জন্য অব্যাহতভাবে তাঁকে চাপ দিচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি তাঁকে জানিয়ে দেন, এ ব্যাপারে তাঁর কোনো হাত নেই। এরপর আবুল কালাম সুপারের কাছে অনৈতিকভাবে চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। কিন্তু তিনি এতে রাজি না হওয়ায় আবুল কালাম মাদ্রাসায় এসে তাঁকে মারধর করে কক্ষ থেকে বের করে দেন। তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মডেল থানার ওসি এবং নেত্রকোনা অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ দিয়েছি।’
ওই ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার দুপুরে মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর ব্যানারে মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে মাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্র ও হেফাজতে ইসলামের নেতা আনিসুর রহমান সেখানে বক্তব্য দেন। এরপর তিনি কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশনের সাংবাদিকদের কাছে আলাদাভাবে বক্তব্য দেন। আনিসুর ও তাঁর পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওই দিন সন্ধ্যায় আবুল কালাম ও তাঁর ছেলে লোকজন নিয়ে আনিসুর রহমানের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন। এ সময় আনিসুর রহমানকেও মারপিট করা হয়। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
ওই ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল দুপুরে মৌগাতি ইউনিয়নের হাটকলা বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করেন হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা। মিছিলে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নেত্রকোনা জেলা সেক্রেটারি ও হেফাজতে ইসলামের জেলা কমিটির অর্থ সম্পাদক আসাদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দলের নেতা আনিসুর রহমানের বাড়িঘর ভাঙচুরসহ তাঁকে মারপিট করেছেন বিএনপি নেতা আবুল কালাম ও তাঁর লোকজন। যিনি মাদ্রাসার সুপার, তিনি খুবই সজ্জন মানুষ। তিনি বিএনপি নেতাকে চাঁদা না দেওয়ায় তাঁকেও মারধর করে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে বলে শুনেছি। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না করা হলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
এদিকে গতকাল দুপুরে স্থানীয় হাটখলা বাজারে আবুল কালামের লোকজন মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন। ওই কর্মসূচিতে আবুল কালাম অংশ নিয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই দিন মাদ্রাসার সুপারকে মারধর বা চাঁদা দাবি করা হয়নি। শুধু দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়েছিল। আর হেফাজতের নেতা আনিসুর রহমানকে মারধর ও তাঁর বাড়িঘরে হামলা আমি বা আমার লোকজন করেনি। আমার ছেলে যখন লোকজন নিয়ে আনিসুর রহমানের বাড়িতে যেতে চেয়েছিলেন, তখন আমি তাঁকে বাধা দিয়েছি। আনিসুর নিজেই তাঁর ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর ও টিনের বেড়ায় দা দিয়ে কুপিয়েছেন। আমি যেহেতু ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি, আমাকে হেয় করতে এ রকম মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।’
এ ব্যাপারে নেত্রকোনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আনোয়ারুল হক প্রথম আলোকে জানান, বিষয়টি তদন্ত করতে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বজলুর রহমান পাঠানকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আবুল কালামের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী শাহনেওয়াজ বলেন, মাদ্রাসার সুপারকে লাঞ্ছিত ও মানববন্ধনে বক্তব্য দেওয়াকে কেন্দ্র করে হামলা মারধরের ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে। এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র ইসল ম র ব যবস থ র ল কজন গতক ল ম রধর
এছাড়াও পড়ুন:
ফতুল্লায় জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন
ফতুল্লার লালপুর পৌষাপুকুর পাড় এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধানের জন্য মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।
আগামী দুই দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান না হলে সড়ক অবরোধ সহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে মানববন্ধন থেকে। এক পর্যায়ে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী ঢাকা-নারায়নগঞ্জ পুরাতন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। এতে করে ঢাকা-নারায়নগঞ্জ পুরাতন সড়কের উভয় পাশে যানবাহন বন্ধ হয়ে যানজটের সৃস্টি হয়।
বুধবার সকাল ১০ টার দিকে ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ অনুস্ঠিত হয়। ১১ টার দিকে ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ঘটনাস্থলে এসে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলেন।
এসময় তিনি বলেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা হয়েছে। তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন আজ দুপুরের পর এলাকাবাসীর সাথে নির্বাহী কর্মকর্তা কথা বলবেন তাদের সমস্যার কথা শুনবেন এবং দ্রুতই তা সমাধানের জন্য কাজ করবেন।
এ সময় লালপুর পৌষাপুকুরপাড় পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মোসলেম উদ্দিন মুসা বলেন জলাবদ্ধতার কারনে মুসুল্লিরা নামাজ পরতে পারছেনা,কর্মজীবিরা কাজে যেতে পারছেনা,স্কুল -কলেজ পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীরা তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছেনা,নোংরা পানির কারনে ঘরে ঘরে পরিবারের সদস্যরা অসুস্থ হয়ে পরেছে।
আমাদের কে আশ্বাস করেছিলো সেনাবাহিনী কতৃক যে পাম্প বসানো হয়েছিলো সেটা চালু হলে আমাদের দ্ঃূক কস্ট লাঘব হবে। কিম্ত সে পাম্প চালু হলেও আমাদের কস্ট শেষ হয়নি। সেই পাম্প আমাদের কোন কাজে আসেনি।
আমরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা,জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারক লিপি দিয়েছি তারা এসে দেখেও গেছে কিন্ত আজো সমস্যার সমাধান করা হয়নি। বিগত সরকারের আমলে তখনকার চেয়ারম্যান, এমপি সাহেবের নিকট গিয়েছি। শামীম ওসমান এসে দেখে সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে। তা শুধু কথার কথাই ছিলো। কিন্ত কোন কাজে আসেনি।
ইউপি সদস্য মাঈনুদ্দিন জানায়, দীর্ঘদন যাবৎ আমরা এই সমস্যা আছি। মৃত মানুষের লাশ পযন্ত দাফন করতে পারছিনা। মসজিদের ভিতরে পানি নামাজ পরতে পারছিনা। রাস্তায় বের হতে পারছিনা।
আমাদের কোরবানী ঈদে পশু কোরবানী দিতে হয় ছাদের ওপরে নতুবা অন্য এলাকায় গিয়ে। এ সব কিছুই সরকারের সকল বিভাগের কর্মরত কর্তার জানে। কিন্ত শুধু আশ্বাস পেয়ে গেছি। কোন সমাধান পাইনি তাই আজ বাধ্য হয়ে রাস্তায় নামতে হয়েছে আমাদেরকে।
আমরা দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতার কবলে রয়েছি। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। ফতুল্লায় এতো উন্নয়ন হয়, কিন্তু লালপুর পৌষাপুকুর পাড়ের জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী কোন সমাধান হচ্ছেনা। আমরা চাই এই জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধান হোক।
ব্যবসায়ী হাবিব জানায়, আমাদের সমস্যা দীর্ঘদিনের। হাসিনা সরকারের আমলে আমাদের কোন কাজ হয় নাই। আমরা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে স্মারক লিপি দিয়েছি। কিন্ত কোন কাজ হয়নি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি কোন প্রকার টেক্স আর দিবোনা।
এসময় আরো বক্তব্য রাখেন, লালপুর- পৌষাপুকুরপাড় পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আঃ বারী, আজাদুর রহমান আজাদ,আলামিন বাগ পঞ্চায়েতের সাধারণ সম্পাদক রফিক, লালপুর আলামিন বাগ পঞ্চায়েতের সভাপতি মো. জনি, শামীম।