গ্রামে ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু, বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গুর হটস্পট বরগুনা
Published: 13th, April 2025 GMT
বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গু এখন মৌসুমি রোগ নয়; প্রায় সারা বছর চলমান স্বাস্থ্যঝুঁকি। চলতি বছরের শুরুতেই বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে চার শ ছাড়িয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১১২ জনই বরগুনা জেলার বাসিন্দা। মারা গেছেন দুজন—তাঁরাও বরগুনার। পরিসংখ্যান বলছে, বরগুনাই এখন বিভাগের ডেঙ্গুর নতুন হটস্পট।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বিভাগে ৪৬৪ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর আগে ২০২৪ সালে ৮ হাজার ৪৫৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে এসেছিলেন। মারা গিয়েছিলেন ৫৮ জন। ২০২৩ সালে ডেঙ্গু রোগী ছিলেন সবচেয়ে বেশি—৩৮ হাজার ৬৪ জন। মৃত্যু হয়েছিল ২০৯ জনের। ২০২২ সালে ৩ হাজার ৪০৫ রোগীর বিপরীতে ১১ জনের মৃত্যু হয়।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০১৯ সালে বরিশালে প্রথম ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। এর আগে বিভাগে ডেঙ্গুর ইতিহাস নেই। ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল। আক্রান্ত হয়েছিলেন ১০ হাজারে বেশি মানুষ। এরপর ২০২২ সালে পুনরায় প্রকোপ দেখা দেয়। ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হন। এর পর থেকে সারা বছর কমবেশি রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসেন।
বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গুর নতুন হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে বরগুনা। গত দুই বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছরের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৪৬৪ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ ১১২ জন বরগুনার বাসিন্দা। এর আগের বছর ৮ হাজার ৪৫৭ জন হাসপাতালে এসেছিলেন। এর মধ্যে বরগুনারই ছিলেন ২ হাজার ৩৬৭ জন।
বরগুনা শহরের ডিকেপি সড়কের বাসিন্দা শারমিন জাহানের আট বছর বয়সী মেয়ে সানজিদা ৫ এপ্রিল ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়। মেয়েকে ভর্তি করেন বরগুনার ২৫০ শয্যার হাসপাতালে। দুই দিনের ব্যবধানে মেয়ের প্লাটিলেট নেমে যায় ২৬ হাজারে। চিকিৎসকেরা শিশুটিকে বড় হাসপাতালে পাঠাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এমনকি হাসপাতালের রেজিস্টার থেকে শিশুটির নাম কেটে দেওয়া হয়। শারমিন বাধ্য হয়ে গভীর রাতে মেয়েকে অ্যাম্বুলেন্সে করে বরিশালে আনেন।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে রাত দুইটায় মেয়েকে ভর্তি করেন শারমিন। কিন্তু শয্যা খালি ছিল না। মেঝেতেও জায়গা নেই। বাধ্য হয়ে মেয়েকে নিয়ে যান একটি বেসরকারি হাসপাতালে। কিন্তু তারা ভর্তি নেয়নি। উপায় না পেয়ে গভীর রাতে অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে একটি আবাসিক হোটেলে ওঠেন। পরদিন একজন শিশুবিশেষজ্ঞের ব্যক্তিগত চেম্বারে মেয়েকে নিয়ে যান। বেশ কয়েকটি টেস্টের পর ব্যবস্থাপত্র নিয়ে মেয়ের চিকিৎসা করাতে হয়। শারমিন বলেন, মেয়ের চিকিৎসা করাতে তাঁকে ভোগান্তির পাশাপাশি অন্তত ৩০ হাজার টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করতে হয়েছে।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা কোনো ওয়ার্ড নেই। সাধারণ ওয়ার্ডে অন্যান্য রোগীর সঙ্গে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। ডেঙ্গুর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—রক্ত থেকে প্লাটিলেট আলাদা করে রোগীকে দেওয়ার সুযোগ বরিশালে শুধু এই হাসপাতালেই আছে। বিভাগের অন্য কোথাও প্লাটিলেট সেল সেপারেটর যন্ত্র নেই। ফলে রোগী ও স্বজনদের বড় ঝুঁকিতে পড়তে হয়।
হাসপাতালের উপপরিচালক (প্রশাসন) এইচ এম মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, এক হাজার শয্যার হাসপাতালে প্রতিদিন অন্তত দুই হাজার রোগী ভর্তি থাকেন। বাড়তি রোগীর চাপে তাঁদের সারা বছর হিমশিম খেতে হয়।
মশা আছে, প্রতিরোধ নেই
একসময় ধারণা ছিল, বিভাগের ডেঙ্গু রোগীরা ঢাকাসহ অন্য এলাকায় গিয়ে সংক্রমিত হন। কিন্তু ২০২৩ সাল থেকে রোগীদের শতভাগই স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত। বরিশালের গৌরনদী উপজেলা সদরের মনি আক্তার চলতি বছর দুবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে তিনি অন্যত্র ভ্রমণ করেননি। স্থানীয়ভাবেই তিনি সংক্রমিত হয়েছিলেন। ২০২৩ ও ২৪ সালে পিরোজপুর, পটুয়াখালী ও বরগুনার বিভিন্ন উপজেলা থেকে সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষা করে এডিস মশার লার্ভা পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কারিগরি দল।
চিকিৎসাবিশেষজ্ঞরা বলছেন, উষ্ণ আবহাওয়ায় ডিম থেকে পূর্ণবয়স্ক মশা হয়ে উঠতে কম সময় লাগে। এ কারণে মশা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ডেঙ্গু এখন বর্ষা মৌসুমে নয়; সারা বছরই প্রকোপ অব্যাহত থাকছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও ছোট শহরে বেশি জনসংখ্যার কারণে প্রচুর পরিমাণে ছোট-বড় পাত্র তৈরি হয়, যাতে পানি জমে মশার বংশবিস্তারের সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক বছর ধরে বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গুর প্রকোপ মারাত্মক। তাঁরা ডেঙ্গুর চিকিৎসা দিতে সব হাসপাতালকে আলাদা নির্দেশনা দিয়েছেন। গ্রামে সচেতনতা বাড়াতে স্বাস্থ্যকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তিগত সচেতনতার বিকল্প নেই। স্থানীয় কমিউনিটিকে সংযুক্ত করা গেলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বর শ ল ব ভ গ বরগ ন র হয় ছ ল ত হয় ছ
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রামে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যুবককে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা
চট্টগ্রামে এক যুবককে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর নাম মোহাম্মদ হাসিব (২৬)। আজ সোমবার বিকেলে নগরের পাঁচলাইশ থানার হামজারবাগ এলাকার একটি নালা থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। হাসিব একই এলাকার জাঙ্গালপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান প্রথম আলোকে বলেন, নালায় একটি লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দেন। পরে পুলিশ লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠিয়েছে।
ওসি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, একই এলাকার এক প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে হাসিবের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর ওই নারী তাঁর প্রবাসী স্বামীকে বিদেশে তালাকনামা পাঠান এবং দুজন বিয়ে করে নেন। বিষয়টি জানতে পেরে ওই ব্যক্তি বিদেশ থেকে গত সপ্তাহে দেশে ফেরেন। এরপর তিনি ওই নারীকে সংসারে ফেরানোর চেষ্টা করেন এবং হাসিবকেও নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেন।
ওসি মোহাম্মদ সোলাইমান আরও বলেন, শেষে প্রবাসী ব্যক্তি হাসিবের বাসায় গিয়ে তাঁকে ডেকে স্থানীয় সংগীত আবাসিক এলাকার ভেতরে নিয়ে যান। সেখানে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত ও গলা কেটে হত্যার পর মরদেহ ফেলে পালিয়ে যান।
নিহত হাসিবের ভাই মোহাম্মদ সাইফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘অন্যায় করলে বিচার হবে। কিন্তু জলজ্যান্ত মানুষকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে এভাবে খুন করতে পারে না। হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।’