ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিরাই যেন ভাতা-সুবিধা পান, তা বিবেচনায় রেখে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলো সাজানোর পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সফররত মিশন। এ ব্যাপারে কোনো কারিগরি সুবিধা লাগবে কি না, তা–ও জানতে চেয়েছে সংস্থাটি।

চলমান ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচি থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থছাড়ের আগে আলোচনা করতে আইএমএফের এই মিশন ৬ এপ্রিল ঢাকায় এসেছে। ধারাবাহিক বৈঠকের অংশ হিসেবে গত শনিবার তারা সচিবালয়ে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করে। এতে আইএমএফ মিশনের তিনজন সদস্য অংশ নেন।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আইএমএফের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সম্প্রসারণের কোনো উদ্যোগ আছে কি না সরকারের। এ বিষয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী এবং ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারের নতুন কোনো সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল আছে কি না, তা–ও জানতে চেয়েছেন তাঁরা।

অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রকৃত উপকারভোগীরাই যেন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় থাকেন, সে ব্যাপারে কাজ চলছে। এ নিয়ে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কারিগরি সহায়তা আছে। আপাতত কোনো কারিগরি সহায়তা লাগবে না।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য সরকার ৯২ পৃষ্ঠার একটি সামাজিক নিরাপত্তা বাজেট প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল গত বছর। সেই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে ১৪০টি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি রয়েছে। এসব কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ রয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা।

তবে সরকারের দিক থেকে এমন কর্মসূচিকেও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি হিসেবে দেখানো হয়, যা আসলে এ ধরনের কর্মসূচি নয়। কোন কর্মসূচিগুলো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, কোনগুলো তা নয়—এ নিয়ে অর্থনীতিবিদদেরও ভিন্নমত রয়েছে। প্রকৃত কর্মসূচি হচ্ছে বয়স্ক ভাতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, কর্মজীবী মায়ের জন্য ভাতার মতো ১৪টি, যেগুলোর আওতায় নগদ সহায়তা দেওয়া হয়।

অথচ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের যে বৃত্তি দেওয়া হয়, সেটাকেও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বলে দাবি করে সরকার। আবার অবসরভোগী সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন ও সঞ্চয়পত্রের সুদের একাংশ ইত্যাদিকেও দেখানো হয় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি হিসেবে। এসব খাতে ব্যয় হয় প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা।

সরকার ২০১৫ সালে জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কৌশলপত্র প্রণয়ন করলেও অনেক ক্ষেত্রে এর সঙ্গে চলমান সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী সংগতিপূর্ণ নয়। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ ২০১৬ সালেই তথ্য-উপাত্ত দিয়ে জানিয়েছিল যে দেশের ৬৪ শতাংশ দরিদ্র মানুষ সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কর্মসূচিগুলোর একটির সুবিধাও পায় না।

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সম্পর্কিত উপদেষ্টা কমিটি সম্প্রতি একটি বৈঠক করেছে। এ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে আগামী অর্থবছরে নগদ সহায়তা দেওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত কর্মসূচিগুলোতে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হবে। আইএমএফকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আসন্ন বাজেট বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এ বরাদ্দ বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করবেন বলে জানা গেছে।

সূত্রগুলো জানায়, এ দফার বৈঠকে আইএমএফ মিশনের সদস্যরা নোট নিয়েছেন। কাল মঙ্গলবার অর্থ বিভাগের সঙ্গে একই বিষয়ে আরেকটি বৈঠক রয়েছে। এ বৈঠক থেকে উঠে আসা তথ্যই আইএমএফের পর্যালোচনা প্রতিবেদনে উল্লেখ থাকবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশি ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ২৪ শতাংশ

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল বাবদ ৩২১ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে (জুলাই-মার্চ) ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ২৫৭ কোটি ডলার। সেই হিসেবে এ বছর বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ। এমনকি চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে গত অর্থবছরের কাছাকাছি ঋণের সুদাসল পরিশোধ হয়ে গেছে।

বিদেশি ঋণ-অনুদান পরিস্থিতির ওপর গতকাল বুধবার প্রকাশিত অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে বিদেশি ঋণ বাবদ পরিশোধের মধ্যে আসলের পরিমাণ ২০১ কোটি ডলার। সুদ বাবদ ১২০ কোটি ডলার পরিশোধ হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ২৫৭ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছিল। এক বছরের ব্যবধানে ৬৪ কোটি ডলার বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে বাংলাদেশ সরকারকে।

ইআরডির একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আগ্রাসী অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় পরিণাম চিন্তা না করে বড় অঙ্কের ঋণ নেওয়া হয়। সেই সঙ্গে ডলারের সঙ্গে টাকার বিনিময় হারের তারতম্য বাড়াসহ নানা কারণে এখন বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। 

চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে দেশে মোট প্রায় ৪৮১ কোটি ডলার সমপরিমাণ বিদেশি ঋণ-অনুদান এসেছে। এ সময়ে ঋণের সুদাসল পরিশোধ করতে হয়েছে অর্থছাড়ের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের সমান। এদিকে গত জুলাই-মার্চ সময়ে ৩০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বিদেশি সহায়তার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বাংলাদেশ, যা গতবারের একই সময়ে পাওয়া প্রতিশ্রুতির অর্ধেকের কম।

গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৭২৪ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল। জুলাই-মার্চ সময়ে সবচেয়ে বেশি ১২২ কোটি ডলার ছাড় করেছে এডিবি। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক ১০৭ কোটি ডলার ও জাপান ৮৯ কোটি ডলার দিয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিদেশি ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ২৪ শতাংশ
  • নিট রিজার্ভও ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল
  • বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করতে হবে
  • বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার পরামর্শ
  • পাল্টা শুল্ক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রকে চটাব না: অর্থ উপদেষ্টা
  • আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের ওপর বাংলাদেশ এখন নির্ভরশীল নয়: অর্থ উপদেষ্টা
  • আইএমএফ কিস্তি না দিলে নিজেদের মতো করে বাজেট করব: অর্থ উপদেষ্টা
  • সব শর্ত মেনে আইএমএফের ঋণ নেওয়া হবে না: অর্থ উপদেষ্টা
  • ৯ মাসে ৪,৬০০ কোটি টাকার ব্যবসা ওয়ালটনের
  • যমুনা অয়েলের মুনাফা বেড়েছে ৩৮ শতাংশ