নোবেলজয়ী লেখক মারিও বার্গাস ইয়োসা মারা গেছেন
Published: 14th, April 2025 GMT
পেরুর নোবেলজয়ী সাহিত্যিক মারিও বার্গাস ইয়োসা (৮৯) মারা গেছেন। স্থানীয় সময় গতকাল রবিবার সামাজিকমাধ্যম এক্সে তার ছেলে আলভারো বার্গাস ইয়োসা একটি পারিবারিক বিবৃতি প্রকাশ করেন। আজ সোমবার লেখকের পরিবারের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
২০১০ সালে সাহিত্যে নোবেল জয় করেন বার্গাস ইয়োসা। সুইডিশ অ্যাকাডেমি তার শক্তিশালী লেখনীর ভূয়সী প্রশংসা করে। মূলত স্প্যানিশ ভাষায় লিখতেন মারিও। শুধু সৃষ্টিশীল সাহিত্য নয়, তিনি গুরুত্ব পেয়েছেন তার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণধর্মী রচনার জন্যও।
বার্গাস ইয়োসার স্মরণীয় উপন্যাসের মধ্যে আছে ‘কনভারসেশন ইন দ্য ক্যাথেড্রাল (১৯৬৯)’, ‘দ্য ওয়ার অব দ্য এন্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড (১৯৮১)’ এবং ‘আন্ট জুলিয়া অ্যান্ড দ্য স্ক্রিপ্টরাইটার (১৯৭৭)’। আন্ট জুলিয়া অ্যান্ড দ্য স্ক্রিপ্টরাইটার বইয়ের কাহিনী অনুসারে ১৯৯০ সালে নির্মিত হয় ‘টিউন ইন টুমরো’ নামের সিনেমা।
আরো পড়ুন:
কারাগারে থেকে শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন যারা
শান্তিতে নোবেল পেলো জাপানি সংস্থা নিহন হিডানকিও
বার্গাস ইয়োসার মৃত্যুতে ল্যাটিন আমেরিকার সাহিত্যের সোনালী প্রজন্মের যুগের সমাপ্তি ঘটল। তিনি ছিলেন এই যুগের সর্বশেষ জীবিত সদস্য।
তার জ্যেষ্ঠ পুত্র আলভারো এক বিবৃতিতে লিখেছেন, “আমরা গভীর শোকের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, আমার বাবা মারিও বার্গাস ইয়োসা আজ লিমায় মারা গেছেন। পরিবারের সদস্যদের সান্নিধ্যে শান্তিপূর্ণ মৃত্যু হয়েছে তার।”
পরিবারের পক্ষ থেকে আরো বলা হয়েছে, লেখকের মৃত্যুতে তার আত্মীয়স্বজন, তার বন্ধুবান্ধব এবং বিশ্বজুড়ে তার পাঠকদের ব্যথিত করবে। তবে, আমরা আশা করি, তারা আমাদের মতো সান্ত্বনা পাবেন যে তিনি দীর্ঘ, দুঃসাহসিক এবং ফলপ্রসূ জীবন উপভোগ করেছেন। তিনি এমন একটি কাজ রেখে গেছেন যা তাকে আমাদের মাঝে বাঁচিয়ে রাখবে।
পেরুর প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের পক্ষ থেকে সামাজিক মাধ্যম এক্সে পোস্ট করে বার্গাস ইয়োসার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্টও তার নিজ অ্যাকাউন্টে ব্যক্তিগত শোকবার্তা প্রকাশ করেছেন।
পেরুর দক্ষিণাঞ্চলের আরেকিপায় জন্ম নেন বার্গাস ইয়োসা। তার প্রথম জীবন কাটে বলিভিয়ার কোচাবাম্বায়। সেখানে তার দাদা পেরুর কনসাল হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি সামরিক স্কুলে পড়াশোনা করেন এবং পেরুর রাজধানী লিমায় স্যান মার্কোস জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৫২ সালে তার প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। সেটা ছিল ‘লা গাইড দেল ইনকা’ নামের একটি নাটক।
পেশায় সাংবাদিক ও ব্রডকাস্টার ছিলেন বার্গাস ইয়োসা। প্যারিসে বসবাস শুরুর আগে তিনি মাদ্রিদ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯৬৩ সালে প্রকাশ পায় তার প্রথম উপন্যাস ‘লা সিউদাদ ই লস পেররোস’। ইংরেজিতে এটি ‘দ্য টাইম অব দ্য হিরো’ নামে পরিচিত, যা পাঠকদের কাছে বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। পরবর্তীতে এক ডজনেরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয় এই গ্রন্থটি।
লন্ডনে কিছুদিন কিংস কলেজে শিক্ষকতা করার পর ওয়াশিংটন ও বার্সেলোনায় কিছুদিন থেকে ১৯৭৪ সালে লিমায় ফেরেন তিনি। ১৯৯০ সালে পেরুর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়েছিলেন মারিও বার্গাস ইয়োসা।
তবে দ্বিতীয় দফার ভোটে ভরাডুবি হয় তার—হেরে যান আলবের্তো ফুজিমোরির কাছে। তখন তিনি স্পেনে অভিবাসন করেন। ১৯৯৩ সালে স্পেনের নাগরিকত্ব নেন তিনি। এক বছর পর স্পেনের মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার সেরভান্তেস জেতেন তিনি।
২০১০ সালে নোবেল জয়ের পর তিনি আয়োজকদের কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তার অনুপ্রেরণা হিসেবে ফরাসি লেখক গুস্তাভে ফ্লবার্ত এর নাম উল্লেখ করেন।
২০২১ সালে ফ্রান্সের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীদের একাডেমিতে তাকে মনোনীত করা হয়।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন ব ল প রস ক র
এছাড়াও পড়ুন:
নোবিপ্রবিসাসের বর্ষসেরা সাংবাদিক রাইজিংবিডি ডটকমের শফিউল্লাহ
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (নোবিপ্রবিসাস) এক যুগে পদার্পণ উপলক্ষে বর্ণাঢ্য আয়োজনে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হয়েছে।এতে ফিচার ক্যাটাগরিতে বর্ষসেরা সাংবাদিক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন নেউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকমের প্রতিনিধি মো. শফিউল্লাহ।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে র্যালি, কেককাটা, আলোচনা সভা ও প্রকাশনা উন্মোচনের মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করা হয়।
দিনব্যাপী উৎসবের মূল আকর্ষণ ছিল নোবিপ্রবিসাসের বার্ষিক মুখপত্র ‘ফাউন্টেনপেন’-এর তৃতীয় সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম মোড়ক উন্মোচন করেন।
আরো পড়ুন:
নোবিপ্রবিতে ১৩১ প্রজাতি বন্যপ্রাণী শনাক্ত
গোবিপ্রবির সায়েন্স ফেস্টে নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের সাফল্য
‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান প্রেক্ষাপট ও পরবর্তী বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজওয়ানুল হক এবং নোবিপ্রবিসাসের উপদেষ্টা এ. এফ. এম. আরিফুর রহমান।
সভার সভাপতিত্ব করেন নোবিপ্রবিসাসের সভাপতি মো. ইমাম হোসেন।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বর্ষসেরা সাংবাদিকের মধ্যে পুরস্কার প্রদান করা হয়। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইসমাইল এবং প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এ সময় মঞ্চে সাংবাদিক সমিতি ও অন্য শিক্ষকরা ছিলেন।
বর্ষসেরা অনুসন্ধানী সাংবাদিক হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন আমার দেশ-এর ক্যাম্পাস প্রতিনিধি নাহিদুল ইসলাম এবং আরটিভি-এর প্রতিনিধি মো. রিয়াদুল ইসলাম।
বর্ষসেরা বিশেষ প্রতিবেদন (প্রিন্ট) ক্যাটাগরিতে দৈনিক ইনকিলাব -এর ক্যাম্পাস প্রতিনিধি মুস্তাকিম সাদিক এবং অনলাইন ক্যাটাগরিতে সময়ের কণ্ঠস্বর প্রতিনিধি তৌফিক আল মাহমুদ পুরস্কার অর্জন করেছেন।
ফিচার ক্যাটাগরিতে সেরা সাংবাদিকের পুরস্কার পেয়েছেন রাইজিংবিডি ডটকম-এর ক্যাম্পাস প্রতিনিধি মো. শফিউল্লাহ।এবং সেরা কন্ট্রিবিউটরের পুরস্কার পেয়েছেন এশিয়ান টিভি-এর প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল তৌহিদ।
অনুষ্ঠানে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “বাংলাদেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়েই সাংবাদিক সমিতি রয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার চর্চা করেন। নোবিপ্রবির সাংবাদিকরাও জুলাই আন্দোলনের সময় সাহসিকতার সঙ্গে সংবাদ পরিবেশন করেছেন— যা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
তিনি আরো বলেন, “ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার ইতিহাস দীর্ঘ; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই এই ধারা শুরু। বর্তমানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ফেক নিউজ। এই ভুয়া সংবাদ প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক ক্লাবগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।”
তিনি বলেন, “সত্য প্রকাশে সাহসী হতে হবে, মিথ্যা তথ্যের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। নোবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতির এক যুগ পূর্তিতে আমি শুভেচ্ছা জানাই। জুলাই–আগস্ট আন্দোলনের সাহসী শিক্ষার্থীদের গল্পগুলো লিখে রাখুন— এগুলোই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অনুপ্রেরণা হবে।”
নোবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, “জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সময়ে সাংবাদিকতা আরো বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে গেছে। এখন আমাদের দায়িত্ব অনেক গুণ বেড়ে গেছে। একটা সময় ছিল, যখন সত্য নিউজ প্রকাশ করা সম্ভব ছিল না। তবে এখন সময় এসেছে, সত্যকে সামনে নিয়ে আসার এবং ন্যায়ভিত্তিক সাংবাদিকতা করার।”
ঢাকা/শফিউল্লাহ/রাসেল