মাদায়েন ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যের উর্বর জায়গা। মাদায়েন শহরের অবস্থান ছিল আরবের উপদ্বীপে। পরে মাদায়েনবাসী কওমে শোয়াইব বা শোয়াইবের জাতি নামে পরিচিতি পায়। ইতিহাসে তারা কওমে শোয়াইব নামেই পরিচিত। বর্তমান সিরিয়ার মুয়ান বা মায়ান নামক স্থানে কওমে শোয়াইবের বসবাস ছিল বলে ধারণা করা হয়। ইতিহাসবিদেরা বলেন, শোয়াইব (আ.) ছিলেন ইবরাহিম (আ.
শোয়াইব (আ.)-এর দুই মেয়ে চারণভূমিতে পশু চরাতেন। বাড়ি ফেরার আগে কুয়া থেকে পশুগুলোকে পানি খাওয়াতেন। প্রতিদিনই বাড়ি ফিরতে বেলা হয়ে আসত। একদিন বেশ আগে ফিরলেন তাঁরা। বাবা রীতিমতো বিস্মিত। জানলেন, এক অপরিচিত যুবক পানি তুলতে তাদের সাহায্য করেছেন। যুবককে বাড়ি নিয়ে যেতে এক মেয়েকে পাঠালেন। (তাফসিরে মারেফুল কোরআন, মুফতি মুহাম্মাদ শফি, অনুবাদ: মাওলানা মুহীউদ্দীন খান, পৃ ১,০১০)
আরও পড়ুনবিপদে হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল পাঠের মাহাত্ম্য০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫যুবক দাওয়াত কবুল করে পথ চললেন। মেয়ের কাছ থেকে পথ চিনে নিয়ে তাঁকে পেছনে চলতে বললেন। মেয়ের প্রতি দৃষ্টিপাত এড়াতে এ কৌশল নিয়েছিলেন তিনি। পরে এ ব্যাপার নিয়ে পিতার কাছে প্রশংসা করেছিলেন মেয়েটি। (তাফসিরে মারেফুল কোরআন, মুফতি মুহাম্মাদ শফি, অনুবাদ: মাওলানা মহিউদ্দীন খান, পৃ ১,০১০)
যুবক বাড়ি এলেন। ওই যুবক ছিলেন বনি ইসরায়েল জাতির প্রতি প্রেরিত আল্লাহর বিশেষ নবী মুসা (আ.)। আতিথেয়তা গ্রহণ করলেন। খাবার শেষে ‘মেয়ে দুটির একজন বলল, বাবা, পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তাকে নিযুক্ত করুন, আপনি যাদের মজুর নিযুক্ত করবেন, তাদের মধ্যে উত্তম যে শক্তিশালী, বিশ্বস্ত।’ (সুরা কাসাস, আয়াত: ২৬)
তারপর শোয়াইব (আ.) প্রস্তাব দিলেন, ‘আমার এ দুই মেয়ের একজনকে তোমার কাছে বিয়ে দিতে চাই। এ শর্তে যে তোমাকে আমার এখানে আট বছর চাকরি করতে হবে। আর যদি ১০ বছর পূর্ণ করো, তাহলে তা তোমার ইচ্ছা।...মুসা (আ.) জবাবে বললেন, আপনার ও আমার মধ্যে এই চুক্তিই রইল।’ (সুরা কাসাস, আয়াত: ২৭-২৮)
এই প্রস্তাবের জন্য যুবক একবারেই অপ্রস্তুত ছিলেন।
আরও পড়ুনসুরা ফাতিহার অর্থ ও ফজিলত০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫মুসা (আ.) জন্মেছেন মিসরে। তখন মিসরের ফেরাউন বা বাদশাহ ছিল কাবুস। দ্বিতীয় রামেসিস হিসেবে লোকে জানে তাকে। মুসা (আ.) তখন বাজারে গিয়ে দুই ব্যক্তি ঝগড়া মিটাতে গিয়ে সেই ফেরআউনের এক অনুসারীকে চড় দিয়েছিলেন। লোকটি মারা যায়। মুসাকেও (আ.) হত্যা করার ফরমান জারি হয়, তাই তিনি শহর ছেড়ে মাদায়েন চলে গিয়েছিলেন। কেননা, তার এক সঙ্গী বলেছিল, সেখানে এক বুজুর্গ ও সৎ ব্যক্তি আছেন, তার কাছে থাকতে পারবেন। (কাসাসুল কোরআন, ৪/১৫)
মুসা (আ.) দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এই মাদায়েন শহরে পৌঁছেছেন। সেখানে পানি পান করতে গিয়ে তাঁর কাঙ্ক্ষিত বুজুর্গ, মানে শোয়াইব (আ.)-এর মেয়েদের সঙ্গেই দেখা হয় তাঁর; যার কাছে আশ্রয় নিতে তিনি মিসর থেকে ছুটে এসেছেন। সুতরাং শর্ত না মেনে মুসা (আ.)-এর যাবার কোনও উপায় ছিল না। উপরন্তু আল্লাহ তাকে নবুওয়াত দেবেন বলে একজন নবীর সান্নিধ্যে প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রয়োজন ছিল।
মুসা (আ.) শোয়াইব (আ.)-এর দেওয়া শর্ত পূরণ করেছিলেন। বিয়ে করেছিলেন শোয়াইব (আ.)-এর মেয়েকে। শ্বশুরের পক্ষ থেকে উপহার পেয়েছিলেন একটি লাঠি। যেটা তাঁর বহু কাজে দিয়েছিল।
লেখক: আলেম
আরও পড়ুনসুরা কাওসারে তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক রআন
এছাড়াও পড়ুন:
সিদ্দিককে মারধর ও শিল্পীদের বিরুদ্ধে মামলা, যা বললেন অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি
শোবিজের একঝাঁক একঝাঁক অভিনয়শিল্পীকে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি করা হয়েছে। প্রথমে ইরেশ যাকের, তারপর সুবর্ণা মুস্তাফা, অপু বিশ্বাস, নুসরাত ফারিয়া, নিপুণসহ ১৭ অভিনয়শিল্পীর নাম প্রকাশ্যে এসেছে। এরই মধ্যে গতকাল অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর ও লাঞ্ছিত করে রাজধানীর রমনা থানায় সোপর্দ করা হয়। এসব বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চর্চা চলছে। এ নিয়ে অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি আজাদ আবুল কালাম নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন।
সিদ্দিকের ওপর হামলা ও লাঞ্ছনা ঘটনা নিয়ে আজাদ আবুল কালাম গণমাধ্যমে বলেন, “সিদ্দিকের সঙ্গে যা ঘটেছে, এটা তো মব। এই মব ভায়োলেন্সকে তো ঠেকাচ্ছে না। কেন যেন মনে হচ্ছে, মব ভায়োলেন্সকে নীরবে বলা হচ্ছে, করে যাও। আমাদের কিছুই করার নেই। একজনের রাজনৈতিক চিন্তাচেতনা থাকতে পারে। অভিনেতা হিসেবে সিদ্দিক সবার কাছে পরিচিত। কিছু লোক তাকে এভাবে রাস্তায় ধরে মেরে দেবে!”
প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে আজাদ আবুল কালাম বলেন, “দলবদ্ধভাবে সিদ্দিককে শারীরিকভাবে আঘাত করেছে, আক্রমণ করেছে, গায়ে থেকে জামাকাপড় খুলে ফেলেছে, এরপর থানায় সোপর্দ করেছে। থানায় যদি সোপর্দ করতেই হয়, তাহলে প্রথমে কেন আইন হাতে তুলে নিল? তাকে হেনস্তা করে আইনের হাতে তুলে দেবে— এই মব জাস্টিস, মব ভায়োলেন্স সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। এটা তো একটা সময় নানা স্তরে হবে। এসব কর্মকাণ্ড সরকারকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে, যেখানে মব ভায়োলেন্স, সেখানে কঠোর হস্তে দমন করবে।”
ঢালাওভাবে অভিনয়শিল্পীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিষয়ে বিস্মিত আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, “ঢালাওভাবে হত্যা মামলা হচ্ছে! দেখে মনে হচ্ছে, সবাইকে মামলার মধ্যে ফেলতে হবে। ৩০০-৪০০ জন মামলার আসামি, এটা অবাস্তব একটা অবস্থা। একজন সুবর্ণা মুস্তাফার মতো শিল্পী রাস্তায় গিয়ে মানুষকে গুলি করবে? যে মানুষটি মামলা করেছেন, তিনি আন্দোলনের সময় আহত হয়েছেন, গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন; তিনি মামলা করেছিলেন অনেক লোকের নামে। মামলার নথিতে শিল্পীদের অনেকের নাম দেখলাম, তারা রাস্তায় নেমে মানুষকে গুলি করবে!”
সরকারিভাবে এ ধরনের মামলাকে প্রতিরোধ করা উচিত বলে মনে করেন আজাদ আবুল কালাম। তিনি বলেন, “সরকারিভাবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেরও উচিত হবে এ ধরনের মামলাকে প্রতিরোধ করা। নিরুৎসাহিত করা। যে ব্যক্তি মামলা করছেন, যদি প্রমাণিত হয়, শিল্পীরা কেউই গুলি করেনি, তখন তো এটা মিথ্যা মামলা হবে। এ রকম মিথ্যা মামলার ক্ষেত্রে, যে ব্যক্তি শিল্পীদের নামে মামলা করেছেন, তার কী শাস্তি হবে, তারও বিধান থাকতে হবে।”
“কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে, তা জানানোর একটা প্রক্রিয়া আছে। শুধু শিল্পী না, একজন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধেও যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে আপনি তার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগপর্যন্ত তাকে অপরাধী বলতে পারেন না। তাকে সামাজিকভাবে হেয় করতে পারেন না। মামলা করে তাকে সামাজিকভাবে হেয় করা শুরু করলেন, এই প্রক্রিয়া যদি চলতে থাকে, এটাই যদি আমাদের মনস্তত্ত্ব হয়, তাহলে বিভক্তি আরো বাড়বে।” বলেন আবুল কালাম আজাদ।