ছবি তুললেই লাঠিপেটা, বনানীতে অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ
Published: 21st, April 2025 GMT
রাজধানীর বনানীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে চালকদের আন্দোলন উত্তপ্তে রূপ নেয়। আন্দোলনের ছবি বা ভিডিও ধারণ করতে গেলেই রিকশাচালকদের হামলার শিকার হতে হয়েছে পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। বর্তমানে এলাকার যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
সোমবার (২১ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে বনানী ১১ নম্বর রোড সংযোগ সেতুর সামনে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এই সময়ে যে কোনো ব্যক্তি ছবি তুলতে বা ভিডিও করতে গেলেই চালকরা তাদের লাঠি ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মারধর করেন।
আহতদের মধ্যে রয়েছেন আইনজীবী মোশাররফ হোসেন। তিনি রাইজিংবিডি ডটকমকে জানান, অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে আন্দোলনের ছবি তুলতেই চালকরা তাকে মারধর করে গুরুতর আহত করে।
তিনি বলেন, ‘‘অফিস সহকারীর সহায়তায় কোনোমতে জীবন নিয়ে ফিরে এসেছি। অটোরিকশা চালকরা বড় রামদা ও লাঠি নিয়ে যাকে পেয়েছে তাকেই আক্রমণ করেছেন।’’
বনানী সোসাইটির বাসিন্দা মোহাম্মদ আমজাদ জানান, তিনি ও তার কয়েকজন বন্ধু রাস্তায় দাঁড়ালে চালকরা তাদের লক্ষ্য করে লাঠিচার্জ শুরু করেন। ছবি তুলতে গেলে আরো বেপরোয়া হয়ে দুই বন্ধুকে গুরুতর আহত করা হয়। পরে পুলিশের সহায়তায় আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হয়।
তিনি আরো বলেন, ‘‘অটোরিকশা চালকরা বস্তি থেকে লোকজন ভাড়া করে এনে সোসাইটির বাসিন্দাদের ওপর হামলা চালাচ্ছেন। এই ঘটনার বিচার না হলে ভবিষ্যতে আরো বড় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে।’’
বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মেহেদী হাসান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা আন্দোলন করছিল। ছবি তুলতে গেলে তারা হামলা চালিয়েছে। এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
ঘটনার পর থেকে এলাকায় অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এবং যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
ঢাকা/রায়হান/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে
জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং দ্রুত স্থায়ী বিধানে যুক্ত করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় ৯ ঘণ্টা ধরে অবরোধ করে রেখেছেন ‘জুলাই যোদ্ধারা’। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের (আহত) ব্যানারে তাঁরা এ ‘অবস্থান কর্মসূচি’ পালন করছেন।
রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়ে আশপাশের সড়কগুলোতে। এসব সড়কে দিনভর ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। ফলে বৃষ্টির মধ্যে জীবনের তাগিদে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। বাধ্য হয়ে বিকল্প পথে চলে গণপরিবহন, অনেক যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে হেঁটে হেঁটে। বিশেষ করে অফিসফেরত মানুষকে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
বেলা ১১টায় শাহবাগ মোড়ের সঙ্গে যুক্ত সব সড়কের মুখ আটকে দিয়ে সড়কের মাঝখানে অবস্থান নেন অবরোধকারীরা। এ সময় তাঁরা জুলাই সনদ দ্রুত বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবি জানান। অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জুলাই যোদ্ধা সংসদ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম ওই কর্মসূচির উদ্যোগ নেয়। এ সময় অবরোধকারীরা ‘জুলাই নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘জুলাইয়ের চেতনা দিতে হবে ঘোষণা’, ‘জুলাই সনদ দিতে হবে, দিতে হবে, দিতে হবে’ স্লোগান দিতে থাকেন।
বন্ধ হয়ে পড়ে শাহবাগ থেকে ফার্মগেট, সায়েন্স ল্যাব ও গুলিস্তানগামী প্রধান সড়কগুলোও। ফলে সকাল থেকেই এসব এলাকায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এসব সড়কে চলাচলকারী গণপরিবহনগুলো বিকল্প পথে চলাচল করে।
বেলা তিনটার দিকে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ–সংলগ্ন মূল সড়কে পুলিশের ব্যারিকেড ও বাঁশ ব্যবহার করে সড়ক আটকে রেখেছেন অবরোধকারীরা। শাহবাগ থানার সামনের সড়কেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন তাঁরা।
বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ষাটোর্ধ্ব নূরে আলম বলেন, ‘কেরানীগঞ্জে যাব। কোনো বাস পাচ্ছি না। রিকশায় যে কিছু দূর যাব, তারাও ভাড়া বেশি চাচ্ছে।’ একপর্যায়ে হেঁটেই রওনা দেন তিনি।
এক পথচারী ইমরান হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দুই দিন পরপর সড়ক অবরোধ হয়। এর ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের।’
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শাহবাগ থানার সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হতে দেখা যায় মোটরবাইক আরোহীদের। শাহবাগ থানার সামনে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশাকে বাধা দিলে চালক বলেন, ‘এত দাবিদাওয়া এত দিন আছিলো কই।’ তবে গণপরিবহন আটকে দেওয়া হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যানবাহন এবং তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স শুরু থেকেই চলাচল করতে দেখা গেছে।
অবরোধকারীদের দাবি
অবরোধকারীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি; শহীদ পরিবার ও আহতদের আজীবন সম্মান; চিকিৎসা, শিক্ষা ও কল্যাণের পূর্ণ নিশ্চয়তা প্রদান করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের প্রতি দায়িত্ব গ্রহণ করা; আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান ও কল্যাণমূলক ব্যয় রাষ্ট্রকে বহন করা; আহত ও শহীদ পরিবারের জন্য আজীবন সম্মানজনক ভাতা নিশ্চিত করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য বিশেষ আইনি সুরক্ষা ও সহায়তাকেন্দ্র গঠন করা; শহীদ ও আহতদের ওপর সংগঠিত দমন-পীড়নের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচারকাজ সম্পন্ন করা এবং একটি স্বাধীন সত্য ও ন্যায় কমিশন গঠন করা।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালিদ মনসুর বলেন, সকাল থেকেই শাহবাগে অবরোধের কারণে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। শাহবাগ থানা-পুলিশ আলোচনার মাধ্যমে অবরোধকারীদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
তবে জুলাই যোদ্ধা সংসদের মুখ্য সংগঠক মাসুদ রানা জানান, তাঁদের আন্দোলন চলছে। সনদ ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তাঁরা এখানেই থাকবেন।