পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহ শুরু হবে মে মাসে
Published: 22nd, April 2025 GMT
পাইপলাইনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় জ্বালানি তেল পরিবহনে নেওয়া প্রকল্পের নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। ইতিমধ্যে ২৫০ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানো হয়েছে। আগামী ৭ মে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শেষে পুরোদমে তেল সরবরাহ শুরু করার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। আজ মঙ্গলবার বিকেল চারটায় প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে সভা করেছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সভায় এসব বিষয়ে আলোচনা হয়।
জানতে চাইলে বিপিসি মনোনীত প্রকল্প পরিচালক মো.
যদিও গত মার্চে নতুন এই পাইপলাইন দিয়ে তেল পরিবহনের পরিকল্পনা করেছিল বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এখন মে মাসে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিপিসির পরিচালক এ কে এম আজাদুর রহমান। আরও উপস্থিত ছিলেন পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আবদুস সোবহান, পেট্রোলিয়াম ট্রান্সমিশন কোম্পানির এমডি রায়হান আহমাদ, বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মো. আমীর মাসুদ, প্রকল্প পরিচালক মো. আমিনুল হক প্রমুখ।
বিপিসির কর্মকর্তারা বলছেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে জ্বালানি তেল পরিবহন খরচ কমবে। নির্বিঘ্ন হবে সরবরাহব্যবস্থাও। পরিবেশদূষণও রোধ করা সম্ভব হবে। পাইপলাইনের মাধ্যমে বছরে সরবরাহ করা হবে ২৭ লাখ টন ডিজেল। পাইপে পরিবহন শুরু হলে প্রায় ২৩৬ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
প্রকল্পের নথিপত্র অনুযায়ী, ২০১৮ সালের অক্টোবরে প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। শুরুতে এটির মেয়াদ ছিল ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু কাজ শুরু হয় ২০২০ সালে। এরপর প্রথম দফায় ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। দ্বিতীয় দফায় মেয়াদ আবার বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ হয়। শুরুতে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকায়। বিপিসির এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড।
নথিপত্র অনুযায়ী, পাইপলাইনের দুটি অংশ রয়েছে। একটি অংশ চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা থেকে ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ হয়ে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ডিপো পর্যন্ত। দ্বিতীয় অংশটি গোদনাইল থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত। পাইপলাইন ছাড়াও প্রকল্পের আওতায় বুস্টার পাম্প, ৯টি জেনারেটরসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম রয়েছে।
বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে জ্বালানি তেলের গড় চাহিদা বছরে ৬৫ লাখ টন। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরবরাহ করা হয়েছে ৬৭ লাখ টন। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশই ডিজেল। ঢাকা বিভাগেই জ্বালানি তেলের ব্যবহার মোট চাহিদার ৪০ শতাংশ। বর্তমানে ঢাকায় তেল পরিবহনের জন্য প্রথমে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে নদীপথে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ও ফতুল্লা ডিপোতে নেওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে সড়কপথে ঢাকায় তেল পরিবহন করা হয়। পরিবহনে ব্যবহৃত হয় প্রতি মাসে প্রায় ১৫০টি ছোট-বড় জাহাজ। এতে বছরে ২০০ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে।
প্রকল্পের নথিতে বলা হয়েছে, প্রতিবছর প্রকল্প থেকে ৩২৬ কোটি টাকা আয় হবে। পরিচালন, রক্ষণাবেক্ষণ, ফুয়েল, বিদ্যুৎ বিল, জমির ভাড়াসহ আরও কিছু খাতে ব্যয় হবে ৯০ কোটি টাকা। তাতে প্রতিবছর সাশ্রয় হবে ২৩৬ কোটি টাকা। বিনিয়োগ উঠে আসবে ১৬ বছরের মধ্যে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রকল প র ন ত ল পর বহন সরবর হ
এছাড়াও পড়ুন:
গ্যাস সংকট
রাজধানী ঢাকার একটি ঘনবসতিপূর্ণ শনির আখড়ায় গ্যাস সংকট এখন নিয়মিত ভোগান্তির নাম। ভোর থেকে দুপুর—কখনো কখনো পুরো দিন গ্যাসের দেখা মেলে না। এর ফলে রান্না, দৈনন্দিন জীবনযাপন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
আমরা যারা সকালবেলা অফিস, স্কুল বা কলেজে যাবার আগে তড়িঘড়ি করে রান্না সেরে বের হওয়ার চেষ্টা করি, তাদের জন্য গ্যাস না থাকা মানেই বিশৃঙ্খল একটি দিন। একদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন দাম, অন্যদিকে গ্যাস না থাকায় বিকল্প ব্যবস্থায় রান্না করতে গিয়ে বেড়ে যাচ্ছে বাড়তি খরচ। এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন গৃহিণী ও কর্মজীবী নারীরা।
সবচেয়ে হতাশাজনক বিষয় হলো, আমরা নিয়মিত মাসিক বিল পরিশোধ করেও সে অনুযায়ী সেবা পাচ্ছি না। কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই দিনের পর দিন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে। কবে আসবে, কখন বন্ধ থাকবে—এমন কোনো সময়সূচিও জানানো হয় না। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের তরফ থেকেও পাওয়া যায় না সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা বা সমাধানের আশ্বাস।
গ্যাস না থাকায় অনেকেই বাধ্য হয়ে সিলিন্ডার ব্যবহারে ঝুঁকছেন। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি ও অতিরিক্ত ব্যয় বহনের কারণে এটি নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য কোনো টেকসই সমাধান নয়। বারবার সিলিন্ডার ভরানো এবং নিয়মিত হারে খরচ চালানো এই শ্রেণির জন্য প্রায় অসম্ভব। এ অবস্থায়, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ জোরদার করে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি থাকলে তা আগেভাগে জানিয়ে সময়সূচি প্রকাশ করতে হবে, যাতে মানুষ প্রস্তুতি নিতে পারে। মাসিক বিলের বিপরীতে ন্যায্য সেবা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি এলাকার জন্য সমস্যা নিরসনে হটলাইন চালু করতে হবে, যেখানে তাৎক্ষণিক অভিযোগ জানানো সম্ভব হবে।
নুসরাত অপর্ণা
শনিরআখড়া, ঢাকা