আলোচিত ৭ খুন মামলার উচ্চ আদালতের রায় কার্যকরের দাবিতে মানববন্ধন
Published: 25th, April 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের মামলায় উচ্চ আদালতের দেওয়া রায় কার্যকরের দাবিতে মানববন্ধন করেছে নিহতদের পরিবাররের স্বজনরা ও এলাকাবাসী।
শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) সকাল ১১টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। এসময় নিহতদের পরিবাররের স্বজনরা ও স্থানীয় বাসিন্দারা অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ও বিচার বিভাগের কাছে হত্যাকারীদের বিচারের রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবী জানান।
মানববন্ধনে স্বামী হত্যার বিচারের রায় কার্যকরের দাবি জানিয়ে মামলার বাদী ও নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, আমরা আমাদের স্বজনদের হারিয়েছি ১১ বছর পার হয়ে গেছে। অথচ এখন পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট খুনিদের ফাঁসি দেননি।
বিচার বিভাগ ও অন্তর্র্বতী সরকার প্রধানের কাছে আমাদের একটাই দাবি, অন্তত আমাদের ৭ টা পরিবারের চিন্তা করে বিচার কার্যক্রম শেষ করা হোক। আমি আইন উপদেষ্টার প্রতি আবেদন করছি যে, আমরা ৭টা পরিবার কর্তাহারা হয়েছি।
আমাদের অবস্থা বিবেচনা করে সুপ্রিম কোর্টের বিচার কার্যক্রম শেষ করে দ্রুত মামলাটা নিষ্পত্তি করা হোক। আমরা এইটুকু দেখে যেতে চাই।
নিহত জাহাঙ্গীরের স্ত্রী সামছুন নাহার নুপুর বলেন, আমার স্বামীর হত্যার সময়ে আমার মেয়ে গর্ভে ছিল। এখন আমার মেয়ের বয়স ১১ বছর। অথচ এখন পর্যন্ত আমার মেয়ে তার পিতা হত্যার বিচার পায়নি। উচ্চ আদালতে মামলা ঝুলে রয়েছে। আমরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে আবেদন করছি যে, অন্তত আমাদেরকে এই হত্যার বিচারটা শেষ করে দেওয়া হোক। আমরা অসহায়।
নিহত তাজুলের পিতা আবুল খায়ের বলেন, বিগত ১১ বছর আমরা অপেক্ষা করতে এখন ক্লান্ত হয়ে গেছি। বর্তমান অন্তর্র্ব্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা এবং এটর্নি জেনারেলসহ সকলের কাছে আমাদের আকুল আবেদন এই অপেক্ষার পালা থেকে আমাদের রেহাই দেওয়া হোক। উচ্চ আদালত যেই রায় হয়েছে সেটি দ্রুত কার্যকর করা হোক।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের ভাই সালাম, মিজানুর রহমান, আহসান উল্লাহ মাষ্টার, খালেক, জালাল উদ্দিন, হারুন, নাসির উদ্দিন ও মাও.
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ ৭ জনকে অপহরণ করা হয়। ঘটনার তিনদিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের লাশ ভেসে ওঠে।
সাতজনকে অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল দুটি মামলা দায়ের করেন।
হত্যাকাণ্ডের ১১ মাস পর ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী সংস্থা নারায়ণগঞ্জ জেলা ডিবি পুলিশ দুটি মামলার অভিন্ন চার্জশিট আদালতে দাখিল করেন।
২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি চার্জশিটভুক্ত আসামি নাসিক ৪ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি নুর হোসেন, র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মাদ, সাবেক কোম্পানি কমান্ডার মেজর আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার মাসুদ রানাসহ ৩৫ জনকে দণ্ড প্রদান করেন নারায়ণগঞ্জের একটি আদালত। এর মধ্যে ২৬ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৯ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
উচ্চ আদালতে ২৬ জনের মধ্যে ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। বাকী ৯ জনকে দেওয়া কারাদণ্ডের রায় উচ্চ আদালত বহাল রাখেন। মামলাটি বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন বলে জানা গেছে।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স দ ধ রগঞ জ ন র য়ণগঞ জ নজর ল ইসল ম ন র য়ণগঞ জ ন উপদ ষ ট কর র দ ব ক র যকর জন র ম আম দ র পর ব র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
‘চট্টগ্রামে সাইক্লিস্ট ওসমানের মৃত্যু দুর্ঘটনা নয়, হত্যা’
গাড়ি চাপা দিয়ে সড়কে নির্মমভাবে সাইক্লিস্ট ওসমান গণিকে (১৯) হত্যা করেছে। ধাক্কা দেওয়ার পর ওসমানের মাথার ওপর গাড়ি চালিয়ে চলে যান আসামি। এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়, হত্যা। এ হত্যার বিচার হতে হবে। এখন আসামির বয়স নিয়ে লুকোচুরি করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম নগরের বড়পোল এলাকায় প্রাইভেট কারের ধাক্কায় নিহত সাইক্লিস্ট ওসমান হত্যার বিচারের দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনের এসব কথা বলেন উপস্থিত বক্তারা। আজ শুক্রবার বেলা তিনটায় নগরের জামালখান এলাকায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে এ মানববন্ধন আয়োজন করে চট্টগ্রাম সাইক্লিং কমিউনিটি। মানববন্ধন থেকে আসামির শাস্তির দাবি জানানো হয়।
এর আগে গত বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বড়পোল এলাকার সিলভার বেলস স্কুলের সামনে প্রাইভেট কারের ধাক্কায় নিহত হন ওসমান গণি। তিনি বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি থানার পূর্ব বাইশারী গ্রামের মোহাম্মদ নাছিরের ছেলে। এ ঘটনায় বুধবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে সড়ক পরিবহন আইনে হালিশহর থানায় মামলা করেন নিহত ব্যক্তির মামা আবুল কাশেম।
মামলায় প্রাইভেটকার চালক তানিম হোসেনকে (১৯) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি নগরের হালিশহর এল ব্লক এলাকার এরশাদ হোসেনের ছেলে। পুলিশ জানিয়েছে, তানিম তাঁর বাবার গাড়ি নিয়ে বিভিন্ন সময় সড়কে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতেন। কিন্তু তাঁর কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। শুরুতে তাঁর বয়স ১৬ থেকে ১৭ বলা হলেও মামলার এজাহারে তাঁর বয়স ১৯ উল্লেখ করা হয়েছে।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন নিহত ওসমানের বাবা মোহাম্মদ নাছির, মামা আবুল কাশেম, বাংলাদেশ সাইক্লিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল, সদস্য সুবীর মিত্র, জাতীয় পর্যায়ের সাইক্লিস্ট রাকিবুল ইসলাম প্রমুখ। এ ছাড়া সারা দেশের অন্তত ১০টি সাইক্লিং গ্রুপের সদস্যরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে ওসমানের বাবা মোহাম্মদ নাছির বলেন, ‘আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। তাঁর মৃত্যুতে আমাদের পরিবার ভেঙে পড়েছে। গ্রামের মানুষ, এলাকার লোকজন সবাই শোকাহত। ছেলে যে বাসায় কেয়ারটেকার ছিল সেখানে বাজার-সদাই সে করতে। সেদিনও সে একই উদ্দেশ্যে বেড়িয়েছিল।’
অন্য বক্তারা বলেন, লাইসেন্স ছাড়া কীভাবে সড়কে গাড়ি নিয়ে বের হয়? আবার তাঁকে এখন শিশু বানানো হচ্ছে। বাবার টাকা থাকলেই কী হত্যাকারীরা বের হয়ে যাতে পারে? আসামি একজন প্রাপ্ত বয়স্ক, তাঁকে শিশু বানিয়ে তাঁর বাবা ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা করছে। তাঁর ফেসবুকে তাঁর বেপরোয়া গাড়ি চালানোর ভিডিও সবাই দেখেছেন। বারবার প্রশ্রয় পেয়ে তিনি এমন বেপরোয়া হয়েছেন।