নারায়ণগঞ্জে ৭ খুন, মামলা রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি স্বজনদের
Published: 25th, April 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত সাত খুন মামলার রায় দ্রুত কার্যকরের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিগঞ্জের মৌচাক এলাকায় ঘণ্টাব্যাপী এই কর্মসূচি পালন করেন তারা।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন- সাত খুন মামলার বাদী ও নিহত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি, ভাই নূর মোহাম্মদ, আব্দুস সালাম, নিহত তাজুল ইসলামের বাবা আবুল খায়ের, তার ছোট ভাই রাজু আহমেদ, নিহত গাড়ি চলক জাহাঙ্গীরের স্ত্রী নূপুর।
মানববন্ধনে সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, “আমরা আমাদের স্বজনেদর হারিয়েছি ১১ বছর হলো। এখন পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে মামলার রায় ঝুলে আছে। বিচার বিভাগ ও অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের কাছে আমাদের একটাই দাবি, অন্তত আমাদের সাতটি পরিবারের কথা চিন্তা করে বিচার কার্যক্রম শেষ করবেন তারা। আইন উপদেষ্টার প্রতি আবেদন করছি, আমরা সাতটা পরিবার কর্তা হারিয়েছি। আমাদের অবস্থা বিবেচনা করে সুপ্রিম কোর্টের বিচার কার্যক্রম শেষ করে দ্রুত মামলাটি নিষ্পত্তি করা হোক। আমরা এইটুকু দেখে যেতে চাই।”
আরো পড়ুন:
মায়ের বিরুদ্ধে দেড় বছরের শিশুকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ
পরকীয়ার জের, প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে স্বামীকে হত্যা
নিহত জাহাঙ্গীরের স্ত্রী সামছুন নাহার নূপূর বলেন, “যখন আমার স্বামীকে হত্যা করা হয় তখন মেয়ে গর্ভে ছিল। এখন আমার মেয়ের বয়স ১১ বছর। অথচ এখন পর্যন্ত আমার মেয়ে তার বাবা হত্যার বিচার পায়নি। উচ্চ আদালতে মামলা ঝুলে রয়েছে। আমরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে আবেদন করছি, হত্যার বিচারটা যেন দ্রুত শেষ করা হয়।”
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালতে এক মামলায় হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লা স্টেডিয়ামের সামনে থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। ঘটনার দুইদিন পর শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এই ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে পৃথক দুইটি মামলা করেন ফতুল্লা থানায়। আসামিদের স্বীকারোক্তি, জবানবন্দি ও স্বাক্ষ্যগ্রহণ শেষে জেলা ও দায়রা জজ আদালত ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি রায় দেন। ৩৫ আসামির মধ্যে ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করেন আদালত।
রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ আপিল করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১৮ সালে ২২ আগস্ট হাইকোর্ট সাত খুনের অন্যতম আসামি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, আরিফ হোসেন, এম এম রানাসহ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করেন আদালত।
ঢাকা/অনিক/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য ন র য়ণগঞ জ ল ইসল ম আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
শিবচরে তরুণকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
মাদারীপুরের শিবচরে জামিনে থাকা আসামি রাকিব মাদবরকে (২৫) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে ২২ জনকে এজাহারভুক্ত ও অজ্ঞাত আরও ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বাদী হয়ে শিবচর থানায় মামলাটি করেন।
এর আগে গত রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের প্রধান সড়কে একটি ব্যাংকের সামনে রাকিব মাদবরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাকিব শিবচর উপজেলার চরশ্যামাইল এলাকার নাসির মাদবরের ছেলে। তিনি সরকারি বরহামগঞ্জ কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
দুই দিন পার হয়ে গেলেও এই ঘটনায় কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এর প্রতিবাদে আজ দুপুরে শিবচর পৌর বাজারের সদর রোডে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন। এ সময় বক্তারা বলেন, প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। একটা সভ্য স্বাধীন দেশে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড হতে পারে না। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার না করা হলে ভবিষ্যতে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেবেন তাঁরা।
মামলার বাদী নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বলেন, ‘রাকিবরে এতগুলো মানুষের সামনে কুপাইয়া মাইরা ফালাইলো। কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসলো না। যারা খুন করছে, তারা রাকিবের পূর্বশত্রু। আবুল কালাম সরদারের নির্দেশে তার লোকজন এই খুন করেছে। পুলিশ এ ঘটনায় কোনো আসামি এখন অবধি গ্রেপ্তার করে নাই। আসামিগো গ্রেপ্তার চাই, ফাঁসি চাই।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিবচর উপজেলার শিরুয়াইল ইউনিয়নের চরশ্যামাইল গ্রামের আবুল কালাম সরদারের লোকজনের সঙ্গে নিহত রাকিব মাদবরের লোকজনের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ৬ মে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের হামলায় আবুল কালাম সরদারের ছেলে ইবনে সামাদ নিহত হন। ইবনে সামাদ হত্যা মামলার আসামি রাকিব সম্প্রতি জামিন নিয়ে জেল থেকে বের হয়ে এলাকায় আসেন। রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের একটি সড়কে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাকিব। এ সময় ৪ থেকে ৫ জনের একটি দল ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাকিবের মৃত্যু হয়।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনায় ২২ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির স্বজন ও স্থানীয় লোকজন মানববন্ধন করে এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
আরও পড়ুনশিবচরে হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫