অভিভাবকশূন্য কুয়েট, নতুন প্রশাসনের কাছে প্রত্যাশা নিয়ে আলোচনায় শিক্ষার্থীরা
Published: 26th, April 2025 GMT
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যের পদ বর্তমানে শূন্য। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গতকাল শুক্রবার তাঁদের অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম চালু রাখার স্বার্থে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের ভেতর থেকে একজনকে সাময়িকভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলা হলেও এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এমন অবস্থায় কার্যত অভিভাবকশূন্য অবস্থায় আছে কুয়েট।
এদিকে উপাচার্য ও সহ–উপাচার্যকে অব্যাহতি দেওয়ায় খুশি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। নতুন প্রশাসনের কাছে প্রত্যাশা নিয়ে আজ শনিবার তাঁরা আলোচনায় বসছেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে সংঘর্ষের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস বর্জনের কর্মসূচি বহাল রাখার কথা জানিয়েছে শিক্ষক সমিতি।
আরও পড়ুনকুয়েটের উপাচার্য ও সহউপাচার্যকে অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন২০ ঘণ্টা আগেবিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও প্রথা অনুযায়ী, উপাচার্যের অবর্তমানে জ্যেষ্ঠ ডিন দায়িত্ব পান। এ বিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো.
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, শুক্র ও শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। এ জন্য তাঁরা ক্যাম্পাসে যাননি। গতকাল রাতে উপাচার্য ও সহ–উপাচার্যকে অব্যাহতি দিয়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অন্তর্বর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম চালু রাখার স্বার্থে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের মধ্য থেকে একজনকে সাময়িকভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু সেটা এখনো প্রক্রিয়াধীন। এখন প্রশাসন শূন্যই বলা যায়। তিনি বলেন, ‘এখন জ্যেষ্ঠ ডিন হচ্ছেন পুরকৌশল অনুষদের ডিন মুহাম্মদ হারুনার রশিদ। তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসি হিসেবে আসছেন বলে শুনেছি। তবে আসলে কে ওই পদে আসছেন, তা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে পারিনি। যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে মনে হয় না আমাদের এখানকার কোনো শিক্ষক এই পদ পেতে ইচ্ছুক। বিশেষ করে যাঁরা নিরপেক্ষ।’
আরও পড়ুনরক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর ৬৫ দিনের অচলাবস্থা, উপাচার্যের বিদায়ে অস্থিরতার অবসানের আশা২৪ এপ্রিল ২০২৫কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. ফারুক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আগে যে বিবৃতি দিয়েছি, এর বাইরে নতুন করে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ১৮ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত শেষে দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস বর্জনের আগের সিদ্ধান্ত বহাল আছে।’ এর আগে বৃহস্পতিবার উপাচার্য ও সহ–উপাচার্যকে অব্যাহতি দেওয়ার পদক্ষেপকে ‘ন্যায়বিচারের পরাজয়’ আখ্যা দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল শিক্ষক সমিতি।
ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি জানতে চাইলে কুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক মো. আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে ভিসি নেই, অভিভাবকশূন্য অবস্থা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আপাতত সমস্যা নেই। ভেতরে পুলিশ আছে। শিক্ষার্থীরা শান্ত আছে। হলে অবস্থান করছে।’
আরও পড়ুনঅনশন ভাঙলেন কুয়েটের শিক্ষার্থীরা, ক্যাম্পাসে উল্লাস২৩ এপ্রিল ২০২৫কুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের একজন সমন্বয়ক রাহাতুল ইসলাম বলেন, ‘রোববারের মধ্যে অ্যাক্টিং ভিসি দেওয়া হবে বলে আমরা জেনেছি। আজ আমাদের পাঁচটি ব্যাচের সব স্টুডেন্ট মিলে একটা সেন্ট্রাল মিটিং আছে। আমরা সেখানেই সব ঠিক করব, নতুন ভিসির কাছে আমাদের চাওয়া কী হবে।’
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। পরদিন শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন। ওই দিন দুপুরে সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এরপর আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবিতে ১৩ এপ্রিল বিকেল থেকে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। ১৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ১৮ ফেব্রুয়ারির সংঘর্ষের ঘটনায় ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়। গত বুধবার আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা হয়। ১৪ এপ্রিল সিন্ডিকেট সভায় যে ৩৭ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সেটি প্রত্যাহার করা হয়। এ ছাড়া ছাত্রদের ছয়টি ও ছাত্রীদের একটি হল আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয়। ৪ মে ক্লাস শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তবে কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শান্ত করতে ব্যর্থ হয়। তাঁরা কুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশনের মতো কর্মসূচিতে অনড় থাকেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সহ–উপাচার্যকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স দ ধ ন ত হয় উপ চ র য র স ঘর ষ র অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষকের সম্মান নিয়ে নাটক, প্রশংসিত ছাত্র-শিক্ষক উভয়ই
এবারের ঈদের অসংখ্য নাটকের ভিড়ে আলাদা করে দাগ কাটে ব্যতিক্রমী কিছু নাটক। তেমনি একটি নাটক 'সম্মান'। একজন নীতিবান শিক্ষক ও তার প্রতি এক আদর্শ ছাত্রের সম্মান প্রদর্শন করার গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে এ নাটক ৷ আকবর হায়দার মুন্নার গল্প অবলম্বনে নাটকটির চিত্রনাট্য করেছেন লিমন আহমেদ। পরিচালনা করেছেন তপু খান।
ক্লাব ইলেভেন এন্টারটেইনমেন্টের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার হওয়া এই নাটকে শিক্ষকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন বরেণ্য অভিনেতা তারিক আনাম খান। তার ছাত্রের ভূমিকায় আছেন ফারহান আহমেদ জোভান। এতে জোভানের বিপরীতে জুটি বেঁধেছেন কেয়া পায়েল। মূল তিনটি চরিত্রই মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে দর্শকের মনে।
১৩ জুন প্রচার হওয়া নাটকটি এরইমধ্যে ৫ লাখেরও বেশি দর্শক উপভোগ করেছেন। অদ্ভুত বিষয় হলো ১৬ হাজারেরও বেশি লাইক পড়া নাটকটিতে একটিও ডিজলাইক নেই৷ সাড়ে ৯ শতাদিক মন্তব্যের সবই নাটকটির বাস্তবধর্মী গল্প ও প্রধান তিনটি চরিত্রের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বিশেষ করে শিক্ষক চরিত্রে তারিক আনাম খান ও ছাত্রের চরিত্রে জোভানের অভিনয় দর্শকের মনে দাগ কেটেছে।
নাটকটির প্রতি মুগ্ধতা প্রকাশ করে নির্মাতা ও লেখক ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন, ‘মুন্না ভাই ও তপু খানের ‘সম্মান’ দেখলাম। দারুণ গল্প। জোভান অভিনেতা হিসেবে তার শতভাগ দিয়েছেন। কেয়া পায়েল সবসময়ই সাবলীল, প্রাণবন্ত। আর যার কথা বলতে একটু আয়োজন করে নিতে হয়, তিনি তারিক আনাম খান। আমি সবসময়ই ওনাতে মুগ্ধ। এখানে কেবল বাড়িয়েছেন সেটা। সব মিলিয়ে ‘সম্মান’এই ঈদের ভালো নাটকের তালিকার একটি।’
ক্লাব ইলেভেন এন্টারটেইনমেন্ট চ্যানেলে নাটকটির মন্তব্যের ঘরে রাফি আহমেদ নামে এক দর্শক লিখেছেন, 'সম্মান নাটকটি এক কথায় বাস্তব জীবনে আমাদের শিক্ষক এবং গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান ও তাদের গুরুদক্ষিণা দেওয়ার পরিপূর্ণ দৃষ্টান্ত প্রকাশ করে।'
কৌস্তব সান্ত্রা নামে ভারতীয় এক দর্শক নাটকটি দেখে মুগ্ধতা জানিয়ে লিখেছেন, 'কাঁটাতারের ওপার থেকে এ সম্মান নাটকটি দেখলাম। এই বছর ঈদের সেরা সেরা নাটক এই 'সম্মান' হওয়া উচিত। বাস্তব জীবনে শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবাসা তো এখন আর দেখাই যায় না খুব একটা। আমি বিগত ৭ বছর ধরে বাংলাদেশের নাটকগুলো দেখি নিয়মিত। এক কথায় অসাধারণ।'
এ নাটক নিয়ে পরিচালক তপু খান বলেন, 'গতানুগতিক ভাবনার বাইরে গিয়ে একটা কাজ করার পরিকল্পনা ছিল আমাদের।জানি এ ধরনের কাজগুলো ভিউ কম পায়। তবে সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে আমরা নাটকটি তৈরি করেছি। সে জায়গা থেকে আমরা সফল। শিক্ষকের প্রতি ছাত্রের কতোটা শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত, একজন আদর্শ শিক্ষক কেমন হওয়া উচিত সেই গল্প নিয়ে নিয়েই এই নাটক।
নাটকটি পছন্দ করার জন্য দর্শককে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তারিক আনাম খান, জোভান, কেয়া পায়েলসহ 'সম্মান' নাটকের পুরো টিম৷