শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য বরাদ্দ বাড়ছে
Published: 27th, April 2025 GMT
জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তায় বরাদ্দ আগামী অর্থবছরে আড়াই গুণ বেড়ে ৫৯৩ কোটি টাকা হচ্ছে। অর্থবছরের শুরু থেকেই শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের মাসিক ভাতা দেওয়ার পাশাপাশি এককালীন অর্থ এবং চিকিৎসা সুবিধা দেওয়া হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ খাতে বরাদ্দের বিষয়ে অর্থ বিভাগে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে শহীদ পরিবারের জন্য এককালীন ৩০ লাখ টাকা করে মোট ২৪৮ কোটি টাকা, আহত ব্যক্তিদের দেশে-বিদেশে চিকিৎসা, অনুদান ও পুনর্বাসনে ৩৯০ কোটি টাকাসহ মোট ৬৩৯ কোটি টাকা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে চাওয়া হয়। অর্থ বিভাগ জানায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ২৩২ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাকি ৪০৫ কোটি টাকা আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে দেওয়া হবে। তবে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় পরে জানায়, এসব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে আগামী অর্থবছরে সর্বমোট ৫৯৩ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বাড়তি বরাদ্দের এ প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরীর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বর্তমানে এককালীন কিছু নগদ অর্থ এবং চিকিৎসায় অনুদান দেওয়া হচ্ছে। নতুন বাজেটে এর পাশাপাশি মাসিক সম্মানী ভাতা দেওয়া হবে। এসব কারণেই বাড়তি বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, আহত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের কাজ এখনও শুরু হয়নি। তাদের চাকরি দেওয়ার পরিবর্তে অন্য কর্মসংস্থানের ওপর বেশি জোর দিচ্ছে সরকার। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ছাড়াও বেসরকারি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকার আহত ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের ব্যাপারে আলোচনা শুরু করেছে। পুনর্বাসনের কাজে সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক সভায় গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং আহতদের মাসিক ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মাসিক সম্মানী ভাতা, এককালীন নগদ সহায়তা-সংক্রান্ত হওয়ায় সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার নীতিগত অনুমোদন প্রয়োজন।
এতে আরও বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আহত ও শহীদদের বিষয়ে সব ধরনের কাজ পরিচালনার জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ অধিদপ্তর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস ও স্মৃতি সংরক্ষণ, গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার এবং আহত ছাত্র-জনতার পুনর্বাসনসহ গণঅভ্যুত্থানের আদর্শ ও চেতনাকে রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করবে।
অর্থ ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গেজেটভুক্ত জুলাই শহীদ পরিবার ৮৩৪টি। এর মধ্যে চলতি অর্থবছর ৮২৬ পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে এককালীন সহায়তা দেওয়ার জন্য বাজেটে ৮২ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। আট পরিবারকে সমান হারে সহায়তা দিতে আরও ৮০ লাখ টাকা দেওয়া হচ্ছে। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এসব পরিবারকে এককালীন আরও ২০ লাখ টাকা করে দেওয়া হবে। এ জন্য নতুন বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ থাকছে ১৬৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
চলতি বাজেটে প্রায় ২০ হাজার আহত ছাত্র ও গণমানুষের এককালীন চিকিৎসা সহায়তা বাবদ অনুদান খাতে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। নতুন বাজেটে এ খাতে আরও প্রায় ১৪০ কোটি টাকা রাখা হবে। চলতি বাজেটে শহীদ পরিবারের জন্য মাসিক সম্মানী ভাতা বাবদ কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। নতুন অর্থবছরের বাজেটে এ জন্য ৮৩৪ পরিবারের জন্য বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ২০ কোটি টাকা। প্রতি পরিবারকে মাসিক দেওয়া হবে ২০ হাজার টাকা করে।
আহতদের জন্য মাসিক সম্মানী বাবদ কোনো অর্থ চলতি বাজেটে রাখা হয়নি। তবে আগামী বাজেটে এ খাতে মোট ১৫৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা রাখা হচ্ছে। এর মধ্যে ‘এ’ ক্যাটেগরির ৪৯৩ জনকে মাসিক সম্মানী দেওয়া হবে ২০ হাজার টাকা করে। যারা পুরোপুরি দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন বা শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে গেছেন, তাদের অতি গুরুতর বা ‘এ’ ক্যাটেগারি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। গুরুতর আহত ব্যক্তিদের ‘বি’ ক্যাটেগরির ৯০৮ জনকে দেওয়া হবে প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা করে। একই সঙ্গে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে পাবেন ‘সি’ ক্যাটেগরির ১০ হাজার ৬৪৮ জন।
এ ছাড়া ২ হাজার ৪১৬ জন আহতের ক্যাটেগরিভিত্তিক তালিকা না পাওয়ায় তাদের মধ্যে ৫০ শতাংশকে এ ক্যাটেগরি বিবেচনায় এককালীন ৩ লাখ টাকা করে দেওয়া হবে। এতে ব্যয় হবে ৩৬ কোটি টাকা। বাকি অর্ধেক ‘বি’ ক্যাটেগরি বিবেচনায় এককালীন ২ লাখ টাকা করে দেওয়ার জন্য ব্যয় হবে ২৪ কোটি টাকা। একইভাবে ‘এ’ ক্যাটেগরি বিবেচনায় প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা এবং ‘বি’ ক্যাটেগরি বিবেচনায় ১৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। সব মিলিয়ে ক্যাটেগরিবিহীন ২ হাজার ৪১৬ আহত যোদ্ধার জন্য আগামী বাজেটে ব্যয় হবে ১১১ কোটি টাকার কিছু বেশি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গণঅভ য ত থ ন বর দ দ র খ র জন য ব ২০ হ জ র একক ল ন সরক র র আহত
এছাড়াও পড়ুন:
পাঁচ বছরে বাড়বে ৬৫ শতাংশ
গত অর্থবছরে বিদেশি ঋণের আসল বাবদ সরকার পরিশোধ করেছে ২০২ কোটি মার্কিন ডলার। সরকারের প্রাক্কলন হলো– চলতি অর্থবছরে এ বাবদ ব্যয় হবে ২৬২ কোটি ডলার। পরবর্তী তিন অর্থবছরে ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে যথাক্রমে ২৯০ কোটি, ৩১৩ কোটি এবং ৩৩৪ কোটি ডলার। সরকারের প্রাক্কলন অনুযায়ী পাঁচ বছরে ঋণের আসল পরিশোধ বাড়বে ৬৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ। বাজেট দলিল হিসেবে প্রকাশিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে (এমটিএমপিএস) এই প্রাক্কলন রয়েছে।
বিদেশি ঋণের আসলের পাশাপাশি সুদ পরিশোধ করতে হবে। আগামী অর্থবছরে দুটি মিলে ব্যয় হবে ৪৭০ কোটি ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৫৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। আগামী ২০২৭-২৮ অর্থবছর এ খাতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে ৬৮ হাজার ১৮২ কোটি টাকা।
নীতি বিবৃতিতে বলা হয়, মেয়াদপূর্তি, মুদ্রার অবমূল্যায়ন এবং কিছু ঋণের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে আগামী বছরগুলোতে ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়বে। মার্কিন ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশের টাকার অবমূল্যায়নের ফলে টাকার অঙ্কে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে। কেননা একই পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পরিশোধ করতে আরও বেশি টাকার প্রয়োজন হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে টাকার মূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে, যা এ সমস্যা তীব্রতর করেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং বর্তমান তারল্য সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য ঋণ পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থাপনা জরুরি।
এতে আরও বলা হয়, সরকারের সামগ্রিক ঋণ পরিস্থিতি এখনও টেকসই থাকলেও ঋণের পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে ক্রমেই বাড়ছে। দেশি-বিদেশি মিলে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষে সার্বিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ২১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়াবে ২৩ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা। ২০২৭-২৮ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়াবে ২৮ লাখ ৯৪ হাজার কোটি টাকা। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে হালনাগাদ তথ্য ব্যবহার করে আরও একটি ‘ডেট সাস্টিনিবিলিটি অ্যানালাইসিস’ বা ডিএসএ প্রতিবেদন প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যা সরকারি অর্থ ব্যবহার ও ঋণের ব্যবস্থাপনার স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ঋণের পরিমাণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সুদ ব্যয়ের পরিমাণও বাড়বে। চলতি অর্থবছর যেখানে সুদ বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ২০২৭-২৮ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়াবে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তিন বছরের ব্যবধানে সরকারের সুদ ব্যয় ৩১ হাজার কোটি টাকা বাড়বে।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের ঋণ স্থিতিশীলতা বিশ্লেষণ অনুযায়ী বাংলাদেশের ঋণ ঝুঁকি এখনও তুলনামূলকভাবে কম। তবে ভবিষ্যতে বৈদেশিক ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ রপ্তানির তুলনায় বাড়তে থাকলে স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়তে পারে। টেকসই পরিস্থিতির জন্য সক্রিয় ঋণ ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে।