নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করল কারিগরি শিক্ষার্থীরা
Published: 28th, April 2025 GMT
ছয় দফা দাবিতে আন্দোলনরত কারিগরি ছাত্র আন্দোলন নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এবার তারা সারাদেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে টানা শাটডাউন কর্মসূচি দিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার থেকে এ শাটডাউন কর্মসূচি শুরু হবে। শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত ছয় দফা দাবি না মানা পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে।
সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের দপ্তর সম্পাদক সাব্বির আহমেদ বিজ্ঞপ্তিতে সই করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রূপরেখা প্রণয়ন না করা পর্যন্ত আগামীকাল ২৯ এপ্রিল মঙ্গলবার থেকে সারা বাংলাদেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট একযোগে শাটডাউন কর্মসূচি পালন করবে।
শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি
১.
২. ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চার বছর মেয়াদি অব্যাহত রাখা এবং মানসম্মত সিলেবাস ও কারিকুলাম আধুনিক বিশ্বের আদলে প্রণয়ন করা।
৩. উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (দশম গ্রেড) পদে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি (সার্ভেয়িং) হতে পাস করা শিক্ষার্থী ছাড়া অন্য কেউ আবেদন করতে পারবে না। এ পদ সংরক্ষিত করতে হবে। প্রাইভেট সেক্টরে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা ছাত্রদের ন্যূনতম দশম গ্রেডের বেসিক অর্থাৎ ১৬ হাজার টাকা বেতন দিতে হবে।
৪. কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিটি প্রকাশ করে কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, উপ-পরিচালক, অধ্যক্ষ ও দায়িত্বে থাকা সকল পদে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবলকে দায়িত্ব/নিয়োগ দেওয়া।
৫. কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের বিতর্কিত সকল নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন এবং কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল সকল শূন্য পদে পলিটেকনিক ও টিএসসিতে দক্ষ শিক্ষক ও দক্ষ ল্যাব সহকারীর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা।
৬. ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য আধুনিক বিশ্বের আদলে একটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করার গেজেট পাস করতে হবে। বর্তমানে প্রস্তাবিত চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (নওগাঁ, ঠাকুরগাঁও, নড়াইল, খাগড়াছড়ি) শতভাগ সিট নিশ্চিত করা।
কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের দপ্তর সম্পাদক সাব্বির আহমেদ বিজ্ঞপ্তিতে সই করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রূপরেখা প্রণয়ন না করা পর্যন্ত আগামীকাল ২৯ এপ্রিল মঙ্গলবার থেকে সারা বাংলাদেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট একযোগে শাটডাউন কর্মসূচি পালন করবে। ছয় দফা না হয় মৃত্যু।
এর আগে দ্বিতীয় ধাপের আন্দোলনে গত দুদিনে সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ, গণমিছিল এবং সব জেলার ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারস, বাংলাদেশের (আইডিইবি) অফিসে অভিযোগপত্র জমা দেন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা।
ছয় দফা দাবিতে কয়েক মাস ধরে ধারাবাহিক কর্মসূচি করছেন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা। স্মারকলিপি, মানববন্ধন ও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের পর গত ১৬ এপ্রিল সকাল ১০টার দিক থেকে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সাতরাস্তা মোড়ে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন তারা। তাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ওই দিন সারা দেশে জেলায় জেলায় সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
দিনভর বিক্ষোভ-অবস্থানের পর সেদিন সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দেন যে, ১৭ এপ্রিল সকাল থেকে তারা সারাদেশে রেলপথ ব্লকেড কর্মসূচি করবেন। তবে রাতে সরকারের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানোয় তারা কর্মসূচি সাময়িক শিথিল করেন। এরপর সচিবালয়ে বৈঠকে যান। তবে বৈঠকে ডেকে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে বলে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
এরপর গত ২২ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করেন কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। সেদিন রাতে আন্দোলন সাময়িক স্থগিত রাখার ঘোষণাও দেন তারা।
কিন্তু পরদিন ২৩ এপ্রিল তারা আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা প্রত্যাহার করে ফের কর্মসূচি দেওয়ার কথা জানান। মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি জানিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প স কর
এছাড়াও পড়ুন:
লন্ডন বৈঠকে বিচার ও সংস্কারের বিষয়টি নির্বাচনের মতো গুরুত্ব না পাওয়া অত্যন্ত হতাশাজনক: এনসিপি
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ সংক্রান্ত আলোচনা যতটুকু গুরুত্ব পেয়েছে, বিচার ও সংস্কার ততটুকু গুরুত্ব পায়নি বলে মনে করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বিষয়টিকে ‘অত্যন্ত হতাশাজনক’ বলেছে দলটি।
আজ শুক্রবার রাতে এনসিপির এক বিবৃতিতে এই প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহউদ্দিন সিফাত বিবৃতিটি পাঠিয়েছেন।
এনসিপির বিবৃতিতে বলা হয়, রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা হিসেবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের আলোচনাকে ইতিবাচকভাবে দেখছে এনসিপি। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে লন্ডনে অনুষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার বৈঠকটি ‘সংসদ নির্বাচন’ বিষয়ে দলটিকে আস্থায় আনতে সফল হয়েছে সরকার। জাতীয় ঐক্য, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা জরুরি। কিন্তু বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ সংক্রান্ত আলোচনা যতটুকু গুরুত্ব পেয়েছে, অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে নাগরিকদের প্রধান দাবি তথা বিচার ও সংস্কার ততটুকু গুরুত্ব পায়নি। এটা অত্যন্ত হতাশাজনক বলে মনে করে এনসিপি।
নির্বাচন প্রশ্নে সরকার কেবল একটি রাজনৈতিক দলের অবস্থান ও দাবিকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে বলে বারবার প্রতীয়মান হচ্ছে—এ কথা উল্লেখ করে এনসিপি আরও বলেছে, জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, জুলাই সনদ কার্যকর করা এবং বিচারের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন গণ-অভ্যুত্থানকে স্রেফ একটি ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে পরিণত করবে এবং রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন–আকাঙ্ক্ষাকে অবদমিত করবে।
জনগণের দাবি তথা জুলাই সনদ রচনা ও কার্যকর করার আগে নির্বাচনের কোনো তারিখ ঘোষিত হলে তা জনগণ মেনে নেবে না বলে উল্লেখ করেছে এনসিপি। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কাজেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সংস্কারের বিষয়গুলোর ব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা ও জুলাই সনদ রচনা এবং কার্যকর করেই আসন্ন জুলাইকে যথাযথ মর্যাদায় স্মরণ করার উদ্যোগ নিতে সরকারকে জোর দাবি জানাচ্ছে এনসিপি।’
জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়নে জুলাই সনদ কার্যকর করা ও বিচারের রোডম্যাপ ঘোষণার পরই নির্বাচন সংক্রান্ত আলোচনা চূড়ান্ত হওয়া উচিত বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে এনসিপি।