ঠিকাদার কাজ শেষ না করেই টাকা তুলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহ সদরের আকুয়া মোড়লপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। উপজেলা প্রকৌশলী বলছেন, ভবনটির ৮০-৮৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে ঠিকাদার বিল উত্তোলন করেছে কাজের চেয়েও বেশি। বর্তমানে নির্মাণাধীন স্কুল ভবনে রাত হলেই বসে মাদকের আড্ডা।
উপজেলা প্রকৌশল দপ্তরের তথ্যমতে, ২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর কার্যাদেশ পেয়ে স্কুল ভবনের কাজ শুরু করে মেসার্স আয়ান এন্টারপ্রাইজ। ২০২১ সালের ৩ জুলাই কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও একই বছরের ২৪ জুন সর্বশেষ বিল উত্তোলন করে পালিয়ে যান ঠিকাদার গোলাম মোস্তফা। ৭৯ লাখ টাকার মধ্যে ৭০ লাখ ৬২ হাজার টাকাই তুলে নিয়েছেন ঠিকাদার। এ নিয়ে অভিযোগের পর সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে ৩ বছর ধরে চিঠি চালাচালি করেও কোনো সদুত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। আকুয়া দক্ষিণপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও ঠিকাদার গোলাম মোস্তফার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে দাবি তাদের।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল কবীর জানান, প্রায় ৫ বছর ধরে নির্মাণকাজ বন্ধ থাকার কারণে ঝুঁকি নিয়ে পুরোনো ভবনেই চলছে পাঠদান। সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে শ্রেণিকক্ষে। আবার শ্রেণিকক্ষের অভাবে অনেক সময় পাঠদান বন্ধ রাখতে হয়। একটি ছোট কক্ষে গাদাগাদি করে বসেন প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য সহকারী শিক্ষক। এ নিয়ে বারবার শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি।
সরেজমিন দেখা গেছে, নির্মাণাধীন ভবনের সিঁড়ির নিচে রয়েছে মাদক সেবনের অনেক উপকরণ। দোতলায় শ্রেণিকক্ষগুলোয় চলে রাতভর মাদকের আড্ডা। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩১৪। জরাজীর্ণ একতলা ভবনের তিনটি কক্ষে দুই শিফটে চলছে পাঠদান। ভবনের বিভিন্ন জায়গায় পলেস্তারা খসে পড়েছে।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আশঙ্কা, জরাজীর্ণ ভবনটি যে কোনো সময় ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। একটু ঝড়বৃষ্টি হলেই ভয়ে তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠান না বলে জানান পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীর অভিভাবক। এ ছাড়া মাদকসেবীদের বিচরণের কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা।
স্থানীয়রা জানান, ৩৫ বছর আগে আকুয়া মোড়লপাড়ায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে এলাকাবাসী মিলে উদ্যোগ নেন একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার। মানুষের দানের ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় কেনা হয় ৩৩ শতাংশ জমি। গ্রামের নামে নামকরণ হয় আকুয়া মোড়লপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়।
সমাজ রূপান্তর সাংস্কৃতিক সংঘের সভাপতি ও আকুয়া এলাকার বাসিন্দা ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘কাজটি সমধান করে দেওয়ার জন্য আমরা স্কুল কর্তৃপক্ষকে সঙ্গে নিয়ে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে গিয়েছি। তারা আমাদের কোনো পাত্তা দেননি। তাদের সদিচ্ছা থাকলে এতদিন স্কুলের কাজটা বন্ধ থাকত না। এখন মাদকসেবীদের জন্য নিরাপদ স্থান হিসেবে পরিণত হয়েছে ভবনটি।’
মেসার্স আয়ান এন্টারপ্রাইজের মালিক গোলাম মোস্তফার ভাষ্য, করোনা মহামারির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তিনি। এখনও তাঁর ১৫-১৬ লাখ টাকার মতো এ কাজে পাওনা। এই টাকা দিয়ে কাজ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন তাঁকে কোনো সহযোগিতা করছে না। এ ছাড়া সদর উপজেলার অন্য একটি কাজে তাঁর প্রায় ৩০ লাখ টাকা আটকে দিয়েছেন তারা। এসব কারণে দেউলিয়া তিনি। তবে তিনি চান দেশের উন্নয়নের স্বার্থে কাজগুলো 
সমাধা হোক।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম প্রিন্স বলেন, ‘অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকৌশলী স্কুলটি পরিদর্শন করেছেন। আমরা সে অনুযায়ী রিপোর্ট তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। হিসাব-নিকাশ করে ঠিকাদারকে জরিমানা করা হবে। জরিমানা আদায় করে দরপত্রের মাধ্যমে নতুন কাউকে দিয়ে কাজটি দ্রুত সময়ে শেষ করা হবে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর মকর ত উপজ ল ভবন র

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা

রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত

উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”

এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।

বিবৃতিতে  বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে। 

ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।

ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।

ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ