বিল তুলে পলাতক ঠিকাদার স্কুলে বসে মাদকের আড্ডা
Published: 29th, April 2025 GMT
ঠিকাদার কাজ শেষ না করেই টাকা তুলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহ সদরের আকুয়া মোড়লপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। উপজেলা প্রকৌশলী বলছেন, ভবনটির ৮০-৮৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে ঠিকাদার বিল উত্তোলন করেছে কাজের চেয়েও বেশি। বর্তমানে নির্মাণাধীন স্কুল ভবনে রাত হলেই বসে মাদকের আড্ডা।
উপজেলা প্রকৌশল দপ্তরের তথ্যমতে, ২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর কার্যাদেশ পেয়ে স্কুল ভবনের কাজ শুরু করে মেসার্স আয়ান এন্টারপ্রাইজ। ২০২১ সালের ৩ জুলাই কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও একই বছরের ২৪ জুন সর্বশেষ বিল উত্তোলন করে পালিয়ে যান ঠিকাদার গোলাম মোস্তফা। ৭৯ লাখ টাকার মধ্যে ৭০ লাখ ৬২ হাজার টাকাই তুলে নিয়েছেন ঠিকাদার। এ নিয়ে অভিযোগের পর সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে ৩ বছর ধরে চিঠি চালাচালি করেও কোনো সদুত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। আকুয়া দক্ষিণপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও ঠিকাদার গোলাম মোস্তফার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে দাবি তাদের।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল কবীর জানান, প্রায় ৫ বছর ধরে নির্মাণকাজ বন্ধ থাকার কারণে ঝুঁকি নিয়ে পুরোনো ভবনেই চলছে পাঠদান। সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে শ্রেণিকক্ষে। আবার শ্রেণিকক্ষের অভাবে অনেক সময় পাঠদান বন্ধ রাখতে হয়। একটি ছোট কক্ষে গাদাগাদি করে বসেন প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য সহকারী শিক্ষক। এ নিয়ে বারবার শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি।
সরেজমিন দেখা গেছে, নির্মাণাধীন ভবনের সিঁড়ির নিচে রয়েছে মাদক সেবনের অনেক উপকরণ। দোতলায় শ্রেণিকক্ষগুলোয় চলে রাতভর মাদকের আড্ডা। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩১৪। জরাজীর্ণ একতলা ভবনের তিনটি কক্ষে দুই শিফটে চলছে পাঠদান। ভবনের বিভিন্ন জায়গায় পলেস্তারা খসে পড়েছে।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আশঙ্কা, জরাজীর্ণ ভবনটি যে কোনো সময় ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। একটু ঝড়বৃষ্টি হলেই ভয়ে তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠান না বলে জানান পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীর অভিভাবক। এ ছাড়া মাদকসেবীদের বিচরণের কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা।
স্থানীয়রা জানান, ৩৫ বছর আগে আকুয়া মোড়লপাড়ায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে এলাকাবাসী মিলে উদ্যোগ নেন একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার। মানুষের দানের ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় কেনা হয় ৩৩ শতাংশ জমি। গ্রামের নামে নামকরণ হয় আকুয়া মোড়লপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়।
সমাজ রূপান্তর সাংস্কৃতিক সংঘের সভাপতি ও আকুয়া এলাকার বাসিন্দা ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘কাজটি সমধান করে দেওয়ার জন্য আমরা স্কুল কর্তৃপক্ষকে সঙ্গে নিয়ে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে গিয়েছি। তারা আমাদের কোনো পাত্তা দেননি। তাদের সদিচ্ছা থাকলে এতদিন স্কুলের কাজটা বন্ধ থাকত না। এখন মাদকসেবীদের জন্য নিরাপদ স্থান হিসেবে পরিণত হয়েছে ভবনটি।’
মেসার্স আয়ান এন্টারপ্রাইজের মালিক গোলাম মোস্তফার ভাষ্য, করোনা মহামারির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তিনি। এখনও তাঁর ১৫-১৬ লাখ টাকার মতো এ কাজে পাওনা। এই টাকা দিয়ে কাজ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন তাঁকে কোনো সহযোগিতা করছে না। এ ছাড়া সদর উপজেলার অন্য একটি কাজে তাঁর প্রায় ৩০ লাখ টাকা আটকে দিয়েছেন তারা। এসব কারণে দেউলিয়া তিনি। তবে তিনি চান দেশের উন্নয়নের স্বার্থে কাজগুলো
সমাধা হোক।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম প্রিন্স বলেন, ‘অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকৌশলী স্কুলটি পরিদর্শন করেছেন। আমরা সে অনুযায়ী রিপোর্ট তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। হিসাব-নিকাশ করে ঠিকাদারকে জরিমানা করা হবে। জরিমানা আদায় করে দরপত্রের মাধ্যমে নতুন কাউকে দিয়ে কাজটি দ্রুত সময়ে শেষ করা হবে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর মকর ত উপজ ল ভবন র
এছাড়াও পড়ুন:
দশমিনায় ভবন নির্মাণের ছয় মাসের মধ্যে খসে পড়ছে পলেস্তারা
পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার একটি মাদ্রাসার চারতলা ভবন নির্মাণের ছয় মাস যেতে না যেতেই পলেস্তারা খসে পড়ছে। উপজেলার মধ্য বগুড়া নূরিয়া দাখিল মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটেছে। ভবনটি নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।
জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দরপত্রের মাধ্যমে ৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ভবনটির নির্মাণকাজের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবুল কালাম আজাদ। ২০২০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ওই ভবনে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চারপাশের দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। সিমেন্টের পরিমাণ কম ও নিম্নমানের বালু ব্যবহার করার অভিযোগ করেন স্থানীয় লোকজন। নির্মাণকাজের সময় এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলেও ঠিকাদার তাঁদের কথায় কর্ণপাত করেননি।
মধ্য বগুড়া নূরিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট মো. মিজানুর রহমান বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ভবনটিতে পাঠদান শুরু হয়। এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়তে শুরু করে। যেভাবে পলেস্তারা খসে পড়ছে, তাতে মনে হচ্ছে ভবনটি ২০ বছর আগে নির্মিত হয়েছে। বিষয়টি তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মো. আজমের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোশফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত। এ কারণে ঠিকাদারের ২৭ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়নি। দ্রুত সময়ের মধ্যে ঠিকাদারকে ভবনটির পলেস্তারার কাজ আবার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।