দেশের অনেক এলাকা থেকেই গন্ধগোকুল হারিয়ে গেছে; কিন্তু পাবনার বেড়া পৌর এলাকার কয়েকটি মহল্লায় এখনো এ প্রাণীর বিচরণ চোখে পড়ে। তবে আগের মতো অত বেশি দেখা যায় না। প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক জোটের (আইইউসিএন) তালিকা অনুযায়ী এগুলো ‘বিপদাপন্ন’ প্রাণী।
প্রাণীটির আসল নাম গন্ধগোকুল হলেও বেড়া উপজেলায় এটি ‘নেল’ নামে পরিচিত। অনেকে এগুলোকে বাগডাশও বলেন। এর শরীর থেকে পোলাও চালের গন্ধের মতো মিষ্টি গন্ধ ছড়ায়। সন্ধ্যার পর অন্ধকার নামলে পৌর এলাকার বিভিন্ন বাড়ির ঘরের চাল ও গাছের ওপর দিয়ে শুরু হয় এর চলাচল। এ সময় এর শরীরের গন্ধ উৎপাদনকারী গ্রন্থি থেকে রস নিঃসৃত হতে থাকে বলে যে স্থান দিয়েই এরা যাক না কেন, বেশ কিছুক্ষণ ধরে সেখানে সেই গন্ধ নাকে আসে। তখন মহল্লার বাসিন্দারা বুঝতে পারেন, আশপাশে হয়তো গন্ধগোকুল আছে, নয়তো একটু আগেই আশপাশ দিয়ে গেছে।
দীর্ঘদিন ধরেই গন্ধগোকুল বা নেল নামের প্রাণীটির সঙ্গে বেড়া পৌরবাসীর সম্পর্ক। বেশির ভাগ বাসিন্দার কাছেই প্রাণীটি বেশ পছন্দের। তবে অল্প কিছু মানুষ এগুলোকে অপছন্দ করেন গৃহপালিত হাঁস-মুরগি, কবুতর ধরে নিয়ে যাওয়ার কারণে। তবে গত ১০-১২ বছরের মধ্যে পৌরবাসী এই প্রাণীকে ফাঁদ পেতে ধরেছেন বা এগুলোর কোনো ক্ষতিসাধন করেছেন বলে শোনা যায় না।
বন্য প্রাণী ও পরিবেশবিশেষজ্ঞদের মতে, গন্ধগোকুল প্রকৃতির উপকারী একটি নিশাচর প্রাণী। গন্ধগোকুল ব্যাঙ, ইঁদুরসহ ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে উদ্ভিদের বংশবৃদ্ধিতে দারুণ ভূমিকা রাখে; কিন্তু ভুল ধারণার কারণে অনেকেই প্রাণীটির জীবন হুমকির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। একটি সময় ছিল, যখন এগুলোকে দেশের প্রায় সর্বত্রই— বনাঞ্চল বা বনসংলগ্ন ঝোপঝাড় বা গ্রামাঞ্চলে দেখা যেত। তবে এখন এগুলো বিলুপ্তির পথে।
গন্ধগোকুল তাল ও খেজুরের রস পান করে, ইঁদুর, ছোট পাখি ও পোকামাকড় প্রভৃতি খেয়ে জীবনধারণ করে; কিন্তু কখনো কখনো গৃহপালিত হাঁস-মুরগি বা কবুতর ধরে নিয়ে যায় বলে মানুষ এগুলো ফাঁদ পেতে ধরে হত্যা করে। আবার অনেক সময় রাস্তা পারাপারের সময় গাড়িচাপায়ও মারা যায়। এতে এগুলোর অস্তিত্ব কিছুটা হুমকির মুখে পড়েছে। এগুলোকে বিপদাপন্ন বলা যেতে পারে।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গন্ধগোকুলের রয়েছে বিশেষ এক ভূমিকা। খাদ্যশৃঙ্খলের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান প্রাণীটির। এগুলো মূলত ক্ষতিকর পোকামাকড় ও ফলমূল খেয়ে এর বীজ বিস্তারের মাধ্যমে পরিবেশের প্রচুর উপকার সাধন করে। যেমন বটের ফল বা অন্যান্য ফল যখন খায়, তখন এর মলের দ্বারা নির্গত সেই বীজগুলো সফল উদ্ভিদে পরিণত হয়। অর্থাৎ এর পেটের ভেতর দিয়ে ফলের বীজগুলো গজানোর উপযুক্ত পরিবেশ (জার্মিনেশন) পায় বলে তা পরবর্তী সময়ে বীজের অঙ্কুরোদ্গমে শতভাগ কার্যকর হয়ে থাকে।
বছরে সাধারণত দুবার প্রজনন করে। গর্ভধারণকাল দুই মাসের কিছু বেশি। পুরোনো গাছের খোঁড়ল, গাছের ডালের ফাঁক, পরিত্যক্ত ঘর, ধানের গোলা বা তাল-সুপারির আগায় ছানা তোলে। সাধারণত প্রতিবারই ছানা হয় তিনটি।
বেড়ার মনজুর কাদের মহিলা কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, ‘দেশের অনেক এলাকা থেকেই গন্ধগোকুল বিলুপ্ত হতে বসেছে। তবে বেড়া পৌর এলাকায় এগুলোর বিচরণ যেমন কিছুটা বেশি, তেমনি পৌরবাসীও এগুলোর প্রতি সহানুভূতিশীল।’
প্রাণীটির ছবি তুলে রাজশাহী বিভাগীয় বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বন্য প্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবিরের কাছে পাঠালে তিনি সেটিকে ‘বাগডাশ’বলে শনাক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘প্রাণীটির অস্তিত্ব এখনো দেশের বিভিন্ন জায়গায় আছে। এর মধ্যে বেড়া পৌর এলাকায় এগুলোর বিচরণ কিছুটা বেশি বলে শুনেছি।’
বেড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, বাগডাশ বা গন্ধগোকুল মানুষের কাছাকাছি থাকে; কিন্তু মানুষ দেখলে খুবই ভয় পায়। খুবই লাজুক স্বভাবের প্রাণী এটি। আবাসভূমি ধ্বংস ও হাঁস-মুরগি বাঁচানোর জন্য ব্যাপক নিধনের কারণে এগুলো এখন বিপন্ন। তবে প্রাণীটি কিন্তু প্রকৃতির বন্ধু। তাই সবারই উচিত এগুলোর প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পুলিশ পরিচয়ে ঘরে ঢুকে বেঁধে মারধর, ভাঙচুর ও লুটপাট
ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলায় পুলিশ পরিচয়ে ঘরে ঢুকে পরিবারের সবাইকে বেঁধে মারধর করে স্বর্ণালংকার ও মুঠোফোন লুট করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় ছয়টি দোকান ভাঙচুর ও মালামাল লুট করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ভোরে উপজেলার দক্ষিণ অনইলবুনিয়া গ্রামের বটতলা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভুক্তভোগী পরিবারের প্রধান হারুন অর রশিদ (৬৫) থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা বলছেন, ৯৯৯–এ ফোন করা হলেও এক কিলোমিটার দূরের কাঁঠালিয়া থানা থেকে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসেছে আড়াই ঘণ্টা পরে।
হারুন অর রশিদ বলেন, ২০০৭ সালে বটতলা বাজারে ছয় শতাংশ জমি কিনে ছয়টি টিনের দোকানঘর তৈরি করে ব্যবসা শুরু করেন তিনি ও তাঁর দুই ছেলে। এর পেছনেই বসতঘর তৈরি করে তাঁরা বসবাস করছেন।
হারুন অর রশিদের ছেলে মেহেদী হাসান বলেন, ভোরে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র হাতে বাড়িতে প্রবেশ করে অন্তত ১৫ জন দুর্বৃত্ত। প্রথমেই তারা পরিবারের সব সদস্যকে মারধর করে হাত–পা বেঁধে ফেলে। পরে ঘরের মধ্যে থাকা ৫টি মুঠোফোন ও ১০ ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। এ সময় বাইরে অবস্থান করা ৫০ জনের একটি দল তাঁদের ছয়টি দোকান ভেঙে গুঁড়িয়ে মালামাল, টিন ও কাঠ ট্রাক ভরে নিয়ে গেছে। ছয়টি দোকানের মধ্যে ছিল মুদির দোকান, চায়ের দোকান, কসমেটিকসের দোকান ও মুরগির দোকান। ঘটনার সময় ভোরের আলো ফোটেনি, কেবল ফজরের আজান হচ্ছিল। দুর্বৃত্তরা তাঁর ছোট দুই বোনকে ব্যাপক মারধর করেছে।
মেহেদী হাসান বলেন, সম্প্রতি ফয়সাল আহম্মেদ নামের একজনের কাছ থেকে বটতলা বাজারে ছয় শতাংশ জমি কেনেন নাসির খান নামের ঢাকার এক ব্যবসায়ী। গত ২২ এপ্রিল জমির দলিল করেই তাঁদের জমিকে নিজের কেনা সম্পত্তি দাবি করে উচ্ছেদের জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছিলেন নাসির খান। তাঁর ভাড়া করা লোকজন এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নাসির খানের মুঠোফোনে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
কাঁঠালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মং চেনলা বলেন, ঘটনা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, জনবল কম থাকায় ঘটনাস্থলে যেতে দেরি হয়েছে।