ফরিদপুরে আধিপত্য নিয়ে সংঘর্ষে একজন নিহত, আহত ৩০
Published: 5th, May 2025 GMT
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধে দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ঘারুয়া ইউনিয়নের মকরমপট্টি গ্রামে গতকাল রোববার রাতে।
নিহত কুদ্দুছ মোল্লার (৫৫) বাড়ি মকরমপট্টি এলাকায়। আহত ব্যক্তিদের ভাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঘারুয়া ইউনিয়নের মকরমপট্টি গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুটি পক্ষ রয়েছে। এক পক্ষের নেতৃত্ব দেন মকরমপট্টি গ্রামের দবির মাতুব্বর (৬৫) ও অপর পক্ষের নেতৃত্ব দেন একই গ্রামের বজলু মুন্সী (৬০)। গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে দুই পক্ষের কয়েক শ লোক ঢাল, সড়কি, রামদা ও ইটপাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। দুই পক্ষের দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। দুই ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ হয়।
সংঘর্ষে আহত কুদ্দুছ মোল্লাকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ভাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্মকর্তা তানসিভ জুবায়ের বলেন, সংঘর্ষে আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কুদ্দুছ মোল্লা নামের এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে আনার পর মৃত ঘোষণা করা হয়। তাঁর গলায় ধারালো অস্ত্রের কোপের চিহ্ন আছে।
নিহত কুদ্দুছ মোল্লার ছেলে মিঠুন মোল্লা (২০) বলেন, ‘আমার বাবাকে দবির মাতুব্বরের নেতৃত্বে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আধিপত্য বিস্তারের বিরোধেই এই ঘটনা ঘটেছে।’
ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এ সংঘর্ষ ঘটেছে। এতে একজন নিহত হয়েছেন। বেশ কিছু লোক আহত হয়েছেন। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ঘর ষ
এছাড়াও পড়ুন:
মাইক্রোবাসের সূত্র ধরে গ্রেপ্তার মিরপুরে গুলি ছুড়ে টাকা ছিনতাইয়ে জড়িতরা
রাজধানীর মিরপুরে প্রকাশ্যে গুলি ছুড়ে ও ছুরিকাঘাত করে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীর ২১ লাখ টাকা ও বৈদেশিক মুদ্রা লুটে জড়িত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসের সূত্র ধরে তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. জাফর (৩৩), মোস্তাফিজুর রহমান (৪০), সৈকত হোসেন ওরফে দিপু মৃধা (৫২), সোহাগ হাসান (৩৪), জলিল মোল্লা (৫২) ও পলাশ আহমেদ (২৬)। মঙ্গলবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা গত ২৪ জানুয়ারি কামরাঙ্গীরচর থানা এলাকায় গুলি করে ৫০ ভরি স্বর্ণ লুট এবং গত ২০ অক্টোবর সাত মসজিদ রোড ধানমন্ডি থানা এলাকায় গুলি করে ৫২ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততা স্বীকার করেছেন।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে ডিবির যুগ্ম কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম জানান, গত ২৭ মে সকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মাহমুদ মানি এক্সচেঞ্জের মালিক রাসেল ও তার ভগ্নিপতি জাহিদুল হক চৌধুরী তাদের মিরপুর-১১ নম্বরের সি-ব্লকের বাসা থেকে একটি কালো ব্যাগে ব্যবসার ২১ লাখ টাকা ও বেশ কিছু বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের (মিরপুর ১০ নম্বর) উদ্দেশে হেঁটে রওনা হন। তারা সকাল আনুমানিক ৯টা ৪০ মিনিটে শেরেবাংলা ন্যাশনাল স্টেডিয়াম ও ফায়ার সার্ভিসের মাঝের গলির মাথায় পৌঁছালে সেখানে আগে থেকে চারটি মোটরসাইকেলে ওত পেতে থাকা অজ্ঞাতপরিচয় ৭-৮ জন মাস্ক পরা দুর্বৃত্ত তাদের পথরোধ করে। তাদের একজন জাহিদুল হক চৌধুরীর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে তার হাতে থাকা টাকা ভর্তি ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়। জাহিদুল হক এবং তার শ্যালক রাসেল ডাকাত দলকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলে মুখোশধারী একজন ফাঁকা গুলি করে ভীতির সৃষ্টি করে এবং অপর একজন ধারালো চাপাতি দিয়ে জাহিদুলের কোমরের বাম পাশে আঘাত করে। চাপাতির আঘাতে জাহিদুল গুরুতর জখম হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়লে অজ্ঞাতপরিচয় দুর্বৃত্তরা টাকার ব্যাগটি নিয়ে মোটরসাইকেলে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে মিরপুর-১ নম্বরের দিকে পালিয়ে যায়। এ ঘটনাটি একজন পথচারী তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করলে তা ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় জাহিদুল হক চৌধুরীর অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা হয়।
ডিবি সূত্র জানায়, চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ডিবির একাধিক টিম ঘটনার রহস্য উদঘাটন, জড়িতদের গ্রেপ্তার, ব্যবহৃত অস্ত্র ও গাড়ি উদ্ধারের লক্ষ্যে মাঠে নামে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ডিবির টিম ঘটনায় ব্যবহৃত একটি হাইয়েস মাইক্রোবাস শনাক্ত করে অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে মাইক্রোবাসটির চালক জাফরকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাফর মাইক্রোবাসটি ডাকাতির কাজে ব্যবহারের কথা স্বীকার করেন। ডিবি টিম তার দেওয়া তথ্য মতে গাজীপুর টঙ্গী এলাকা থেকে মাইক্রোবাসটি জব্দ করে।
ডিবি সূত্র আরও জানায়, তথ্যপ্রযুক্তির চূড়ান্ত বিশ্লেষণে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ডিবির একাধিক টিম একইসঙ্গে ঢাকা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ময়মনসিংহ ও যশোর জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ডাকাতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত ডাকাতদলের মূল পরিকল্পনাকারী জলিল মোল্লাসহ অপরাপর সদস্য মোস্তাফিজ, পলাশ, দিপু ও সোহাগকে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত পাঁচ লাখ তিন হাজার টাকা ও ১০৬ টি বিভিন্ন মানের বৈদেশিক মুদ্রা, দুই লাখ ১২ হাজার টাকা মানের জাল নোট এবং ঘটনায় ব্যবহৃত তিনটি মোটরসাইকেল ও একটি মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, একটি চাপাতি এবং তিনটি খেলনা পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তাররা পেশাদার ডাকাত এবং তাদের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ডাকাতি, খুন, অস্ত্রসহ বিভিন্ন অপরাধের একাধিক মামলা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদের গ্রেপ্তারসহ অবশিষ্ট মালামাল উদ্ধারে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।