এক জোড়া মহিষকে মালিক পুকুরে গোসল করাতে নামিয়েছিলেন। হঠাৎ পুকুর থেকে জোড়া ভেঙে একটি মহিষ দৌড় দেয়। সেটা আগের দিন দুপুরের ঘটনা।

সারা দিন মহিষটা এ–গ্রাম, সে–গ্রাম দৌড়ে বেড়ায়। মালিক ধরতে পারলেন না। এভাবে সারা রাত যায়। মহিষটি এক জেলা থেকে আরেক জেলায় যায়।

শেষ পর্যন্ত পরের দিন ২৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার দুটি বিলের অন্তত ১০ বিঘা ভুট্টাখেত নষ্ট করার পরে দড়ির ফাঁদ পেতে গ্রামবাসী মহিষটাকে আটকাতে সক্ষম হন।

ততক্ষণে মহিষের গুঁতা ও লাথিতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর অবস্থায় দুজনকে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

মহিষটাকে ধরতে পারাই শেষ কথা নয়। মহিষের মালিকের নাম এমদাদুল হক। তাঁর বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আরিপপুর গ্রামে। তিনি আর মাহিষটাকে গাড়িতে তুলতে পারেন না। পাশের গ্রাম থেকে তিন-চারজন নেতা আসেন। তাঁরা দাবি করেন, এই মহিষ ধরতে গিয়ে তাঁদের লোকজন আহত হয়েছেন—তার খেসারত দিতে হবে। তাঁদের ১০ হাজার টাকার দাবি। তাঁদের একজন হুমকি দিয়ে মহিষের মালিককে বলেন, ‘তোর কোন বাপ আছে! মহিষ গাড়িত তোল তো দেখি!’

মালিক এই লেখককে বলেছেন, ‘গ্রামের লোক যারা মহিষ ধরতে গিয়ে খামখুট্টা হইচে, তাদের জন্য ছয় হাজার টাকা দিছি, তারা খুশি হইচে। এই নেতারা তো মহিষ ধরতে তো সাহায্য করেইনি, বরং মহিষটা গায়েব করার চেষ্টা করতে গিয়ে তাদের একজন আঘাত পাইচে। এই জন্য তারা এই দাবি করতিচে।’

মহিষের মালিকের মুখে এই কথা শুনে প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁর লেখা ছোটগল্প ‘নছর প্যায়াদা’র কথা মনে পড়ে গেল।

ওই গল্পে দেখা যায়, গাঁয়ের একজনের বড়শিতে একটা কাছিম ধরা পড়েছে। কাছিমটাকে তারা পিটিয়ে মেরেছে। নছর প্যায়াদা ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি গিয়ে বললেন, ‘এ যে আমার রানিমার কাছিম।’

এবার যা হওয়ার তা হলো। গাঁয়ের লোকেরা নছরের ধাতানি খেলেন। রেহাই পেলেন না গাঁয়ের মোড়লও। তাঁর বাড়িতে মোরগ পোলাও খেয়ে ট্যাঁকে ১০ টাকা গুঁজে কাছারিতে ফিরলেন নছর।

গল্পের নছর একবার মাছ কিনে মাছওয়ালাকে টাকা না দিয়েই বাড়ি ফিরলেন। কয়েক দিন পর তিনি নছরের কাছ থেকে টাকা চাইলেন। নছর বললেন, ‘তোমার মাছ কেমন জাতের গো? তোমার মাছ কেটেকুটে ধোয়ার জন্য নিয়ে গেলাম ওই পুকুরে। পানিতে দিতেই মাছ লাফ দিয়ে পুকুরে চলে গেল। রানিমার বিলের মাছ যদি রানিমার পুকুরেই চলে যায়, নছর খাঁ তাতে বাধা দেন কী করে। তা বাবা মাছের ব্যাটা, তোর যদি পরানে না সয়, তবে ওই পুকুর থেকে মাছটা টপ করে ধরে নিয়ে যা। আর আমাকে জ্বালাতন করিসনে।’

মহিষের মালিক এমদাদুল হকের মহিষ ধরার ঘটনা গত ২৫ এপ্রিল প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘দড়ি ছিঁড়ে দৌড় দেওয়া মহিষ ধরতে মালিকের বিরামহীন ৩০ ঘণ্টা’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। কিন্তু পরের ঘটনাটি ঘটেছে রাতে।

মালিক মহিষ গাড়িতে তুলতে পারছিলেন না। অবশেষে এ যুগের নছর প্যায়াদার ট্যাঁকে টাকা গুঁজে দিয়ে দিয়ে মালিক গভীর রাতে মহিষ নিয়ে বাড়ি ফেরেন। পরের দিন ফোন করে তাঁর দুঃখের কথা জানান।

সম্প্রতি এমন এক প্যায়াদার হাতে পড়েছেন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার এক হোটেল ব্যবসায়ী। তাঁর পরিচিত একজনের হাতে মার খেয়েছেন একজন স্থানীয় মাস্তান। এখন সেই মাস্তান এসে ধরেছেন হোটেল ব্যবসায়ীকে। তিনি বলছেন, হোটেল ব্যবসায়ীকে ১০ হাজার টাকা দিতে হবে। কারণ, যে লোক তাঁকে মেরেছে, সে নাকি হোটেল ব্যবসায়ীর কাছে প্রশ্রয় পায়। এটা তাঁর অপরাধ।

এ নিয়ে স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মীমাংসা করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন, কিন্তু এই মাস্তান কারও মীমাংসা মানবেন না। তিনি নাকি তাঁর বাবাকেও মানেন না।

একদিন এই হোটেল ব্যবসায়ী প্রথম আলো রাজশাহী কার্যালয়ে এসে কান্নাকাটি করে গেলেন। ওই মাস্তানের নাকি ‘মাল খাইতে’ খরচ হয়েছে। ১০ হাজার টাকা তাঁর ভাইয়ের কাছ থেকে ধার হয়েছে। এই টাকা তাঁকে দিতে হবে।

হোটেলের মালিক বলছেন, ওই লোকের সঙ্গে তাঁর কোনোই সম্পর্ক নেই। তবু এই মাস্তান বুঝতে চাইছেন না। তিনি (হোটেলের মালিক) আবার নাম প্রকাশ করে নিউজ করার ব্যাপারেও ভয় পাচ্ছেন।

গল্পের নছরের নামে কেউ অভিযোগ করার সাহস পেতেন না। তিনি মাছ কিনে অর্ধেক দাম দিতেন। একবার এক জেলে জমিদারের কাছারিতে গিয়ে নায়েব মশায়ের কাছে নছরের নামে অভিযোগ করেছিলেন এবং অনুরোধ করেছিলেন, নছর যেন বাজারে না যান। কারণ, তিনি মাছের পুরো দাম দেন না। পরে এমন ঘটনা ঘটল যে পরের সপ্তাহে সেই জেলে এসে নায়েব মশায়ের কাছে হাতজোড় করে বললেন, ‘কর্তা মশায়, নছর খাঁকে হাটে যাওয়ার হুকুমটা দিয়ে দিন।’

নিউজ করলে নাকি হোটেল ব্যবসায়ীর সেই জেলের মতো অবস্থা হতে পারে। এ কারণে তিনি ভয় পাচ্ছেন।

শুধু হোটেল ব্যবসায়ী নন, সম্প্রতি এক বিএনপি নেতা দুঃখ করে বললেন, তিনি মোটা টাকার একটি ঠিকাদারি কাজ পেয়েছেন। এ জন্য তিনি কাউকে সুপারিশ করতে বলেননি। গোপনে কাজটি করেছেন। কোনো অংশীদারও নেই তাঁর সঙ্গে। এ খবর পেয়েছেন দলের আরেকটি অংশের নেতারা। তাঁরা দাবি করে বসেছেন, এ কাজের জন্য তাঁরা সুপারিশ করেছিলেন। তাঁদের ১০ লাখ টাকা ভাগ দিতে হবে। ঠিকাদার নেতা কোনো উপায় না পেয়ে ৫ লাখ টাকা দিতে রাজি হন; কিন্তু তাঁরা ১০ লাখ টাকার কম নেবেন না।

আরেকটি ঘটনা গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের। রাজশাহী নগরের নিউমার্কেট এলাকায় একটি চায়নিজ রেস্তোরাঁ হঠাৎ করে চালু হলো। বেশ কয়েক দিন ধুমধাম চলল। হঠাৎ করে রেস্তোরাঁটি বন্ধ পাওয়া গেল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, তারা নাকি ‘প্রফিট’ করতে পারছে না। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, এবার অংশীদারদের মধ্যে ভাগবাঁটোয়ারা নিয়ে জটিলতা তৈরি হলো। পাঁচ লাখ টাকার দায়দেনা। এক পক্ষ বিচার দিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জেলার এক নেতার ছোট ভাইয়ের কাছে।

দুপক্ষকে নিয়ে ওই নেতার ছোট ভাই বেশ কয়েক দিন বৈঠক করলেন। তারপর টাকার আর কোনো খোঁজ নেই। দীর্ঘদিন পর ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ওই নেতার ছোট ভাইয়ের কাছে টাকার খোঁজ নিতে গেলেন। তিনি চোখ উল্টে বললেন, মাত্র পাঁছ লাখ টাকা—একে দিতে হয়েছে, তাকে দিতে হয়েছে, তারপর আর টাকা থাকে!

গল্পের নছর একবার মাছ কিনে মাছওয়ালাকে টাকা না দিয়েই বাড়ি ফিরলেন। কয়েক দিন পর তিনি নছরের কাছ থেকে টাকা চাইলেন। নছর বললেন, ‘তোমার মাছ কেমন জাতের গো? তোমার মাছ কেটেকুটে ধোয়ার জন্য নিয়ে গেলাম ওই পুকুরে। পানিতে দিতেই মাছ লাফ দিয়ে পুকুরে চলে গেল। রানিমার বিলের মাছ যদি রানিমার পুকুরেই চলে যায়, নছর খাঁ তাতে বাধা দেন কী করে। তা বাবা মাছের ব্যাটা, তোর যদি পরানে না সয়, তবে ওই পুকুর থেকে মাছটা টপ করে ধরে নিয়ে যা। আর আমাকে জ্বালাতন করিসনে।’

প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁর প্যায়াদা এখন এখানে–ওখানে–সবখানে। তাদের বাড়বাড়ন্ত আর কত দিন চলবে কে জানে!

আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ, নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ ট ল ব যবস য় ওই প ক র র জন য বলল ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘ইনসাফ’-এ মোশাররফ করিমের ভয়ঙ্কর রূপ!

চোখে সানগ্লাস, মুখে ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি, পোশাকে রক্তের ছিটেফোঁটা, হাতে কুড়াল, ঘাড়ে ঝুলানো থেটোস্কোপ, মেরে পায়ের নিচে ফেলে রেখেছেন একজনকে– দেখেই বোঝা যাচ্ছে, প্রতিশোধের নেশায় দাঁড়িয়ে আছেন অভিনেতা মোশাররফ করিম।

এমন ভয়ঙ্কর চরিত্রে মোশাররফ করিমকে আগে দেখা যায়নি কখনও। দেখা যাবে হয়তো এমনটি তার দর্শকরা ভাবেওনি। অথচ সেই ভয়ঙ্কর রূপেই অভিনেতাকে এবার দেখলেন; যা একেবারে চেনা ছকের বাইরে, ভিন্ন একজন।

রোববার সন্ধ্যায় নির্মাতা সঞ্জয় সমদ্দারের ‘ইনসাফ’ সিনেমায় দ্বিতীয় পোস্টার প্রকাশ করা হয়। পোস্টারটিতেই মোশাররফ করিমকে এমন ভয়ঙ্কর রূপে দেখা গেল। সেই সঙ্গে পরিচালক ইঙ্গিত দিলেন ঈদুল আজহায় যে মোশাররফ সামনে আসছেন তিনি। চিরচেনা নন। ভিন্ন একজন, ভয়ঙ্কর একজন।

নির্মাতা আগেই জানিয়েছিলেন, অ্যাকশন থ্রিলার গল্পের সিনেমা ‘ইনসাফ’। এতে দানবীয় ও ভয়ঙ্কর রূপে দেখা যাবে মোশাররফ করিমকে। পোস্টার উন্মোচন যেন সেটারই আভাস দিল। ‘ইনসাফ’ সিনেমায় নায়ক হিসেবে আছেন শরীফুল রাজ। ধুন্ধুমার অ্যাকশন অবতারে এতে রাজকে উপস্থাপন করা হবে। সিনেমায় শরীফুল রাজের বিপরীতে নায়িকা হিসেবে থাকছেন তাসনিয়া ফারিণ। আর এ সিনেমার মাধ্যমেই ঢাকার চলচ্চিত্রের পুরোপুরি কমার্শিয়াল সিনেমার নায়িকা হিসেবে অভিষেক হচ্ছে তার।

গত ২৫ এপ্রিল প্রকাশিত হয় ফার্স্ট লুক পোস্টার। হাতে রক্তাক্ত কুড়াল, ঠোঁটে মুচকি হাসি, চেহারায় রক্তের দাগ নিয়ে হাজির করা হয় রাজকে। পোস্টারটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে লেখা হয়েছে, ‘ইনসাফ শুধু একটি শব্দ নয়, এটি একটি জীবনবোধ!’ সে পোস্টারে সিনেমাটির নায়ক শরিফুল রাজকে পরিচিত করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় এবার এলো মোশাররফ করিমের পরিচিতি। তবে এ সিনেমায় মোশাররফ করিম নেতিবাচক না ইতিবাচক, সে কথা খোলাসা করেননি।

গত ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়েছে ইনসাফের শুটিং। এখন চলছে শেষ অংশের কাজ। ঈদুল আজহায় মুক্তি পাবে ‘ইনসাফ’। বাংলাদেশে প্রথম হলেও ইনসাফ সঞ্জয় সমদ্দারের দ্বিতীয় সিনেমা। এর আগে জিৎকে নিয়ে টালিউডে ‘মানুষ’ নামের সিনেমা বানিয়েছিলেন তিনি।

সিনেমাটি প্রযোজনা করছে তিতাস কথাচিত্র। এ সিনেমা দিয়ে দীর্ঘদিন পর চলচ্চিত্র প্রযোজনায় এসেছে প্রতিষ্ঠানটি। সঙ্গে রয়েছে টিওটি ফিল্মস। সিনেমাটিতে শরিফুল রাজের সঙ্গে অভিনয় করেছেন নাটকের অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণ। এই ছবির মাধ্যমে পুরোপুরি কমার্শিয়াল ছবির নায়িকা হয়ে আসছেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শিশু ধর্ষণ মামলায় জামালপুরে একজনের যাবজ্জীবন
  • কালিহাতীর কুকরাইলে যুবককে কুপিয়ে হত্যা
  • প্রেমের মাঠে নেইমার: তিন প্রেমিকা, তিন সন্তান এবং আরও একজনের অপেক্ষা
  • এপ্রিলে নির্যাতনের শিকার ৩৩২ নারী 
  • ‘ইনসাফ’-এ ভয়ংকর রূপে মোশাররফ করিম
  • ভয়ংকর রূপে হাজির ‘ইনসাফ’-এর মোশাররফ করিম
  • বহিরাগতদের নিয়ে রাবি ছাত্রদলের মিছিল, সাইকেল চুরির অভিযোগ
  • ভয়ঙ্কর রূপে হাজির ‘ইনসাফ’-এর মোশাররফ করিম
  • ‘ইনসাফ’-এ মোশাররফ করিমের ভয়ঙ্কর রূপ!