নির্বাচনের সময়সীমা ডিসেম্বর অতিক্রম করা যৌক্তিক হবে না: বাসদ
Published: 15th, May 2025 GMT
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেছেন, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে। রাষ্ট্রের সব কটি অংশে যেমন আছে, তেমনটি থেকে যাক, এটা কেউ চায় না। সংস্কার অর্জন না হলে এটা কারও জন্য ভালো হবে না। তিনি এ–ও বলেন, নির্বাচনের সময়সীমা ডিসেম্বর অতিক্রম করা যৌক্তিক হবে না।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কথা বলেন বজলুর রশীদ ফিরোজ।
সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সঙ্গে বৈঠক করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
সংস্কার বাস্তবায়নে বাসদের অবস্থান স্পষ্ট করে বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘আমাদের আলোচনার বড় অংশ ছিল সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব নিয়ে। আমরা মনে করি, ছোট সংশোধন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অধ্যাদেশের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার এবং মৌলিক সংশোধন বাস্তবায়ন করবে নির্বাচিত সরকার। কারণ, জনসমর্থন ছাড়া সংস্কার দীর্ঘস্থায়ী হবে না।’
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, নির্বাচনের সময়সীমা ডিসেম্বর অতিক্রম করা যৌক্তিক হবে না।
দেশের সাংবিধানিক নামের পরিবর্তন এবং সংবিধানের চারটি মূলনীতি পরিবর্তনের প্রস্তাবে দ্বিমত জানিয়েছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)। আর সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধনী নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করে বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, অর্থবিল, আস্থা ভোট এবং জাতীয় নিরাপত্তা বিধান সংশ্লিষ্ট বিষয় বাদে সংসদ সদস্যরা বাকি সব বিষয়ে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবেন।
জাতীয় সংসদে উচ্চকক্ষ গঠনের বিপক্ষেও মত দিয়েছে দলটি। বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘বাংলাদেশের আয়তন তেমন বড় নয়। ফলে এখানে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের প্রয়োজন নেই। তবে সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচনের পক্ষে আমরা অবস্থান তুলে ধরেছি।’
প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান এক ব্যক্তি হতে পারবেন কি না—এমন প্রসঙ্গটি রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বাসদ। বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘বাসদ কখনো নির্বাচিত হলে দলের প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী একজন হবেন না, এটুকু নিশ্চিত করতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের প্রসঙ্গে বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ যেসব পদে নির্বাচনের প্রয়োজন আছে, সেগুলোতে দুবারের বেশি এক ব্যক্তি অংশ নিতে পারবেন না। এমন প্রস্তাব আমরা দিয়েছি।’
ভোটারদের বয়স ১৮ এবং নির্বাচনে প্রার্থিতার জন্য বয়স ২৫ বছর বাধ্যবাধকতা রাখার প্রস্তাব দেয় বাসদ। ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশকৃত জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, এনসিসি গঠন হলে এটা অনেকটা ‘সুপার গভর্নমেন্ট’ বা ক্ষমতার ওপর ক্ষমতা হিসেবে গণ্য হবে।
ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে বৈঠকে অংশ নেন কমিশনের সদস্য সাবেক বিচারপতি মো.
বাসদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজের নেতৃত্বে বৈঠকে অংশ নেন দলটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান, কেন্দ্রীয় ফোরামের সদস্য নিখিল দাস, জনার্দন দত্ত, শম্পা বসু, মনীষা চক্রবর্ত্তী, জুলফিকার আলী, আহসান হাবিব, খালেকুজ্জামান লিপন, আবু নাঈম খান ও গাজীপুর জেলা কমিটির সদস্যসচিব রাহাত আহম্মেদ।
এর আগে সকালে বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, বাংলাদেশের মানুষ চায় না বারবার ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটুক। তারা এমন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা করে, যেখানে সবার সমান ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত হবে। তাই তারা জুলাই অভ্যুত্থানে প্রাণের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়েছে।
জুলাই-আগস্টে মানুষ ক্ষোভের সঙ্গে প্রত্যাশারও বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে বলে মন্তব্য করেন আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক দেশে রাজনৈতিক মতপার্থক্যকে সাধারণ প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দল অবশ্যই জনগণের কাছে যাবে। তবে কিছু বিষয়ে সবাই ছাড় দেবে বলে তাঁরা আশা করেন। সংস্কারের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি দৃঢ় থাকা জরুরি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র প রস ত ব অবস থ ন সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক কার্যকরের সময়সীমা বাড়ল
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক এড়াতে আলোচনার জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেঁধে দেওয়া ৯০ দিনের সময়সীমা শেষ হচ্ছে আগামী বুধবার (৯ জুলাই)। এরই মধ্যে কিছু দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করেছে। তবে বাংলাদেশসহ বেশির ভাগ দেশের সঙ্গে এখনো আলোচনা চলছে ওয়াশিংটনের। এমন পরিস্থিতিতে পাল্টা শুল্ক কার্যকরের সময়সীমা বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
শুল্ক কার্যকরের সময়সীমা বাড়ানো হলেও ৯ জুলাইয়ের মধ্যে বেশ কিছু দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। আর যেসব দেশের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে কোনো সমঝোতা হয়নি, তাদের নতুন শুল্কের পরিমাণ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হবে। ট্রাম্পের ভাষ্য অনুযায়ী, স্থানীয় সময় সোমবার প্রথম ধাপে এমন ১৫টি দেশকে চিঠি দেওয়ার কথা।
সপ্তাহান্তের গলফ উপভোগ শেষে স্থানীয় সময় রোববার নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্য থেকে ওয়াশিংটনে ফেরেন ট্রাম্প। এর আগে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘১২টি দেশকে চিঠি দেওয়া হবে। তা ১৫টিও হতে পারে।’ এ সময় সাংবাদিকেরা জানতে চান, নতুন শুল্ক ৯০ দিনের সময়সীমা শেষে, নাকি ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে? তবে এ প্রশ্নের স্পষ্ট কোনো জবাব দিতে পারেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ট্রাম্পের মুখে অস্পষ্টতা দেখে প্রশ্নের জবাব দেওয়া শুরু করেন মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক। তিনি বলেন, ‘শুল্ক ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। প্রেসিডেন্ট এখন শুল্কের হার নির্ধারণ এবং বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কাজ করছেন।’ ট্রাম্প এ নিয়ে আর কোনো কথা না বললেও পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে জানান, সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় চিঠি পাঠানো শুরু করবে যুক্তরাষ্ট্র।
শুল্ক নিয়ে ছোট আরও ১০০টি দেশকে ট্রাম্প প্রশাসন চিঠি দেবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট। সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে তিনি বলেন, এই দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের তেমন একটা বাণিজ্য হয় না। চিঠিতে তাদের নতুন উচ্চ শুল্কহারের কথা জানিয়ে দেওয়া হবে। ১ আগস্ট থেকে পাল্টা শুল্ক কার্যকরের কথা উল্লেখ করে বেসেন্ট বলেন, এদিন থেকে ২ এপ্রিলের হারে শুল্ক ফিরে আসবে।
গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করা দেশগুলোর ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ হারে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। বাণিজ্য–ঘাটতির অজুহাতে অনেকে দেশের ওপর সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত পাল্টা শুল্ক চাপিয়ে দেওয়া হয়। পরে ৯ এপ্রিল পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য দেশগুলোকে সুযোগ দেন ট্রাম্প।
৯০ দিন শেষে ৯ জুলাইয়ের পরই পাল্টা শুল্ক কার্যকরের কথা ছিল। তবে ১ আগস্ট পর্যন্ত পেছানোয় বাণিজ্য আলোচনার জন্য আরও তিন সপ্তাহ সময় পেল বিভিন্ন দেশ। এখন পর্যন্ত শুধু যুক্তরাজ্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে পেরেছে। ভিয়েতনামও চুক্তিতে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। বাকি দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো অগ্রগতির কথা জানা যায়নি।
বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাংলাদেশেরও আলোচনা চলছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। গত শুক্রবার বাণিজ্য উপদেষ্টা প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, ৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় বৈঠকে বসবেন তাঁরা। বৈঠক থেকে শুল্ক নিয়ে ভালো ফল পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।
শুল্ক নিয়ে আগামী ১ থেকে ২ দিনের মধ্যে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সংক্ষিপ্ত বাণিজ্য চুক্তি করার সিদ্ধান্ত হতে পারে। রোববার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি-টিভি১৮-এর খবরে বলা হয়েছে, ওই চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা ভারতীয় পণ্যের ওপর গড়ে ১০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। আর ৩৬ শতাংশ হারে শুল্ক এড়াতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি পণ্য কেনাসহ নানা প্রস্তাব দিয়েছে থাইল্যান্ড।
নানা জটিলতার পরও শুল্ক নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। আজ ইইউর বাণিজ্য মুখপাত্র ওলোফ গিল বলেছেন, রোববার ট্রাম্প ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েনের মধ্যে ‘ভালো আলাপ’ হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দ্রুত একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর আশা করা হচ্ছে।