খাড়িয়া ভাষা। এই ভাষায় দেশের মাত্র দু’জন ব্যক্তি কথোপকথন করতে পারেন। তারা হলেন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার রাজঘাট চা বাগানের বর্মাছড়ায় ভেরোনিকা কেরকেটা (৮০) ও খ্রিস্টিনা কেরকেটা (৭৫)। দুই বোনই বয়সের ভারে ন্যুব্জ। তাদের পরিবারের সদস্য ও খাড়িয়া সম্প্রদায়ের কোনো মানুষের ভাষাটি সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান নেই। ফলে এ দুই বোনের মৃত্যুর পর মৃত্যু ঘটবে আরেকটি ভাষার।
সে জন্যই কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আজাদ পুরো পৃথিবীর সাংস্কৃতিক ঐকতানকে এক করে দেখিয়ে বলেছেন, বিশ্ব মানচিত্রের প্রতিটি রেখা একেকটি কাহিনি বলে, একেকটি সংস্কৃতির গল্প বয়ে আনে। আজ ‘বিশ্ব সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সংলাপ দিবস’। তাই দিবসটি শুধু একটি বার্ষিক আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতায় এটি যেন আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। এই দিনটিতে সামাজিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার ভিত্তি হিসেবে জাতি, ধর্ম, ভাষা কিংবা ভূখণ্ডের ভিন্নতা নয়; সম্মান, বোঝাপড়া ও সংলাপকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য মানেই ভিন্নতার মধ্যে সৌন্দর্য। বাঙালি কবি জীবনানন্দ দাশ যেমন লিখেছিলেন, ‘প্রতিটি মানুষ এক একটি স্বতন্ত্র জগৎ।’ তেমনি প্রতিটি জাতি, তাদের ভাষা, পোশাক, খাদ্যাভ্যাস, শিল্প-সংগীত ও বিশ্বাস একেকটি স্বতন্ত্র সংস্কৃতি গড়ে তোলে।
বিশ্ব সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সংলাপ দিবসের সূচনা হয় ইউনেস্কোর উদ্যোগে। ২০০১ সালের ২ নভেম্বর গৃহীত হয় ‘সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য-সংক্রান্ত সর্বজনীন ঘোষণা’। পরে ২০০৫ সালে এই ঘোষণাকে রূপ দেওয়া হয় একটি আন্তর্জাতিক চুক্তিতে। ২০১১ সাল থেকে প্রতিবছর ২১ মে পালিত হচ্ছে এই দিবস।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রায় সাত হাজার ভাষা প্রচলিত, যার মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ বিলুপ্তির মুখে। প্রতি দুই সপ্তাহে একটি করে ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর বুক থেকে। এর অর্থ শুধু একটি যোগাযোগমাধ্যম নয়; একটি সংস্কৃতি, ইতিহাস ও দৃষ্টিভঙ্গি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩৭০ মিলিয়ন আদিবাসী জনগোষ্ঠী আছে, যারা প্রায় পাঁচ হাজার ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করছে। তবে তথাকথিত আধুনিকায়নের চাপে তারা ক্রমে হুমকির মুখে পড়ে বিলুপ্তির পথে এগোচ্ছে।
দেশে বর্তমানে ৪০ থেকে ৪৪টি ভাষা প্রচলিত। এর মধ্যে বাংলা দেশের জাতীয় ও সরকারি ভাষা, যা প্রায় ৯৯ শতাংশ জনগণের মাতৃভাষা। বাকি ভাষাগুলো মূলত আদিবাসী ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যবহৃত হয়।
এ ছাড়া দেশে প্রায় ৫০টির বেশি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী রয়েছে, যারা তাদের নিজস্ব ভাষা, পোশাক, ধর্মীয় বিশ্বাস ও রীতিনীতি নিয়ে বসবাস করে আসছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, ময়মনসিংহসহ নানা অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা এই জনগোষ্ঠীগুলোর সংস্কৃতি আমাদের জাতীয় পরিচয়ের অংশ। তবে নানা কারণে শিক্ষা, প্রশাসন ও গণমাধ্যমে একক সংস্কৃতির আধিপত্যে এই গোষ্ঠীগুলো তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি হারিয়ে ফেলছে।
বিশ্বজুড়ে যে ধর্মীয় ও জাতিগত সহিংসতা, উদ্বাস্তু সংকট ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা চালিত সাংস্কৃতিক হুমকি, তাতে এই দিবসটি যেন এক বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকা আশার বাতিঘর। একে কেন্দ্র করে কাজ করছে বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা। দেশেও ইউনেস্কো ক্লাব, শিল্পকলা একাডেমি, থিয়েটার ইনস্টিটিউট, এমনকি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বৈচিত্র্যের প্রতি সম্মান গড়ে তোলায় প্রশংসনীয় কাজ করে যাচ্ছে।
দিবসটি নিয়ে ও বর্তমান সময় সম্পর্কে ইমেরিটাস অধ্যাপক ড.
তিনি আরও বলেন, সংস্কৃতির একটা অবলম্বন হচ্ছে ভাষা। অনেক ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এবং পুঁজিবাদী কর্তাদের ভাষাগুলো আধিপত্য বিস্তার করছে। এদিক থেকে সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য দুটোই বিপন্ন। তাই এখন সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের মধ্যে দরকার আন্তর্জাতিকতা। এর মাধ্যমে পারস্পরিক আদান-প্রদান থাকবে, সংস্কৃতিগুলো টিকে থাকবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টস জিতে ব্যাট করছে বাংলাদেশ
নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ। বিশাখাপত্তনমে বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে তিনটায় মাঠে গড়িয়েছে ম্যাচটি। বাংলাদেশের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষের ম্যাচে বাংলাদেশ দুটি পরিবর্তন এনেছে। অস্ট্রেলিয়াও তাদের একাদশে দুটি পরিবর্তন এনেছে।
আরো পড়ুন:
নাঈমকে বাদ দিয়ে সৌম্যকে ফেরাল বিসিবি, নতুন মুখ মাহিদুল
বিশ্বকাপের আরো এক ম্যাচ বৃষ্টির পেটে
টস জিতে জ্যোতি বলেন, “আজ আমাদের মূল লক্ষ্য হলো বোর্ডে ভালো একটা স্কোর দাঁড় করানো। আগের ম্যাচে আমরা কমপক্ষে ৩০–৪০ রান কম করেছি। আজ দলে দুটি পরিবর্তন এনেছি ফারিহা তৃষ্ণা ও নিশিতা আখতার ফিরেছেন একাদশে। আমাদের বোলিং ইউনিটটা খুবই শক্তিশালী। আগের ম্যাচে নাহিদা আক্তার চোট পেয়েছে, ওর কিছুটা সময় লাগবে সেরে উঠতে। আগের ম্যাচের পর মানসিকভাবে সামলে ওঠা কঠিন ছিল, কিন্তু কোনো অজুহাত দিতে চাই না। আমরা চাই খেলা উপভোগ করতে, নিজেদের শতভাগ উজাড় করে দিতে।”
অ্যালিসা হিলি বলেন, “আমিও আসলে টস জিতলে ব্যাটিংই নিতে চেয়েছিলাম। আজ বাতাসটা মনোরম, সূর্যের আলোও ভালো—মেয়েরা খেলতে উপভোগ করবে নিশ্চয়ই। ২০১১ সালে এই মাঠটা ছিল আমার প্রিয় জায়গা, তাই এখানে খেলতে ফিরতে পেরে ভালো লাগছে। নতুন প্রতিপক্ষ, নতুন চ্যালেঞ্জ। দলে দুটি পরিবর্তন এনেছি- ডার্সি ব্রাউন ফিরেছে কিম গার্থের জায়গায়, আর জর্জিয়া ওয়ারহ্যাম খেলছে সোফি মোলিনিউক্সের জায়গায়। ইন্দোরে টানা দুইটা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ আছে, তাই সবাইকে সতেজ রাখতে চাই। ব্রাউনকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে, ও কীভাবে শুরু করে সেটা দেখার জন্য মুখিয়ে আছি।”
বাংলাদেশ একাদশ:
রুবিয়া হায়দার, ফারজানা হক, শারমিন আখতার, নিগার সুলতানা (অধিনায়ক ও উইকেটকিপার), সোবহানা মোস্তারি, শর্না আখতার, ফাহিমা খাতুন, রাবেয়া খান, রিতু মনি, নিশিতা আখতার নিশি ও ফারিহা তৃষ্ণা।
অস্ট্রেলিয়া একাদশ:
অ্যালিসা হিলি (অধিনায়ক ও উইকেটকিপার), ফিবি লিচফিল্ড, এলিস পেরি, বেথ মুনি, আনাবেল সাদারল্যান্ড, অ্যাশলি গার্ডনার, তাহলিয়া ম্যাকগ্রা, জর্জিয়া ওয়ারহ্যাম, ডার্সি ব্রাউন, আলানা কিং ও মেগান শাট।
ঢাকা/আমিনুল