Samakal:
2025-07-05@16:20:13 GMT

হুমকির বিপরীতে আশার বাতিঘর

Published: 20th, May 2025 GMT

হুমকির বিপরীতে আশার বাতিঘর

খাড়িয়া ভাষা। এই ভাষায় দেশের মাত্র দু’জন ব্যক্তি কথোপকথন করতে পারেন। তারা হলেন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার রাজঘাট চা বাগানের বর্মাছড়ায় ভেরোনিকা কেরকেটা (৮০) ও খ্রিস্টিনা কেরকেটা (৭৫)। দুই বোনই বয়সের ভারে ন্যুব্জ। তাদের পরিবারের সদস্য ও খাড়িয়া সম্প্রদায়ের কোনো মানুষের ভাষাটি সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান নেই। ফলে এ দুই বোনের মৃত্যুর পর মৃত্যু ঘটবে আরেকটি ভাষার। 
সে জন্যই কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আজাদ পুরো পৃথিবীর সাংস্কৃতিক ঐকতানকে এক করে দেখিয়ে বলেছেন, বিশ্ব মানচিত্রের প্রতিটি রেখা একেকটি কাহিনি বলে, একেকটি সংস্কৃতির গল্প বয়ে আনে। আজ ‘বিশ্ব সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সংলাপ দিবস’। তাই দিবসটি শুধু একটি বার্ষিক আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতায় এটি যেন আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। এই দিনটিতে সামাজিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার ভিত্তি হিসেবে জাতি, ধর্ম, ভাষা কিংবা ভূখণ্ডের ভিন্নতা নয়; সম্মান, বোঝাপড়া ও সংলাপকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য মানেই ভিন্নতার মধ্যে সৌন্দর্য। বাঙালি কবি জীবনানন্দ দাশ যেমন লিখেছিলেন, ‘প্রতিটি মানুষ এক একটি স্বতন্ত্র জগৎ।’ তেমনি প্রতিটি জাতি, তাদের ভাষা, পোশাক, খাদ্যাভ্যাস, শিল্প-সংগীত ও বিশ্বাস একেকটি স্বতন্ত্র সংস্কৃতি গড়ে তোলে। 

বিশ্ব সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সংলাপ দিবসের সূচনা হয় ইউনেস্কোর উদ্যোগে। ২০০১ সালের ২ নভেম্বর গৃহীত হয় ‘সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য-সংক্রান্ত সর্বজনীন ঘোষণা’। পরে ২০০৫ সালে এই ঘোষণাকে রূপ দেওয়া হয় একটি আন্তর্জাতিক চুক্তিতে। ২০১১ সাল থেকে প্রতিবছর ২১ মে পালিত হচ্ছে এই দিবস।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রায় সাত হাজার ভাষা প্রচলিত, যার মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ বিলুপ্তির মুখে। প্রতি দুই সপ্তাহে একটি করে ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর বুক থেকে। এর অর্থ শুধু একটি যোগাযোগমাধ্যম নয়; একটি সংস্কৃতি, ইতিহাস ও দৃষ্টিভঙ্গি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩৭০ মিলিয়ন আদিবাসী জনগোষ্ঠী আছে, যারা প্রায় পাঁচ হাজার ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করছে। তবে তথাকথিত আধুনিকায়নের চাপে তারা ক্রমে হুমকির মুখে পড়ে বিলুপ্তির পথে এগোচ্ছে।
দেশে বর্তমানে ৪০ থেকে ৪৪টি ভাষা প্রচলিত। এর মধ্যে বাংলা দেশের জাতীয় ও সরকারি ভাষা, যা প্রায় ৯৯ শতাংশ জনগণের মাতৃভাষা। বাকি ভাষাগুলো মূলত আদিবাসী ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যবহৃত হয়।

এ ছাড়া দেশে প্রায় ৫০টির বেশি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী রয়েছে, যারা তাদের নিজস্ব ভাষা, পোশাক, ধর্মীয় বিশ্বাস ও রীতিনীতি নিয়ে বসবাস করে আসছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, ময়মনসিংহসহ নানা অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা এই জনগোষ্ঠীগুলোর সংস্কৃতি আমাদের জাতীয় পরিচয়ের অংশ। তবে নানা কারণে শিক্ষা, প্রশাসন ও গণমাধ্যমে একক সংস্কৃতির আধিপত্যে এই গোষ্ঠীগুলো তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি হারিয়ে ফেলছে।
বিশ্বজুড়ে যে ধর্মীয় ও জাতিগত সহিংসতা, উদ্বাস্তু সংকট ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা চালিত সাংস্কৃতিক হুমকি, তাতে এই দিবসটি যেন এক বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকা আশার বাতিঘর। একে কেন্দ্র করে কাজ করছে বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা। দেশেও ইউনেস্কো ক্লাব, শিল্পকলা একাডেমি, থিয়েটার ইনস্টিটিউট, এমনকি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বৈচিত্র্যের প্রতি সম্মান গড়ে তোলায় প্রশংসনীয় কাজ করে যাচ্ছে।

দিবসটি নিয়ে ও বর্তমান সময় সম্পর্কে ইমেরিটাস অধ্যাপক ড.

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সমকালকে বলেন, সভ্যতার চেয়েও সংস্কৃতি স্থায়ী ব্যাপার। সভ্যতার পতন হলেও সংস্কৃতির একটা ধারা মানুষের মনে, প্রত্নতত্ত্বে, আদর্শবাদে ও বইপত্রে রয়ে যায়। এ জন্য সংস্কৃতিকে সভ্যতার চেয়েও গুরুত্ব দিতে হয়। বর্তমান বিশ্বায়নের ফলে সাংস্কৃতিক যে বৈচিত্র্য, সেটি আক্রান্ত হচ্ছে। এর মধ্যে পুঁজিবাদী ধারণা ও আদর্শ ঢুকছে। সংস্কৃতি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে আর পুঁজিবাদ মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে এবং বৈষম্য সৃষ্টি করে। সে জন্য বিশ্বব্যাপী সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষা করা খুবই জরুরি। 
তিনি আরও বলেন, সংস্কৃতির একটা অবলম্বন হচ্ছে ভাষা। অনেক ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এবং পুঁজিবাদী কর্তাদের ভাষাগুলো আধিপত্য বিস্তার করছে। এদিক থেকে সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য দুটোই বিপন্ন। তাই এখন সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের মধ্যে দরকার আন্তর্জাতিকতা। এর মাধ্যমে পারস্পরিক আদান-প্রদান থাকবে, সংস্কৃতিগুলো টিকে থাকবে।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

চিচিঙ্গা চাষে সফল কৃষক নুরুল

কৃষক মো. নুরুল আমিন হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার পূর্ব শিমুলিয়াম গ্রামের বাসিন্দা। তিনি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীমের পরামর্শ গ্রহণ করে মার্চ মাসের শুরুতে বাড়ির পাশে ৩৩ শতক জমিতে চিচিঙ্গা চাষ করেন।

এপ্রিল মাসের শুরুতে তিনি রোপণ করেন উন্নত জাতের চিচিঙ্গার বীজ। রোপণের প্রায় ১৫দিনের মধ্যে চারা গজায়। সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে গাছ বড় হয়। প্রায় ২ মাসের মধ্যে গাছে ফুল আসে। বর্তমানে গাছে প্রচুর পরিমাণে চিচিঙ্গা ঝুলছে। প্রায় দুই দিন পরপর গাছ থেকে চিচিঙ্গা সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করছেন তিনি।

কৃষক মো. নুরুল আমিন রাইজিংবিডি ডটকমকে জানান, তিনি শুরুতে প্রতি কেজি ৪০ টাকায় বিক্রি করেন। বর্তমানে দাম কিছুটা কমেছে। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ক্রিপার প্রদর্শনীতে চিচিঙ্গা চাষ করে তিনি লাভবান।

আরো পড়ুন:

কালো জাতের আখ চাষে সফল মাসুদ

এক কলেজের ৫৩ শিক্ষার্থী পেলেন মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ

তিনি জানান, পোকা দমনে ব্যবহার করেন হলুদ ও ফেরোমন ফাঁদ। ব্যবহার করা হয়েছে জৈব সার ও জৈব বালাইনাশক। চাষাবাদে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ পর্যন্ত বিক্রি থেকে এসেছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। বাকী সময়ে আরও লক্ষাধিক টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি আরো জানান, তার চাষ করা চিচিঙ্গা দেখতে এসে স্থানীয় কৃষকরা মুগ্ধ হচ্ছেন। স্থানীয় কৃষকরা চিচিঙ্গা চাষে উৎসাহিত হয়েছেন। চিচিঙ্গা চাষে সফলতা আসার পেছনে অবদান রয়েছে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীমের। তিনি প্রায় সময় জমিতে এসে কোন সমস্যা থাকলে পরামর্শ দিয়ে যান।

মো. নূরুল ইসলাম বলেন, “শিক্ষকতার পাশাপাশি কৃষি কাজে জড়িত রয়েছি। জমি আবাদ করে নানা ফসল চাষ করছি। চিচিঙ্গা চাষ করে ভালোই টাকা আয় করেছি। আমার চাষাবাদ দেখে এলাকার অন্যান্য কৃষকরা উৎসাহিত হচ্ছেন।”

কৃষক আতাউর রহমান বলেন, “কঠোর শ্রম ও চেষ্টায় সঠিক পথ বের হয়। তার সঙ্গে প্রয়োজন সঠিক পরামর্শ। শ্রম ও চেষ্টা এবং পরামর্শ পেয়ে কৃষক মো. নুরুল আমিন চিচিঙ্গা চাষ করে লাভবান হয়েছেন। তার মতো আমরাও চিচিঙ্গা চাষ করতে আগ্রহী।”

ক্ষেতে কৃষক মো. নুরুল আমিনের সঙ্গে দ্বিমুড়া কৃষি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম।

দ্বিমুড়া কৃষি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম বলেন, “চিচিঙ্গা একটি গ্রীষ্মকালীন সবজি, যা বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সারা বছরই চাষ করা যায়। সাধারণত ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে চিচিঙ্গা চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। চিচিঙ্গা চাষের জন্য দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি উপযোগী।”

তিনি বলেন, “এ অঞ্চলের মাটি চিচিঙ্গা চাষের জন্য উপযোগী। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ক্রিপার প্রদর্শনীতে চিচিঙ্গা চাষ করেন কৃষক মো. নুরুল আমিন। তিনি চিচিঙ্গা আবাদ করে সফল। তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা করেছি। তার চিচিঙ্গা চাষে সফলতা দেখে এলাকার অন্য কৃষকরাও এ জাতের চিচিঙ্গা চাষে আগ্রহী হয়েছেন। তারাও আমার কাছে পরামর্শ চাচ্ছেন। আমি পরামর্শ দিয়েছি। এক কথায় উন্নতজাতের চিচিঙ্গা চাষে কৃষক মো. নুরুল আমিনের বাজিমাত।”

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা চিন্ময় কর অপু বলেন, “আমরা কৃষকদের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছি। এতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে চিচিঙ্গা চাষ হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার পূর্ব শিমুলিয়াম গ্রামে উন্নতজাতের চিচিঙ্গা চাষ করেন কৃষক মো. নুরুল আমিন। তার জমিতে চিচিঙ্গার ফলন ভালো হয়েছে।”

ঢাকা/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ