রাস্তা আটকে কেউ যদি আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে, তাহলে নাগরিকদের একধরনের ভোগান্তি হয়। তবে এর সঙ্গে গণতন্ত্রের উত্তরণ যুক্ত। গণতন্ত্রে উত্তরণ ঠিকমতো না হলে সেটিকে কেন্দ্র করে বাজে ধরনের বিশৃঙ্খলার মধ্যে আমরা যদি পড়ে যাই, তাহলে সেটি দেশকে বিপদে ফেলবে।

আমাদের আর অনেক বেশি সংস্কারের সুযোগ নেই। কিছু মৌলিক সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের মধ্যে যাওয়া এবং সংস্কারকেও রাজনীতির এজেন্ডা করে ফেলা উচিত। নির্বাচন ডিসেম্বরে হওয়া উচিত, এর চেয়ে একটুও দেরি করা ঠিক হবে না।

দীর্ঘদিন ধরে সেনাবাহিনী মাঠে থাকলে সদস্যদের কারও কারও অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সে জন্য তাঁদের ব্যারাকে ফিরে যাওয়া দরকার। এ ছাড়া মিয়ানমারকে কেন্দ্র করে সংকট দেখা দিয়েছে। সরকার যতই ভালো হোক না কেন, আমাদের অর্থনীতি কিন্তু ভালো করছে না। ডিসেম্বরে নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের সবার সঙ্গে বসা উচিত।

গতকাল ঢাকা সেনানিবাসের সেনা প্রাঙ্গণে অফিসার্স অ্যাড্রেসে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আবারও আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছেন। তিনি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডর–সংক্রান্ত বিষয়েও কথা বলেছেন। তিনি রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডর বিষয়ে সিদ্ধান্ত একটি নির্বাচিত সরকার থেকে এবং বৈধ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই হতে হবে বলে মনে করেন।

সব কিছু মিলিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ দেশকে অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি দিতে পারে। বিএনপিও তা–ই চায় এবং তাদের এই চাওয়া পূর্ণ করা হলে সংস্কারেরও অনেক কিছু তারা মেনে নেবে। জাতীয় নাগরিক পার্টিরও (এনসিপি) এ ধরনের ঘোষণা আছে যে নির্বাচন ডিসেম্বরে হোক তাদের সমস্যা নেই। তবে তাদেরও কিছু চাওয়া আছে। চাওয়াগুলো পূরণ না হলে তারা সেগুলোকে ইস্যুতে (আন্দোলনের বিষয়) পরিণত করবে, তা নিয়ে রাজনীতি করবে, নির্বাচন করবে এবং বিএনপিকে আক্রমণ করবে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া তো এভাবেই চলে।

বিএনপির কিছু পদক্ষেপের পাল্টা পদক্ষেপ নিচ্ছে এনসিপি। বিএনপি ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়রের শপথ গ্রহণ নিশ্চিত করা এবং দুজন ছাত্র উপদেষ্টাকে সরকারের বাইরে চলে যাওয়ার জন্য দাবি জানাচ্ছে। অন্য দিকে এনসিপিও অন্তর্বর্তী সরকারের তিনজন উপদেষ্টাকে বিএনপির মুখপাত্র হিসেবে উল্লেখ করেছে। দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে দেওয়া তাদের সুপারিশ মানা না হলে বড় কর্মসূচি দিয়ে এই তিন উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

ইশরাক হোসেনকে নিয়ে যে ঘটনা ঘটছে, এটি ঠিক মেয়রের ইস্যু (বিষয়) নয়। এটা মূলত সরকার ও এনসিপির বিপক্ষে কর্মসূচি পালন। কারণ, সরকারের সিদ্ধান্তগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে এনসিপি অবস্থান নিচ্ছে। বিএনপির সঙ্গে এনসিপির একধরনের বিপরীতমুখী অবস্থান আমরা দেখছি। দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের দাবি কারও কারও কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এর আগে বলেছিলেন, মাঠ প্রশাসন বিএনপির দখলে। এ অবস্থায় তারা নির্বাচন করবেন না। এ ছাড়া মৌলিক সংস্কার না হলে তাঁরা নির্বাচনে যাবেন কি না, সেটি ভাববেন বলেছিলেন নাহিদ। দেখা যাচ্ছে, এনসিপি বিএনপির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। কেন দাঁড়াচ্ছে? এনসিপি তাদের মতো কিছু মৌলিক সংস্কার, গণপরিষদ ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন একসঙ্গে হওয়া এবং তার আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চাচ্ছে। সামনে আনা হচ্ছে মূলত সংস্কারকে। এর মাধ্যমে মূলত নির্বাচনকে যেটুকু পারে পেছাতে চায় তারা। এনসিপি নতুন দল। ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে তাদের সংগঠনের এক বছর হয়। আর নির্বাচন আগামী বছরের জুন পর্যন্ত নিতে পারলে তারা বেশি সময় পাবে। যদিও সেটা সম্ভব হবে কি না, সন্দেহ আছে।

সমস্যাটি অন্য জায়গায়। এনসিপি এবং দলটির ওপর প্রভাব থাকা কিছু মানুষ এই সরকারকে পাঁচ বছর ক্ষমতায় রাখতে হবে, এই আলোচনা আনছেন। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসছে, এনসিপি তাঁদের দ্বারা ব্যবহৃত হচ্ছে কি না? সেটা হয়ে থাকলে তা আমাদের জন্য অ্যালার্মিং (আশঙ্কাজনক)।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ড স ম বর সরক র র ব এনপ র এনস প

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপির কি আকাল পড়েছে আ.লীগ থেকে সদস্য আমদানি করতে হবে

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বিএনপির কি এতো আকাল পড়েছে যে আওয়ামী লীগ থেকে সদস্য আমদানি করতে হবে? যেই আওয়ামী লীগের ডিএনএতে গণতন্ত্র নাই, তাদের কেন আহ্বান করতে হবে।

সোমবার বিকেলে সিলেট শিল্পকলা একাডেমি অডিটরিয়ামে বিভাগীয় বিএনপির নতুন সদস্য সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, বিএনপি জনগণের দল। বিএনপি থাকলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব থাকবে, দুর্বল হলে বাংলাদেশ দুর্বল হবে। বিএনপির জন্ম না হলে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন হতো না, বিএনপি সুসংগঠিত না থাকলে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হতো না, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি চালু হতো না। তাই বিএনপি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পাহারাদার।

সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, যে মানুষ বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী, যিনি নিজেকে বাংলাদেশি পরিচয় দেবেন, তিনিই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সদস্য হতে পারবে। এদেশের প্রতিটি ধূলিকণাকে বিএনপি ধারণ করে, লালন করে। বাংলাদেশে অফিসিয়ালি ১৮ কোটি জনগণ বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে তা এখন ১৯ কোটি ছাড়িয়ে গেছে।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে বিতাড়িত করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যাকারী। তাদের রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে। আজ পর্যন্ত তারা নিজেদের অপকর্মের জন্য কোনও অনুশোচনা করেনি বা ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। উল্টো তারা গণ-অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দুষ্কৃতকারী বলে আখ্যায়িত করছে।

জিয়াউর রহমান ১৯৮৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদে দেশের একনায়কতান্ত্রিক সংবিধান বাকশালকে বিলুপ্ত করে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন উল্লেখ করে বলেন সালাউদ্দিন আহমেদবলেন, তিনি সংবিধানে বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম সংযুক্ত করে মহান আল্লাহ তায়ার ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি দেশের সব ধর্মের মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন। সংবিধানে ধর্মের ভিত্তিতে সবার সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা করে সব মানুষের ধর্মীয় চর্চার স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছিলেন।

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) জি কে গউছের সভাপতিত্বে ও সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন দলের নির্বাহী কমিটির কোষাধ্যক্ষ এম. রাসেদুজ্জামান মিল্লাত, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী, আরিফুল হক চৌধুরী ও এম.এ মালিক, জাতীয় কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, সহ সমবায় বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আক্তার।

সভায় সূচনা বক্তব্য দেন দলেল নির্বাহী কমিটির সদস্য (দপ্তরে দায়িত্বে) তারিকুল আলম তেনজিন ও স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সাবেক এমপি এম. নাসের রহমান, নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী, সাবেক এমপি শেখ সুজাত মিয়া, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমদ, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, মৌলভীবাজার জেলা আহ্বায়ক ফজলুল করিম ময়ুন, হবিগঞ্জ জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আরব বসন্ত যে কারণে ব্যর্থ হয়েছিল...
  • নির্বাচন কমিশনকে হুমকি দিতে ঘেরাও কর্মসূচি: নজরুল ইসলাম খান
  • সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি করা আরেকটা অপরাধ: নজরুল ইসলাম
  • স্থানীয় নির্বাচন চাওয়া মানে জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা: নজরুল ইসলাম
  • ধারাবাহিক অস্থিরতা ও জনসাধারণের মতামত
  • বিএনপির কি আকাল পড়েছে আ.লীগ থেকে সদস্য আমদানি করতে হবে
  • দাবি আদায় করব, না হয় মাটির নিচে শায়িত হব: ইশরাক
  • যারা একটি দলের প্রতিনিধির কাজ করেছে, তাদের অবিলম্বে পদত‍্যাগ করতে হবে: ইশরাক