বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপের ফলে গতকাল বৃহস্পতিবার দেশজুড়ে ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে। এতে দেশের অন্তত ছয় জেলায় আগামী দুই দিনের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গতকাল সন্ধ্যায় গভীর নিম্নচাপটি বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম শেষ করে। রাত আটটার দিকে এটি স্থল নিম্নচাপ হিসেবে সাতক্ষীরা অঞ্চলে ছিল। এটি আরও দুর্বল হয়ে যেতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বার্তায় বলা হয়।

গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলের অন্তত ১৪ জেলায় ১ থেকে ৩ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়। এতে কয়েকটি এলাকার নদীতীর রক্ষা বাঁধ ভেঙে যায়। প্লাবিত হয় অনেক এলাকা। নিম্নচাপের প্রভাবে হওয়া জোয়ারের পানিতে ডুবে কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।

অত্যধিক বৃষ্টির কারণে দেশের বিভিন্ন নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বৃষ্টির ফলে রাজধানীসহ দেশের একাধিক শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার থেকে বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। বুধবার তা সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হওয়ার পর গতকাল সকালে নিম্নচাপ এবং পরে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। আবহাওয়াবিদেরা আগেই বলেছিলেন যে এই নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আশঙ্কা নেই। বাস্তবে তা–ই হয়। তবে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। আর উপকূলীয় জেলাগুলোতে ব্যাপক বৃষ্টি, ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে দেখা দেয় জলোচ্ছ্বাস।

গতকাল রাত আটটার দিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ ও খেপুপাড়ার মধ্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে থাকা গভীর নিম্নচাপটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে উপকূল অতিক্রম করেছে। এটি আরও দুর্বল হয়ে যেতে পারে বলে বলা হয়েছে। অমাবস্যা ও গভীর নিম্নচাপের কারণে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, হাতিয়া, সন্দ্বীপ, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১ থেকে ৩ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলে বার্তায় বলা হয়। এ জন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, গভীর নিম্নচাপের প্রভাব শুক্রবার পর্যন্ত থাকতে পারে। শুক্রবার দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।

ঢাকার সড়কে হাঁটু ও কোমরপানি, ভোগান্তি

গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে রাজধানী ঢাকায়ও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। এতে বিভিন্ন এলাকার সড়কে পানি জমে যাওয়ায় ভোগান্তি পোহায় মানুষ। এর মধ্যে বিজয় সরণি হয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, আর্মি এভিয়েশন গ্রুপ পর্যন্ত সড়কে পানি জমতে দেখা গেছে। রাত ১১টার দিকে বনানী চেয়ারম্যানবাড়ি এলাকায়, সৈনিক ক্লাব মোড় থেকে কাকলী মোড় হয়ে নৌ-সদর দপ্তরের সামনে পর্যন্ত রাস্তায় প্রায় হাঁটুপানি জমে থাকতে দেখা গেছে। নৌ সদর দপ্তরের সামনের সড়কে বেশ কিছু পানি ঢুকে যাওয়ায় যানবাহন বিকল হয়ে রাস্তায় থেমে থাকতে দেখা গেছে।

রাত ১২টার দিকে মিরপুরের কালশী এলাকায় কালশী উড়ালসড়ক থেকে পূরবী পর্যন্ত সড়কে প্রায় হাঁটুপানি জমে ছিল। সাংবাদিক আবাসিক এলাকার প্রধান ফটকের সামনের রাস্তায় জমে থাকা পানির পরিমাণ প্রায় কোমরসমান ছিল।

উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাস

নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলের বিভিন্ন অঞ্চলে গতকাল জলোচ্ছ্বাস হয়। বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়া ও চরমোন্তাজ ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়।

চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো.

বিপ্লব হাওলাদার বলেন, জোয়ারের প্রভাবে একটি খালের ৩৫ মিটার বাঁধ ভেঙে গ্রামগুলোতে পানি ঢুকেছে।

 ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শুভ দেবনাথ বাঁধ ভেঙে বাড়িঘর প্লাবিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, পাউবো ও ঠিকাদারের লোকজনকে খবর দেওয়া হয়েছে। জোয়ার কমলেই বাঁধ সংস্কার হবে।

ছয় জেলায় বন্যার ঝুঁকি

অতিবৃষ্টির কারণে দেশের ছয় জেলায় বন্যার পূর্বাভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ সংস্থাটি জানিয়েছে, আজ শুক্রবার এসব এলাকার নদ-নদীগুলো বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। ছয় জেলার মধ্যে পাঁচটিই হাওর অঞ্চলের জেলা।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ফেনী, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেট ও নেত্রকোনায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। তবে শনিবার থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

গতকাল দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয় নোয়াখালীর মাইজদীকোর্টে, ১৬৮ মিলমিটার। রাজধানীতে গতকাল ৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।

একজনের মৃত্যু

নিম্নচাপের প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারেরর পানিতে ডুবে কক্সবাজারের মহেশখালীতে দানু মিয়া (৪০) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বেলা একটার দিকে উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের ঘটিভাঙা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। দানু মিয়া ওই এলাকার নুর হোসেনের ছেলে।

নৌ চলাচল বন্ধ

বৈরী আবহাওয়ার কারণে গতকাল সকাল নয়টা থেকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া এবং মানিকগঞ্জের আরিচা ও পাবনার কাজীরহাট নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়। বৈরী আবহাওয়ার কারণে বরিশালের অভ্যন্তরীণ নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করার পর ঢাকা-বরিশাল নৌপথ এবং চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের সঙ্গে সব ধরনের নৌযান চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জল চ ছ ব স এল ক য় এল ক র য় বন য ছয় জ ল উপজ ল উপক ল গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

৩৫ দিনে হিলি বন্দরে ১ লাখ মেট্রিকটন চাল আমদানি

গত ৩৫ দিনে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে দুই হাজার ২৪টি ভারতীয় ট্রাকে করে এক লাখ চার হাজার ৮৫৯ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে দেশের চালের বাজারে। খুচরা বাজারে কেজি প্রতি চালের দাম কমেছে প্রকার ভেদে ৪ থেকে ৬ টাকা।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় হিলি বন্দর ঘুরে জানা যায়, দেশের অস্থির চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত ১২ আগস্ট থেকে চাল আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নির্ধারিত ২ শতাংশ শুল্কে ভারত থেকে চাল আমদানি করছেন ব্যবসায়ীরা। 

প্রতি টন চাল ৫২০ থেকে ৫৩০ ডলার, কিছু ক্ষেত্রে ৫৪০ ডলার মূল্যে আমদানি হচ্ছে। এসময় সবচেয়ে বেশি আসছে শম্পা কাটারি জাতের চাল।

হিলির খুচরা ব্যবসায়ী স্বপন পাল বলেন, “ভারত থেকে চাল আসায় বাজারের অস্থিরতা কমছে। প্রতিটি জাতের চাল কেজিতে ৪ থেকে ৬ টাকা করে কমেছে। ৫৫ টাকা কেজি দরের মোটা চাল বিক্রি করছি ৫১ থেকে ৫২ টাকা, আবার ৭৪ টাকার শম্পা কাটারি চাল খুচরা বিক্রি করছি ৬৮ কেজি হিসেবে। আশা করছি আগামীতে আরো কমবে।”

আমদানিকারক নুর ইসলাম বলেন, “২ শতাংশ শুল্কে আমরা চাল আনছি। ৫২০-৫৪০ ডলার দরে আমদানি হচ্ছে। এতে বাজারে দামের প্রভাব স্পষ্টভাবে পড়ছে।”

হিলি কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন জানান, গত ১২ আগস্ট থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর ৩৫ দিনে ভারত থেকে ২৪২১টি ট্রাকে এক লাখ চার হাজার ৮৫৯ মেট্রিকটন চাল এসেছে। দেশের বাজারে চালের চাহিদা থাকায় দ্রুত খালাস প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হচ্ছে।

ঢাকা/মোসলেম/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ