বৃষ্টির প্রভাবে বেড়েছে সবজির দাম, স্বস্তি চাল মুরগিতে
Published: 30th, May 2025 GMT
টানা বৃষ্টির প্রভাবে সরবরাহ কম হওয়ায় কিছু সবজির দাম সামান্য বেড়েছে। তবে বাজারে বোরো ধান থেকে তৈরি নতুন চাল আসায় চালের দাম কমেছে। বিক্রেতারা বলছে নতুন চালের দাম মানভেদে প্রতি বস্তায় ১০০ থেকে ২০০ টাকা কমেছে। এদিকে অনেক দিন পর কমতে শুরু করছে ব্রয়লার মুরগির দাম। এ সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়।
শুক্রবার (৩০ মে) রাজধানীর নিউমার্কেট, কারওয়ান বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলো ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন ডায়মন্ড, মঞ্জুর ব্র্যান্ডের নতুন মিনিকেট চাল ৭৫ টাকা, রশিদ ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল ৭২ টাকা, মোজাম্মেল ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল ৮২ টাকা, নাজিরশাইল চাল মানভেদে ৮০ থেকে ৯৫ টাকা, ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ চাল ৫৮ টাকা ও মোটা স্বর্ণা ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে ১০ টাকা এবং প্রতি কেজি সোনালি মুরগির দাম কমেছে ২০ টাকা পর্যন্ত। দেশি মুরগির দাম স্থিতিশীল রয়েছে। প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম ১৩৫-১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০টাকায়, খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১০০ থেকে ১২০০টাকা কেজি দরে।
আজ বাজারে বেগুন মানভেদে প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০টাকা, পটল ৫০, করলা ৬০, গাজর ৭০, মুলা ৪০, কাঁচামরিচ ৫০, প্রতি পিস লাউ ৫০, টমেটো ৬০, চিচিঙ্গা ৫০, ঢেঁড়স ৪০, দেশি শশা ৬০, বরবটি ৭০, কাঁকরোল ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়।
এ সপ্তাহে মাছের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। মাঝারি সাইজের চাষের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি। চাষের পাঙাস কেজি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০, কৈ ২২০, শিং ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, পাবদা ৩৫০ থেকে ৪০০, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০, টেংরা ৬০০ থেকে ৭০০, দেশি পাঁচমেশালি ছোট মাছ ৬০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
নিউমার্কেট কাঁচাবাজারে কেনাকাটা করতে আসা গৃহিণী রুনা বেগম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘‘বাজারে সবজির দাম কিছুটা কম থাকলেও অন্যান্য সব কিছুর দাম বেশি। মাছের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা বেশি মনে হচ্ছে। তাই মাছ না কিনে ব্রয়লার মুরগি নিয়ে যাচ্ছি। ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমেছে।’’
ডিমের দাম গত সপ্তাহ থেকে বেড়েছে দাবি করে রুনা বেগম বলেন, ‘‘গত সপ্তাহে ডিম নিয়েছি ১২০ টাকা ডজন। এখন ১৪০ টাকা ডজন চাচ্ছে!’’
নিউমার্কেট কাঁচাবাজারের সবজি ব্যবসায়ী সাখাওয়া মোল্লা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘‘গত কয়দিন বৃষ্টির জন্য আজ সব সবজি নিয়ে আসতে পারিনি। এছাড়া পাইকারি বাজারেও গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে সবজি সরবরাহ কম। তবে দাম একেবারে বেশি বাড়েনি। দু’একটা সবজিতে সামান্য দাম বেড়েছে। তবে আজকে বাজারে ক্রেতা কম।’’
ঢাকা/রায়হান
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম রগ র দ ম র ম রগ র ল র ম রগ
এছাড়াও পড়ুন:
৭৭ মেট্রিক টন চাল তুলে নিয়েছেন ডিলার, উপকারভোগীরা জানেন ‘বরাদ্দ হয়নি’
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় গত জুলাই মাসে ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশের (টিসিবি) উপকারভোগীদের জন্য ৭৭ দশমিক ৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছিল। প্রক্রিয়া অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এ চাল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ওএমএস) একজন ডিলার (পরিবেশক) তুলেও নেন। তবে ওই মাসে টিসিবির অন্য পণ্য পেলেও চাল পাননি বলে অভিযোগ করেছেন উপকারভোগীরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মহম্মদপুরের ৮ ইউনিয়নে টিসিবির উপকারভোগী কার্ডধারী আছেন ১৫ হাজার ৫৬৭ জন। এসব উপকারভোগী নিজেদের কার্ড দেখিয়ে প্রতি মাসে একবার ইউনিয়নের টিসিবির নিয়োগ করা ডিলারের কাছ থেকে বাজারের চেয়ে কম মূল্যে তেল, চিনি, ডাল ও চাল কিনতে পারেন। গত জুলাইয়ে ডিলারদের কাছ থেকে তেল, চিনি ও ডালের একটি প্যাকেজ কিনতে পেরেছেন তাঁরা। ওই মাসে চালের বরাদ্দ আসেনি বলে জানানো হয় কার্ডধারীদের।
মহম্মদপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে পাওয়া নথিতে দেখা গেছে, গত ৩০ জুলাই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মজনুর রহমান স্বাক্ষরিত দুইটি বিলি আদেশে (ডিও) উপজেলার হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে একজন ওএমএস ডিলারের অনুকূলে ৭৭ দশমিক ৮৩৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই দিনই মহম্মদপুর ও বিনোদপুর খাদ্যগুদাম থেকে এ চাল তুলেও নেওয়া হয়।
সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।শরিফা, টিসিবির কার্ডধারী, রাজাপুর ইউনিয়নটিসিবি ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন টিসিবি উপকারভোগীদের চাল ছাড়া অন্য পণ্য সরাসরি তাঁদের নিয়োগ করা ডিলারদের কাছে সরবরাহ করে। চালের বরাদ্দ দেওয়া হয় খাদ্য বিভাগ থেকে। এ অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে প্রথমে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ করা ওএমএস বা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারদের অনুকূলে ২৬ টাকা কেজি দরে চাল বরাদ্দ দেয়। সেই চাল ওই ডিলারদের কাছ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে নেন টিসিবির ডিলাররা। এরপর তাঁরা ৩০ টাকা কেজি দরে ওই চাল উপকারভোগীদের কাছে বিক্রি করেন।
উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পারুল নামে টিসিবির এক উপকারভোগী ১ সেপ্টেম্বর জানান, আগস্ট মাসে চাল, ডাল, তেল ও চিনির প্যাকেজ পেলেও জুলাই মাসে তাঁদের চাল ছাড়া অন্য তিন ধরনের পণ্যের প্যাকেজ দেওয়া হয়েছিল। জুলাই মাসে তাঁদের জানানো হয় চাল বরাদ্দ হয়নি।
বিষয়টি জানতে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে টিসিবির নিয়োগ করা ৮ জন ডিলারের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাঁদের মধ্যে মহম্মদপুর সদর, নহাটা, পলাশবাড়ীয়া, বালিদিয়া, রাজাপুর ও বাবুখালী ইউনিয়নের ডিলার জানিয়েছেন, জুলাই মাসে তাঁদেরকে চাল দেওয়া হয়নি। নহাটা ও রাজাপুর ইউনিয়নের ডিলার মিলন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মিলন ঘোষ ৪ সেপ্টেম্বর বলেন, ‘জুলাই মাসে আমাদের বলা হইছিল চাল বরাদ্দ নেই। এ কারণে চাল ছাড়া অন্য পণ্যগুলো বিক্রি করেছি। তবে অ্যাপে দেখাইছিল চাল। কিন্তু আমরা পাইনি।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পানঅবশ্য বিনোদপুর ও দীঘা ইউনিয়নের দুই ডিলার দাবি করেছেন তাঁরা অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে চালও কার্ডধারীদের কাছে বিক্রি করেছেন। তবে দুই ইউনিয়নের অন্তত ১০ জন উপকারভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাঁরা কেউই চাল পাননি। এর মধ্যে বিনোদপুর বাজারের একজন ফল ব্যাবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জুলাই মাসে ডিলার জানাইছিল চাল ফুরায় গেছে।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পান বলে খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে হোসেনিয়া কান্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে সরবরাহ করা তাঁর মুঠোফোনে সোমবার যোগাযোগ করা হলে একজন ধরে জানান, ওই নম্বর হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে কেউ ব্যবহার করেন না।
জানতে চাইলে টিসিবির ঝিনাইদহ ক্যাম্প অফিসের উপপরিচালক আকরাম হোসেন সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিসিবির চাল খাদ্য বিভাগ থেকে সরবরাহ করা হয়। আর বিতরণ কার্যক্রম তদারকির জন্য প্রতিটি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি কমিটি রয়েছে। যেখানে প্রতি ইউনিয়নে একজন ট্যাগ অফিসার আছেন, যিনি এগুলো তদারকি করেন।’
জেলার কয়েকজন চাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৬ টাকা কেজি দরে কেনা এসব চাল বাজারে প্রায় ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। উপকারভোগীদের কাছে তা ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার কথা। এ হিসাবে উপকারভোগীদের ফাঁকি দিয়ে এ চাল বাজারে বিক্রি করতে পারলে কেজিতে ২২ থেকে ২৪ টাকা লাভ হয়।
চাল না পাওয়ার বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন মহম্মদপুরের ইউএনও শাহীনুর আক্তার। সোমবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাল দেওয়া হয়নি এখন পর্যন্ত এমন অভিযোগ কেউ দেয়নি। খাদ্য অফিস থেকে আমি যত দূর জানতে পেরেছি তাতে সবকিছু দেওয়া হয়ে গেছে। বরাদ্দ থাকলে তা আটকে রাখার সুযোগ নেই। তারপরও কোনো অভিযোগ থাকলে খতিয়ে দেখব।’
হঠাৎ এক মাসে চাল না পাওয়ায় বিপাকে পড়েন উপকারভোগীরা। রাজাপুর ইউনিয়নের শরিফা নামের টিসিবি কার্ডধারী এক নারী বলেন, ‘সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।’