অর্থনীতি নিয়ে রোডম্যাপ না থাকায় হতবাক হয়েছি
Published: 31st, May 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার নিয়ে এত কথা বললেও অর্থনীতি নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা আমরা দেখিনি। সরকার অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত কয়েকটি কমিটি এবং টাস্কফোর্স গঠন করেছিল, শ্বেতপত্র কমিটি দিয়ে যার শুরু। আমরা এসবের ফলাফল এখনও দেখলাম না
অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো এবং বাংলাদেশে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর অর্থনীতির ওপর শ্বেতপত্র প্রণয়নের যে কমিটি গঠন করেছিল, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ছিলেন তার প্রধান। জাতীয় বাজেট সামনে রেখে অর্থনীতিতে সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমকালের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাকির হোসেন
সমকাল: অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে প্রায় ১০ মাস। এরই মধ্যে আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘনিয়ে এসেছে। বাজেট প্রক্রিয়াকে কীভাবে দেখছেন?
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: বর্তমান সরকার পতিত সরকারের বাজেট নিয়ে এগিয়েছে। সরকার চলতি বাজেটকে কী কী নীতির ভিত্তিতে সংশোধন করল, তা বুঝলাম না। পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো হলো কিনা, ভর্তুকি, সুদ পরিশোধ ইত্যাদি ক্ষেত্রে কোন কোন নীতি নেওয়া হলো– এগুলো সংশোধনের সময় সরকার কিছুই বলল না। অন্যদিকে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ৪০ শতাংশই ভুয়া বলে আমরা শ্বেতপত্রে লিখেছি। এডিপি কোন নীতিমালার ভিত্তিতে সংশোধন হলো, মেগা প্রকল্প কোনটা বাদ দেওয়া হলো, কোনটার মূল্য সংশোধন করা হলো– সেগুলোও বুঝলাম না।
বছর বছর ধরে বিভিন্ন প্রকল্প ১ লাখ বা ২ লাখ টাকা দিয়ে রাজনৈতিক কারণে চলমান রাখা হয়েছিল, নতুন এডিপিতে সেগুলো সরকার বাদ দিল কিনা, তাও জানতে পারলাম না। যেহেতু সরকারের ব্যয় আগামী বাজেটে সংখ্যাগতভাবে এবং জিডিপির অংশ হিসেবে কমবে, সেহেতু এই কম টাকা খরচের নীতির বিষয়েও স্বচ্ছতা দেখছি না। সুতরাং এই সরকারের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে রয়ে গেলাম। আবার জ্বালানি খাত, ব্যাংক খাত, কর ব্যবস্থাপনাসহ কিছু ক্ষেত্রে সরকার যেসব সংস্কার করার চেষ্টা করছে, তার সঙ্গে বাজেটের সম্পর্ক পরিষ্কার হলো না। সরকার একবার নিত্যপণ্যসহ কিছু ক্ষেত্রে ভ্যাট আরোপ করতে গিয়ে পিছু হটেছে। এগুলো অব্যাহত থাকবে কিনা এবং আগামী দিনে শুল্ক ব্যবস্থাপনা বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কোন ধরনের ছাড় দিতে যাচ্ছে, তাও পরিষ্কার নয়। বাজেট প্রস্তুতির জন্য সরকারের ভেতরে যে সমন্বয় দরকার, তার অভাব দেখছি।
সমকাল: শ্বেতপত্রে আপনারা গত বছরের নভেম্বর মাসে অন্তর্বর্তী সরকারকে অর্থনীতির জন্য একটি মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নের সুপারিশ করেছিলেন। কোনো অগ্রগতি দেখছেন?
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার নিয়ে এত কথা বললেও অর্থনীতি নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা আমরা দেখিনি। সরকার অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত কয়েকটি কমিটি এবং টাস্কফোর্স গঠন করেছিল, শ্বেতপত্র কমিটি দিয়ে যার শুরু। কিন্তু আমরা এসবের ফলাফল এখনও দেখলাম না। অর্থনৈতিক সংস্কারের কোনো রোডম্যাপ বা পথরেখা সরকারের কাছ থেকে এলো না। কোনো মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা সরকার করল না। এতে আমি হতবাক হয়েছি। অন্তর্বর্তী সরকার তো মধ্য মেয়াদেই রইল। সরকারের এই পরিকল্পনার অভাবটা আমি বেশি অনুভব করেছি গত মাসে বিনিয়োগ সম্মেলনের সময়। সম্মেলনে যারা এসেছিলেন, তাদের অনেকই আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, যেসব কথা সরকার বলছে, সেগুলোর নীতি কাঠামো কী? কর, বিনিয়োগ, অর্থ প্রত্যাবাসন, রপ্তানি সুবিধা ইত্যাদি বিষয়ে সরকারের নীতি নিয়ে তারা কোনো সমন্বিত ডকুমেন্ট তো পেলেন না।
সমকাল: উদ্যোক্তা এবং বিনিয়োগকারীদের প্রতি সরকার সুস্পষ্ট বার্তা দিতে পেরেছে বলে মনে হয়?
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: বিদেশিদের মতো দেশীয় উদ্যোক্তা বা বিনিয়োগকারীরাও নীতির দ্রুত পরিবর্তন নিয়ে শঙ্কিত থাকেন। অন্তর্বর্তী সরকার এখন যা করছে, তা আগামীতে কতটুকু টিকবে– সেই চিন্তা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছে। সেই চিন্তা তাদের মনের মধ্যে আরও জোরালো হয়েছে এ কারণে যে, সরকার তো কোনো মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা জানতে পারল না। এই সরকারের কোনো অর্থনৈতিক ‘মেনিফেস্টো’ নেই। কোনো সমন্বিত সংস্কার কর্মসূচি নেই। নীতির ধারাবাহিকতা নিয়ে প্রক্রিয়াগত কোনো নিশ্চয়তা নেই। কেননা, ব্যাপক আলোচনা হয়নি। বিশেষত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মতামত নেওয়া হয়নি। সরকার অন্য সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করছে; কিন্তু অর্থনৈতিক সংস্কার নিয়ে করেনি। ইতোমধ্যে এর পরিণতি আমরা দেখতে পাচ্ছি। যেমন–রাজস্ব বিষয়ে অধ্যাদেশ নিয়ে কয়েকদিন আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং বন্দরে অচলাবস্থা তৈরি হয়। শেয়ারবাজার নিয়েও বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে।
সমকাল: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পেছনে শোভন কর্মসংস্থানের অভাব অন্যতম কারণ ছিল। এখন কী পরিস্থিতি দেখছেন? নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অর্থনীতির গুরুত্ব কতটুকু?
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার দায়িত্ব নিয়েছিল। সেই ছাত্র-জনতার জন্য শোভন কর্মসংস্থানের কোনো পরিকল্পনা সরকার দিল না। তাদের মানসম্মত শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক সুরক্ষা কিংবা যুবশ্রেণির জন্য ভর্তুকি বা কার্ড ইত্যাদি ক্ষেত্রে সরকারের বলিষ্ঠ পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। কী হতে যাচ্ছে, তাও জানতে পারলাম না। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মূল স্পৃহার প্রতি অর্থনীতির নীতিপ্রণেতারা সেভাবে সম্মান দিল না। আমাদের গবেষণায় দেখিয়েছি, নির্বাচনকেন্দ্রিক পরিস্থিতি কতখানি সহনশীল এবং কার্যকর হবে, তা অনেকখানি নির্ভর করবে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর। এই মুহূর্তে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সংস্কার, বিচার ব্যবস্থা ইত্যাদি নিয়ে যেসব উদ্যোগ আছে, সেগুলো যথাযথভাবে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবণ করে কিনা, বুঝে উঠতে পারছি না। অর্থনীতি যদি সুস্থির না থাকে, তাহলে কোনো অবস্থাতেই সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচন– কোনো পথকেই সুগম করবে না। যদি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে না থাকে, শ্রমিকদের যদি মজুরি ঠিকমতো না হয় এবং শোভন কর্মসংস্থান না হয়, তাহলে ওই পথ প্রতিকূলতার মুখে পড়তে পারে।
সমকাল: দরিদ্র মানুষের সুরক্ষায় সরকারের কতটুকু করতে পারছে?
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: সরকার শহরে স্বল্পমূল্যে পণ্য বিক্রির উদ্যোগ যেভাবে নিয়েছে, গ্রামের মানুষের জন্য কাজের বিনিময়ে কর্মসূচিতে সেভাবে মনোযোগ দেয়নি। সামাজিক সুরক্ষার ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে আগে কিছু ভুয়া লোকজন ঢুকেছিল। তাদের বাদ দেওয়ার চেষ্টা আছে। কিন্তু নতুনভাবে তালিকা করা হয়নি। মাথাপিছু টাকা বাড়ানো হবে বলে শুনছি। কিন্তু কাদের দেওয়া হবে, কীভাবে দেওয়া হবে, বিশেষ করে স্থানীয় সরকারের অনুপস্থিতিতে প্রক্রিয়া কী হবে– তা অস্পষ্ট। কোনো মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা না থাকায় পতিত সরকারের কর্মসূচি ঝাড়ামোছা করে চালানো হচ্ছে।
সমকাল: শ্বেতপত্রে আপনারা একটা উন্নয়ন সম্মেলন আয়োজনের সুপারিশ করেছিলেন। বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজনের মাধ্যেম কি ওই সুপারিশের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হয়েছে?
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: আমরা সুপারিশ করেছিলাম বিদেশি উন্নয়ন সহযোগী, বিনিয়োগকারী, প্রবাসী বাংলাদেশিসহ সব পক্ষকে নিয়ে একটি অর্থনৈতিক বা উন্নয়ন সম্মেলন করার। আলগাভাবে বিনিয়োগ সম্মেলন করে সেই উদ্দেশ্য পূরণ হয়নি। বিনিয়োগ সম্মেলনে আমরা বাংলাদেশকে সম্ভাবনার দেশ বলেছি; কিন্তু সম্ভাবনার পথরেখা তো বলতে পারিনি। উন্নয়ন সহযোগীদের রেখে সরকারের প্রথম দিকে একটি বড় অর্থনৈতিক সম্মেলন করতে পারলে আমরা কোথায় সহায়তা লাগবে, কোথায় ঘাটতি আছে– এগুলো জানাতে পারতাম।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ছ ত র জনত র শ ব তপত র সরক র র ক পর স থ ত প রক র য় সরক র দ সমন ব ত কর ছ ল র জন য সমক ল
এছাড়াও পড়ুন:
এই অদম্য মেয়েদের আমরা হারিয়ে যেতে দিতে পারি না
অবহেলিত মেয়েরা কঠিন একটি কাজ সম্পন্ন করেছেন। অনেকের কাছে এখনো অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। অসাধ্য এক অর্জনকে বাস্তবের জমিনে নামিয়ে এনেছেন আমাদের বাঘিনীরা। সাফ পর্যায় জয় করে নারীদের ফুটবলকে এশীয় পর্যায়ে নিয়ে গেলেন। বিশ্বকাপও খেলে ফিরতে পারেন এই অদম্য বাঘিনীরা।
এখন বলাই যায়, নারী ফুটবলের বিশ্ব পর্যায়ে কড়া নাড়ছেন আমাদের মেয়েরা। ফুটবলকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তাঁরা। শুধু ফুটবলই নয়, আমাদের নারী জাগরণের নতুন দিশা হতে পারে মেয়েদের এই সাফল্য। এই মেয়েরা সারা দেশের মেয়েদের জন্য উদাহরণ। নারী অধিকার, নারী ক্ষমতায়নের নতুন দিনের আলোকবর্তিকা আমাদের নারী ফুটবল দল।
ফুটবলে মেয়েদের এই সাফল্যের পেছনে আছে দীর্ঘদিনের লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস। সফলতা খুব সহজে আসেনি। নানা প্রতিবন্ধকতা পার করে কঠিন এক সংগ্রামের ফসল মেয়েদের আজকের এই অর্জন। ঠাকুরগাঁওয়ের প্রত্যন্ত পল্লি থেকে কোহাটি কিষ্ক, কলসিন্দুরের মারিয়া মান্দা, শামসুন্নাহার, তহুরা খাতুন, সানজিদা আক্তার বা রাঙামাটির দুর্গম গ্রাম মগছড়ি থেকে ঋতুপর্ণা চাকমাদের আজকের এই পর্যায়ে আসার ইতিহাসটা আমরা কমবেশি সবাই জানি।
এই পথচলায় সামাজিক বিধিনিষেধ ছিল। ছিল আর্থিক টানাপোড়েন, অনিশ্চয়তা। জীবনের এমন কোনো সংকট নেই, যা তাঁদের সামনে আসেনি। কিন্তু হিমালয়সম সেই বাধাকে সাহসিকতার সঙ্গে পেছনে ঠেলে আজকে তাঁরা এশীয় পর্যায়ে নিজেদের উন্নীত করেছেন।
তাঁদের অর্জনের তুলনায় রাষ্ট্র দিতে পেরেছে খুবই কম। বলতে গেলে, তাঁরা পেটেভাতে দেশের জন্য খেলে দিচ্ছেন। যেন খেলার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি চলছে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আদলে। যৎসামান্য যে বেতন দেওয়া হয়, সেটাও অনিয়মিত। যেকোনো সাফল্যের পর যখন মেয়েদের কাছে শুনতে চাওয়া হয়, ‘আপনারা কী চান?’ উত্তরে মেয়েরা জানান, ‘নিয়মিত বেতনটা চাই। আর বেতনটা বাড়ালে আরও ভালো হয়।’ ২০২৫ সালে এসে এটা মেনে নেওয়া কঠিন।
দেশে মেয়েদের নিয়মিত লিগ হয় না। অন্য কোনো টুর্নামেন্টও হয় না নিয়মিত। নিয়মিত খেলার জন্য আমাদের মেয়েদের ভুটান লিগে খেলতে যেতে হয়। কেবল আবাসিক ক্যাম্পের প্রশিক্ষণ ও কিছু প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ খেলেই মেয়েদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতামূলক খেলায় নামতে হয়। সেই সব খেলায় তাঁরা নিয়মিত লিগ খেলা দলগুলোকে বলে-কয়ে হারাচ্ছে।
আমাদের খেলাধুলাকে রাজধানীকেন্দ্রিক না রেখে প্রান্তিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। শুধু নারী ফুটবল নয়, সব ধরনের খেলাধুলার আয়োজন করতে হবে তৃণমূল থেকে। তবেই নতুন নতুন প্রতিভাবান খেলোয়াড় বেরিয়ে আসবে। ঢাকাকেন্দ্রিক খেলার কুফল কী হতে পারে, তার বড় উদাহরণ আমাদের ছেলেদের ফুটবল। সারা দেশে নিয়মিত প্রতিযোগিতামূলক লিগ না হওয়ার কারণে নতুন নতুন ফুটবলার বেরিয়ে আসছেন না।কী পরিমাণ প্রতিভার অধিকারী হলে ন্যূনতম সুবিধা না পেয়েও এ পর্যায়ে সাফল্য অর্জন করা যায়, তা এককথায় অবিশ্বাস্য। ভারত ও নেপালে নিয়মিত মেয়েদের খেলা হয়, লিগ হয়। আর আমরা তাদের এখন নিয়মিতই হারাই। এখন সাফের বাইরের দলগুলোকেও আমরা হারাতে শুরু করেছি।
এই মেয়েদের প্রচেষ্টা ও সাহস নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। প্রচণ্ড রকম ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে তাঁরা খেলতে নামেন। ভয়হীন ফুটবল খেলেন। সব থেকে বড় কথা, খেলার যেকোনো ধরনের ট্যাকটিকসের সঙ্গেই তাঁরা দ্রুত মানিয়ে নিতে পারেন। আগে আমাদের মেয়েরা কিছুটা রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলতেন। রক্ষণ সামলে প্রতি-আক্রমণে যেতেন। এবার এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে মেয়েরা পুরো খেলার ধরন বদলে ফেলেছেন।
আমাদের মেয়েরা এবার হাই প্রেসিং ফুটবল খেলেছেন। এই দল আগের থেকে দ্রুতগতিসম্পন্ন ফুটবল খেলে। বল পায়ে রাখতে পারে। তাদের বল ডিস্ট্রিবিউশন আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। পাসিংও ভালো। পজিশন সেন্স চমৎকার। বিশেষ করে বল হারালে দ্রুত নিজেরা অবস্থান নিতে পারে।
এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে হাই লাইন ডিফেন্স করে গেছে দুর্দান্তভাবে। আর বাহরাইনের সঙ্গে শামসুন্নাহার জুনিয়র যেভাবে গতি সঞ্চার করে ডিফেন্স থেকে বেরিয়ে ওয়ান টু ওয়ানে গোলরক্ষককে পরাজিত করলেন ঠান্ডা মাথায়, তা আমাদের পুরুষ দলের স্ট্রাইকার বা উইঙ্গাররাও করতে পারেন না। নিয়মিত খেলার মধ্যে না থাকা একটি দলের কাছে এর বেশি আশা করা উচিত নয়। কিন্তু তাঁরা আমাদের সেই আশাকে ছাড়িয়ে গেছেন। তাঁরা পরিস্থিতি বুঝে মাঠে খেলাটা তৈরি করতে পারেন।
মেয়েদের এই লড়াইকে ধরে রাখতে হবে। তাঁদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সিরাত জাহান স্বপ্না বা আঁখি খাতুনের মতো খেলোয়াড়দের আর্থিক অনিশ্চয়তার কারণে ফুটবল থেকে হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। মেয়েদের প্রতিযোগিতামূলক লিগ নিয়মিত আয়োজন করতে হবে। এর পাশাপাশি জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে লিগের আয়োজন করতে হবে।
‘সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে এই মেয়েরা আমাদের ফুটবল নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন।’