গাজার মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ: জাতিসংঘ
Published: 31st, May 2025 GMT
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রদানকারীরা গাজা অব্যাহত বিমান হামলা, অপুষ্টি, বাস্তুচ্যুতি এবং জনশৃঙ্খলার অবনতির কারণে বিপর্যস্ত পরিস্থিতিকে বিপর্যয়কর এবং ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ বলে বর্ণনা করেছেন।
শনিবার (৩১ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে চীনের বার্তা সংস্থা সিনহুয়া।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার (৩০ মে) জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় অফিস (ওসিএইচএ) এক বিবৃতিতে জানায়, বৃহস্পতিবার (২৯ মে) জাতিসংঘ ও এর মানবিক অংশীদারদের কাছ থেকে ত্রাণবাহী পাঁচটি ট্রাক গাজা উপত্যকায় প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে, যা গত চার দিনের মধ্যে প্রথম প্রবেশ। একই চেকপয়েন্ট, কেরেম শালোম/কারেম আবু সালেম ক্রসিং থেকে আরো ৬০টি ট্রাককে ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু এলাকায় তীব্র সংঘর্ষের কারণে ত্রাণের ট্রাকগুলোকে লোডিং জোনে ফিরে যেতে হয়েছিল।
আরো পড়ুন:
বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুধার্ত এলাকা এখন ‘গাজা’
হামাসের সাথে যুদ্ধবিরতির জন্য মার্কিন প্রস্তাবে রাজি ইসরায়েল
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের প্রধান মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন, ক্রসিংয়ের আশেপাশের এলাকাটি এমন একটি এলাকা যেখানে প্রচুর সশস্ত্র দল কাজ করছে, বিশেষ করে নো ম্যানস ল্যান্ডে, যা ক্রসিং থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তিনি বলেন, “পাঁচটি ট্রাক চিকিৎসা সরঞ্জাম বহন করছিল, যা দেইর আল-বালাহের ফিল্ড হাসপাতালের জন্য ছিল এবং আজ (শুক্রবার) বেশিরভাগ সরবরাহ লুট করা হয়েছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।”
ওসিএইচএ জানিয়েছে, গাজায় প্রায় ৮০ দিন ধরে খাবার, ওষুধ, পানি, জ্বালানিসহ সব ধরনের সরবরাহে ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞার পর ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটিতে মানবিক চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন গাজা উপত্যকায় সবচেয়ে সীমিত পরিমাণে সাহায্য প্রবেশ করছে, যা ২১ লাখ মানুষকে সহায়তার জন্য যথেষ্ট নয়।
ওসিএইচএ’র মুখপাত্র জেন্স লারকে বলেছেন, “গাজা পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুধার্ত স্থান। এই ভূখণ্ডটি একমাত্র সংজ্ঞায়িত এলাকা- একটি দেশ বা একটি দেশের মধ্যে সংজ্ঞায়িত অঞ্চল- যেখানে পুরো জনসংখ্যা দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে। জনসংখ্যার একশ শতাংশ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে।”
ওসিএইচএ বলছে, জাতিসংঘ ও তার অংশীদাররা স্থল চ্যালেঞ্জ এবং গাজায় সহায়তার পরিমাণ ও ধরনের উপর ইসরায়েলের কঠোর বিধিনিষেধ থাকা সত্ত্বেও, অসহায় মানুষদেরকে জন্য কাজ করছে।
যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত ও ইসরায়েল সমর্থিত ‘গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন’ গত সপ্তাহে গাজায় তাদের ত্রাণ কার্যক্রম চালু করেছে। তবে জাতিসংঘের কাছে তাদের কার্যক্রমের বিষয়ে কোনো তথ্য নেই।
ওসিএইচএ জানিয়েছে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় হাসপাতাল ও এর আশেপাশে বারবার হামলা চালিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দক্ষিণ গাজায় আংশিকভাবে চালু থাকা সর্বশেষ হাসপাতাল ‘আল আওদা’ খালি করতে বাধ্য করেছে। দেইর আল-বালাহতে আল বুরেইজ ও আন নুসেইরাত ক্যাম্প এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে।
জাতিসংঘের সংস্থাটি আরো জানিয়েছে, এই সপ্তাহের শুরুতে একটি হামলায় একজন সাংবাদিকের পরিবারের নয়জন সদস্য নিহত এবং আরো ১৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
ওসিএইচএ’র তথ্যানুসারে, গাজায় খাবার ও পুষ্টিকেন্দ্র পরিচালনাকারী আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা আইএইচএইচ বুধবার (২৮ মে) জানিয়েছে, গত দুই দিনে তাদের পাঁচজন কর্মী নিহত এবং দুজন আহত হয়েছেন।
ওসিএইচএ জোর দিয়ে বলেছে, গাজায় সাহায্যকর্মীসহ বেসামরিক নাগরিকদের সর্বদা সুরক্ষিত রাখতে হবে।
মানবিক সহায়তাকারীরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি হামলায় গাজা জুড়ে বাস্তুচ্যুতি অব্যাহত রয়েছে, গত দুই সপ্তাহে প্রায় ২ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। বৃহস্পতিবার, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ গাজার মোট ভূখণ্ডের প্রায় ৩০ শতাংশ- উত্তর গাজা, গাজা শহরের পূর্ব অংশ এবং দেইর আল-বালাহকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি পুনর্নবীকরণকৃত বাস্তুচ্যুতির আদেশ জারি করেছে।
মানবিক পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হওয়ায় গাজায় জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ভেঙে পড়ছে। ওসিএইচএ জানিয়েছে, একদল সশস্ত্র ব্যক্তি দেইর আল-বালাহের একটি ফিল্ড হাসপাতালের গুদামে হামলা চালিয়ে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের চিকিৎসা সরঞ্জাম, খাবার, ওষুধ ও পুষ্টিকর পরিপূরক লুট করেছে।
ওসিএইচএ বলছে, “যারা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে ও লুট করেছে তাদের জবাবদিহি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানবিক চাহিদা পূরণ এবং লুটপাট কমাতে, গাজায় আরো সাহায্য ও প্রয়োজনীয় বাণিজ্যিক পণ্য পৌঁছে দেওয়া এবং পুরো উপত্যকায় তাদের নিরাপদ বিতরণ সহজতর করা অপরিহার্য। এর অর্থ হলো, একাধিক ক্রসিং ও রুটের মাধ্যমে আরো বেশি জরুরি সাহায্যে সরবরাহ করা। আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর ওপর থেকে নিষোধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা।"
ওসিএইচএ জানিয়েছে, দখলদার শক্তি হিসেবে ইসরায়েলের গাজায় জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা পুনরুদ্ধারের প্রাথমিক দায়িত্ব রয়েছে, যা অবশ্যই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। অফিসটি পরামর্শ দিয়েছে, গাজার বেসামরিক পুলিশকে আইন প্রয়োগকারী মানদণ্ডের অধীনে কাজ করার অনুমতি দেওয়া উচিত।
পশ্চিম তীরের পরিস্থিতি সম্পর্কে ওসিএইচএ জানিয়েছে, ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা ক্রমবর্ধমান। বসতি স্থাপনকারীদের হামলায় গড়ে প্রতি মাসে ৪৪ জন ফিলিস্তিনি আহত হচ্ছেন। যা গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
ওসিএইচএ বলছে, উত্তর পশ্চিম তীরের সালফিট গভর্নরেট জুড়ে ইসরায়েল আরোপিত চলাচলের নিষেধাজ্ঞা প্রায় ৯০ হাজার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও জীবিকা নির্বাহের সুযোগ ব্যাহত করছে। ইসরায়েলি বাহিনী সালফিটে নয় দিনের অভিযানের পর এলাকাটি অবরুদ্ধ করে রেখেছে।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল পর স থ ত ইসর য় ল ব য হত সহ য ত ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশে আতঙ্ক-উত্তেজনা, ট্রাম্প আসলে কী চান
যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ভাইস অ্যাডমিরাল রিচার্ড কোরেল ভেবেছিলেন, দেশটির পারমাণবিক বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে তাঁর নিয়োগ নিশ্চিত হওয়া নিয়ে গত বৃহস্পতিবার শুনানি সহজভাবেই শেষ হবে। তবে তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণের আগের দিন বুধবার রাত ৯টা ৪ মিনিটে সে আশা ভেঙে গেছে।
ওই সময় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে বিশ্বকে চমকে দেন। বলেন, তিনি মার্কিন বাহিনীকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা অবিলম্বে শুরু করতে বলেছেন। তাঁর যুক্তি, যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে রাশিয়া ও চীনের পেছনে থাকতে পারে না।
ট্রাম্প বলেন, ‘পারমাণবিক অস্ত্রে রাশিয়া দ্বিতীয় এবং চীন বেশ দূরে তৃতীয় অবস্থানে। কিন্তু দেশটি পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের সমপর্যায়ে উঠে আসতে পারে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সিনেটে সশস্ত্র বাহিনী কমিটির প্রায় ৯০ মিনিটের শুনানিতে ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে বারবার কোরেলকে প্রশ্ন করা হয়। ট্রাম্পের মন্তব্যে অনেক আইনপ্রণেতাই এ সময় ছিলেন বিভ্রান্ত। এ থেকে বোঝা যায়, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ওয়াশিংটন ও এর বাইরে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন।
মার্কিন কর্মকর্তারা পরিষ্কার করেননি যে ট্রাম্প পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহ ব্যবস্থার পরীক্ষা করতে বলছেন, নাকি বিস্ফোরক পরীক্ষায় ৩৩ বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষ করতে চাইছেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ট্রাম্পের নির্দেশ বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়াতে পারে, যা শীতল যুদ্ধের ভয়ংকর স্মৃতি ফিরিয়ে আনে।কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সদস্য সিনেটর জ্যাক রিড কোরেলকে প্রশ্ন করেন, যুক্তরাষ্ট্র আবারও পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা শুরু করলে তা কি বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতা বাড়াবে এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে।
কোরেল বলেন, ‘যদি আমাকে স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের (স্ট্র্যাটকম) কমান্ডার হিসেবে নিশ্চিত করা হয়, আমার কাজ হবে, পারমাণবিক পরীক্ষাবিষয়ক যেকোনো আলোচনা সম্পর্কে সামরিক পরামর্শ দেওয়া।’
ভাইস অ্যাডমিরাল কোরেলকে গত সেপ্টেম্বরে ট্রাম্প স্ট্র্যাটকমের প্রধান করার জন্য মনোনীত করেন। স্ট্র্যাটকম পারমাণবিক হামলা প্রতিরোধ ও আক্রমণের সক্ষমতা নিয়ে কাজ করে। কোরেল পুরো শুনানিতে সতর্কভাবে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।
পারমাণবিক অস্ত্রে রাশিয়া দ্বিতীয় ও চীন বেশ দূরে তৃতীয় অবস্থানে। কিন্তু দেশটি পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের সমপর্যায়ে উঠে আসতে পারে।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্টশুনানির এক পর্যায়ে স্বতন্ত্র সিনেটর অ্যাঙ্গাস কিং প্রশ্ন করেন, ট্রাম্প কি পারমাণবিক ডিভাইসের বিস্ফোরক পরীক্ষা নয়, বরং ক্ষেপণাস্ত্র বা অন্য সরবরাহ ব্যবস্থা পরীক্ষার কথা বলছেন কি না।
জবাবে কোরেল বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্টের উদ্দেশ্য জানি না, তবে এটি এমন একটি ব্যাখ্যা হতে পারে, আমি তা মেনে নিই।’
দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে গত বৃহস্পতিবার মুখোমুখি বৈঠকে যোগ দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সি চিন পিং