রাখাইনে সংঘর্ষে জান্তা বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নিহত
Published: 31st, May 2025 GMT
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বন্দরনগরী ক্যাউকফিউয়ের কাছে সামরিক সরকার ও আরাকান আর্মির (এএ) মধ্যে চলমান সংঘর্ষে জান্তার একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নিহত হয়েছেন।
রাখাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ক্যাউকফিউ-রাম্রি সড়কের পাশে প্যাইং সি কে গ্রাম–সংলগ্ন এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এটি ক্যাউকফিউ শহর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। সেখানে এএ একাধিক সেনাচৌকি দখল করেছে, যেগুলো একটি পুলিশ ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর রক্ষায় মোতায়েন করা হয়েছিল।
সোমবার স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, এএর স্নাইপার হামলায় ১১ নম্বর ডিভিশনের কৌশলগত কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কিয়াও মিও আউং ও একজন সেনা ক্যাপ্টেন গুলিবিদ্ধ হন। পরে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কিয়াও মিও আউং মারা যান। তাঁর মরদেহ মঙ্গলবার একটি বিশেষ উড়োজাহাজে ইয়াঙ্গুনে পাঠানো হয়েছে। গুলিবিদ্ধ ক্যাপ্টেন মারা গেছেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
মিও আউংয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আমন্ত্রণপত্র অনলাইনে দেখা গেছে। এতে বলা হয়েছে, ৪৫ বছর বয়সী কিয়াও মিও আউং মঙ্গলবার দায়িত্ব পালনের সময় মারা যান। বৃহস্পতিবার তাঁকে ইয়াঙ্গুনের মিংগালাদোন সামরিক সমাধিস্থানে মাটি দেওয়া হয়েছে।
ক্যাউকফিউ শহর রক্ষায় জান্তা সরকার বিমান, নৌ ও স্থলপথে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। শহরটিতে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্প রক্ষায় সেখানে নিয়োজিত চীনা বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থাগুলোও ড্রোন হামলায় জান্তা সেনাদের সহায়তা করছে বলে রাখাইনভিত্তিক কিছু সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে। তবে দ্য ইরাবতী এসব তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।
চীনের তেল ও গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্প ক্যাউকফিউ থেকে শুরু হয়েছে, যা চীনের ইউনান প্রদেশকে ভারত মহাসাগরের সঙ্গে যুক্ত করেছে। এই এলাকাতেই চীন একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করছে। এ কারণে গত ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের সেনা সরকার ‘প্রাইভেট সিকিউরিটি সার্ভিস আইন’ চালু করে, যাতে চীনা সশস্ত্র নিরাপত্তা কর্মীরা মিয়ানমারে কাজ করতে পারেন। এরপর থেকেই ক্যাউকফিউয়ে চীনা নিরাপত্তা কর্মীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
ফলে ক্যাউকফিউর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সংঘর্ষের আশঙ্কায় প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
গত বছরের নভেম্বরে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভিযান শুরু করে এএ। এরপর থেকে রাখাইনের ১৭টি টাউনশিপের মধ্যে ১৪টি এবং দক্ষিণ চিন রাজ্যের পালেটওয়া টাউনশিপ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে তারা। বর্তমানে তারা রাখাইনের রাজধানী সিত্তে দখলের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
জান্তা সরকার বিমান দিয়ে এএ-নিয়ন্ত্রিত গ্রাম ও শহরগুলোতে হামলা চালাচ্ছে, এতে বহু বেসামরিক মানুষ নিহত হচ্ছেন। চলতি বছর এএ পার্শ্ববর্তী ম্যাগওয়ে, বাগো ও আইয়ারাওয়াদি অঞ্চলে নিজেদের অভিযান সম্প্রসারণ করেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ঘর ষ র খ ইন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।