জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, অন্যায়ভাবে যেসব জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের হত্যা করা হয়েছে, আগে সেসব হত্যাকাণ্ডের বিচার হতে হবে। এরপর সংস্কার। তারপরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

কিশোরগঞ্জ পুরাতন স্টেডিয়ামে আজ শনিবার দুপুরে জেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মুজিবুর রহমান। বক্তব্যে তিনি দাবি করেন, বিগত দিনে বিচারের নামে অবিচার হয়েছে। বিচার বিভাগকে ‘মিসক্যারেজ’ করা হয়েছে। সুবিচারকে হত্যা করা হয়েছে।

মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, এখন আমরা কিছুটা সুবিচারের সুফল পাচ্ছি আমাদের নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মুক্তির মাধ্যমে। কিন্তু যাঁদেরকে অন্যায়ভাবে রায় দিয়ে হত্যা করা হয়েছে, সেগুলো নাকি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রায় ছিল। তাই সেসব রায় সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে বিচারের নামে অবিচার করে দেওয়া হয়েছিল। যে জন্য আগে এসব জুডিশিয়াল কিলিংয়ের বিচার হতে হবে, এরপর নির্বাচন হবে। কিন্তু একটি দল বিচারও চায় না, সংস্কারও চায় না, শুধু নির্বাচন চায়। আমরা এ রকম যেনতেন নির্বাচন মেনে নেব না। কারণ, আমরা দেখেছি ২০১৪ সালে, ২০১৮ সালে আর ২০২৪ সালে প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে কীভাবে এ দেশের গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে। আমরা আর সেই পুরোনো পথে হাঁটতে চাই না।’

কর্মী সম্মেলনে কিশোরগঞ্জের সংসদীয় ছয়টি আসনে জামায়াতে ইসলামীর ছয়জন প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তাঁদের পক্ষে উপস্থিত জনতার কাছে ভোট প্রার্থনা করেন প্রধান অতিথি মুজিবুর রহমান। জামায়াত ইসলামি রাষ্ট্র কায়েম করতে চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আল্লাহর জমিনে আল্লাহর আইন চাই। কোরআনের আইন চালু করতে চাই। হজরত মুহাম্মদ (সা.

) যেভাবে রাষ্ট্র কায়েম করেছিলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সেভাবে রাষ্ট্র কায়েম করতে চায়।’

জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসের শুরা সদস্য ও কিশোরগঞ্জ জেলা আমির মো. রমজান আলীর সভাপতিত্বে সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও প্রচার সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও ময়মনসিংহ অঞ্চল পরিচালক মাওলানা মো. ছামিউল হক ফারুকী, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম (মাসুদ), কিশোরগঞ্জ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা নাজমুল ইসলাম।

জেলা জামায়াতের একাধিক সূত্রে জানা যায়, কিশোরগঞ্জে এবারই প্রথম বড়সড় করে কোনো খোলা মাঠে দলটির কর্মী সম্মেলন হলো। এই কর্মী সম্মেলনকে ঘিরে গত কয়েক দিন জেলা জামায়াতের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ–উদ্দীপনা দেখা যায়। জেলা সদরসহ আশপাশে ও বিভিন্ন উপজেলায় শতাধিক শুভেচ্ছা তোরণ নির্মাণ করা হয়। সাঁটানো হয় কয়েক শ ব্যানার–ফেস্টুন।

সম্মেলন উপলক্ষে শনিবার সকাল থেকে জেলার ১৩ উপজেলাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে মিছিলসহকারে কিশোরগঞ্জ পুরাতন স্টেডিয়ামে এসে জড়ো হন জামায়াতের হাজারো নেতা-কর্মী ও সমর্থক। সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া এ কর্মী সম্মেলন চলে বেলা পৌনে একটা পর্যন্ত। এর মধ্যে বৃষ্টি হয়। বৃষ্টির মধ্যেও সম্মেলনের কার্যক্রম চলমান ছিল।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম জ ব র রহম ন ক শ রগঞ জ ইসল ম র

এছাড়াও পড়ুন:

জি এম কাদের ঢাকায় ফিরলে কর্মসূচি দেবে রংপুর জাপা, বৈষম্যবিরোধীদের বিক্ষোভ স্থগিত

জাতীয় পার্টির (জাপা) ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত রংপুর। সেখানে দলীয় চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের উপস্থিতিতেই বাড়িতে হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ নেতা–কর্মীরা। ‘মব–সন্ত্রাস’ তৈরি করে এই হামলা চালানোর জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) দায়ী করছেন তাঁরা। তবে আপাতত দলের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিবাদ কর্মসূচি নেই। চেয়ারম্যান রংপুর সফর শেষে ঢাকায় ফিরলে মাঠে নামতে চান তাঁরা।

এদিকে জাতীয় পার্টির এই দাবিকে নাকচ করেছেন এনসিপির সংগঠক ও বৈষম্যবিরোধী নেতারা। তাঁরা বলছেন, ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের রংপুর সফরের প্রতিবাদে তাঁরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। তাঁদের বিক্ষোভে হামলা করেছেন জাপার স্থানীয় নেতা–কর্মীরা। এর প্রতিবাদে তাঁরা আজ বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করলেও পরে ‘বৈরী আবহাওয়ার কারণে’ স্থগিত করা হয়।

ব্যক্তিগত সফরে গতকাল বৃহস্পতিবার জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের রংপুরে আসেন। তিনি নগরের সেনপাড়ায় অবস্থিত তাঁর বাড়ি ‘দ্য স্কাই ভিউয়ে’ ওঠেন। বিকেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেন। এরপর রাতে তাঁর বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা জি এম কাদেরের বাড়ি দ্য স্কাই‌ ভিউয়ের জানালার কাচ ভাঙচুর ও একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করেন।

এ ঘটনার বিষয়ে আজ শুক্রবার বিবিসি বাংলার সঙ্গে আলাপকালে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের অভিযোগ করেন, রংপুরে বাড়িতে হামলার মাধ্যমে মূলত তাঁর ‘প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়েছে’। হামলাকারীদের সঙ্গে পিস্তল-বন্দুক-রামদার মতো অস্ত্র ছিল বলেও দাবি করেছেন তিনি।

পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ, দুই পক্ষের উত্তেজনা

৫ আগস্টের পর থেকেই বিভিন্ন সময় নানা ইস্যুতে রংপুরে জাতীয় পার্টি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ মিছিল হয়ে আসছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা থাকাকালীন এনসিপি নেতা সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহর রংপুরে আগমনকে কেন্দ্র করে পাল্লাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

সবশেষ ২৮ মে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমানকে রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে পুনর্বহালের দাবিতে রংপুরে বিক্ষোভ করেন জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা। ওই দিন নগর ভবনের সামনে অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘অথর্ব’ বলেন মোস্তাফিজার। একই সঙ্গে দাবি বাস্তবায়নে সাত দিনের আলটিমেটাম দেওয়া হয়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, জাতীয় পার্টির বিক্ষোভের প্রতিবাদে ওই দিন রাতে পাল্টা বিক্ষোভ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। পরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী নেতারা মোস্তাফিজার রহমান ও জাতীয় পার্টির নেতাদের আওয়ামী লীগের দোসর উল্লেখ করে তাঁদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। এ নিয়ে কয়েক দিন ধরে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। এর মধ্যে জি এম কাদের বৃহস্পতিবার রংপুর সফরে এলে উত্তেজনা বাড়ে।

এনসিপরি মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টিকে আওয়ীমী লীগের দোসর উল্লেখ করে এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘...সেই জি এম কাদের এখনো বাইরে কীভাবে? সরকারকে ধাক্কা না দিলে কি কাজ হয় না? নাকি প্রত্যেকটা কাজের জন্য ছাত্র-জনতাকে নতুন করে মাঠে নামতে হবে?’ এরপর গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বৈষম্যবিরোধীদের পক্ষ থেকে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের রংপুরে অবস্থান করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

মিছিল, হামলা, ভাঙচুর

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, কর্মসূচি ঘোষণার পর বৈষম্যবিরোধী ও এনসিপির নেতা-কর্মীরা রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হন। রাত আটটার দিকে গ্র্যান্ড হোটেল মোড়ে অবস্থান নেন। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে নগরের সেনপাড়ার দিকে যান। এরপর জি এম কাদেরের বাসায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

জাতীয় ছাত্রসমাজের কেন্দ্রীয় কমিটির সদ্যসচিব আরিফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বৈষ্যম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতি ইমতিয়াজ আহম্মদ, বহিষ্কৃত মুখপাত্র নাহিদ হাসান খন্দকার, জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন হামলার নেতৃত্ব দেন। হামলায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বাড়ি কাচ ভাঙচুর ও একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। হামলার সময় জি এম কাদের ওই বাড়িতে ছিলেন।

হামলার সময় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মিলন চৌধুরী ওই বাড়িতে ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওরা (বৈষম্যবিরোধী) মিছিল নিয়ে মাইকে ঘোষণা দিয়ে ছোরা, লাঠি নিয়ে চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনে চৌরাস্তা মোড়ে আসে। সেখানে ককটেল ফোটানোর শব্দ হয়। এরপর মব–সন্ত্রাস তৈরি করে চেয়ারম্যানের বাড়িতে এসে গালাগালি, হামলা ও ভাঙচুর করে চলে যায়। পরে তারা পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে গিয়ে আবার হামলার প্রস্তুতি নেয়।’

হামলা খবরে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বাড়িতে ছিল নেতা–কর্মীদের আনাগোনা। আজ শুক্রবার সকালে রংপুর নগরের সেনপাড়ায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চট্টগ্রামে নারীকে লাথি দেওয়া সেই আকাশ গ্রেপ্তার
  • ক্যানসার মানেই থেমে যাওয়া নয়
  • চরের কাদায় আটকে ছিল দুটি ডলফিন, নদীতে ছেড়ে দিলেন জেলেরা
  • আনন্দ, চমক আর তারকায় ভরপুর বিটিভির ‘আনন্দমেলা’
  • রাখাইনে সংঘর্ষে জান্তা বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নিহত
  • ‘আগে বিচার এরপরে সংস্কার তারপর নির্বাচন’
  • জবির দর্শন বিভাগে পদোন্নতি সভা আজ, নিষ্পত্তি হয়নি ৩ শিক্ষকের গবেষণা জালিয়াতির অভিযোগ
  • খুলনায় ছোট ভাইকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে
  • জি এম কাদের ঢাকায় ফিরলে কর্মসূচি দেবে রংপুর জাপা, বৈষম্যবিরোধীদের বিক্ষোভ স্থগিত