ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নাকোবাড়িয়া এলাকায় আধিপত্ত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে মহব্বত আলী (৫৫) নামে একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো চার জন। 

রবিবার (১ জুন) সকাল ৮টার দিকে নাকোবাড়িয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত মহব্বত আলী উপজেলার নাকোবাড়িয়া গ্রামের মৃত হবিবার রহমানের ছেলে।

আহতরা হলেন- উপজেলার বড় তালিয়ান গ্রামের রুস্তম মোল্লার ছেলে রিফাজুল ইসলাম (৪০), একই গ্রামের আমজেদ মোল্লার ছেলে মিকাইল হোসেন, নাকোবাড়িয়া গ্রামের তোফাজ্জেল হোসেনের ছেলে রেজাউল ইসলাম (৪৩) ও একই গ্রামের মৃত হবিবার রহমানের ছেলে ইউনুছ আলী (৬০)।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, সামাজিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে জামাল ইউনিয়নের নজরুল ইসলামের সাথে অপর পক্ষ আরিফ হোসেনের মধ্যে দীর্ঘদিন বিরোধ চলে আসছিল। নজরুল ইসলাম মোল্লা দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। গতবছরের ৫ আগস্টের পর তিনি বিএনপিতে যোগদান করেন এবং ইউনিয়নে সামাজিক দল প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। 

এরই জের ধরে রবিবার সকালে ইউনিয়নের নাকোবাড়িয়া গ্রামে নজরুল ইসলাম মোল্লার সমর্থকরা হামলা চালায়। এসময় আরিফের সমর্থকরা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। উভয় পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। 

এতে পাঁচ জন আহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে মহব্বত হোসেন নামের একজনের অবস্থা গুরুতর হলে তাকে ফরিদপুরে রেফার্ড করা হয়। দুপুরে ফরিদপুর হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।

জামাল ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মাহাফুজুর রহমান বলেন, “নজরুল ইসলাম মোল্লা দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। ৫ আগস্টের পর তিনি বিএনপির একটি পক্ষকে ম্যানেজ করে এলাকায় সামাজিক দল প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। কোলা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আল আজাদকে সাথে নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর প্রায়ই হামলা চালায় সে।”

তিনি আরো বলেন, “এরই ঘটনার জেরে রবিবার সকালে হামলা চালাতে আসে নজরুল মোল্লার সমর্থকরা। এ সময় সাধারণ মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তোলে।”
 
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, “সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনাবাহিনী অবস্থান করছে।”

ঢাকা/শাহরিয়ার/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নজর ল ইসল ম ব এনপ র স ঘর ষ এল ক য় উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ক্যানসারের ফেরা ঠেকাতে শরীরচর্চা ‘ওষুধের চেয়ে ভালো’

গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত শরীরচর্চা ক্যানসার রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত কমাতে পারে। একই সঙ্গে তা টিউমার পুনরায় হওয়া রোধ করে, এমনকি ওষুধের চেয়েও বেশি কার্যকর হতে পারে। এই গবেষণার ফলাফল বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যনীতিতে আমূল পরিবর্তন আনতে পারে।

কয়েক দশক ধরে চিকিৎসকেরা ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের পরামর্শ দিয়ে আসছেন। তবে ক্যানসার নির্ণয়ের পর শরীরচর্চার উপকারিতা নিয়ে এত দিন পর্যন্ত তেমন কোনো প্রমাণ ছিল না। ফলে রোগীদের দৈনন্দিন রুটিনে ব্যায়াম যুক্ত করার দিকে তেমন একটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

গবেষণায় দেখা গেছে, চিকিৎসা শেষ হওয়ার পর নিয়মিত ও নিয়ন্ত্রিত শরীরচর্চা (স্ট্রাকচার্ড এক্সারসাইজ রেজিম) মৃত্যুর ঝুঁকি, ক্যানসার পুনরায় ফিরে আসা কিংবা নতুন ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়। এই গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, কানাডা ও ইসরায়েলের ক্যানসার রোগীরা অংশ নিয়েছেন।

গবেষণার ফলাফল যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে অনুষ্ঠিত আমেরিকান সোসাইটি অব ক্লিনিক্যাল অনকোলজির (এস্কো) বার্ষিক সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়েছে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্যানসারবিষয়ক সম্মেলন। প্রায় ১৪ বছর ধরে পরিচালিত গবেষণাটির ফলাফল নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত হয়েছে।

বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় একজন ক্যানসারবিশেষজ্ঞ দাবি করেছেন, শরীরচর্চা ক্যানসার পুনরাবৃত্তি ও মৃত্যু রোধে বর্তমানে ব্যবহৃত অনেক ওষুধের চেয়েও বেশি কার্যকর হতে পারে। চিকিৎসা ইতিহাসে এবারই প্রথমবারের মতো এমন স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে।

এস্কোর প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা জুলি গ্রালো বলেন, গবেষণার এই ফলাফল ‘প্রমাণের সর্বোচ্চ স্তরের’, যা ‘চিকিৎসা চলাকালে ও চিকিৎসার পরে শরীরচর্চা উৎসাহিত করার গুরুত্ব নিয়ে আমাদের বোঝাপড়ায় বড় পরিবর্তন আনবে’। এক দশক ধরে চলা এই গবেষণায় অবশ্য জুলি গ্রালো যুক্ত ছিলেন না।

গবেষণায় দেখা গেছে, চিকিৎসা শেষ হওয়ার পর যেসব ব্যক্তি শুধু সাধারণ স্বাস্থ্য পরামর্শ পেয়েছিলেন, তাঁদের তুলনায় যাঁরা ব্যক্তিগত প্রশিক্ষক বা স্বাস্থ্য পরামর্শকের সহায়তায় নিয়মিত ও নিয়ন্ত্রিত শরীরচর্চা শুরু করেছিলেন, তাঁদের মৃত্যুর ঝুঁকি ৩৭ শতাংশ কমে। আর পুরোনো বা নতুন ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা কমে ২৮ শতাংশ।

ক্যানসার রোগীদের ওপর শরীরচর্চার প্রভাব কেমন, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জুলি গ্রালো বলেন, ‘আমরা (এস্কোর বার্ষিক সম্মেলনের) যে সেশনে গবেষণাটি উপস্থাপন করেছি, তার নাম রাখা হয়েছে অ্যাজ গুড অ্যাজ আ ড্রাগ (ওষুধের মতো কার্যকর)। কিন্তু আমি হলে এই সেশনের নাম রাখতাম বেটার দ্যান আ ড্রাগ (ওষুধের চেয়ে ভালো)। কারণ, শরীরচর্চায় ওষুধের মতো কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনুমোদন পাওয়া অনেক ওষুধ সেবনের মাধ্যমেও ক্যানসার পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি ২৮ শতাংশ এবং মৃত্যুঝুঁকি ৩৭ শতাংশ কমে। এর চেয়ে কম উপকারিতার ক্ষেত্রেও ওষুধ অনুমোদন পায়। কিন্তু ওষুধগুলো অনেক ব্যয়বহুল। তা ছাড়া ওষুধগুলো শরীরের জন্যও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াযুক্ত হতে পারে।’

ক্যানসার বিশেষজ্ঞ জুলি গ্রালো বলেন, ‘প্রায় ৩০ বছর আগে আমি যখন চিকিৎসা পেশা শুরু করেছিলাম, তখন কেমোথেরাপি চলাকালে রোগীদের খুব সাবধানে বলতে হতো, “অতিরিক্ত পরিশ্রম করবেন না।” কিন্তু এখন আমরা সেই ধারণা পুরোপুরি বদলে ফেলেছি। আমার মতে, শরীরচর্চা ওষুধের চেয়েও ভালো।’

এই গবেষণার জন্য গবেষকেরা ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে কোলন ক্যানসারের ৮৮৯ জন রোগীকে তালিকাভুক্ত করেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশেরই ছিল তৃতীয় স্তরের ক্যানসার। দৈবচয়নের ভিত্তিতে রোগীদের মধ্যে ৪৪৫ জনকে একটি নিয়মিত শরীরচর্চা কর্মসূচিতে নেওয়া হয়। বাকি ৪৪৪ জনকে শুধু স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনসংক্রান্ত একটি ছোট বই (বুকলেট) দেওয়া হয়।

শরীরচর্চা দলে থাকা রোগীরা প্রথম দিকে মাসে দুবার ব্যক্তিগত প্রশিক্ষকের সঙ্গে কোচিং সেশন ও তাঁদের তত্ত্বাবধানে ব্যায়াম সেশন করতেন। পরে তা মাসে একবার কমিয়ে আনা হয়। এই প্রক্রিয়া মোট তিন বছর চলে।

আরও পড়ুনচিকিৎসায় নতুন ওষুধের পরীক্ষা, ক্যানসার ফিরে আসার সময় বাড়ছে দ্বিগুণ৩১ মে ২০২৫

শরীরচর্চা দলের রোগীদের নির্ধারিত ব্যায়ামের লক্ষ্য পূরণে কোচিং ও মানসিক সহায়তা দেওয়া হতো। তাঁদের সাপ্তাহিক লক্ষ্যমাত্রা ছিল সপ্তাহে তিন থেকে চারবার, প্রতিবার ৪৫ থেকে ৬০ মিনিট হাঁটার সমান শারীরিক কার্যক্রম করা। তবে তাঁরা তা কীভাবে করবেন, সেটি নিজেরাই বেছে নিতে পারতেন। এসব ব্যক্তির কেউ কেউ নদী বা হ্রদে ছোট নৌকা চালিয়েছেন (কায়াকিং) আর কেউ কেউ বরফে ঢাকা পাহাড় বা সমতলে পা-জোড়া স্কি পরে দৌড়েছেন (স্কিইং)।

পাঁচ বছর পর দেখা যায়, শরীরচর্চা করা রোগীদের মধ্যে পুরোনো বা নতুন ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি অন্য দলের তুলনায় ২৮ শতাংশ কমে গেছে। আট বছর পর তাঁদের মধ্যে মৃত্যুর ঝুঁকি কমেছে ৩৭ শতাংশ।

গবেষণা দলের প্রধান গবেষক ও কানাডার কুইন্স ইউনিভার্সিটির ক্রিস্টোফার বুথ বলেন, ‘সার্জারি ও কেমোথেরাপি সম্পন্ন করার পরও উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের কোলন ক্যানসার রোগীদের প্রায় ৩০ শতাংশের রোগ শেষ পর্যন্ত পুনরায় ফিরে আসে।’ তিনি আরও বলেন, ‘একজন ক্যানসার বিশেষজ্ঞ হিসেবে রোগীরা আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন করেন, ‘আমি আর কী করতে পারি, যাতে (চিকিৎসার) ফলাফল আরও ভালো হয়?’

এই গবেষণার ফলাফল আমাদের এখন একটি স্পষ্ট উত্তর দিচ্ছে জানিয়ে ক্রিস্টোফার বুথ বলেন, ‘একজন ব্যক্তিগত প্রশিক্ষকসহ একটি নিয়মিত শরীরচর্চা কর্মসূচি ক্যানসার পুনরাবৃত্তি বা নতুন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়, আপনাকে আরও ভালো অনুভব করায় এবং দীর্ঘায়ু লাভে সহায়তা করে।’

ক্যানসার রিসার্চ ইউকের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা অধ্যাপক চার্লস সুয়ান্টন বলেন, ‘এই চমকপ্রদ গবেষণাটি শরীরচর্চার শক্তিকে তুলে ধরে, যা মানুষের স্বাস্থ্য পরিবর্তন করতে এবং চিকিৎসার পর ক্যানসার থেকে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়াতে পারে। ওষুধ না হলেও শরীরচর্চা রোগীদের জন্য অসাধারণ উপকার নিয়ে আসে।’ এই অধ্যাপক কিছুটা সতর্ক করে বলেন, ‘কিন্তু এটা মনে রাখা জরুরি যে শরীরচর্চা সবার জন্য সবচেয়ে সেরা বিকল্প না–ও হতে পারে। আমার পরামর্শ হবে, ক্যানসার রোগীরা নতুন কোনো শারীরিক কার্যক্রম শুরু করার আগে অবশ্যই তাঁদের চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করবেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাজশাহীতে এক দিনে ১৫ নমুনা পরীক্ষায় ৯ জনের করোনা শনাক্ত, অধিকাংশ চিকিৎসক
  • মাদকসেবী ছেলেকে শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগে মা আটক, বাবা-ভাই পলাতক
  • ফতুল্লা থানা শিল্পাঞ্চল শ্রমিক দলের দোয়া ও তবারক বিতরণ
  • ইন্টারের জন্য বিমানবন্দরে মাত্র একজন সমর্থক, বললেন, ‘আমিই একমাত্র আহম্মক’
  • দিনাজপুরে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর একজনের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
  • রেকর্ড গড়া অ্যাথলেট থেকে ভয়ংকর ডাকাত হওয়ার গল্প
  • গোপনে বাগদান সারলেন শ্রীলীলা?
  • এনসিপির মহানগর উত্তরের প্রধান সমন্বয়কারী হলেন হাফেজ আকরাম
  • শিক্ষার্থীদের জন্য স্মার্ট কার্ড চালু করা দরকার
  • ক্যানসারের ফেরা ঠেকাতে শরীরচর্চা ‘ওষুধের চেয়ে ভালো’