১২ শতাংশের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না শিক্ষার বরাদ্দ
Published: 3rd, June 2025 GMT
জাতীয় বাজেটের ১২ শতাংশের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না দেশের শিক্ষা খাতের বরাদ্দ। যদিও দীর্ঘদিন ধরে এই খাতে বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন শিক্ষা খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
অন্যদিকে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দিক থেকেও শিক্ষা খাতের বরাদ্দ ২ শতাংশের ঘরেই আটকে আছে। এই হার ৬ শতাংশ করার দাবি থাকলেও এর ধারেকাছেও যেতে পারছে না বাংলাদেশ।
শিক্ষাবিদসহ শিক্ষা খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলে আসছিলেন, শিক্ষা খাতে বরাদ্দ পিছিয়ে থাকার ফলে গুণগত শিক্ষার প্রসারে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে পরিকল্পনা করে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। একই সঙ্গে বরাদ্দ স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যয় করতে হবে।
কিন্তু উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ গতকাল সোমবার আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন, তাতেও সেই পুরোনো বৃত্তেই আটকে আছে শিক্ষার বাজেট। আসন্ন অর্থবছরের জন্য শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৯৫ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা মোট জাতীয় বাজেটের ১২ দশমিক ১ শতাংশের মতো। আর জিডিপির হিসাবে তা ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এবার মোট জাতীয় বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে প্রায় ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা।
বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন ৯৪ হাজার ৭১০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছিল। তখন জাতীয় বাজেট ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছিল। এই হিসাবে তখন জাতীয় বাজেটের প্রায় ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছিল।
এবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাজেট টাকার অঙ্কেও কমেছে। এ মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৫ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা বিদায়ী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছিল ৩৮ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন দুটি বিভাগ রয়েছে। এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য এবার ৪৭ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরে তা ছিল ৪৪ হাজার ১০৯ কোটি টাকা। কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের জন্য ১২ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরে ১১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছিল।
বাজেট বরাদ্দে পিছিয়ে বাংলাদেশ
শিক্ষা খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জিডিপির হিসাবে এ অঞ্চলের দেশ ভুটান, নেপাল, আফগানিস্তান, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও মিয়ানমারের চেয়ে বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ কম।
শিক্ষা খাতের বাজেট নিয়ে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শিক্ষা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থাগুলোর মোর্চা গণসাক্ষরতা অভিযানের উপপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান। ওই প্রবন্ধে বলা হয়, ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে চলতি অর্থবছর পর্যন্ত এক বছর বাদে বাকি বছরগুলোতে শিক্ষায় বরাদ্দ জাতীয় বাজেটের ১২ শতাংশের নিচে ছিল। ১২ দশমিক ১ শতাংশ হয়েছিল কেবল ২০২২-২৩ অর্থবছরে। বাকি অর্থবছরগুলোর মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ১১ দশমিক ৪১ শতাংশ, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশ, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১১ দশমিক ৫৮ শতাংশ, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ছিল ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এই সময়ে জিডিপির হিসাবে শিক্ষায় বরাদ্দের হার ছিল ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ১১ শতাংশ।
আসন্ন বাজেটে শিক্ষা খাতে কমপক্ষে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ রেখে ২০৩০ সালের মধ্যে তা কীভাবে ২০ শতাংশে উন্নীত করা যায়, তার পথরেখা দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে তার প্রতিফলন ঘটেনি।
শিক্ষা খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শিক্ষার গুণমান বাড়াতে হলে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণে কাজ করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক এম আবু ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, ইউনসেকোর চাওয়া ছিল জাতীয় বাজেটের ২০ শতাংশ এবং জিডিপির হিসাবে ৪ থেকে ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেওয়া। কিন্তু এর কাছেও যাওয়া যায়নি। সেই গতানুগতিক বরাদ্দই করা হয়েছে। তবে স্কুল ফিডিং খাতসহ বেশ কিছু খাতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এটা ভালো দিক।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ১১ দশম ক ১ দশম ক হয় ছ ল র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
জন্মহার বাড়াতে চীনের নতুন উদ্যোগ, শিশুদের জন্য মা-বাবা পাবেন ভাতা
তিন বছরের কম বয়সী প্রতিটি শিশুর জন্য মা-বাবাদের বছরে ৩ হাজার ৬০০ ইউয়ান (প্রায় ৫০০ ডলার) করে ভাতা দেবে চীন। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৬১ হাজার টাকা। জন্মহার বাড়াতে সর্বোচ্চ তিন বছর পর্যন্ত ভাতা দেওয়া হবে।
দেশটির সরকারি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, এই ভর্তুকি প্রায় দুই কোটি পরিবারকে শিশু লালন-পালনের খরচ সামলাতে সহায়তা করবে।
প্রায় এক দশক আগে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি দেশটির বিতর্কিত এক সন্তান নীতি বাতিল করে। তবে এরপরও চীনের জন্মহার কমেই যাচ্ছে।
চীনের একাধিক প্রদেশ ইতিমধ্যেই জনগণকে আরও বেশি সন্তান নিতে উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের অর্থ সহায়তার পাইলট প্রকল্প চালু করেছে। কারণ, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটি এখন জনসংখ্যাগত দিক থেকে গুরুতর সংকটের মধ্যে আছে।
গত সোমবার চীন সরকার ঘোষিত নতুন কর্মসূচির আওতায় প্রতিটি শিশুর জন্য অভিভাবকদের সর্বোচ্চ ১০ হাজার ৮০০ ইউয়ান পর্যন্ত সহায়তা দেওয়া হবে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।
চীনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইউওয়া পপুলেশন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, শিশু লালন-পালনের ক্ষেত্রে চীন এখন বিশ্বের ব্যয়বহুল দেশগুলোর একটি। চীনে একটি শিশুকে ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত লালন–পালন করতে গড়ে ৭৫ হাজার ৭০০ ডলার খরচ হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৯৩ লাখ টাকা।চীনের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম সিসিটিভির খবরে বলা হয়েছে, এই নতুন নীতিটি চলতি বছরের শুরু থেকে কার্যকর বলে ধরা হবে। এর মানে, ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে যেসব পরিবারে সন্তান জন্মেছে, তারাও আংশিক ভর্তুকির জন্য আবেদন করতে পারবে।
চীনে জন্মহার বাড়াতে এর আগে বিভিন্ন স্থানীয় সরকার এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছিল।
চীনের উত্তরাঞ্চলীয় হোহহত শহরের কর্তৃপক্ষ গত মার্চে ঘোষণা দেয়, অন্তত তিনটি সন্তান থাকা দম্পতিরা প্রতি সন্তানের জন্য সর্বোচ্চ এক লাখ ইউয়ান পর্যন্ত অর্থসহায়তা পাবেন।
বেইজিংয়ের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত শেনইয়াং শহরের কর্তৃপক্ষ যেসব দম্পতির তিন বছরের কম বয়সী তৃতীয় সন্তান আছে, তাদের প্রতি মাসে ৫০০ ইউয়ান করে দিচ্ছে।
গত সপ্তাহে স্থানীয় প্রশাসনগুলোকে বিনা মূল্যে প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমের খসড়া পরিকল্পনা তৈরি করার আহ্বান জানিয়েছে চীন সরকার।
চীনের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম সিসিটিভির খবরে বলা হয়েছে, এই নতুন নীতিটি চলতি বছরের শুরু থেকে কার্যকর বলে ধরা হবে। এর মানে ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে যেসব পরিবারে সন্তান জন্মেছে, তারাও আংশিক ভর্তুকির জন্য আবেদন করতে পারবে।চীনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইউওয়া পপুলেশন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, শিশু লালন-পালনের ক্ষেত্রে চীন এখন বিশ্বের ব্যয়বহুল দেশগুলোর একটি। চীনে একটি শিশুকে ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত লালনপালন করতে গড়ে ৭৫ হাজার ৭০০ ডলার খরচ হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৯৩ লাখ টাকা।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে চীনের জনসংখ্যা টানা তৃতীয় বছরের মতো কমেছে।
চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশটিতে ৯৫ লাখ ৪০ হাজার শিশুর জন্ম হয়েছে। এটি আগের বছরের তুলনায় সামান্য বেশি হলেও মোট জনসংখ্যা কমতির দিকেই আছে।
বর্তমানে চীনের জনসংখ্যা প্রায় ১৪০ কোটি। তবে এই বিশাল জনগোষ্ঠী দ্রুত বুড়িয়ে যাচ্ছে, যা বেইজিংয়ের জন্য জনসংখ্যাগত উদ্বেগ তৈরি করছে।
আরও পড়ুনসন্তান লালন-পালনে অনীহা বাবাদের, ৬০ বছরে প্রথম কমল চীনে জনসংখ্যা১৭ জানুয়ারি ২০২৩আরও পড়ুনজনসংখ্যা কমে যাওয়া চীনের জন্য কতটা বিপদের২১ জানুয়ারি ২০২৩