সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন বা সংসদে নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে কতটুকু স্বাধীনতা দেওয়া হবে, সে প্রশ্নে অনেকটাই কাছাকাছি অবস্থানে এসেছে রাজনৈতিক দলগুলো। কিছু সংসদীয় কমিটির সভাপতি বিরোধী দল থেকে করার বিষয়েও অনেকটা ঐকমত্য হয়েছে। তবে সংরক্ষিত নারী আসন ১০০–তে উন্নীত করা এবং নারী আসনে নির্বাচনপদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর মতপার্থক্য দূর হয়নি।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় গতকাল মঙ্গলবার এ তিন বিষয়ে আলোচনা হয়। তবে নারী আসন–সংক্রান্ত আলোচনা শেষ হয়নি। পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটির পর ১৬ বা ১৭ জুন আবার আলোচনা হবে।

গত সোমবার দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। প্রথম পর্বের আলোচনায় যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি, সেগুলো নিয়ে দ্বিতীয় পর্বে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা হচ্ছে।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে আলোচনা শুরু হয়। এক ঘণ্টার মতো মধ্যাহ্নবিরতি দিয়ে আলোচনা চলে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। এতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ ৩০টি দল ও জোটের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। গতকালের আলোচনাটি বিটিভি নিউজে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

বিদ্যমান সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সংসদ সদস্যরা নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারেন না। তাতে বলা আছে, কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হিসেবে কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি যদি ওই দল থেকে পদত্যাগ করেন বা সংসদে ওই দলের বিপক্ষে ভোট দেন, তাহলে সংসদে তাঁর আসন শূন্য হবে।

এই বিধানে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করেছিল সংবিধান সংস্কার কমিশন। তাদের প্রস্তাব ছিল, অর্থবিল ছাড়া অন্য যেকোনো বিষয়ে সংসদের নিম্নকক্ষের সদস্যদের নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা থাকবে।

ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে প্রথম পর্বের আলোচনায় বেশির ভাগ দল ৭০ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনার বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত ছিল। তবে অর্থবিলের সঙ্গে আরও কিছু বিষয় যুক্ত করার প্রস্তাব ছিল দলগুলোর। সেই আলোচনার ভিত্তিতে গতকালের আলোচনায় ঐকমত্য কমিশন যে প্রস্তাব উত্থাপন করে, তা হলো অর্থবিল, আস্থা ভোট ও সংবিধান সংশোধন বিল ছাড়া অন্য যেকোনো বিষয়ে সংসদ সদস্যরা দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারবেন।

কোনো কোনো দল রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত, এমন সব বিষয়ে দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়া যাবে না, এমন শর্ত যুক্ত করার কথা বলে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বিএনপির প্রস্তাব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আস্থা ভোট, অর্থবিল, সংবিধান সংশোধন বিলের পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তা জড়িত, এমন বিল বাদে সংসদ সদস্যরা দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারবেন।

এনসিপির অবস্থান তুলে ধরে দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, তাঁদের অবস্থান হলো অর্থবিল ও আস্থা ভোট বাদে অন্য বিষয়ে দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়া যাবে। সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে সংসদের উচ্চকক্ষ হচ্ছে কি না, হলে কীভাবে হচ্ছে, তা দেখে তাঁরা অবস্থান জানাবেন।

৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে আলোচনার সময় জামায়াতে ইসলামীর কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। তবে দলটি অর্থবিল, আস্থা ভোট ও সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে একমত হলেও জাতীয় নিরাপত্তা–সংক্রান্ত বিষয়ে বিএনপির প্রস্তাবের সঙ্গে একমত নয়। দুপুরে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের দলের এ অবস্থানের কথা জানান। তিনি বলেন, ‘জাতীয় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয় বলতে যেহেতু জরুরি মুহূর্তকে বলা হচ্ছে, আমাদের অবস্থান হলো জরুরি পরিস্থিতিকে জরুরিভাবেই মোকাবিলা করা হবে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অর্থবিল, আস্থা ভোট ও সংবিধান সংশোধন বিল ছাড়া অন্য যেকোনো বিষয়ে সংসদ সদস্যরা দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারবেন—এ বিষয়ে অনেকটাই ঐকমত্য হয়েছে। তবে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়নি।

বিরোধী দল থেকে সংসদীয় কমিটির সভাপতি

বিদ্যমান সংবিধানে কোন সংসদীয় কমিটির সভাপতি কোন দল থেকে হবে, তার উল্লেখ নেই। সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের প্রস্তাবে সব কটি সংসদীয় কমিটির সভাপতি বিরোধী দল থেকে করার প্রস্তাব দিয়েছিল।

প্রথম পর্যায়ের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে গতকালের আলোচনায় এ বিষয়ে নতুন প্রস্তাব তুলে ধরেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, প্রথম পর্বের আলোচনার সময় কমবেশি সবাই চারটি কমিটির সভাপতি বিরোধী দল থেকে করার উচিত বলে উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো সরকারি হিসাব কমিটি, অনুমিত হিসাব কমিটি, সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটি ও বিশেষ অধিকার–সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। এর বাইরেও কেউ কেউ আরও কিছু কমিটির প্রস্তাব করেছেন।

গতকালের আলোচনায় বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই চারটির সঙ্গে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক কিছু সংসদীয় কমিটির সভাপতিও বিরোধী দল থেকে করার প্রস্তাব দেয়। এর মধ্যে স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, শিক্ষা, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি অন্যতম।

আবার কোনো কোনো দল ৫০ শতাংশ কমিটির সভাপতি বিরোধী দল থেকে দেওয়া, কেউ কেউ আনুপাতিক হারে কমিটির সভাপতি পদ বণ্টনের প্রস্তাবও দেয়।

তবে বিরোধী দলকে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক কোন কোন কমিটির সভাপতি পদ দেওয়া হবে, তা সুনির্দিষ্ট করে দেওয়ার পক্ষে নয় বিএনপি। দলটির নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, কমিশনের প্রস্তাবিত চারটি কমিটির বাইরে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক কমিটিগুলো সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া ঠিক হবে না। কারণ, বিরোধী দল যদি আকারে ছোট হয়, তখন সভাপতি দেওয়ার মতো সদস্য পাওয়া যাবে না। তাঁরা মনে করেন, সংসদে আলোচনা ছাড়া এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে না। বিএনপির ‘নিয়ত’ আছে আরও বেশি সভাপতি বিরোধী দল থেকে দেওয়ার।

এ বিষয়ে দলগুলোর প্রতিনিধিদের বক্তব্যের শেষে আলী রীয়াজ বলেন, চারটি সুনির্দিষ্ট সংসদীয় কমিটির বিরোধী দলের নেতৃত্বে হবে, এটাতে সবাই একমত। এর বাইরে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক কমিটি যাতে বিরোধী দলকে দেওয়া হয়, সে বিষয়ে উল্লেখ করা জরুরি। সেটা নির্ধারণের ক্ষেত্রে দুটি প্রস্তাব আছে। একটি সংখ্যানুপাতিক হারে, অপরটি হলো সর্বনিম্ন বা সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ। যখন চূড়ান্ত খসড়া করা হবে তখন এটা নিয়ে আলাপ করে নেওয়া হবে।

সংরক্ষিত নারী আসন নিয়ে বিতর্ক

বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী, সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন আছে ৫০টি। নির্বাচনে দল বা জোটগুলোর প্রাপ্ত আসনের অনুপাতে নারী আসন বণ্টন করা হয়।

সংসদের নিম্নকক্ষের মোট আসন ৪০০টি করা, এর মধ্যে নারী আসন ১০০টি করা এবং এসব আসনে সরাসরি ভোটের প্রস্তাব করেছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ও সংবিধান সংস্কার কমিশন।

গতকাল এ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু হলেও তা শেষ হয়নি। সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনপদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। ১০০টি নারী আসন করা নিয়েও ভিন্নমত দেখা গেছে।

আলোচনায় জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ঘূর্ণমান পদ্ধতিতে ভোট হলে জটিলতা হবে। আগে নির্বাচনের পদ্ধতির বিষয়ে একমত হতে হবে। যদি নির্বাচন সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে হয়, তাহলে তারা আসনসংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে একমত।

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের বলেন, তাঁরা চান সংসদে ৪০০ আসন হউক। সবই উন্মুক্ত থাকবে, কোনো কোটার প্রয়োজন নেই।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, নারীদের জন্য আসন সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই। এটি নারীদের জন্য সম্মানজনক নয়। তাঁরা আনুপাতিক পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষে ভোট চান। সেখানে মোট ভোটারের অর্ধেক নারী। তাঁরা তাঁদের প্রাপ্য অর্ধেক পাবেন।

এর বাইরেও কোনো কোনো দল আসন বাড়ানোর প্রস্তাবে ভিন্নমত জানান। একপর্যায়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, প্রথম পর্যায়ের আলোচনায় ২৪টির বেশি দল ৪০০ আসন করার বিষয়ে দ্বিমত করেনি। এখন এসে দ্বিমত করলে সমস্যা তৈরি হয়।

তখন জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা শর্ত সাপেক্ষে একমত হয়েছিল। সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে তারা আসন ৪০০টি করার বিষয়ে একমত।

আলোচনার এক পর্যায়ে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা বলেন, সংসদের নিম্নকক্ষের আসন ৪০০টি করা এবং এর মধ্যে ১০০টি সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি ভোটের প্রস্তাবে তাঁরা একমত।

সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনপদ্ধতি নিয়ে বিএনপির মত ভিন্ন। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা নারী আসন ১০০টি করার বিষয়ে একমত। তবে তারা চায় বিদ্যমান পদ্ধতি নারী আসনে নির্বাচন হোক।

পরে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে আলোচনা হবে। ঈদের ছুটির পরপর ১৬ বা ১৭ জুন আবার দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।

দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে জাতীয় সনদ

গতকাল আলোচনার শুরুতে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সংস্কার কার্যক্রমে বিভিন্ন কমিশনের প্রস্তাবই চূড়ান্ত নয়। রাজনৈতিক দলগুলো যেসব মতামত দিয়েছে, তার ভিত্তিতে পরিবর্তিত প্রস্তাব নিয়েই রচিত হবে জাতীয় সনদ। তিনি বলেন, যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে না, সেগুলো জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত হবে না।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা কিছু জায়গায় একমত হব। বাকিটা রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করবে। জনগণ কতটা গ্রহণ করবে, সেটা তাদের বিষয়।’

আলোচনায় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো.

এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান ও মো. আইয়ুব মিয়া উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সঞ্চালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র প রস ত ব স রক ষ ত ন র র য় জ বল ন ন ম নকক ষ প রথম পর অবস থ ন ব এনপ র দলগ ল র উল ল খ পর য য় দল থ ক

এছাড়াও পড়ুন:

সমস্যা সমাধান করে নির্বাচনের পথে এগোন: অন্তর্বর্তী সরকারকে মির্জা ফখরুল

জুলাই জাতীয় সনদ ও তা বাস্তবায়নের সুপারিশ নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তার অবসান ঘটিয়ে সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দিকে মনোযোগী হতে অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যা হওয়ার হয়ে গেছে। আপনারা দয়া করে ওই সমস্যাগুলো সমাধান করে যাতে সবাই একসঙ্গে আমরা নির্বাচনের দিকে যেতে পারি, এই সমস্যার সমাধান করে আমরা জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করতে পারি, সেই পথে এগিয়ে চলুন।’

আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে গণসংহতি আন্দোলনের জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।

এদিন সকালেই জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দেশ ও জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।’

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত মঙ্গলবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে হস্তান্তরের পর থেকে বিএনপি তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। দলটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়ার তফসিলে সংস্কার প্রস্তাবগুলোই শুধু উল্লেখ করা হয়েছে। বিএনপির ‘নোট অব ডিসেন্ট’গুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কমিশনের সভায় আলোচনা হয়নি, এমন বিষয়ও যুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট নিয়েও আপত্তি রয়েছে বিএনপি।

গণসংহতি আন্দোলনের অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে যে সংকট তৈরি করেছে এই অন্তর্বর্তী সরকার ও ঐকমত্য কমিশন, আমি বিশ্বাস করি যে এই সংকট কেটে যাবে। এই দেশের মানুষ কখনো পরাজিত হয় না। পরাজয় বরণ করেনি, পরাজয় বরণ করবে না।’

আরও পড়ুনঅন্তর্বর্তী সরকার ও ঐকমত্য কমিশন বিশ্বাসঘাতকতা করেছে: মির্জা ফখরুল৩ ঘণ্টা আগে

যেকোনো চক্রান্তকে পরাজিত করতে সব রাজনৈতিক দলের ঐক্যবদ্ধ থাকার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘যে ষড়যন্ত্র আমাদের বিরুদ্ধে হচ্ছে, তাকে পরাজিত করতে হবে। এখানে আমরা বিভিন্ন দল করতে পারি, বিভিন্ন মত থাকতে পারে, বিভিন্ন পথ থাকতে পারে, কিন্তু একটা বিষয়ে আমরা সব সময় এক ছিলাম, বাংলাদেশের ব্যাপারে; সবার আগে বাংলাদেশ—এ ব্যাপারে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই। রাজনৈতিক জীবনে হতাশাবাদী নই; কারণ, আমি বিশ্বাস করি যে ন্যায়ের জয় হবেই, সত্যের জয় হবে।’

আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচিতে থাকা গণসংহতি আন্দোলনের সাফল্য কামনা করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমরা যেমন অতীতে আপনাদের সঙ্গে ছিলাম, সব সময় আপনাদের সঙ্গে থাকব; কিন্তু অবশ্যই আপনাদেরকে নিজে এই যে জায়গা তৈরি করেছেন, তার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অন্য কেউ সেটা করে দেবে না।’

শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে গণসংহতি আন্দোলনের জাতীয় সম্মেলনের সূচনা করেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ নাজমুল কাজীর স্ত্রী মারিয়া সুলতানা এবং শহীদ ওমর নুরুল আবছারের স্ত্রী ফারজানা জাহান। অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পাশাপাশি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন দলের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানের শুরুতেই জুলাই শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, আমার বাংলাদেশ পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরামের সংগঠক মাহরুখ মহিউদ্দিন, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২–দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা প্রমুখ।

কৃষক-শ্রমিক, খেটে খাওয়া, নিপীড়িত ও প্রান্তিক মানুষের ন্যায্য হিস্যার দাবি এবং ‘বৈষম্যহীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ, অধিকার ও মর্যাদার বাংলাদেশ, জনগণের বাংলাদেশ’ গড়ার অঙ্গীকারে গণসংহতি আন্দোলন তাদের পঞ্চম জাতীয় সম্মেলন করছে। তিন দিনের এই আয়োজনে সারা দেশ থেকে প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষকরা দলের আগামী নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন।

আরও পড়ুনঅন্তর্বর্তী সরকার ও ঐকমত্য কমিশন বিশ্বাসঘাতকতা করেছে: মির্জা ফখরুল৩ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সনদ বাস্তবায়নে দ্রুত সিদ্ধান্ত, আরপিওতে পরিবর্তন আসছে
  • তড়িঘড়ি না করে সংবিধান সংস্কারে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান
  • কিছু রাজনৈতিক দল ঐকমত্য কমিশনে গিয়ে ফাঁদে পড়েছে: জাপা মহাসচিব
  • দেশের মানুষ ১৭ বছর ধরে নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে: সাইফুল হক
  • ঐকমত্য কমিশন হাজির করেছে অনৈক্যের দলিল: বিএনপি নেতা জহির উদ্দিন স্বপন
  • জুলাই সনদে সই না করা অংশের দায় নেব না: মির্জা ফখরুল
  • ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশকে ‘অশ্বডিম্ব’ বললেন সিপিবি সভাপতি
  • জুলাই সনদ নিয়ে জট খুলুন, সময় কিন্তু চলে যাচ্ছে
  • সমস্যা সমাধান করে নির্বাচনের পথে এগোন: অন্তর্বর্তী সরকারকে মির্জা ফখরুল
  • যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে সম্মত হয়েছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান: তুরস্ক