বাজেটে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন নেই, মানুষ হতাশ
Published: 4th, June 2025 GMT
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, বাজেট নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রত্যাশা ছিল অন্তর্বর্তী সরকার একটা নতুন অর্থনৈতিক দিশা হাজির করবে; কিন্তু সেটির প্রতিফলন ঘটেনি। বরং আমলাতন্ত্রনির্ভর পুরোনো গতানুগতিক কাঠামোর বাজেট হাজির করা হয়েছে। এই বাজেট সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবনে বড় আকারের কোনো পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয় না।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর হাতিরপুলে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জোনায়েদ সাকি এ কথা বলেন। ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে দলটির নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল লিখিত বাজেট পর্যালোচনা তুলে ধরেন। এ সময় দলটির রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য দেওয়ান আবদুর রশীদ নীলু ও মনির উদ্দিন পাপ্পু, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূইয়া, দীপক কুমার রায় উপস্থিত ছিলেন।
কর্মসংস্থানের প্রশ্নে তরুণদের সামনে নতুন ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার পরিকল্পনা এই বাজেটে অনুপস্থিত উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘বরং আমরা দেখছি গরিবের অবস্থা আরও খারাপ হবে। নিম্ন আয়ের মানুষের করসীমা বাড়ানোর কথা থাকলেও সেটি হয়নি। মধ্যবিত্তের ওপর নতুন করে করের বোঝা বাড়ছে। অথচ তুলনামূলকভাবে অধিক ধনীদের ব্যয় কমেছে। তাঁদের কর মধ্যবিত্তের চেয়ে কম থাকছে। এই যে ভারসাম্যহীনতা, সেগুলো নতুন করে বিবেচনা করতে হবে।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম, অভ্যুত্থানের পরে মানুষের মধ্যে নতুন চিন্তা, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বন্দোবস্তের যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে তার প্রতিফলন বাজেটে আসবে। দুর্ভাগ্যবশত সেই গতানুগতিক চিন্তার বাজেট করা হয়েছে। বাজেট প্রণয়নে আমলাতন্ত্রের বড় ভূমিকা থাকে। ফলে অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে যেহেতু আমলাতন্ত্রের মধ্যে বড় পরিবর্তন ঘটেনি, তাই বাজেটেরও কাঠামোগত, চিন্তাগত এবং নতুন আকাঙ্ক্ষার সমন্বয়ের জায়গায় পরিবর্তন ঘটেনি। যেটি মানুষকে খুব আশাবাদী না করে বরং হতাশ করেছে।’
অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে দেশে অস্থিতিশীলতা, অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা আছে উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘সরকার যতটুকু স্থিতিশীলতা এনেছে সেই অনুযায়ী বিনিয়োগ বাড়ছে না। আমরা বলেছি, নির্বাচনের তারিখ দেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার জন্য জরুরি। কিন্তু সেটি একদিকে যেমন নেই, অন্যদিকে বাজেটে অর্থনৈতিক পরিকল্পনার সুনির্দিষ্ট নীতিও নেই। কারণ, বাজেট কেবল বরাদ্দ নয়, এটি একটি নীতিকাঠামো। এটার মাধ্যমে দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ ঘটে। উৎপাদন ও বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য নতুন কিছুই বাজেটে নেই। ফলে বিনিয়োগ বাড়ার সম্ভাবনা আদৌ হবে কি না, এখন সবাই সংশয় প্রকাশ করছেন। বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থান হবে না। যে তরুণেরা অভ্যুত্থান করলেন তাঁদের সামনে কোনো ভবিষ্যৎ থাকবে না।’
বাজেট নিয়ে আলোচনার আহ্বান জানিয়ে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘নির্বাচিত সরকার সংসদের কাছে জবাবদিহি করে। কিন্তু এখন যেহেতু সংসদ নেই, তাই জবাবদিহি হয়নি। তবে সরকারকে অবশ্যই রাজনৈতিক দলসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশাভিত্তিক সংগঠন, উদ্যোক্তা ও উৎপাদক শ্রেণিসহ সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। বাজেট নিয়ে শুনানি করতে হবে। বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত অর্থ উপদেষ্টাসহ সবাই যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন। রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবে। সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরিবর্তন যেন বাজেটে আমরা দেখতে পাই।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিদিন কেন মৃত্যুকে স্মরণ করতে হবে
মৃত্যু জীবনের একটি অবশ্যম্ভাবী সত্য, যা প্রত্যেকটি মানুষের জন্য নির্ধারিত। ইসলামে মৃত্যুকে ভয়ের বিষয় হিসেবে নয়; বরং আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়ার একটি স্বাভাবিক ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮৫)
মৃত্যুর স্মরণ মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক অনুশীলন, যা জীবনের উদ্দেশ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয় এবং আমাদের পার্থিব লোভ-লালসা থেকে দূরে রাখে।
মৃত্যু: মুমিনের জন্য স্বস্তিপৃথিবী একটি পরীক্ষার ক্ষেত্র, যেখানে মানুষ নানা দুঃখ-কষ্ট, অভাব, প্রিয়জনের মৃত্যু, দারিদ্র্য ও অন্যান্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। মুসলিমদের জন্য এ পরীক্ষা হলো আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলার মাধ্যমে জীবন যাপন করা।
কোরআনে বলা হয়েছে, ‘(আল্লাহ) যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন, যাতে তিনি তোমাদের পরীক্ষা করেন, তোমাদের মধ্যে কে উত্তম কাজ করে।’ (সুরা মুলক, আয়াত: ২)
আনন্দের ধ্বংসকারীকে (মৃত্যুকে) বেশি বেশি স্মরণ করো। তিরমিজি, হাদিস: ২৩০৭মৃত্যু মুমিনের জন্য একটি স্বস্তি। এটি পার্থিব পরীক্ষা ও কষ্ট থেকে মুক্তি দেয় এবং আল্লাহর রহমতের আলিঙ্গনে নিয়ে যায়। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন মৃত্যুর মাধ্যমে স্বস্তি পায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৫০৭)।
এমনকি নবীজি (সা.)-এর জীবনেও এ সত্য প্রতিফলিত হয়েছে। তাঁর মৃত্যুর সময় মৃত্যুর ফেরেশতা আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁকে মৃত্যু বিলম্বিত করার সুযোগ দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়ার পথ বেছে নিয়েছিলেন।
আরও পড়ুনমৃত্যু থেকে পালানোর পথ নেই১৮ মার্চ ২০২৫মৃত্যুকে স্মরণ করার গুরুত্বমৃত্যু স্মরণ একটি গভীর আধ্যাত্মিক অনুশীলন। যখন আমরা কোনো প্রিয়জনের মৃত্যু দেখি, তখন পার্থিব বিষয়গুলো তুচ্ছ মনে হয়। আমরা আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে পুনর্বিবেচনা করি।
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘হৃদয় মরিচার মতো মলিন হয়।’ লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, ‘কীভাবে তা পরিষ্কার করা যায়?’ তিনি বললেন, ‘মৃত্যু স্মরণ ও কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে।’ (নাহজুল ফাসাহা)।
এ ছাড়া তিনি বলেছেন, ‘আনন্দের ধ্বংসকারীকে (মৃত্যুকে) বেশি বেশি স্মরণ করো।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৩০৭)
হজরত আলী (রা) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রায়ই মৃত্যুকে স্মরণ করে, সে অল্প সম্পদেও সন্তুষ্ট থাকে। সে কখনো লোভী বা কৃপণ হয় না।’ (বিহারুল আনওয়ার)
মৃত্যুর জন্য কী কামনা করা যায়ইসলামে আত্মহত্যা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তাই কোনো বিপদ বা কষ্টের কারণে মৃত্যুর জন্য প্রার্থনা করা অনুমোদিত নয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন বিপদের কারণে মৃত্যু কামনা না করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৩৫১)।
তবে শহীদ হওয়ার জন্য দোয়া করা, অর্থাৎ আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণের জন্য প্রার্থনা করা ইসলামে অনুমোদিত।
ইসলামের দৃষ্টিকোণে মৃত্যু জীবনের সমাপ্তি নয়; বরং এটি পার্থিব জীবন থেকে চিরস্থায়ী জীবনের দিকে একটি সেতু। মৃত্যু মুমিনের জন্য এটি আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হওয়ার একটি সুযোগ।মৃত্যুই শেষ কথা নয়ইসলামের দৃষ্টিকোণে মৃত্যু জীবনের সমাপ্তি নয়; বরং এটি পার্থিব জীবন থেকে চিরস্থায়ী জীবনের দিকে একটি সেতু। এটি ভয় বা দুঃখের বিষয় হলেও মুমিনের জন্য এটি আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হওয়ার একটি সুযোগ। মৃত্যু স্মরণ ও এর জন্য প্রস্তুতি আমাদের জীবনকে আরও অর্থবহ করে।
বিপদে পড়লে মৃত্যু স্মরণের দোয়া আমাদের ধৈর্য ধরতে এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে সাহায্য করে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা বিপদে পড়ে বলে, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন (আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁর দিকেই ফিরে যাব।)’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৬)
এ আয়াত মৃত্যুর সংবাদ শোনার সময়ও পাঠ করা হয়। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে বিপদ আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে এবং তিনি আমাদের সামর্থ্যের বাইরে পরীক্ষা দেন না। (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৮৬)।
প্রতিটি বিপদের মধ্যে আমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে। এ বিপদ ক্ষণস্থায়ী। কারণ, আমরা আল্লাহর কাছে ফিরে যাব।
আরও পড়ুনসন্তান জন্মের আগে মৃত্যু কামনা করেন নবীর মা৩১ মে ২০২৫কয়েকটি দোয়ামৃত্যু ভাবাপন্ন বিপদ হলে: কঠিন বিপদের সময় পাঠ করা যায়, তা হলো নবীজি (সা.)-এর শেখানো: ‘হে আল্লাহ, যতক্ষণ জীবন আমার জন্য কল্যাণকর, ততক্ষণ আমাকে জীবিত রাখো এবং যখন মৃত্যু আমার জন্য উত্তম, তখন আমাকে মৃত্যু দাও।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৩৫১)
মৃত্যু নিকটবর্তী হলে: মৃত্যুর সময় শুধু আল্লাহই জানেন। তবে আমরা বা আমাদের প্রিয়জন মৃত্যুর কাছাকাছি থাকি এবং ভয় বা উদ্বেগ অনুভব করি, তবে এই দোয়া পাঠ করা যায়: ‘হে আল্লাহ, মৃত্যুর যন্ত্রণা ও কষ্ট থেকে আমাকে সাহায্য করো।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৯৭৮)।
নবীজি (সা.) নিজেও তাঁর মৃত্যুর সময় এই দোয়া পাঠ করেছিলেন।
হে আল্লাহ, যতক্ষণ জীবন আমার জন্য কল্যাণকর, ততক্ষণ আমাকে জীবিত রাখো এবং যখন মৃত্যু আমার জন্য উত্তম, তখন আমাকে মৃত্যু দাও।সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৩৫১সহজ মৃত্যুর জন্য দোয়া: নবীজি (সা.) একটি দীর্ঘ দোয়ার শেষে বলেছেন, ‘এবং আমার মৃত্যুকে আমার জন্য স্বস্তির উৎস করো, যা আমাকে সব অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৮৮)
এখানে সহজ মৃত্যু বলতে পার্থিব অর্থে আরামদায়ক মৃত্যু (যেমন ঘুমের মধ্যে মৃত্যু) বোঝায় না; বরং এটি বোঝায় মৃত্যুর ফেরেশতার আগমন থেকে শুরু করে পরকালে স্থানান্তর পর্যন্ত একটি সহজ প্রক্রিয়া।
মৃত্যুর কঠিন পরীক্ষা থেকে আশ্রয়: একটি দোয়ায় নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে অলসতা, বার্ধক্য, কাপুরুষতা, অক্ষমতা এবং জীবন ও মৃত্যুর পরীক্ষা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি।’ (সুনানে নাসাঈ, হাদিস: ৫৪৯১)
মৃত্যুর সময় শয়তান থেকে বাঁচতে: নবীজি (সা.) এ–সময় দোয়া করেছেন, ‘আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি যেন শয়তান আমার মৃত্যুর সময় আমাকে ক্ষতি করতে না পারে।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১৫৫২)
ইসলামে মৃত্যুকে ভয়ের বিষয় হিসেবে নয়; বরং আল্লাহর সঙ্গে পুনর্মিলনের একটি সুযোগ হিসেবে দেখা হয়। নিয়মিত মৃত্যু স্মরণ আমাদের জীবনের উদ্দেশ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়, লোভ-লালসা থেকে দূরে রাখে এবং আমাদের ভালো কাজের পথে রাখে।
আরও পড়ুনমৃত্যু কি শেষ, মৃত্যু আসলে কী৩১ জুলাই ২০২৩