বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভিন্নমতাবলম্বীদের গুম করতে প্রত্যেক বাহিনীকেই ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), ডিবি ও সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ছাড়াও রয়েছে অন্যান্য বাহিনী। বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াতের অনুসারী নেতাকর্মীরা সবচেয়ে বেশি গুমের শিকার হয়েছেন। 

গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে গুম কমিশনের দেওয়া দ্বিতীয় পর্বের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এ পর্যন্ত পড়া ১ হাজার ৮৫০টি অভিযোগের মধ্যে ১ হাজার ৩৫০টি অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে এ মতামত দিয়েছে কমিশন। ২০২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে প্রতিটি বাহিনী কীভাবে গুমের সঙ্গে জড়িত ছিল তার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাহিনীর সদস্যরা তাদের ধরে নিয়ে নির্যাতন এবং পরে ক্রসফায়ারে দিয়েছে। যেসব সংস্থা গুমের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল তারা বেশির ভাগই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন। পুলিশ, র‌্যাব, এনএসআই, সিআইডি, ডিবি, কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের মতো বাহিনীগুলো এ কাজ করেছে। র‌্যাবের বিষয়ে বলা হয়েছে, তাদের ১৫টি ব্যাটালিয়ান সারাদেশে কাজ করেছে। এদের প্রত্যেকটি ব্যাটালিয়নের মাধ্যমেই গুমের ঘটনা ঘটেছে। এসব গুমের বিষয়ে র‌্যাবের ডিজি, এডিজিসহ শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তরা অবগত থাকতেন। গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত গুমের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল সংস্থাটি। 

ডিবির নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগীরা তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছেন, তারা ধরে নিয়ে যখন-তখন নির্যাতন করত। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটাত। সামরিক গোয়েন্দা সংস্থাকে (ডিজিএফআই) বিগত আওয়ামী লীগ সরকার দলীয় কাজে ব্যবহার করেছে। 

জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসআই) যেখানে দেশের জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য প্রদানের কথা, সেখানে এই সংস্থাটিকেও বিরোধী মত দমনপীড়নে ব্যবহার করা হয়েছে। 

সীমান্ত রক্ষাবাহিনী বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডও (বিজিবি) গুমের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছিল। কখনও গুমের শিকার ব্যক্তিকে ভিন্ন দেশে বিশেষ করে ভারত ও মিয়ানমারে পাঠিয়ে দিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ, মেহেদী হাসান ডলার ও রহমতুল্লাহর নাম উল্লেখ করা হয়।
যারা গুম বা অপহরণের শিকার হয়েছে কখনও ভুক্তভোগীর পরিবার থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে গেলেও নেওয়া হয়নি। 

প্রতিবেদনে বছরওয়ারি কতজন গুম হয়েছেন যাদের কোনো হদিস মেলেনি, তার একটি গ্রাফও তুলে ধরা হয়েছে। ২০১৭ সালে ৫১ জন গুম হয়েছেন। এ ছাড়া প্রত্যেক বছরই বিভিন্ন সংখ্যক মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন বলে বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর হয় ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

কিশোরীকে ধর্ষণ ও গর্ভপাত ঘটানোর অভিযোগ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে 

সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে কিশোরীকে ধর্ষণ ও গর্ভপাত ঘটানোর অভিযোগ উঠেছে। ধুকুরিয়া বেড়া ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের সাবেক বিএনপি নেতা বাবর আলী মেম্বারের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী কিশোরীর পরিবার।

এদিকে মামলা না করে সালিশ দরবারে দফায় দফায় সভা করে মীমাংসার চেষ্টা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন কিশোরীর বাবা। তিনি বলেন, মেয়ে সুস্থ হলেই মুরব্বিদের সঙ্গে নিয়ে থানায় অভিযোগ দেব।

বিষয়টি জানতে পেরে বেলকুচি থানার উপপরিদর্শক আইনুল হক সোমবার দুই দফা কিশোরীর বাড়িতে যান। এ সময় বাবর মেম্বার গা ঢাকা দেন। তিনি মোবাইলে কথা বললেও পুলিশের সামনে আসেননি।

স্বজনদের বরাত দিয়ে উপপরিদর্শক আমিনুল হক সমকালকে বলেন, ওই কিশোরীর মা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। কখনও কখনও ধানের চাতালেও কাজ করেন। বাবা শ্রমিকের কাজের সুবাদে সিরাজগঞ্জের বাইরে থাকেন। ধুকুরিয়াবেড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বাবর আলীর ওই বাড়িতে যাতায়াত ছিল। গত রোজার ঈদের আগে বাবর আলী কিশোরীকে ধর্ষণ করেন। কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি জানাজানি হয়। এরপর বাবর আলী ভ্রূণ নষ্ট করতে ওষুধপথ্য কিনে দেন। এসব কারণে ২৯ মে কিশোরীর পেটে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়। বাবর আলী তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে অবৈধভাবে গর্ভপাত ঘটিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।

উপপরিদর্শক আরও বলেন, ধর্ষণ ও অবৈধ গর্ভপাতের সত্যতা পাওয়া গেলেও কিশোরীর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাকে পুলিশের সামনে আসতে দেওয়া হয়নি। বাবর মেম্বারকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। থানায় অভিযোগ দিতে কিশোরীর স্বজনদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে কথা বলতে বিএনপি নেতা বাবর আলীর মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘মেয়েটি অবৈধভাবে গর্ভধারণ করে। পরিবারের অনুরোধে তার চিকিৎসায় সহযোগিতা করেছি। কে তাকে ধর্ষণ করেছে, সে কীভাবে অন্তঃসত্ত্বা হলো জানি না। এ ঘটনায় আমার সম্পৃক্ততা নেই।’ 

থানার ওসি মোহাম্মদ জাকরিয়া হোসেন ছুটিতে আছেন। পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল বারেক পদোন্নতি নিয়ে পাশের চৌহালী উপজেলায় গেছেন। তাদের অবর্তমানে দায়িত্বে থাকা এসআই সাইফুল ইসলাম বলেন, কিশোরীর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ না দিলে পুলিশের কি-ই বা করার আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কিশোরীকে ধর্ষণ ও গর্ভপাত ঘটানোর অভিযোগ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে