বাণিজ্যযুদ্ধ নিরসনে এবার লন্ডনে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বৈঠক
Published: 10th, June 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ নিরসনে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে দুই দেশের মধ্যে নতুন দফা আলোচনা শুরু হয়েছে।
সোমবার ল্যাঞ্চেস্টার হাউজের এই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট, বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক এবং বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার। অন্যদিকে, চীনের পক্ষে বৈঠকে প্রতিনিধিত্ব করছেন উপপ্রধানমন্ত্রী হে লিফেং। খবর আল জাজিরার
বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দুই দেশ চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া বাণিজ্য যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে হুমকির মুখে ফেলেছে। এই কারণে দুই দেশের মধ্যে নতুন এই বাণিজ্য আলোচনা কী ফল বয়ে আনে; সেদিকে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে বিশ্ববাসী।
বৈঠকে আধুনিক প্রযুক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ চীনের বিরল খনিজ রপ্তানির বিষয়টির পাশাপাশি কম্পিউটার চিপসহ যুক্তরাষ্ট্রের কিছু পণ্যে চীনের অভিগম্যতার বিষয়টি আলোচনায় প্রাধান্য পাবে।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন সাময়িকভাবে বাণিজ্যশুল্কে স্থগিত করতে সম্মত হয়। এরপর থেকেই দুই দেশ একে অপরের বিরুদ্ধে এই চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ করে আসছে।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। এরপর লন্ডনে দুই পক্ষের মধ্যে নতুন দফায় এই বৈঠক হচ্ছে। তবে ওই ফোনালাপে দুই নেতা পরস্পরের দেশে সফরের আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং শি জিনপিংয়ের সঙ্গে আলাপকে ট্রাম্প ‘খুবই ভাল আলোচনা’ বলে বর্ণনা করেছিলেন।
গত মে মাসে জেনিভায় যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের আলোচনায় শুল্ক কমায় অগ্রগতি হলেও চীনের খনিজ সম্পদ ও চুম্বক রপ্তানির বিষয়টিতে কোনও সুরাহা হয়নি। সে কারণে সোমবারের বৈঠকে এ বিষয়টি আলোচনায় প্রাধান্য স্থান পাচ্ছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র য ক তর ষ ট র র ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
তিনি বাংলাদেশের বিবি
বিশ্বখ্যাত বাংলাদেশি ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল। তিনি মনে করেন, ‘‘ফ্যাশন মানেই শুধু সাজ নয়। সমাজের অর্থনীতিও এর সঙ্গে জড়িত।’’ বিবি রাসেল এই বোধ দ্বারা অনুপ্রাণিত। তিনি এগিয়ে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছেন, তার হাত ধরে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশের ফ্যাশনও।
বিবি রাসেল চট্টগ্রামের মেয়ে। ১৯৭৫ সালে লন্ডন কলেজ অব ফ্যাশন হাউজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপরে ‘কসমোপলিটন’ ও ‘হার্পার’স বাজার’ এর মতো বিশ্বখ্যাত সব ম্যাগাজিনে মডেল হিসেবে কাজ করেছেন। ৯০ এর দশকে থেকে যে কয়জন মানুষ বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছেন বিবি রাসেল তাদের মধ্যে একজন। বিশ্বে তিনি যেমন খ্যাতি পেয়েছেন তেমনি বাংলাদেশকেও বসিয়েছেন সম্মানের আসনে।
বিবি রাসেল ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তিনি নামকরা বিদেশি ডিজাইনার, যেমন- আরমানি, সেইন্ট লরেন্ট, কোকো শ্যানেল, কেঞ্জো- এদের সাথে ফ্যাশন শোতে কাজ করেছেন। এরপর দেশে এসে ১৯৯৫ সালে চালু করেন নিজস্ব ব্র্যান্ড ‘বিবি প্রোডাকশন’।
আরো পড়ুন:
কোরবানির মাংস বণ্টনের জন্য হাতের কাছে যা যা রাখা প্রয়োজন
যেভাবে মাংস সংরক্ষণ করলে ১ বছর পর্যন্ত ভালো থাকবে
ক্যারিয়ারে প্রথম থেকেই বিবি রাসেলের স্বপ্ন ছিল, বাংলাদেশের পোশাক শিল্প এবং ফ্যাশন নিয়ে কাজ করবেন। প্রায় দেড় বছর দেশের আনাচে-কানাচে সব পোশাক-শিল্পীর সাথে কথা বলে তিনি তাদের বিশ্বাস অর্জন করেন। দেশে ছড়িয়ে থাকা পোশাক শিল্পীদের সঙ্গে মিলে এগিয়ে গেছেন বিবি রাসেল, কাজে লাগিয়েছেন বাংলাদেশের ঐতিহ্য, খুঁজে নিয়েছেন বাংলাদেশের আইকনিক শিল্প সম্ভাবনা, তৈরি করেছেন বাংলাদেশি ফ্যাশনের নানা দিক।
২০১০ সালের সেরা চলচ্চিত্র ‘মনের মানুষ’-এর পোশাক পরিকল্পনাকারী হিসেবে জাতীয় পুরস্কারও জিতে নেন তিনি। ২০১৫ সালে নারী জাগরণ, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার বিবি রাসেলকে বেগম রোকেয়া পদকে ভূষিত করেন।
বিবি রাসেলের কাছে পরিবার মানে কি জানেন? তিনি বলেন, ‘‘পরিবার মানে আমার টিম। এবং আমার গ্রামের মানুষ।’’
বিবি রাসেল সাসটেইনেবল ফ্যাশন নিয়ে অনেক বছর ধরে কাজ করছেন। শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারতসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের প্রাকৃতিক তন্তু ও ঐতিহ্যবাহী বস্ত্রশিল্প পুনরুদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
বিবি রাসেল বলেন, ‘‘জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে যখন পুরো বিশ্ব পরিবেশ সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা নতুন করে উপলব্ধি করছে, তখন প্রাকৃতিক তন্তুকে গুরুত্ব দিয়ে সাসটেইনেবল ফ্যাশন নিয়ে ভাবা উচিত।’’
কিন্তু বিবি রাসেলের এই যাত্রায় দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা পাওয়া নাকি একেবারেই কঠিন। যদিওবা পাওয়া যায় ওইসব প্রতিষ্ঠান বিবি রাসেলকে যেসব নিয়ম মানতে বলেন- সেই সব নিয়ম মানতে রাজি নন তিনি।
বিবি রাসেল বলেন, ‘‘আমার মতো একটি অরগানাইজেশনে কেউ ইনভেস্ট করতে আসে না। যদিওবা আসে, অনেক কন্ডিশন দিয়ে রাখে। আমি ওই কনডিশনগুলো মানি না। আমার চোখে মুখে বাংলাদেশ।’’
বিবি রাসেল আরও বলেন, ‘‘আমি এদেশের মেয়ে। আমি খুব খুব লাকি যে-আমি এমন একটা দেশে জন্ম নিয়েছি। যে দেশ আমাকে স্বপ্ন দেখিয়েছে। যে দেশের মানুষের কাজ দেখে -দেখেই কিন্তু আজকে পজেটিভ বাংলাদেশ দেখাতে পারছি।’’
বাংলাদেশে অবহেলায় পড়ে থাকা কচুরিপানা দিয়ে চুড়ি বানিয়ে ইউরোপের সুপারস্টোরে তুলে দিয়েছেন বিবি রাসেল। সেখানকার লোকজন পছন্দ করছেন এই চুড়ি।
বাংলাদেশের রাস্তায় পড়ে থাকা পলিথিন সংগ্রহ করে, ডিজাইন করে, হ্যান্ডব্যাগ তৈরি করছেন বিবি রাসেল। বিশ্বজুড়ে এর চাহিদা তৈরি হয়ে গেছে।
নিজের প্রাপ্তির চেয়ে দেশীয় সংস্কৃতিকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যাওয়াকে বড় করে দেখতে চান বিবি রাসেল।
ইউরোপীয় শিক্ষায় গড়ে ওঠা বিবি রাসেল কিন্তু ভুলে যাননি নিজের দেশের কথা। বরং দেশের অভ্যন্তর থেকে খুঁজে নিয়েছেন দেশের ঐতিহ্য, নিজের ঐতিহ্য। এই বিবি রাসেল বাংলাদেশের গর্ব।
ঢাকা/লিপি