জ্যৈষ্ঠের গরমে পাকা কাঁঠালের ঘ্রাণে মাতোয়ারা হবিগঞ্জ
Published: 10th, June 2025 GMT
জ্যৈষ্ঠ মাস শেষের পথে। হবিগঞ্জের পাহাড়ি টিলা আর সমতলে চাষ হওয়া পাকা কাঁঠালের ঘ্রাণ চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। হাটবাজারে পুরোদমে বিক্রি হচ্ছে জাতীয় এ ফলটি।
এবারও পাহাড় ও হাওড় অধ্যুষিত হবিগঞ্জে কাঁঠালের আশানুরূপ ফলন হয়েছে। দামও ভালো। এতে খুশি চাষিরা। পাহাড়ি টিলা আর সমতলে চাষ হওয়া পুষ্টিগুণে ভরা কাঁঠাল বিক্রির জন্য পাইকারি বাজারে নেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন স্থান থেকে সুস্বাদু এ কাঁঠাল কিনতে ক্রেতারা ভিড় জমাচ্ছেন ফলের বাজারে।
এ জেলার নবীগঞ্জ, চুনারুঘাট, মাধবপুর ও বাহুবল উপজেলার পাহাড়ি এলাকা থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার কাঁঠাল সংগ্রহ করা হয়। এরপর এসব কাঁঠাল জেলার সবচেয়ে বড় পাইকারী বাজার বাহুবল উপজেলার মুছাই ও চুনারুঘাট উপজেলার চন্ডিছড়ার বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসা হয়। এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি আড়ৎ। এখানে প্রতিটি কাঁঠাল ৫০ থেকে শুরু করে ৩শ’ টাকা পর্যন্ত নিলামের মাধ্যমে বিক্রি হয়। ছোট আকারের কাঁঠাল প্রতি শ’ বিক্রি হচ্ছে ৭ থেকে সাড়ে ৯ হাজার ও বড় কাঁঠাল প্রতি শ’ ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা করে।
ট্রাক ভর্তি করে কাঁঠাল ঢাকা-সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে
পাইকাররা এ কাঁঠাল মুছাই ও চন্ডিছড়া থেকে ট্রাক ভর্তি করে জেলার বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও ঢাকা-সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন।
হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার প্রায় ৩ হাজার ১০০ একর জমিতে কাঁঠালের ফলন হয়েছে। প্রতি একরে উৎপাদনের পরিমাণ ৫ থেকে ৬ মেট্রিক টন।
মুছাই’র ফলের আড়তের মালিকরা জানান, এ বছর কাঁঠালের ভালো ফলন হয়েছে। দামও ভালো। এতে করে চাষিদের মাঝে উৎসাহ দেখা দিয়েছে।
চুনারুঘাটের কালেঙ্গার পাহাড়ের বিনয় দেববর্মা, নবীগঞ্জের দিনারপুরের সুজন মিয়া, বাহুবলের রশিদপুরের তোরাব আলী মোল্লা, তাহির মিয়া, নূরুল ইসলাম জানান, তাদের বাগানে সহযোগী ফসল হিসেবে কাঁঠাল উৎপাদন করা হয়। কাঁঠাল উৎপাদন করতে আলাদা কোনো যত্ন নিতে হয় না বলে উৎপাদন খরচও কম। এ বছরও কাঁঠালের ভালো ফলন হয়েছে। দামও ভালো হওয়ায় তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
বাগানে উৎপাদিত কাঁঠালের সঙ্গে একজন চাষি
হবিগঞ্জ জেলা শহরের বাসিন্দা বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘‘বিষমুক্ত তাজা কাঁঠাল ক্রয় করার জন্য মুছাই ও চন্ডিছড়া যেতে হবে। এসব বাজারে পাহাড়ি কাঁঠাল পাওয়া যায়। আমিও ৫০০ টাকা দিয়ে ৩টি কাঁঠাল ক্রয় করেছি। খেয়ে তৃপ্তি পেয়েছি।’’
বাহুবলের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম বলেন, ‘‘কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল। এই ফল স্বাদে ও পুষ্টিতে ভরপুর। তাই সবার কাছেই কাঁঠাল অত্যন্ত প্রিয়। বিশেষ করে এই সময়ে গ্রামের লোকজনের প্রধান খাদ্য তালিকায় চলে আসে এটি। এমনকি কাঁঠালের যে উচ্ছিষ্ট অংশ তাও ব্যবহার করা হয় গো-খাদ্য হিসেবে। অর্থাৎ একটি কাঁঠাল বহুমুখী ভোগের পণ্য।’’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো.
হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের ডা. মিঠুন রায় বলেন, ‘‘ফলের রাজা আম হলেও পুষ্টিগুণে ভরপুর কাঁঠাল। এটি একটি সুস্বাদু রসালো ফল। স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয়। এতে বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন-এ, সি, বি-১, বি-২, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামসহ নানা পুষ্টি ও খনিজ উপাদান রয়েছে। এগুলো আমাদের শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখার পাশাপাশি ভিটামিনের চাহিদাও পূরণ করে। শুধু দাঁত ও হাড় সুস্থ রাখতে নয় বরং ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতেও সাহায্য করে কাঁঠাল। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়।’’
ঢাকা/টিপু
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য ব হ বল উৎপ দ
এছাড়াও পড়ুন:
চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে
জ্বালানিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ছে। তবে এসব গাড়ি বাসা বা নির্দিষ্ট স্থানেই শুধু চার্জ করা যায়। ফলে দূরে ভ্রমণের সময় গাড়ির চার্জ শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়েন অনেকেই। এ সমস্যা সমাধানে তারের সংযোগ ছাড়াই বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক’ চালু করেছে ফ্রান্স। প্যারিসের উপকণ্ঠে চালু হওয়া সড়কটিতে চলাচলের সময় বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক গাড়ি, বাস ও ভারী ট্রাকের ব্যাটারি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার্জ হয়ে যাবে।
বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার জন্য সড়কটিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ২০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। প্রয়োজনে সেটি ৩০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা টেসলার ভি থ্রি সুপারচার্জারের মতো বিশ্বের দ্রুততম চার্জারগুলোর সমান শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। এই সড়কের নিচে স্থাপন করা হয়েছে অসংখ্য তামার কুণ্ডলী। এসব কুণ্ডলী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে, যা বিশেষ রিসিভারযুক্ত বৈদ্যুতিক গাড়িতে শক্তি স্থানান্তর করে। পদ্ধতিটি অনেকটা ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তির মতো, যেখানে পাওয়ার ব্যাংক বা চার্জিং প্যাডে মোবাইল ফোন রেখে চার্জ নেওয়া হয়। চৌম্বক ক্ষেত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ স্থানান্তর হওয়ায় ভারী বৃষ্টি, বরফ বা তুষারপাতেও চার্জিং প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যাঘাত ঘটে না। দ্রুত চার্জিং সুবিধার ফলে গাড়ি ও ট্রাক এখন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারবে, মাঝপথে চার্জ নিতে থামার প্রয়োজন হবে না। ফলে গাড়িতে বড় ও ভারী ব্যাটারি বহনের প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে যাবে।
এরেনা ইভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই স্বয়ংক্রিয় চার্জিং সড়কে মাত্র কয়েক মিনিট চললেই বৈদ্যুতিক গাড়ির রেঞ্জ বা চলার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির দীর্ঘ যাত্রায় চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সমাধানে প্রযুক্তিটি নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। প্রযুক্তিটি যদি ব্যাপকভাবে চালু করা যায়, তবে তুলনামূলকভাবে হালকা, সাশ্রয়ী এবং কম ব্যাটারিসমৃদ্ধ বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে। এতে গাড়ির উৎপাদন খরচও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রিওনের তৈরি সড়কটির নকশাতেও রয়েছে বাড়তি সুবিধা। বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার প্রযুক্তি রাস্তার ভেতরের অংশে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কম। ফ্রান্সের পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশজুড়ে প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে বৈদ্যুতিক যানবাহন চলাচল আরও সহজ, কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠে।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস