আমার প্রিয় অভিনেত্রী সুনেরাহ বিনতে কামাল একটি সিনেমা করেছিলেন যার নাম ‘ন ডরাই’। আমার অবস্থাও এই সিনেমার মতো, চট্টগ্রামের মানুষ হওয়ায় সমুদ্রকে ন ডরাই। ছোটবেলা থেকে ছলাৎ করে কখন যে সমুদ্রের ঢেউ ঢুকে পড়ে অন্তরে, ঠিক আমরা টের পাই না। আমরা বড় হই, ভেতরে সমুদ্রের ঢেউও বড় হয়। আমি যখন খুব ছোট ছিলাম তখন তো তেমন ছবি তোলার চল ছিল না। শুনেছি বাবা বাসে করে আমার দুই ভাইসহ সমুদ্র দর্শনে বের হতেন। কখনও পুরোনো পতেঙ্গা কখনও নতুন পতেঙ্গা। আমি বড় ছেলে হওয়া সত্ত্বেও আজ সেই স্মৃতির কিছু মনে নেই, ছবিও নেই। সমুদ্র যে বন্ধু আমার বুঝে ছিলাম কিশোরকালে। তখন পাকিস্তান-কাল। এক পাকিস্তানি বন্ধু ছিল। পাঞ্জাবি বড় ব্যবসায়ী ওর বাবা। ছেলেটা গাড়ি চড়ে স্কুলে যেত। ফর্সা লম্বা মোটাতাজা তার সাহসের দেমাগ ছিল খুব। কোনো খেলায় তার সাথে আমি তো নই-ই, কোনো বাঙালি ছেলে পারত না। একবার আমরা বাসে চেপে চট্টগ্রাম শহর থেকে ফৌজদারহাট নিউ পতেঙ্গা বিচে গেলাম বেড়াতে। সবাই জলে নামলাম, কিনারায় হাত-পা ছুড়ছি। সে চ্যালেঞ্জ করে বসল কে সাগরজলে কত দূর পর্যন্ত যেতে পারে দেখি। তার সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার সাহস কার! দূরে যেতে যেতে আমরা দুজন অনেক দূর চলে গিয়েছি। বিচে দাঁড়ানো বন্ধুদের খুব ছোট ছোট লাগছে, একসময় বুঝলাম সে আমাকে ছাড়িয়ে আরও দূরে চলে গেছে। একসময় জলের টানে খেই হারিয়ে সে চিৎকার করে ডুব খেতে লাগল। আমি সব ভুলে জানি না কোন সাহসে ডুব দিয়ে সাঁতার কেটে তার কাছাকাছি গিয়ে তাকে আঁকড়ে ধরে জলে বড় ঢেউ এলে ডুব দিয়ে ধীরে ধীরে তীরে তাকে নিয়ে আসতে পেরেছিলাম। আজও বুঝে উঠতে পারিনি তা কীভাবে পেরেছিলাম। হয়তো সাগরের বন্ধুত্ব আমাকে প্রাণে বাঁচিয়ে জিতিয়ে দিয়েছিল। এরপর পাঞ্জাবি বন্ধুটি আর কোনো দিন অন্তত আমার সামনে দেমাগ দেখাতে আসেনি। এর পর থেকে সমুদ্রের জন্য টান বাড়তে লাগল। পতেঙ্গায় গিয়ে বঙ্গোপসাগরের ঢেউ গুনতে গুনতে কত দিন, কত মাস-বছর যে পার করেছি। চট্টগ্রাম বন্দরে ঢুকে নানা দেশের বড় বড় সমুদ্রগ্রামী জাহাজ দেখা শুরু হলো। অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের জাহাজি জীবনের উপন্যাস আমাকে আরও উতলা করে তুলল। আহা রে জাহাজি জীবন, আমি জাহাজের খালাসি হবোই। বন্দরে বন্দরে জাহাজ ভিড়বে, কত দেশ কত শহর দেখব। স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকতাম। আমার এক খালাতো ভাই, জামাল চৌধুরী তখন পোর্ট ট্রাস্টে কাজ করতেন। জাহাজে জাহাজে আনাগোনা ছিল। কর্মসূত্রে অনেক ধরাধরির পর তিনি এবার এক কোরিয়ান জাহাজে নিয়ে গেলেন। এক তরুণ কোরিয়ান অফিসারের সঙ্গে তার একটু খাতির হয়েছিল। মজা করার জন্য দুষ্টামি করা পছন্দ ছিল এই তরুণ অফিসারের। আমি তো দারুণ খুশি হয়ে রাজি। আমাকে উত্তেজিত না হয়ে শান্ত হতে বলে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে বসালেন। অফিসার খেতে দিলেন গরুর মাংসের মতো ঝালহীন মাংস আর চাইনিজ মাওতাই কড়া মদ। জামাল ভাই মদ খেলেন কিন্তু মাংস খেলেন না। আমি দুইটাই পেট পুরে খেলাম। খাওয়াদাওয়া শেষ হতে তরুণ কোরিয়ান অফিসার আমাদের খোলা ডেকে এক বড় গ্রিল দেওয়া খাঁচার সামনে নিয়ে এলেন।
তার হাতেও জামাল ভাইয়ের হাতে ধরা পলিথিন ব্যাগ। কারণ কী খেয়েছি জানার পর আমার ভীষণ বমি করার সম্ভাবনা ছিল। তিনি হেসে বললেন– যা এখন মাওতাইয়ের সঙ্গে খেলে, তা আসলে কোনো বিফ নয়, এই বন্দি কুকুরের মাংস। আমি পলকহীনভাবে বন্দি কুকুরগুলোর লাফালাফি দেখলাম। বমিটমি কিছুই করলাম না। হয়তো অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের জাহাজি উপন্যাসের টান এতই প্রবল ছিল বলেই বমি হয়নি। তরুণ অফিসার অবাক হয়ে বললেন এমন তো হবার কথা নয়। টেস্টে আমি পাস করায় তার থেকে একধাপ ওপরের অফিসারের কাছে নিয়ে গেলেন। সেই অফিসার কোরিয়ান অফিসারের অনুরোধ রাখলেন। বললেন– ঠিক আছে খালাসির কাজ পাবে তবে ইন্টারন্যাশনাল পাসপোর্ট নিয়ে আসতে হবে। তখন আমি পাসপোর্ট কাকে বলে তাই জানি না। শুনলাম দুই ধরনের পাসপোর্ট পাওয়া যায় সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের। এক, শুধু ইন্ডিয়ার জন্য। দুই, ইসরায়েল ব্যতীত পৃথিবীর যত সব দেশের জন্য। তখনও বিশ্বাস ছিল পৃথিবীতে মানুষের পক্ষে সবকিছুই করা সম্ভব। ট্রেনে চড়ে ঢাকায় এসে ভনভন করে লাটিমের মতো নানা জায়গায় ঘুরতে লাগলাম আন্তর্জাতিক পাসপোর্টের জন্য। জানাশোনার মধ্যে তখন আছেন শুধু কবি নির্মলেন্দু গুণ। তিনি সব শুনে বললেন– আমার দ্বারা এ কাজ সম্ভব নয়। তখনও বঙ্গবন্ধু মারা যাননি। ক্যাপ্টেন মনসুর আলী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। গুণদা এক দুপুরে সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন ‘ইত্তেফাক’ অফিসে স্বনামধন্য গদ্যকার ও সাংবাদিকের কাছে। নাম তাঁর রাহাত খান। রাহাত ভাইয়ের সহানুভূতির জন্য বললেন ও ভালো গল্প লেখে। রাহাত ভাই প্রথম দেখাতেই মনে হয় পছন্দ করেছিলেন। তাই ভাগিয়ে দিলেন না। বললেন– ইন্টারন্যাশনাল পাসপোর্ট সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে পাওয়া খুবই কঠিন। তাঁর দ্বারাও সম্ভব নয়। তিনি পরের দিন নিয়ে গেলেন ইত্তেফাকের মালিকপক্ষের একজন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের কাছে। রাহাত ভাইয়ের অনুরোধ ফেলতে না পেরে তিনি একটা চিঠি লিখে দিলেন। তা নিয়ে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তরে। পরের দিন অনেক চেষ্টা করেও সচিবালয়ে ঢুকতে পারলাম না। ঢুকতে দিল না। পরপর দুই দিন ব্যর্থ হলাম। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের চিঠি দেখতেই চায় না। আবার গেলাম রাহাত ভাইয়ের কাছে। আবার তিনি গেলেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের অফিসে। আমাকে দেখে বললেন– পারোনি ঢুকতে? ঠিক আছে বসো। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে আমার এক কাজে যেতে হবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে। আমি রাহাত ভাইয়ের সামনে চেয়ারে বসে ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করার পর গাড়িতে আমাকে সাথে নিয়ে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন গেলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অফিসে। মন্ত্রী হাসলেন, ডেকে আমাকে দেখতে চাইলেন, দেখি ডাকে। দেখি ছেলেটাকে, সাগরে যেতে এত উতলা কেন।
অবাক করে সাইন-সিল সব করে দিলেন। আমার ইন্টারন্যাশনাল পাসপোর্ট হলো সেই প্রথম। এই সব চক্করে দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে কখন যে জাহাজি জীবনের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলাম, নিজেই টের পাইনি। আমি ভুললেও ব্যাপারটি ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ভোলেননি। এর পর যখনই দেখা হয়েছে, তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করতেন– এই ছেলে তোমার জাহাজে যাওয়ার কী হলো! আমি তাকে মুখোমুখি দেখলে এড়িয়ে যেতাম। একদিন হাতেনাতে ধরা খেয়ে আমি ও রাহাত ভাই তাঁকে খুলে বললাম। লেখালেখিতে, সাহিত্যে এমন টান তৈরি হলো তার যে আর সমুদ্রযাত্রা বাদ দিয়েছে।
গল্প-উপন্যাস লেখা, ছবি আঁকা, বইয়ের প্রচ্ছদ করায় মগ্ন থাকায় ভেবেছিলাম সমুদ্রটান এ জীবনে শেষ হয়েছে। আসলে কিন্তু তা নয়। বাংলাদেশ থেকে ১৯৮৯ সালে সাতসমুদ্র প্লেনে পার হয়ে এসে পড়েছিলাম আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া স্টেটের লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে। পাসাডিনা আর্ট ইনস্টিটিউটে অ্যাডভান্স পেইন্টিং নিয়ে দুই বছরের কোর্সে ভর্তি হলেও গাড়ি নিয়ে চষে বেড়াই গোটা লস অ্যাঞ্জেলেস শহর, এমনকি শহর থেকে বাইরে। সান্তামনিকা বিচ, মালিবু বিচ। প্রশান্ত মহাসমুদ্রের সামনে দাঁড়াতে বিশাল ঢেউ ছন্দময় তাণ্ডবে বলে– কী ব্যাটা! দেখেছ মহাসমুদ্র কাকে বলে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমুদ্র প্রশান্ত সমুদ্রকে সালাম করে বলি– আপনাকে না দেখলে তো আমার ধারণা ওই বঙ্গোপসাগর পর্যন্তই থাকত। বুঝতামই না মহাসমুদ্র কাকে বলে! শুধু প্রশান্ত মহাসাগরের মহামায়া দেখতে লস অ্যাঞ্জেলেস শহর থেকে পাঁচ নম্বর ফ্রি ওয়ে; যা উথালপাথাল মহা ঢেউয়ের ধার ঘেঁষে সানদিয়াগো শহরের ওপর দিয়ে একেবারে মেক্সিকো সীমান্তে ঢুকে গেছে। বর্ডার সিটি মেক্সিকোর তিওয়ানাতে। লস অ্যাঞ্জেলেস আর সানদিয়াগো শহরের মাঝটায় ছোট শহর লাগুনা বিচ সিটি। প্রশান্ত মহাসাগরের সবচেয়ে বড় বড় ঢেউ এই শহরের বিচে খেলে বেড়ায়। তাই গোটা আমেরিকার ঢেউয়ে ভাসা সার্ফিং করা যোদ্ধারা এখানেই ছুটে আসে। লাগুনা বিচ ছোট শহরের ঠিক মধ্যখানে ছোট পাহাড়। আর তার ঠিক চূড়ায় বেশ বড় ইসকন। ভেতরে অতি বিশাল হলঘরে চেয়ারে প্রভুপাদ বসে আছেন আলো-আঁধারিতে। মনে হয় যেন সত্যি সত্যি জীবন্ত মানুষ চুপচাপ বসে আছেন।
আমি গাড়ি ইসকনের পার্কিংয়ে রেখে এক বেলা ফ্রি লাঞ্চ খেতে যেতাম। এ শহরে আছে অর্ধেক ইসকনের কৃষ্ণভক্ত সাদা সাহেব ম্যাম মাথা ন্যাড়া ভক্তকুল আর আমেরিকা বিখ্যাত আর্টিস্টদের মিলিয়ন ডলারের বাড়ি। বড় বড় এক এক শিল্পীর এক এক বিশাল গ্যালারি। গ্যালারি চালায় সব ফিটফাট সুন্দরী নারী ও যুবক। শিল্পীদের দেখা কেউ পায় না। তারা থাকেন আড়ালে। আমি এইসব বিখ্যাত আমেরিকান শিল্পীর সাথে পরিচিত হতে, ছবি বিক্রি কানেকশন পেতে মরিয়া হয়ে ঘুরছিলাম আর বারবার হতাশ হচ্ছিলাম। মনে মনে ভাবছিলাম তাদের সঙ্গে একটু আন্তরিকতা গড়তে পারলে আমার ছবির ব্যাপারে যে কোনো বড় গ্যালারিতে একটি সুপারিশ যথেষ্ট, ভাগ্য খুলে যাবে আমার। তাদের বাড়ির চারপাশে গানম্যানসহ খুবই টাইট সিকিউরিটি। তাছাড়া তারা কেনই-বা বাংলাদেশে ছাপোষা এক আর্টিস্টের সঙ্গে দেখা করবেন। সুপারিশ করবেন তা তো দূরের কথা। একদিন বুদ্ধি এলো মাথায়। বিচের পাশে ম্যাকডোনাল্ডের পার্কিংয়ে গাড়িতেই ঘুমিয়ে রাত পার করে সকাল হয়। ভোরে জগিং স্যুট পরে বিচে দৌড়ে বের হলাম। ঠিক যা চেয়েছিলাম তাই হলো। নাম বললাম না নামি আর্টিস্টের। একজন সত্তরোর্ধ্ব লম্বা দাড়ি মাথার চাঁদিতে লালন ফকির মার্কা টাইট খোঁপা। দৌড়াচ্ছেন তিনি, তাঁর পাশে আমিও দৌড়াতে লাগলাম। ভোরের আলোতে মানুষের মন নরম থাকে। হয়তো তাঁরও ছিল। হাই বলতে তিনিও হাই বললেন। জিজ্ঞেস করলাম, স্যার আপনি তো সেই বিখ্যাত আমেরিকান আর্টিস্ট? তিনি বললেন– তাতে তোমার কি সন্দেহ আছে? আমি বললাম– নো নো স্যার, কী যে বলেন! আমিও ইন্ডিয়ার রাজস্থানের একজন আর্টিস্ট। আমি জানতাম তিনি রাজস্থান শুনে আমাকে গুরুত্ব দেবেন। ঠিক তাই দিলেনও! জিজ্ঞেস করলেন– রাজস্থান কোথায়? আমি বললাম– ঠিক পিং প্যালেসের কাছাকাছি।
তিনি বললেন– ঠিক আছে আমার আগামী বছর রাজস্থান যাওয়ার ইচ্ছে আছে। তোমার কিছু ডিজিটাল প্রিন্ট মানে পেইন্টিংয়ের কালার কপি নিয়ে বাড়ি এসো। আমি বলে রাখব তোমার নাম স্যার চিফ সিকিউরিটিকে। সেই হলো সম্পর্কের সূচনা। এটা গড়িয়ে গেল আরও গভীরে। তাদের স্যাটার ডে নাইট অল নাইট পার্টিতে পর্যন্ত ঢুকে পড়েছিলাম। ৭০ থেকে ৮০– সবাই খ্যাতিমান শিল্পী। তাদের পার্টিতে তাদের থেকে সংখ্যায় বেশি থাকত মেক্সিকান সুন্দরী ইলিগ্যাল কিশোরী আর যুবতীরা– সবাই প্রায় নগ্ন। মিউজিকের মাদকতা। টাকিলা, হুইস্কি, জিনের বন্যা। নারী নগ্ন শরীরের নানা অংশে বিখ্যাত শিল্পীরা ব্রাশ দিয়ে রং মাখাতেন। বুড়ো বয়সে এটাই তাদের আজব খেলা। এইসব মেয়ের মধ্যে একজন চিলির মেয়ে। বেশ শুকনো হলেও এক অপূর্ব অপার্থিব চেহারা কোঁকড়ানো সোনালি চুল আর মায়াবী বড় বড় দুঃখী চোখ। নাম ইরিনা। শুধু আমেরিকার লিগ্যাল স্ট্যাটাস পেতে বুড়ো শিল্পীদের চাহিদা পূরণ করছে। আমার সঙ্গে এই মমত্ববোধই একটা বন্ধুত্ব গড়ে তুলল।
বাইরে তাকে ইসকনে নিয়ে যেতাম। সিনেমা দেখতাম। গাড়িতে ঘুরতাম। সে চিলিতে ফেলে আসা ছোট ভাইবোন, মায়ের কথা বলত।
একদিন বিখ্যাত আমেরিকান শিল্পী এসব জেনে এতটাই রেগে গেলেন যে আমি তা আশা করিনি। তার গানম্যান সিকিউরিটি তিনজনকে বললেন আমার হাত-পা বেঁধে স্পিডবোটে প্রশান্ত সমুদ্রের বেশ কিছুটা গিয়ে ফেলে আসতে। বিচে নেওয়াও হলো। খালি পায়ে প্রশান্ত মহাসাগরের এক বলিষ্ঠ ঢেউ এসে পড়তে তিনি কেমন যেন তার সিদ্ধান্ত বদলে গার্ডদের বললেন। কাগজে সাইন করিয়ে নাও যে সে আর এ শহরে আসবে না। গাড়িকে এসকর্ট করে লস অ্যাঞ্জেলেসে দিয়ে এসো।
এর পরও সাত মাস আমি লস অ্যাঞ্জেলেসে ছিলাম। ভয়ে আর কখনও লাগুনা বিচ সিটিতে যাইনি। এঁকেছি ‘মেমরি অব লাগুনা বিচ’। সিরিজের মোট ১৪টি ছবি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব য র স ট র মইন ল হ স ন লস অ য ঞ জ ল স অফ স র র আর ট স ট আম র ক র স মন মন ত র র জন য ত আম র বলল ম শহর র বড় বড় বলল ন
এছাড়াও পড়ুন:
বেঁচে গেছেন এক যাত্রী, হাসপাতালে ভর্তি
ভারতের আহমেদাবাদে বিধ্বস্ত উড়োজাহাজটির একজন যাত্রী বেঁচে আছেন। যুক্তরাজ্যের নাগরিক ওই ব্যক্তির নাম বিশ্বাস কুমার রমেশ (৪০)। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ভারতের সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস এক প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছে। এর আগে দেশটির সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ওই উড়োজাহাজের ২৪২ আরোহীর সবাই নিহত হয়েছেন।
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বাস কুমার রমেশ ও তাঁর ভাই অজয় কুমার রমেশ (৪৫) একই ফ্লাইটে যুক্তরাজ্যে যাচ্ছিলেন। বিশ্বাস কুমারের আসন নম্বর ছিল ‘১১ এ’। আহত বিশ্বাস কুমারকে আহমেদাবাদের সিভিল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিশ্বাস কুমার হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেন, উড়োজাহাজটি বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের মাত্র ৩০ তিরিশ সেকেন্ড পরেই বিকট শব্দ হয়, এরপরই বিধ্বস্ত হয়। সবকিছু এত দ্রুত ঘটে গেল। বিশ্বাস বুকে, চোখে ও পায়ে আঘাত পেয়েছেন।
নিজের বোর্ডিং পাস দেখিয়ে বিশ্বাস কুমার বলেন, ‘যখন উঠে দাঁড়ালাম, চারপাশে শুধু লাশ পড়ে ছিল। আমি ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ি; উঠে দাঁড়িয়ে দৌড় দিই। আমার চারপাশে উড়োজাহাজের ভাঙা টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। কেউ একজন আমাকে ধরে অ্যাম্বুলেন্সে তোলে এবং হাসপাতালে নিয়ে আসে।’
বিশ্বাস কুমার ২০ বছর ধরে লন্ডনে বসবাস করেন। সেখানে তাঁর স্ত্রী ও মেয়ে থাকেন। তিনি বলেন, তার ভাই অজয় একই উড়োজাহাজের আরেক সারিতে ছিলেন। বিশ্বাস বলেন, ‘সে (ভাই) আমার সঙ্গেই যাত্রা করেছিল, এখন তাঁকে খুঁজে পাচ্ছি না। দয়া করে তাকে খুঁজে পেতে আমাকে সাহায্য করুন।’
এয়ার ইন্ডিয়ার উড়োজাহাজটি আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনের গেটউইক যাচ্ছিল। উড়োজাহাজের ২৩০ যাত্রীর মধ্যে ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ ৭ জন পর্তুগিজ ও একজন কানাডিয়ান বলে হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।