প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য করণীয়
Published: 13th, June 2025 GMT
সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তথ্য অনুসারে, ৪৮তম বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে তিন হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হবে। এর মধ্যে সহকারী সার্জন নেওয়া হবে ২ হাজার ৭০০ জন আর সহকারী ডেন্টাল সার্জন নেওয়া হবে ৩০০ জন। দেশে চিকিৎসকের সংকটের কারণে এ বিশেষ বিসিএসকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত নিয়োগ সম্পন্ন করা হবে। তাই সময় নষ্ট না করে এখন থেকেই জোরালো প্রস্তুতি নিতে হবে।
অনেক দিন পর বিশেষ বিসিএস হচ্ছে, তাই প্রতিযোগীর সংখ্যাটা বেশি। গুছিয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রথমে পিএসসির সিলেবাস নম্বর বিন্যাস অনুযায়ী বুঝে নিতে হবে। এরপর নিজের দুর্বলতা ও সবলতার বিষয়গুলো ভাগ করে নিতে হবে। সিলেবাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, মোট ২০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। এর মধ্যে ১০০ নম্বর সাধারণ বিষয়াবলি এবং বাকি ১০০ নম্বর চিকিৎসাবিদ্যা বিষয় থেকে। সাধারণ বিষয়াবলির ১০০ নম্বরের মধ্যে বাংলায় ২০, ইংরেজি ২০, বাংলাদেশ বিষয়াবলি ২০, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি ২০, মানসিক দক্ষতা ১০ ও গাণিতিক যুক্তিতে ১০ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে।
বাংলা অংশে ব্যাকরণে ১৫, সাহিত্যে ৫ নম্বরসহ মোট ২০ নম্বর। ভাষার প্রয়োগ–অপপ্রয়োগ, বাগ্ধারা, শুদ্ধি, সমার্থক-বিপরীতার্থক মোটামুটি সহজ। প্রত্যয় সন্ধিও সমাস কিছুটা কঠিন। তাই প্রস্তুতির সময় সেভাবেই পরিকল্পনা করে নিতে হবে। আবার সাহিত্যের ক্ষেত্রে সব যুগ থেকেই প্রশ্ন আসে, প্রাথমিক আর মধ্যযুগের পরিধি তুলনামূলক কম এবং এখানে সহজেই নম্বর তোলা সম্ভব। আধুনিক যুগের রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, জসীমউদ্দীন, ফররুখ আহমদ ও গোলাম মোস্তফা বেশ প্রাসঙ্গিক। ইংরেজিতে ব্যাকরণ থেকে ১৫ এবং সাহিত্যে ৫ নম্বর। সাহিত্য থেকে সিলেবাসের সব বিষয় পড়লে ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব। এ ক্ষেত্রে আগের বছরের প্রশ্নগুলো পড়লে কাজে দেবে।
বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে ২০ নম্বর। জাতীয় রাজনৈতিক ইতিহাস থেকে ৪ নম্বরের পুরোটাই ওঠানো সম্ভব, যদি গুছিয়ে ইতিহাসের ঘটনাগুলো গল্পের মতো করে পড়তে পারেন। ইতিহাস মুখস্থ করতে যাবেন না, রাজনৈতিক ঘটনাগুলো গল্পের আদলে রিডিং পড়ে যাবেন। এরপর কৃষিজ সম্পদ, অর্থনীতি, শিল্প-বাণিজ্য—প্রতিটি বিষয় থেকে ২ নম্বর আছে, যা বাংলাদেশ বিষয়াবলির তুলনামূলক কঠিন অংশ। এ ক্ষেত্রে আগের বছরের প্রশ্নগুলোর ওপর জোর দিতে হবে। সংবিধান থেকে ২ নম্বরই ওঠানো সম্ভব, যদি বর্তমান ঘটনাবলির সঙ্গে সমন্বয় করে পড়া যায়। এগুলো ছাড়াও আছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা, সরকারব্যবস্থা, জাতীয় অর্জন, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান—এগুলোর প্রতিটি থেকে ২ নম্বর আছে। এসব বিষয় কমন পাওয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো দৈনিক পত্রিকা পড়ার অভ্যাস। জুলাই অভ্যুত্থানের সবকিছু ভালো করে দেখে নিতে হবে। সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবিত সংস্কারগুলোর ব্যাপারে প্রাথমিক ধারণা নিতে হবে।
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে ২০ নম্বর আছে। আন্তর্জাতিক সংগঠন, ভূরাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপট, ভারত–পাকিস্তান সম্পর্ক, ইউক্রেন যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক ঘটনা, হামাস, গাজা ইত্যাদি চলতি বিষয়গুলো ভালোভাবে আয়ত্তে আনতে হবে। এ জন্য নিয়মিত পত্রিকা পড়ার বিকল্প নেই। আন্তর্জাতিক বিষয়গুলো পড়তে অনেকে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না, কিন্তু এই বিষয়ে নম্বর ওঠানো তুলনামূলক সহজ। শুধু একটু গুছিয়ে নিয়ে আগের বছরের প্রশ্নের প্যাটার্ন ফলো করতে পারলে বেশ ভালো নম্বর ওঠানো সম্ভব।
গাণিতিক যুক্তির ১০ নম্বরের প্রস্তুতির জন্য অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির বইয়ের সাধারণ গণিতের মৌলিক অংশগুলো দেখতে হবে। গণিতের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশি সময় নিয়ে উত্তর বের করতে যাবেন না। একেবারে প্রথম চেষ্টায় যতটুকু পারবেন, সেটাই করবেন। একই পরামর্শ মানসিক যুক্তির ক্ষেত্রেও।
চিকিৎসাবিজ্ঞান থেকে মোট ১০০ নম্বর থাকছে। ৩৯তম বিসিএস ও ৪২তম বিসিএসের প্রিলির প্রশ্নগুলো দেখলে একটা প্রাথমিক ধারণা পাবেন। এরপর সিলেবাস অনুযায়ী সব কটি বিষয়ে মৌলিক ধারণা নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, যেকোনো বিষয়ের গভীরে না গিয়ে সব কটি বিষয়ের ব্যাপারে সাধারণ ধারণা থাকলে নম্বর বেশি পাবেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের সিলেবাসে ৫০ নম্বর নন–ক্লিনিক্যাল বিষয়গুলোর জন্য এবং ক্লিনিক্যাল বিষয়গুলোর জন্য ৫০ নম্বর বরাদ্দ। ডেন্টাল অংশের জন্যও মৌলিক ডেন্টাল অ্যানাটমি, ডেন্টিস্ট্রি–সম্পর্কিত ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, ডেন্টাল ম্যাটেরিয়াল ও অন্যান্য মিলে ৫০ এবং ডেন্টাল সায়েন্স থেকে ৫০ নম্বর বরাদ্দ।
মেডিকেল অংশের বেসিক অংশ থেকে মূল ফোকাস রাখতে হবে অ্যানাটমি ও ফিজিওলজিতে যেখানে ২০ নম্বর বরাদ্দ। বেসিক অংশের তুলনায় বেশি নম্বর পেতে ক্লিনিক্যাল অংশে বেশি জোর দেওয়াই যুক্তিযুক্ত। ক্লিনিক্যাল বিষয়ে প্রস্তুতির জন্য নজর রাখতে হবে আমাদের দেশের কমন রোগগুলোর উপসর্গ এবং সেগুলোর মৌলিক চিকিৎসাপদ্ধতি সম্পর্কে।
কোনো একটি পরীক্ষায় কারও পক্ষে সব প্রশ্নের উত্তর করা প্রায় অসম্ভব। তাই প্রস্তুতি নেওয়ার সময় এবং পরীক্ষায় উত্তর দেওয়ার সময় মাথায় রাখতে হবে যেটা সবাই পারছে, সেটা আপনাকে পারতে হবে। বাকি আনকমন বা কঠিন বিষয়গুলো পারলে সেটা আপনার নম্বর বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। তাই প্রস্তুতি নিতে হবে পরিকল্পনা করে। সবার জন্য শুভকামনা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রস ত ত র ব ষয়গ ল র জন য র জন ত পর ক ষ ব স এস
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।