চোকার্স দক্ষিণ আফ্রিকা এবার চ্যাম্পিয়ন
Published: 14th, June 2025 GMT
দীর্ঘদিনের কান্না যেন থেমে গেছে আজ লর্ডসের আকাশে। বহু যন্ত্রণার পর যেন দেখা মিলেছে বিজয়ের রৌদ্রোজ্জ্বল সকালে। দক্ষিণ আফ্রিকা, যাদের নাম উচ্চারণ করলেই ভেসে উঠতো ‘চোকার্স’ শব্দটি, অবশেষে তারা ইতিহাসের পাতায় নতুন এক পরিচয়ে উদ্ভাসিত হলো— চ্যাম্পিয়ন নামে।
যারা একের পর এক সেমিফাইনালে হেঁটেছে মাথা নিচু করে, যারা ৯ বার আইসিসির বড় মঞ্চে হতাশার গল্প লিখেছে, তারা এবার লিখলো রূপকথার নতুন অধ্যায়। ২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল হারার পর যারা আরও একবার কান্নায় ভেসেছিল, সেই তারাই আজ শনিবার (১৪ জুন) সবচেয়ে বেশি ট্রফিজয়ী অস্ট্রেলিয়ার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিলো ‘ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের’ মুকুট। এটাই দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম কোনো আইসিসি শিরোপা, একটি বহুপ্রতীক্ষিত স্বপ্নের বাস্তবায়ন।
লর্ডসের সবুজ মাঠে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামে অস্ট্রেলিয়া। তবে কাগিসো রাবাদা ও মার্কো জানসেনের বল যেন বয়ে আনছিল বজ্রপাত। রাবাদার আগুনঝরা স্পেল আর জানসেনের ধারালো সুইংয়ে ৫৬.
আরো পড়ুন:
লর্ডসে ইতিহাস গড়ার দ্বারপ্রান্তে দ. আফ্রিকা
২৮২ রানের টার্গেটে ব্যাট করছে দ. আফ্রিকা
প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকাও জর্জরিত হয় প্যাট কামিন্স নামক এক গতির ঝড়ে। তার ৬ উইকেটের ঝলকে প্রোটিয়ারা অলআউট হয় মাত্র ১৩৮ রানে। প্রথম ইনিংসে ৭৪ রানের লিড নিয়ে যখন অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংসে নামে তখনও কপালে যেন লেখা ছিল প্রোটিয়াদের আরও এক ট্র্যাজেডি। কিন্তু এবার গল্পটা ছিল ভিন্ন।
অজিদের দ্বিতীয় ইনিংসে দাপট দেখায় রাবাদা-লুঙ্গি এনগিদি জুটি। তাতে ৬৫ ওভারে ২০৭ রানে থেমে যায় তাদের ইনিংস। প্রোটিয়াদের সামনে দাঁড়ায় ২৮২ রানের কঠিন লক্ষ্যমাত্রা। ইতিহাস লিখতে হলে পাড়ি দিতে হবে এই পাহাড়।
আর সেই পথচলায় নায়ক হয়ে উঠলেন দুই ব্যাটসম্যান এইডেন মার্করাম এবং টেম্বা বাভুমা। মার্করামের রাজকীয় সেঞ্চুরি (১৩৬) এবং বাভুমার লড়াকু ৬৬ রানের ইনিংসে ভর করেই দক্ষিণ আফ্রিকা ছুঁয়ে ফেলে বিজয়ের কেতন।
কোনো হঠাৎ ঝড় নয়, এটি ছিল দীর্ঘ প্রতীক্ষার ফল। এটি ছিল চোখের জলে গড়া সাহসিকতার গল্প। আর সে গল্পে আজ প্রোটিয়ারা ‘চোকার্স’ নয়, ক্রিকেটের ইতিহাসে চ্যাম্পিয়নের প্রথম স্বাক্ষর রেখে গেল।
ঢাকা/আমিনুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ট স ট চ য ম প য়নশ প প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন নামঞ্জুর
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
গতকাল বৃহস্পতিবার সাত শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শিশুর জামিন আবেদন করা হয়। তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়। ওই পাঁচজনের জামিন আবেদন করা হয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।
কারাগার সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের পর ১৭ ও ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ শিশুকে আটক করে পুলিশ। ১৮ জুলাই তাদের আদালতে হাজির করে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২১ জুলাই তাদের যশোরের পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বয়স, ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই। তবে গতকাল পর্যন্ত ১২ শিশুর নাম ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের সন্তানদের কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আটক করা হয়েছে।
আরও পড়ুনগ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ২৭ জুলাই ২০২৫একজন শিশুর বাবা বলেন, ‘সংসারে অভাব–অনটন, নিজেরাই সংসার চালাইতে পারি না। আমার কষ্ট দেখে ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। সে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রমজান শেখ নামের একটা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। কাজের সময় পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।’
আরেক শিশুর ভ্যানচালক বাবা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কোথাও কোনো কাইজের মধ্যে নেই। তিনডা ছেলে, বড়টা একটা মাদ্রাসার শিক্ষক। ছোট দুইডা এখনো পড়ে। যারে ধরছে, সে সবার ছোট। ওই দিন সকালে আমার মাদ্রাসায় গেছে, পরীক্ষা ছিল। পরে দুপুরের আগে আমি নিজে যাইয়ে নিয়ে আসছি। সেদিন বাড়িতেই ছিল। পরের দিনও সারা দিন বাড়ি ছিল, সেদিন তো কারফিউ ছিল। আসরের নামাজের পর আমার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে গেছে চটপটি খাইতে। পাশে মাদ্রাসার সামনেই চটপটির দোকান বসে। সেই হান দে ওরে ধইরে নিছে।’
ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ধরার ঘণ্টাখানেক পর থানা থেইকা ফোন দিছে, কয় ছেলে ধরা হইছে। আমরা থানায় গিয়া অনেক কইছি, ও তো কোথাও যায় না, কোনো গ্যাঞ্জামের ছেলে না। মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু কেউ কিছুই শুনল না। ছেলেরে ছাড়ায় আনতে অনেক জায়গায় দৌড়াইছি।’ তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
এ ছাড়া জামিনের আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন লোক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক।
আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা, আসামি ৪৭৭ জন৩১ জুলাই ২০২৫গ্রেপ্তার এক শিশুর আইনজীবী ফিরোজা বেগম বলেন, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এই শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় দ্রুত তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা অল্প সময় আগে গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে। তাই হয়তো বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় এখনো কারও জামিন হয়নি।
আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে সংঘাতের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ১৮ জুলাই ২০২৫