পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি শেষে ঢাকামুখী যাত্রীদের ঢল নেমেছে বরিশালের দুই লঞ্চ ও বাস টার্মিনালে।

লঞ্চ ব্যবসায়ীরা জানান, শনিবারের (১৪ জুন) কেবিনের সকল টিকেট আগে-ভাগেই বিক্রি হয়ে যায়। দুপুরের পরই লঞ্চগুলোতে ডেক ও কেবিনের যাত্রী উঠতে শুরু করায় ভিড় ছিল মাত্রাতিরিক্ত। যারা আগে টিকেট সংগ্রহ করেননি তাদের জন্য শনিবার লঞ্চ-বাসের টিকিট ছিল সোনার হরিণ। দিনভর ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও লঞ্চবাসের টিকিট কিনতে পারেনি অধিকাংশ যাত্রী। পরে দালালদের মাধ্যমে কয়েকগুণ বেশি টাকায় টিকিট সংগ্রহ করতে হয়েছে সাধারণ যাত্রীদের। ফলে দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ যাত্রীরা।

সরেজমিন দেখা যায়, বরিশাল কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল নথুল্লাবাদের স্বনামধন্য বাসের টিকিট অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। ফলে সাধারণ যাত্রীরা এ সব বাসের কাউন্টার ঘুরে টিকিট পাচ্ছে না। পরে বাধ্য হয়ে টার্মিনালের দালাল চক্রের মাধ্যমে কয়েকগুণ বেশি টাকায় টিকিট কিনতে হয়েছে অধিকাংশ সাধারণ যাত্রীকে। 

আরো পড়ুন:

‘শত শত বাস আসছে, পা ফেলানোর জায়গা নাই’

গাজীপুরে মহাসড়কে কর্মস্থলে ফেরা মানুষের চাপ

একই অবস্থায় বরিশাল নৌবন্দরেরও। এ দিন ১২টি লঞ্চ সরাসরি ঢাকার উদ্দেশে যাত্রী নিয়ে গেছে। এ সব লঞ্চের টিকিট অগ্রিম বিক্রি হয়ে যাওয়ায় কাউন্টার বা নৌবন্দরে এসেও যাত্রীরা টিকিট কিনতে পারেনি। তবে দুই থেকে তিনগুণ বেশি টাকায় দালালদের মাধ্যমে লঞ্চের টিকিট বিক্রি করতে দেখা গেছে।

এছাড়া এ দিন দালালদের কাছ থেকে প্রথম শ্রেণির কেবিনের টিকিট কিনে স্টাফ কেবিন দেয়ার অভিযোগ করেছে ছয় যাত্রী। যাত্রীচাপ বেশি থাকায় এদিন সকল লঞ্চ নিচতলা থেকে ছাদ পর্যন্ত থাকা খালি জায়গায় যাত্রী বসিয়ে বন্দর ত্যাগ করেছে। ফলে অনেক যাত্রী বসার জায়গাও পায়নি। দাঁড়িয়ে লঞ্চে চড়ে রওনা দিতে দেখা গেছে অনেককে।  

একাধিক বাসযাত্রী জানান, তিন ঘণ্টা অপেক্ষা শেষেও বাসের টিকিট পাননি। কোনো বাস কোম্পানির কাউন্টারে টিকিট না থাকলেও দালালদের কাছে কয়েকগুণ টাকায় টিকিট বিক্রি হচ্ছে। যাত্রীরা জানান, বাসের টিকিট না পেয়ে লঞ্চে যেতে নৌবন্দরে এসে আরো বিপদে পড়েছেন। এখানেও একই অবস্থা, কেবিনের টিকিট নেই। এরপর দালালদের কাছ থেকে ৩ হাজার টাকায় একটি প্রথম শ্রেণির সিঙ্গেল কেবিন কিনে প্রতারিত হয়েছেন এক যাত্রী। তাকে স্টাফ কেবিন দেয়া হয়েছে। এ ঘটনা আরো পাঁচজনের সঙ্গে ঘটেছে বলে জানা গেছে। 

একাধিক পরিবহনের কাউন্টার ইনচার্জ জানান, ঈদের আগেই অনলাইনের মাধ্যমে অগ্রিম টিকিট কিনে ফেলেছেন যাত্রীরা। স্বাভাবিক দিনে আটটি গাড়ি চলাচল করলেও বর্তমানে ১৪টি বাসে যাত্রী পরিবহন করেও চাপ সামাল দিতে পারছেন না। 

এ্যাডভেঞ্চার লঞ্চের ব্যবস্থাপক কেএম হুমায়ুন জানান, ঈদের আগে সব টিকিট অগ্রিম বিক্রি হয়ে গেছে। বিআইডব্লিউটিএ-এর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরিচালক শেখ মো.

সেলিম রেজা বলেন, যাত্রীচাপ অত্যাধিক হওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। 

বরিশাল মহানগর পুলিশের কমিশনার শফিকুল ইসলাম জানান, টার্মিনালগুলোতে সর্বোচ্চ যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে। যেকোনো অপরাধ ঠেকাতে পুলিশ বদ্ধপরিকর বলে জানান তিনি।

ঢাকা/পলাশ/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক পর বহন ক উন ট র বর শ ল

এছাড়াও পড়ুন:

আষাঢ়ের প্রথম দিন আজ

ঝমঝম বৃষ্টি, কর্দমাক্ত পথঘাট, খাল-বিলে থৈ থৈ পানি- এমন দৃশ্যপট সামনে না থাকলেও ভেবে নিতে দোষ কি। কারণ, আজ পহেলা আষাঢ়।

রবি ঠাকুরের ভাষায়— ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশও ছেয়ে... আসে বৃষ্টিরও সুবাসও বাতাসও বেয়ে...’।

অবশ্য একেবারে নিরাশ করেনি আষাঢ়। রাজধানীতে সকাল থেকেই আকাশে মেঘের আনাগোনা আর কোথাও হালকা বৃষ্টি জানান দিচ্ছে প্রকৃতিতে বর্ষার আগমন। বর্ষার আগমন যেন স্বস্তি-শান্তি ও আনন্দের। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস নগরবাসীর জীবনে এক আনন্দের বার্তা। 

বাংলার প্রকৃতিতে আলাদা বৈশিষ্টময় বর্ষা ঋতুর আজ যাত্রা শুরু হলো। 

বলা হয়, গ্রীষ্মের খরতাপের ধূসর নাগরিক জীবন আর রুদ্র প্রকৃতিতে প্রাণের স্পন্দন জাগায় বর্ষা। জ্যৈষ্ঠের প্রচণ্ড খরতাপে রুক্ষ প্রকৃতি সজীব হয়ে উঠবে বর্ষার বর্ষণের মৃদঙ্গ-ছোঁয়ায়, এটাই যে সকল বাঙালির চাওয়া। 

আষাঢ়ের রিমঝিম বৃষ্টি গ্রীষ্মের ধুলোমলিন জীর্ণতাকে ধুয়ে ফেলে গাঢ় সবুজের সমারোহে প্রকৃতি সাজে পূর্ণতায়। রঙিন হয়ে পুকুর-বিলে ফোটে শাপলা-পদ্ম। বর্ষা ঋতু তার বৈশিষ্ট্যের কারণে স্বতন্ত্র। বর্ষার প্রবল বর্ষণে নির্জনে ভালোবাসার সাধ জাগে, চিত্তচাঞ্চল্য বেড়ে যায়। বর্ষার নতুন জলে স্নান সেরে প্রকৃতির মনও যেন নেচে ওঠে। ফুলে ফুলে শোভিত হয় প্রকৃতি। তাই বর্ষাবিহীন বাংলাদেশ ভাবাই যায় না। 

বর্ষা বাঙালি জীবনে নতুন প্রাণসঞ্চারকারী। বৃষ্টিস্নাত কদম ফুলের সৌন্দর্য্য যে দেখেছে, মুগ্ধ নয়নে চেয়ে না থেকে পারেনি। এর বর্ণনায় পল্লীকবি জসীমউদদীন লিখেছেন- ‘বনের ঝিয়ারি কদম্বশাখে নিঝঝুম নিরালায়, / ছোট ছোট রেণু খুলিয়া দেখিছে, অস্ফুট কলিকায়।’

বৃষ্টি হলে গ্রামের নদী নালা পুকুরে জল জমে থৈ থৈ করে। বর্ষা আনন্দ-বেদনার সারথী। সবুজের সমারোহে, মাটিতে নতুন পলির আস্তরণে বর্ষা আনে জীবনেরই বারতা। 

উন্নয়নের নামে চলমান প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংসের প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি নিয়ে প্রতি বছরের মতো এ বছরও বর্ষা ঋতুকে বরণ করে নিতে ‘বর্ষা উৎসব’ আয়োজন করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। 

রবিবার (১৫ জুন) আষাঢ়ের প্রথমদিনে বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সকালে সুর-সংগীতে প্রকৃতি-বন্দনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে উৎসবের কর্মসূচি।

ঢাকা/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ