সুন্দরী, কোমলমতি সিন্ডারেলা সৎমায়ের সংসারের বঞ্চনা থেকে মুক্তির আশায় বুক বাঁধে—রাজপুত্রের কনে বাছাইয়ের এক প্রথাগত অনুষ্ঠানের ঘোষণা শুনে। কিন্তু সৎবোনদের পোশাক বানিয়ে নিজেরটা বানানোর সময় পায় না সে। তাকে রেখেই সেই অনুষ্ঠানে চলে যায় সৎবোনেরা। কান্না ছাড়া উপায় থাকে না তার। এমন সময় এক পরিমাতার সাহায্যে জাদুর পোশাক পরে ঘোড়ার গাড়ি চড়ে রাজকন্যার বেশে সেই অনুষ্ঠানে রওনা দেয় সে। রাজ্যের সব বিবাহযোগ্যা মেয়ে জড়ো হয় সেখানে। তবে সবার থেকে আকর্ষণীয় সিন্ডারেলাকে দেখে অভিভূত রাজপুত্র। জাঁকজমক সেই অনুষ্ঠানে নাচ-গান আর রাজকীয় নৈশভোজ শেষ না হতেই সিন্ডারেলার মনে পড়ে পরিমাতার সতর্কবাণী। মধ্যরাতের আগেই অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করতে হবে তাকে। না হলে, জাদুর প্রভাব শেষ হয়ে যাবে। অর্থাৎ জাদুর পোশাক, ঘোড়ায় টানা গাড়ি সব আগের অবস্থানে ফিরে যাবে।

চপলা হরিণীর মতো দৌড়ে অনুষ্ঠান ত্যাগ করতে চেষ্টা করে সিন্ডারেলা। তড়িঘড়ি করতে গিয়ে পায়ের এক পাটি জুতা খুলে পড়ে রাজপ্রাসাদের সিঁড়িতে। বাকি এক পাটি জুতা পরেই ঘরে ফেরে সে। সেই জুতার সূত্র ধরেই রাজকুমার খুঁজে পায় সিন্ডারেলাকে। বদলে যায় তার জীবন। তবে ঠিক কী কারণে পরিমাতার দেওয়া জুতা জাদুর অন্যান্য পোশাকের মতো উধাও হলো না, সেই প্রশ্নের উত্তর না পেলেও গল্প শুনে ঘুমিয়ে পড়ল কত ছোট্ট শিশু।

মাতৃহারা সিন্ডারেলাকে নিয়ে গড়ে ওঠা রূপকথার গল্পের যে সংস্করণটি শুনে ৩৫০ বছরের বেশি সময় ধরে শিশুরা ঘুমিয়ে পড়ছে, সেই সংস্করণের লেখক ফরাসি গল্পকার চার্লস পেরাল্ট, যা প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৬৯৭ সালে। ফরাসি প্রকাশক ক্লোদ বার্দান ফরাসি ভাষায় পেরাল্টের আটটি রূপকথার গল্প নিয়ে বইটি প্রকাশ করেন। বইটির ফরাসি শিরোনাম ছিল ‘হিস্টোরিস ওউ কন্টেস ডু টেমপ্‌স পাসে, অ্যাভেস ডেস মোরালাইতেজ’, যার ইংরেজি করা হয় ‘স্টোরিজ অর টেলস ফ্রম পাস্ট টাইমস, ইউথ মোরালস’। ওই বইটির কোনো কপি কোথাও সংরক্ষিত নেই, ফলে বিশ্বাসযোগ্য রেফারেন্স বই হিসেবে সামনে আসে এর ইংরেজি সংস্করণ। ১৭২৯ সালে ছাপা হওয়া পেরাল্টের গল্পের বইয়ের ইংরেজি সংস্করণটি, এখনো যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্লভ বইয়ের সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে স্থাপিত হাউটন লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত আছে। বিখ্যাত কল্পকাহিনি ‘পুশ ইন বুটস’ ওই বইয়ের আটটি গল্পের একটি।

ইংরেজি ভাষায় লেখা ওই বইয়ের ইলেকট্রনিক সংস্করণের সিন্ডারেলা গল্পের সারসংক্ষেপ এমন: সৎমায়ের সংসারে বঞ্চনার শিকার সিন্ডারেলার কান্না দেখে কাল্পনিক এক পরিমাতার আবির্ভাব ঘটে। সে সিন্ডারেলার মনের কষ্ট দূর করতে জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় রাজকীয় পোশাকের ব্যবস্থা করে এবং রাজপুত্রের কনে বাছাইয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য কুমড়া, ইঁদুর ও টিকটিকিকে জাদু দিয়ে ঘোড়ায় টানা গাড়ি ও এর গাড়োয়ান এবং চাপরাসিতে রূপান্তর করে দেয়। তবে সিন্ডারেলাকে পরিমাতা পৃথিবীর সুন্দরতম এক জোড়া জুতাও দেন, যা ছিল কাচের তৈরি। ওই পোশাক পরে রাজকুমারীর মতো দেখতে লাগে সিন্ডারেলাকে। রাজপুত্র তাকে যারপরনাই পছন্দও করে। তবে পরিমাতার শর্ত ছিল রাত ১২টার মধ্যে ফিরে আসতে হবে। তা না হলে, জাদুর সব পোশাক ও ঘোড়ার গাড়ি, গাড়োয়ান, চাপরাসি আগের অবস্থায় ফিরে আসবে। তবে জুতার কী হবে, সে বিষয়ে ওই গল্পে কিছু উল্লেখ ছিল না।

কাচের তৈরি যে জুতার সূত্র ধরে রাজপুত্র খুঁজে পায় সিন্ডারেলাকে, গল্পের বর্ণনা অনুযায়ী কল্পজগতের পরিমাতার দেওয়া সেই জুতা তো জাদুরই হওয়ার কথা! এ বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দিয়ে যাননি ফরাসি লেখক চার্লস পেরাল্ট। বরং এই গল্পের যে সমালোচনাগুলো পাওয়া যায়, তা হলো কাচের তৈরি জুতার বিষয়টি খানিকটা অবাস্তবধর্মী। এটা কীভাবে পায়ে দেওয়া গেল। কেন, তা ভেঙে গেল না। এ ধরনের কিছু সমালোচনা রয়েছে কোনো কোনো সমালোচকের লেখায়।

লোকগল্প নিয়ে গবেষণানির্ভর কয়েকটি নিবন্ধ খুঁজে পাওয়া যায়। তাতে বলা হয়, চার্লস পেরাল্ট যে গল্পগুলো লিখে গেছেন, তা মূলত বহুকাল ধরে লোকমুখে ঘুরে বেড়ানো গল্প। তিনি কেবল তা লিখে প্রকাশ করার উদ্যোগ নেন। এই গল্পগুলোর চরিত্র তাঁর নিজের সৃষ্টি নয়। এ কারণেই হয়তো পেরাল্টের গল্পের মূল পাণ্ডুলিপির শিরোনাম ছিল, ‘আমার মায়ের হাঁসের গল্প’।

প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, সিন্ডারেলা গল্পের মতো একই ধরনের অনেকগুলো গল্প বহুকাল আগে থেকে প্রচলিত ছিল। ভিন্ন সংস্কৃতিতে ভিন্নভাবে ছিল তার বর্ণনা। এ রকম গল্পের সংখ্যা হবে ৩৫০ থেকে ১৫০০। অনেক গল্পে মূল চরিত্রের মেয়েটির নাম ছিল সিন্ডারেলা, যে তার সৎমায়ের সংসারে নানা বঞ্চনার মধ্যে বেড়ে ওঠে। পেরাল্টের আগে সিন্ডারেলা চরিত্রকে ঘিরে গড়ে ওঠা প্রথম লিখিত গল্পটি ইতালীয় লেখক জিয়ামবাতিস্তা বাসিলের। মৃত্যুর পর তাঁর লেখা গল্পের সংগ্রহ নিয়ে পেন্টামেরোন শিরোনামের গ্রন্থটি প্রকাশ করেন তাঁর বোন আদ্রিয়ানা। দুই খণ্ডে ওই গ্রন্থ প্রকাশিত হয়, যথাক্রমে ১৬৩৪ ও ১৬৩৬ সালে। ওই গল্পগুলোর একটি ‘লা গাতা সেনেরেনতোলা’।

সেনেরেনতোলা গল্পের জেজোলা (সিন্ডারেলা চরিত্র) স্থানীয় এক নেতার মেয়ে। গল্পে দুষ্টপ্রকৃতির সৎমা ও সৎবোন, জাদুকরি রূপান্তর, হারিয়ে যাওয়া চটি জুতা এবং একজন রাজার বিবরণ ছিল। তবে সেই গল্প পেরাল্টের গল্পের থেকে অনেক ভিন্ন ছিল। সেখানে জেজোলা একটি খেজুরগাছের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা পরির সাহায্যে জাদু শেখে। সেই জাদুর বলে সে নিজেই যা খুশি হাজির করতে পারে আবার উধাও করে দিতে পারে। একদিন জাদুর পোশাক পরে সে এক অনুষ্ঠানে যায়। সেখানে রাজা তাকে দেখে অভিভূত হয়। কিন্তু জেজোলা তার সৎবোনদের কাছে ধরা পড়ার ভয়ে পালিয়ে যায়। পালাতে গিয়ে তার পায়ের এক পাটি জুতা পড়ে যায়। রাজা সেই জুতা গ্রামের সব নারীকে পায়ে দিয়ে পরীক্ষা করে। কারও পায়ে সেই জুতা সঠিকভাবে লাগে না। কেবল বাকি থাকে জেজোলা। তাকেও হাজির করা হয় রাজার সামনে। সঙ্গে সঙ্গে ওই জুতা নিজেই লাফিয়ে লাফিয়ে এগিয়ে যায় এবং জেজোলার পায়ে আটকে যায়। তাকে বিয়ে করে রাজা তার সৎবোনেরা তাকে রানি বলে মেনে নেয়। গল্পটা এতটা জনপ্রিয় হয়নি, যতটা হয়েছিল পেরাল্টেরটা।

তবে দুটি গল্পেই অতিবাস্তব উপাদান ছিল। পেরাল্টের লেখাতেই প্রথম ‘ফেইরি গডমাদার (পরিমাতা)’ ও কাচের তৈরি জুতার ব্যবহার দেখা যায়। ইতিহাসগ্রন্থ ঘেঁটে দেখা যায়, জুতার মাধ্যমে ভাগ্য বদল হওয়া সিন্ডারেলার চরিত্রটি গড়ে উঠেছে মিসরের পিরামিড নির্মাণের সময়কার এক নারীকে নিয়ে প্রচলিত একটি গল্পকে ধরে। যে গল্পে একটি আকস্মিক ঘটনার মধ্য দিয়ে সাধারণ এক নারীকে রাজরানি হতে দেখা যায়। যদিও সেই গল্পে সৎমা, রাজকীয় অনুষ্ঠান ও জাদু বা অতিবাস্তব কোনো উপাদান ছিল না।

গ্রিক ভূগোলবিদ স্ট্রাবো তাঁর ‘জিওগ্রাফিকা’ গ্রন্থের ৩৩-৩৪ নং অনুচ্ছেদে বলেন, মিসর ভ্রমণকালে তিনি ৭ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে ২৩ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ের রোডোপিস নামের এক গণিকাকে নিয়ে একটি প্রচলিত গল্প শুনেছিলেন। যেখানে বলা হয়, একদিন গোসলের সময় চাকরানির হাত থেকে রোডোপিসের এক পাটি জুতা ছোঁ মেরে নিয়ে যায় একটি ইগল। মিসরের মেমফিস নামক একটি অঞ্চলের রাজা যখন খোলা ময়দানে বসে রাজ্যের বিচারকার্য পরিচালনা করছিলেন, তখন ইগলের ফেলে দেওয়া জুতাটি রাজার কোলে এসে পড়ে। রাজা ঘটনার আকস্মিকতা ও জুতার সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হন। লোক পাঠিয়ে জুতার মালকিনকে খুঁজে বের করেন এবং তাকে রানি করে প্রাসাদে নিয়ে আসেন।

জিয়োগ্রাফিকা গ্রন্থে স্ট্রাবোর বর্ণনা অনুযায়ী, রোডোপিস তার ছদ্মনামও হতে পারে। কারণ, এই নামের অর্থ ‘রসি চিকস’ বা গোলাপি গাল। মিসরের তৃতীয় পিরামিডে ওই গণিকার সমাধি রয়েছে বলে ধারণা করা হয়, যা নির্মাণ করেছিল তার প্রেমিক। নীল নদের শাখানদীর তীরবর্তী নক্রেটিস বন্দরে লেসবসের ওয়াইনের ব্যবসা করা চ্যারাক্সাসের উপপত্নী ছিলেন সেই নারী। চ্যারাক্সাসের ভাই কবি সাফো তাকে ডোরিচা বলে ডাকতেন।

স্ট্রাবোর ৪০০ বছর আগে ইতিহাসবিদ হেরোডোটাসও তাঁর গ্রন্থ দ্য হিস্টোরিস-এ রোডোপিস নামের এক নারীর বর্ণনা দিয়েছেন, যা কোনো গল্প নয়, ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক বাস্তব চরিত্র। ওই গ্রন্থে হেরোডোটাস বলেন, কিছু গ্র্রিক মনে করে তৃতীয় পিরামিডটি তৈরি করেছেন গণিকা রোডোপিস, কিন্তু তারা ভুল। তারা রোডোপিস সম্পর্কে না জেনেই এই কথা বলে। তাহলে তারা কখনোই তাকে এই ব্যয়বহুল পিরামিড নির্মাণের কৃতিত্ব দিতে পারত না।

হেরোডোটাসের তথ্যমতে, নীল নদের নিকটবর্তী শহর হেফাস্টোপোলিসের শাসক ইয়াডমানের দাস রোডোপিস একই সময়ে ওই শাসকের আরেক কর্মী ঈশপ নামের এক গল্পকথকের সহকারী ছিলেন। ফলে দুটি ভিন্ন ধরনের তথ্য নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েন ফোকলোর গবেষকেরা।

স্ট্রাবোর ২০০ বছর পরে গ্রিক বক্তা ও ব্যাকরণবিদ এথেনিয়াস বিষয়টি পরিষ্কার করতে চেষ্টা করেন এভাবে, রোডোপিস ও ডোরিচা নামের দুটি আলাদা নারী থাকতে পারে। তবে স্ট্রাবোর আগে হেরোডোটাস এবং পরে এথেনিয়াসের দেওয়া রোডোপিস সম্পর্কিত তথ্যের সঙ্গে ইগল ও জুতার গল্প ছিল না। ইতিহাসবিদ এলিয়ান (১৭৫-২৩৫ সিই) তাঁর ভ্যারিয়াস হিস্টোরিস গ্রন্থে স্ট্রাবোর রোডোপিস গল্পের কিছুটা পরিবর্তন করে পুনরাবৃত্তি করেন।

বুকহাউস ফর চিলড্রেন নামের একটি প্রকাশনা ছিল অলিভ বিউপ্রে মিলার নামের এক নারী লেখকের। তিনি শিশুদের জন্য উপযুক্ত গল্পের বই ছাপানোর উদ্যোগ নেন। তিনি ১৯২০ সিইতে প্রকাশিত রোডোপিস (দ্য ফার্স্ট সিন্ডারেলা স্টোরি) গল্পটি লিখেছিলেন, যাতে সচেতনভাবে ‘গণিকা’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়।

সে গল্পই যুগে যুগে বিকৃত হয়ে অসংখ্য সংস্করণে রূপ নেয়। লোকগল্পগুলোতে যোগ হতে থাকে সোনার তৈরি জুতা বা কখনো সোনার আঙটি, যা গল্পের নায়িকাকে খুঁজে বের করার একটি উপায় হিসেবে দেখানো হয়। কখনো কোনো পাখি, মাছ বা কোনো গাছকে জাদুর মাধ্যমে গল্পের নায়িকাকে সাহায্য করতে দেখা যায়। সেসব গল্পেও ছিল রাজা বা রাজপুত্রের কথা। ছিল বিয়ের পাত্রী খোঁজার অনুষ্ঠান বা কোনো রাজকীয় উৎসবের বর্ণনা। গল্পগুলো শেষ হতো একটি সুখকর পরিণতির মধ্য দিয়ে (হ্যাপিলি এভার আফটার)।

ফোকলোর গবেষকদের মতে, গ্রিক ভূগোলবিদ স্ট্রাবো রোডোপিসের গল্পটি কার মুখ থেকে শুনেছেন, সেই উৎসের সন্ধান দেননি। সে কারণেই প্রশ্ন জাগতে পারে, ওই গল্পের গল্পকার কে ছিলেন? তাঁরা মনে করেন, ওই গল্পে ইগল বা পক্ষীসমন্ধীয় যে বর্ণনা রয়েছে, সেই ঘরানার গল্প বয়ান করতেন ইশপ। তাঁর গল্পগুলোতে প্রায়ই কোনো না কোনো প্রাণীর সন্ধান পাওয়া যায় এবং একটি নৈতিক শিক্ষা থাকে। তবে যেহেতু রোডোপিসের গল্পের সঙ্গে ইশপের যোগসূত্রের কোনো প্রামাণিক দলিল নেই, তাই গবেষকেরা এ বিষয়ে জোর দিয়ে কিছু বলতে পারেন না।

এ ধরনের গল্প চৈনিক সংস্কৃতিতেও পাওয়া যায়। সেই গল্পেও সিন্ডারেলার মতো এক মেয়ের সন্ধান পাওয়া যায়। ৮৬০ সালের দিকে তুয়ান চেইং-শিনের লেখা ‘ইয়ে জিয়ান’ গল্পের নাম ভূমিকায় সিন্ডারেলার মতো এক স্থানীয় মেয়ের কথা বলা হয়, যে সৎমা ও বোনের নিষ্ঠুরতার হাত থেকে বাঁচার উপায় খুঁজতে থাকে। তখন সে বাড়ির কাছে একটি জলাশয়ে সোনালি চোখের একটি মাছ দেখতে পায়। তার মৃত মা পুনর্জন্মের মাধ্যমে ওই মাছের রূপ ধরে আসে। তবে তার সৎমা ও বোনেরা মাছটিকে মেরে ফেলে। মেয়েটি ওই মাছের কাঁটাগুলো সংগ্রহ করে রাখে, যার মধ্যে ছিল জাদুশক্তি। সেই শক্তির বলে একদিন স্থানীয় একটি উৎসবে সুন্দর পোশাক ও হালকা সোনালি রঙের জুতা পরে বেড়াতে যায় জিয়ান। তবে তার সৎমা ও বোনেরা তাকে চিনে ফেলে। সে দৌড়ে পালাতে গিয়ে এক পাটি জুতা হারিয়ে ফেলে। সেই জুতার সূত্র ধরে মেয়েটিকে খুঁজে বের করে পার্শ্ববর্তী দ্বীপের রাজা এবং তাকে রানি করে রাজপ্রাসাদে নিয়ে যায়।

তবে চার্লস পেরাল্টের ‘সিন্ডারেলা, দ্য লিটল গ্লাস স্লিপার’ গল্পটিই বিশ্বময় সমাদৃত হয় সবচেয়ে বেশি। বিশ্বের অধিকাংশ ভাষায় গল্পটি অনূদিত হয়। পেরাল্টের জীবদ্দশায় এই গল্পের অষ্টম সংস্করণ প্রকাশিত হয়। তার লেখনীর জাদুতে রোডোপিসের বাস্তব জুতার থেকেও বেশি স্থায়ী হয় সিন্ডারেলার কাচের জুতা।

আজও কোটি শিশু সেই গল্প শুনে ঘুমাতে যায়। এই ঘুমপাড়ানি গল্প দিয়েছে অনেক ব্যবসাসফল নাটক, সিনেমা, সিরিজ, সংগীত, ব্যালে নৃত, অপেরা, গীতিকবিতাসহ নানা কিছু। নানা আঙ্গিকে ছড়িয়ে রয়েছে সিন্ডারেলা লোকগল্পের ব্যাপ্তি।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় অ্যানিমেশন ফিল্ম প্রোডাকশন কোম্পানি ওয়াল্ট ডিজনি এই গল্প নিয়ে ১৯৫০ সালে অ্যানিমেটেড মুভি নির্মাণ করে। বিশাল বাজেটের এই সিনেমা বানাতে গিয়ে দেউলিয়াত্বের মুখে পড়া এই প্রোডাকশন হাউসটির ভাগ্যও ফিরে যায় ছবিটি মুক্তির পর। বর্তমানে বিশ্বের বড় বড় জুতা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোও সিন্ডারেলার কাল্পনিক জুতার নকশার ওপর ভিত্তি করে নানা ধরনের জুতা প্রস্তুত করছে, যা কেনার জন্য বায়না ধরে বড় মেয়েরাও।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ র লস প র ল ট ই অন ষ ঠ ন পর ম ত র ন ম র এক প রক শ ত ত র সৎম স স করণ গ রন থ এক ন র স ন দর চর ত র এক প ট র এক প ধরন র র একট বইয় র

এছাড়াও পড়ুন:

বাবা পটুয়া কামরুল হাসান স্মরণে মেয়ে শুমোনা হাসানের গান

ভালোবাসা, স্মৃতি ও উত্তরাধিকারকে কেন্দ্র করে এক আবেগঘন পরিবেশে পটুয়া কামরুল হাসানের কন্যা শুমোনা হাসান তার বাবাকে উৎসর্গ করে একটি হৃদয়স্পর্শী গান প্রকাশ করেছেন।

বাবা দিবস উপলক্ষে আজ দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে একটি অনুষ্ঠানে ‘কত দূর বাবা তোমার বাড়ি’ শিরোনামে গানটি প্রকাশ করা হয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শুমোনার পরিবার, ঘনিষ্ঠজন, এবং সম্মানিত গণমাধ্যমকর্মীরা।

গানটি শুমোনার নিজস্ব রচনা, সুর এবং কণ্ঠে পরিবেশিত। এতে ফুটে উঠেছে একজন কন্যার তার বাবার সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো, তাদের ভালবাসা, সংগ্রাম এবং অনন্য সম্পর্কের গল্প। গানের প্রতিটি কথা ও সুর যেন এক আবেগের যাত্রাপথ।

অনুষ্ঠানে শুমোনা বলেন, ‘এই মুহূর্তটি আমার এবং আমার পরিবারের জন্য এক বিজয়ী এবং আবেগময় সময়। বাবার আত্মা সবসময় আমাকে পথ দেখিয়েছে। এই গানটি তার প্রতি আমার ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতার ছোট্ট বহিঃপ্রকাশ।’

শুমোনা জানান, ভবিষ্যতেও তিনি এই ধারা অব্যাহত রেখে তাঁর বাবার স্মৃতিকে সম্মান জানাতে চান সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ