Samakal:
2025-11-03@05:05:21 GMT

শিশুর মনোযোগ বাড়াতে কী করবেন

Published: 17th, June 2025 GMT

শিশুর মনোযোগ বাড়াতে কী করবেন

আমার ছেলে কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারে না। মেয়ে পড়ার সময় একবার বইয়ে তাকায়, পরক্ষণেই জানালার বাইরে– এমন অভিযোগ প্রায় সব মা-বাবার মুখে শোনা যায়। আমাদের চোখের সামনে বড় হচ্ছে একেকটা ছোট মানুষ। তারা শেখে, ভুল করে, আবার শেখে। আমরা কি সবসময় বুঝি তাদের শেখার পেছনের সেই ছোট্ট মনটার চলাফেরা কেমন? 
আজকের ডিজিটাল দুনিয়ায় শিশুর মন যেন আরও বেশি অস্থির হয়ে ওঠছে। মোবাইল, টিভি, চার পাশের হইচই– সবকিছু মিলিয়ে তারা যেন নিজের ভেতরের কথাগুলো শুনতে পায় না। অথচ মনোযোগ শেখার সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি। এটি জন্মগত নয়– তৈরি করতে হয় ধীরে ধীরে, সঠিক দিকনির্দেশনায়। শিশুর মনোযোগ বাড়াতে কিছু কৌশল অনুসরণ করতে পারেন। যেমন–
সুসংগঠিত দৈনন্দিন রুটিন করে দিন। আপনি হয়তো ভাবছেন রুটিন দিলে তো বাচ্চা রোবট হয়ে যাবে। না, আসলে ঠিক উল্টোটা। যদি সে জানে, সকাল ৭টায় উঠে ব্রাশ করবে, ৮টায় খাবে, বিকেলে খেলবে আর সন্ধ্যায় পড়বে– তবে তার মন অনেক বেশি শান্ত থাকবে। এ শান্ত মনই মনোযোগের প্রথম ধাপ। 
আরেকটা কথা, ঘুম ঠিক না হলে কিছুই ঠিক হয় না। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো ও ওঠার অভ্যাস তাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত রাখে।  
কাজটা ছোট ভাগে ভাগ করে দিন: শিশুকে এক বসায় ২০টা অঙ্ক দিয়ে বলবেন, তাড়াতাড়ি শেষ করো– এটি তার জন্য পাহাড় টপকানোর মতো। তার চেয়ে বরং বলুন, চলো ৫টা অঙ্ক করি। তারপর একটা ছোট খেলা খেলি। আপনি ভাবতেই পারবেন না, এতটুকু পরিবর্তনে শিশুর মুখে কী আনন্দ ফুটে উঠবে। 
শেখাটিকে খেলায় রূপ দিন। রঙিন বোর্ড, স্টিকার পুরস্কার, কুইজ– এসবই ওর মনোযোগ ধরে রাখে। ছোট ছোট বিরতি দিন, পানির গ্লাস দিন, একসঙ্গে বসে পড়ুন। 
শারীরিক চলাফেরায় মনোযোগ দিন: বাস্তবতা হলো শরীর যত চলবে, মন তত সজাগ থাকবে। প্রতিদিন অন্তত এক ঘণ্টা খেলাধুলা, দৌড়ঝাঁপ, সাইকেল চালানো, এমনকি নাচ– এসব শিশুর মস্তিষ্কে অক্সিজেন বাড়ায়। 
শুধু বাইরের খেলা নয়, ঘরে ব্লকস, পাজল বা দাবা-ক্যারমের মতো খেলাও শিশুর মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। 
পুষ্টিকর খাবার দিন: একটি শিশুর মনোযোগ শুরু হয় তার খাবার প্লেট থেকে। সকালে প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার যেমন– ডিম বা ওটমিল খেলে তার চিন্তাশক্তি ভালো থাকে। মাছের ওমেগা-৩, আখরোটের ভালো ফ্যাট, শাকসবজির আয়রন সবই মস্তিষ্কের বন্ধু। 
অন্যদিকে চিনি, সফট ড্রিংকস বা ফাস্টফুড শিশুর মুড বদলে দেয়, মন অস্থির করে তোলে। তাই এমন খাবার বেছে নিন যা সুস্বাদু, পুষ্টিকর আর শিশুর মস্তিষ্ককে কাজে লাগায়। 
স্ক্রিন টাইম সীমিত করুন: এ সময় এসে স্ক্রিন পুরোপুরি বাদ দেওয়া কঠিন। তবে সীমিত করা জরুরি। শিশুর বয়স যদি ২-৫ হয়, দিনে এক ঘণ্টার বেশি স্ক্রিন নয়। 
মনে রাখবেন, শিশুর মন সবচেয়ে বেশি শেখে বাস্তব স্পর্শ, চেহারা, শব্দ, গন্ধ আর অনুভবে। বইয়ের পাতার গন্ধ, কাগজে আঁকার খুশি, গল্প বলার সময় আপনার চোখে চোখ রাখা– এসবেই তার মন আটকে থাকে। 
শিশুর প্রশংসা করুন, তিরস্কার নয়: তুমি ভালো করেছ। আমি তোমার চেষ্টাটা দেখেছি–এ ছোট বাক্যগুলো শিশুর মনে আত্মবিশ্বাসের আলো জ্বালায়। চেষ্টা করলে বাহবা দিন, ভুল হলে বুঝিয়ে বলুন– ভুল করেছ, মানে শিখছ। 
শিশুর মন একটা ফুলের মতো– স্নেহ আর সম্মান পেলে সে ফোটে। চিৎকার বা হুমকিতে সে হয়তো চুপ থাকে, কিন্তু শেখে না। 
তার কথা শুনুন, সময় দিন: আপনি হয়তো সারাদিন কাজের চাপে ব্যস্ত। তবু প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট সময় দিন শুধু তার জন্য– কোনো ফোন নয়, টিভি নয়। তার খেলায় অংশ নিন, গল্প শুনুন, চোখে চোখ রাখুন। 
তাকে বোঝার চেষ্টা করুন– সে কীভাবে শেখে? ছবি দেখে, গান শুনে না কি নিজ হাতে কিছু করে?  
শিশুর মনোযোগ বাড়ানো কোনো ম্যাজিক নয়। এটি ধৈর্য, ভালোবাসা আর সচেতনতার মিশেলে গড়ে ওঠে। কখনও হাল ছাড়বেন না। ছোট ছোট উন্নতিতে খুশি হোন, তাকে জড়িয়ে ধরুন, বলুন– আমি তোমার পাশে আছি। এ কথাটাই শিশুর সবচেয়ে বড় শক্তি হয়ে উঠবে। v 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ শ র মন য গ ব ড়

এছাড়াও পড়ুন:

চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে

জ্বালানিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ছে। তবে এসব গাড়ি বাসা বা নির্দিষ্ট স্থানেই শুধু চার্জ করা যায়। ফলে দূরে ভ্রমণের সময় গাড়ির চার্জ শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়েন অনেকেই। এ সমস্যা সমাধানে তারের সংযোগ ছাড়াই বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক’ চালু করেছে ফ্রান্স। প্যারিসের উপকণ্ঠে চালু হওয়া সড়কটিতে চলাচলের সময় বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক গাড়ি, বাস ও ভারী ট্রাকের ব্যাটারি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার্জ হয়ে যাবে।

বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার জন্য সড়কটিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ২০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। প্রয়োজনে সেটি ৩০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা টেসলার ভি থ্রি সুপারচার্জারের মতো বিশ্বের দ্রুততম চার্জারগুলোর সমান শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। এই সড়কের নিচে স্থাপন করা হয়েছে অসংখ্য তামার কুণ্ডলী। এসব কুণ্ডলী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে, যা বিশেষ রিসিভারযুক্ত বৈদ্যুতিক গাড়িতে শক্তি স্থানান্তর করে। পদ্ধতিটি অনেকটা ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তির মতো, যেখানে পাওয়ার ব্যাংক বা চার্জিং প্যাডে মোবাইল ফোন রেখে চার্জ নেওয়া হয়। চৌম্বক ক্ষেত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ স্থানান্তর হওয়ায় ভারী বৃষ্টি, বরফ বা তুষারপাতেও চার্জিং প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যাঘাত ঘটে না। দ্রুত চার্জিং সুবিধার ফলে গাড়ি ও ট্রাক এখন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারবে, মাঝপথে চার্জ নিতে থামার প্রয়োজন হবে না। ফলে গাড়িতে বড় ও ভারী ব্যাটারি বহনের প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে যাবে।

এরেনা ইভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই স্বয়ংক্রিয় চার্জিং সড়কে মাত্র কয়েক মিনিট চললেই বৈদ্যুতিক গাড়ির রেঞ্জ বা চলার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির দীর্ঘ যাত্রায় চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সমাধানে প্রযুক্তিটি নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। প্রযুক্তিটি যদি ব্যাপকভাবে চালু করা যায়, তবে তুলনামূলকভাবে হালকা, সাশ্রয়ী এবং কম ব্যাটারিসমৃদ্ধ বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে। এতে গাড়ির উৎপাদন খরচও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রিওনের তৈরি সড়কটির নকশাতেও রয়েছে বাড়তি সুবিধা। বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার প্রযুক্তি রাস্তার ভেতরের অংশে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কম। ফ্রান্সের পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশজুড়ে প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে বৈদ্যুতিক যানবাহন চলাচল আরও সহজ, কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠে।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

সম্পর্কিত নিবন্ধ