মাদ্রিদের ফ্যাশন শো ও অন্যান্য কবিতা
Published: 18th, June 2025 GMT
মাদ্রিদের ফ্যাশন শো
না, ভুলিনি—
মাদ্রিদের ফ্যাশোন শোতে অযাচিতভাবে
সন্ধ্যার অন্ধকারে চুপিসারে ঢুকে যাওয়া,
কাটগ্লাসে ছলকে ছিল কনিয়াকের বর্ণবাহার—
হারিয়েছি অনেক তবে ওই নিশীথে কবোষ্ণ কিছু পাওয়া,
স্বীকার করি স্মৃতির ডিপফ্রিজে হয়েছে সবকিছু সংরক্ষিত আহার;
বেলোয়ারি ঝাড়ের বর্ণিল আলোতে হয়েছিলে সম্পূর্ণ রুপালি
বিধুর দৃষ্টিপাতে বিদগ্ধ ব্রুনেট—
আকর্ষণ করেনি ডিসপ্লে কেসে রাখা ঝিনুকের ক্ষতচিহ্নখচিত ক্যাসকেট,
অষ্টাদশী শরীরের সৌধ বন্ধক রেখে কেনা প্রণয়ের প্রথম দাসখত,
কথায়বার্তায় ক্যাজুয়ালি বলেছিলে—
তারপর ক্রীড়াচ্ছলে বারবার ভেঙে ফেলা ফাঁদে পা না দেওয়ার শপথ,
অন্ধের করতালি হয়ে আজও বাজে আমার বন্ধ ঘরের নিখিলে;
শীতলযুদ্ধের সমাপ্তিলগ্নে অতিক্রম করে আন্তর্জাতিক সীমান্ত—
এসে দাঁড়িয়েছিলে গ্রাফিতিতে দীর্ণ ভাঙাচোরা বার্লিন ওয়ালে,
কালচার শকে ছিলে বিগতভাবে পরিশ্রান্ত—
তারপরও ভেবেছিলে স্বাধীনতার সুবাতাস লাগল বুঝি-বা ভালে;
ভুলেছি কি—
তুমিই বলো, বাদ পড়েছে কি বিশেষ কোনো ডিটেইল?
কগনেটিভ টেস্টে মনে হয় না আমার কপালে লেখা হবে ‘ফেল’;
জানতে চেয়েছ—বিনম্র স্বরে
আমার দিনযাপনে অধুনা গুরুত্বপূর্ণ কী?
পর্যবেক্ষণ করতে চাই নীরব গোধূলিতে
সৌরবলয়ের সান্নিধ্যে আসা ধূমকেতু,
বৃষ্টিবনে কী প্রেষণায় মোম জ্বালে জোনাকি—
ইট-কাঠ-পাথর কিংবা ইস্পাত কিছু নয়
অযুত গ্রন্থের সমাহারে গড়তে চাই সংযোগের সেতু;
ছলকে যাওয়া জলের মসলিন ভুবনে তুমি নেই
ব্রেকাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে ধ্রুব সত্য—
প্যাপিরাসের সংকেতবিলাসে এ গল্প অপঠিত.
না হয় না-ই বা জুটল ভালোবাসার পুষ্টিকর পথ্য—
নদীকেও যেতে হয় ভাটিতে... খরস্রোত হয়ে ওঠে সম্বল;
আরও একটি কথা হয়নি বলা—
পামির মালভূমির প্রান্তিকে দাঁড়িয়ে ছড়াতে চাই অনুভবের অভ্রচূর্ণ,
প্যাপিরাস পুষ্পের দীপ জ্বেলে শুভ্র যষ্টীর ভরসায় পথচলা—
হারভেস্ট মুনের জ্যোৎস্নায় অন্ধের অক্ষিগোলক ফের হয়ে উঠুক পরিপূর্ণ;
তারপরও ফিরে আসে নিক্কন লাস্যে বিলোল
সন্ধ্যার সংরাগে সমৃদ্ধ মাদ্রিদ,
অতীতের অতলান্ত বাখানি যায় কি অত সহজে ভোলা,
রাতনিশীথে নিষিদ্ধ হয় হালফিল নিঃশঙ্ক নিঁদ,
সংরক্ষিত খাদ্য চেটে খায় বিস্মৃতির আরশোলা।শঙ্খনূপুর গ্রামের ঠিকানা
পেরিয়ে যেতে হবে সাবধানে জলমগ্ন লবণের মাঠ
চিলভাসা দিগন্তের কাছাকাছি... ক্রোশের মাপজোখে বহুদূর,
বুজে আসা গড়খাইয়ের পাশে ভগ্ন প্রাসাদে বিরান রাজ্যপাট—
তীর্থযাত্রীদের গাথায় শোনা কিংবদন্তিখ্যাত গ্রাম শঙ্খনূপুর।
অতিক্রম করতে হবে আধডোবা পাথরে পরিপূর্ণ নদী
বেসামাল জলের বিচূর্ণ ফেনায় দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুশুক,
সাবধানে ভাসাবে ভেলা... উপলে খরস্রোতা এ জলধি—
পাড়ি দিতে অতীতে হয়েছে বিপুল তীর্থযাত্রী উন্মুখ।
উপত্যকার প্রান্তিকে কখনো বা এ মন্দির ওঠে উদ্ভাসি
শ্বেতপাথরে গড়া অলিন্দনিচয়ে ঝলকে নিত্য শুভ্র সরোজ,
বিচিত্র বিগ্রহের সামনে জ্বলে ধূপধুনা... নৃত্য করে দেবদাসী—
টেরাকোটার লীলাবৈভবে ফোটে পৌরাণিক গল্পের দৃশ্যভোজ।
দেয়ালজুড়ে পোড়ামাটির ফেস্কোতে আঁকা
পুরো এক শতাব্দীর কাহিনি সম্পূর্ণ সংঘাতহীন,
প্রাঙ্গণে পাকুড়ের বৃক্ষটি বয়সের ভারে বাঁকা—
বিসংবাদে কোনো কিছু এখানে হয়নি বিকলাঙ্গ মলিন।
বেদিতে দাঁড়িয়ে মন্ত্রপাঠে বলতে পারো মৃদুস্বরে
তোমার হৃদয়তিতাসে শেওলা হয়ে ভাসছে যা সুপ্ত,
সেবায়েতের সম্বিতে দিব্য ঘণ্টা বাজে প্রতি প্রহরে—
এ মন্দিরনিলয়ে ধরে রাখে না কেউ কোনো কিছু গুপ্ত।
সফরের সহিষ্ণু আবেগে এবার হও অধীর
দিব্য এ দেব দেউল... কোন যাত্রী কখনো তা পায় খুঁজে,
কেউবা ভেসে যায় স্রোতজলে বহমান ভাটিতে নদীর—
আবার কেউ স্রোতস্বিনীর সাথে সারা জনম যায় যুঝে।
লুয়াংপ্রাবাংয়ের ফরাসি কেতার কটেজটির ডেক
ঝুলবারান্দার আদলে প্রসারিত হয়েছে নামউ নদীর ওপর,
তেঁতুলগাছের পত্রালিছাঁকা সামান্য কিছু রশ্মিতে—
উজালা হয় কাঠের পাটাতন... মৃদু আলোয় হয়ে ওঠে পসর;
বহতা জলের দিকে তাকিয়ে বসে ছিলাম নিরিবিলি
ফিরিঙ্গিপানি গাছের কোটর থেকে ডেকে ওঠে তক্ষক,
কাঁকড়ার চলাচলে চিত্রময় হয়ে আছে চরের আর্দ্র পলি—
শত সন্ন্যাসীর সান্নিধ্যে এ বেলা পাঠ করা যায় ত্রিপিটক;
করোটিতে ফিরে আসে শতাব্দীর মহিমায় মঞ্জুরিত পদ্মসূত্র
কেন জানি পেশাদারি প্রবণতা হয়ে উঠল প্রধান—
কবে দীক্ষিত হয়েছিল তারাবাদার মার্গে লাওলুম গোত্র,
বুঝতে পারিনি অবচেতনমার্গে মনস্তত্ত্বের বিধান;
ঘাটে এসে ভিন্ন গন্তব্যের নিশানায় উঠে বসি লংবোটে
অপ্রাপ্তিতে ফিরে তাকাই—
উড়ে আসছে সবুজিম ঘুঘু বাজিয়ে ডানায় নীড়প্রত্যাশী সানাই,
তেঁতুলগাছের ঝুপসিতে খড়কুটো বাঁকা ঠোঁটে;
অনেক অনেক বছর পর
মাঝে মাঝে ভাবি... কটেজের ঝুলন্ত পাটাতন এখনো হয় কি
তেঁতুলগাছের ধূপছায়ায় পসর,
ফিরিঙ্গিপানির বুড়োসুড়ো বৃক্ষটি এখনো ঝরায় কি সুগন্ধ—
নাকি কটেজের দুয়ার হয়েছে চিরতরে তালাবন্ধ?
যদি নৌযাত্রা মুলতবি রেখে ফিরে গিয়ে ফের সঙ্গোপনে
বসতাম ডেকের নিরিবিলি তেঁতুলছায়ায় পেতে রাখা কুশনে,
যদি কিঞ্চিত কম হতো আমার পেশাদারি প্রেষণা অথবা দম্ভ—
গোধূলির অস্তরাগে মোহনায় হয়তো বলকে উঠত বিরল জলস্তম্ভ;
রাজমন্দির থেকে সাঁজের আধারে ভেসে আসত কলাগাছের ভেলা—
জ্বলত ঝিলিমিলি গন্ধতেলের পঞ্চপিদিম,
বুঝতে পারিনি... হারিয়েছি কী করেছি কী অবহেলা—
অবদমিত বাসনার কর্দমে কখন যে গজিয়েছে তিক্ত নিম;
স্মৃতিমর্মরিত কিছু খেদ
আজও করতে পারি না দেখা ও অদেখার মধ্যে প্রভেদ,
ওই যে ফিরে যাইনি... ... বসিনি ফের পাটাতনে—
আজও তাড়িয়ে বেড়ায় আমাকে নিজের নিভৃত নির্জনে
করে তোলে ঘরছাড়া উন্মূল,
আমার না দেখা দীপাবলি নিয়ে বাঁধেনি গান
সহস্র মন্দিরে মুগ্ধ লোকালয়ের কোনো বাউল।
অপরাহ্ণে লাক্কাতুরার চায়ের বাগিচা
সবুজিম আলোছায়ায় হয়ে আছে প্রসন্ন,
বৃষ্টিবৃক্ষ ফুঁড়ে বেরিয়েছে বর্ণিল অর্কিড
উড়ছে মৌটুসি... পুষ্পবিধুর গন্ধে হয়েছে উন্মন
হয়েছে বন্য;
চায়ের ঝোপে সবুজ কুঁড়ির আহরণে
প্রতিফলিত হচ্ছে মানুষের আদিম মেহনত,
তেষ্টা পায়, ইচ্ছা হয় পান করি প্রসূনের শোণিত
ভাবি... উষ্ণ পানীয়ের অভ্যাসের কাছে আমার দাসখত;
ইচ্ছে হয় হাঁটি আলাভোলা... চলে আসি বাগিচার ভেতরবাগে
চিত্রপাকরা ধবলি গাইটিকে ঘিরে জড়ো হয়েছে পাঁচটি বক,
পাথরের ওপরে দিব্যি পোহাচ্ছে রোদ
প্রজাতিতে ওটি কৃকলাস নাকি তক্ষক?
মানসাঙ্ক কষি... দড়ির হ্যামকে দোল খাওয়া ছোট্ট মেয়েটি
কত বছরে হবে সে পরিপূর্ণ নারী,
একসময় তো হাঁটতে ভালোবাসতে—
তারপর কতবার নেড়েছি কড়া,
কবে কোন বিকেলে কপাট হলো বন্ধ,
দেখা যাক... একা একা আজ কত দূর আজ যেতে পারি—
হাওয়ায় মথিত হয়
জ্বলেপুড়ে ছাই হওয়া ইউক্যালিপটাস পাতা পোড়ার গন্ধ;
এদিকে ছড়া নদী... নাকি সুরছন্দে নন্দিত এক গুপ্ত প্রস্রবণ
দাঁড়াই নাহয় এখানে চুপচাপ কিছুক্ষণ;
আছ নাকি কাছে... বিদেহে... শরীরী সৌরভের ছোঁয়া যে পাই
আর অধিক আগুয়ান হওয়া মনে হয় আজ পণ্ডশ্রম,
আমাদের বেদপাঠ... বাক্যের বিন্যাস—
কস্তুরিমৃগের তালাশে দেশান্তরী হওয়া... রশ্মির গতিময় উদ্ভাস,
ছিল কি তবে ইল্যুশন...
ছিল কি তবে সব মতিভ্রম?
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মন দ র
এছাড়াও পড়ুন:
যেদিন বাঘের গর্জন শুনেছিল বিশ্ব
১৮ জুন, ২০০৫। কার্ডিফ, ইংল্যান্ড। ন্যাটওয়েস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে। মোহাম্মদ আশরাফুলের অসাধারণ সেঞ্চুরি। শেষ ওভারের প্রথম বলে জেসন গিলেস্পিকে ছক্কা মারার পরের বলে ১ রান নিয়ে আফতাব আহমেদের উদযাপন। সেই সময়ের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম জয়। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম স্মরণীয় ম্যাচ। এবং ম্যাচের মতোই বিখ্যাত পরদিন প্রথম আলোয় প্রকাশিত সেই ম্যাচ রিপোর্টের শিরোনাম: ‘বাঘের গর্জন শুনেছে বিশ্ব।’ সেই জয়ের ২০ বছর পূর্তির দিনে উৎপল শুভ্রের সেই ম্যাচ রিপোর্ট পড়তে গেলে হয়তো নতুন করে রোমাঞ্চিত হবেন অনেক পাঠক।
বাংলাদেশের ক্রিকেট আকাশে নতুন সূর্যোদয় হলো কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে। গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে কাল ৫ উইকেটে হারিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ! মোহাম্মদ আশরাফুলের অনবদ্য এক সেঞ্চুরিতেই এসেছে অস্ট্রেলিয়ার দর্প চূর্ণকারী এই অবিস্মরণীয় জয়।
সোফিয়া গার্ডেনে এর আগে যে চারটি ওয়ানডে ম্যাচ হয়েছে, তাঁর সব কটিতেই জিতেছে পরে ব্যাট করা দল। তাঁরপরও টসে জিতে কেন প্রথমে ব্যাটিং করলেন রিকি পন্টিং? চিরন্তন অস্ট্রেলীয় ঔদ্ধত্যকেই একমাত্র কারণ বলে মনে হচ্ছে না। মুখে যা-ই বলুন, ইংল্যান্ড সফরে প্রথম দু ম্যাচেই পরাজয় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের এমনই নাড়িয়ে দিয়েছে যে, বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচেও নিরাপদ পথেই হেঁটেছেন পন্টিং। কিন্তু তাতেও তাঁর শেষ রক্ষা হলো না।
আরও পড়ুনওয়ানডের যে ১০টি রেকর্ড (হয়তো) ভাঙবে না কোনো দিন৭ ঘণ্টা আগেসোফিয়া গার্ডেনের উইকেট বোলারদের যা দেওয়ার তা সকালের এক ঘণ্টায়ই দিয়ে দেয়, এরপর তা হয়ে যায় শুধুই ব্যাটসম্যানদের। তাঁরপরও প্রথমে ব্যাট করাটাই যে পন্টিংয়ের কাছে নিরাপদ বলে মনে হলো, তাঁর দুটি কারণ অনুমান করা যাচ্ছে। এক. সমারসেটের বিপক্ষে হারলেও সে ম্যাচে ৩৪২ রান করেছিল অস্ট্রেলিয়া। বোলিংয়ের চেয়ে ব্যাটিংয়ের ওপরই তাই আস্থাটা বেশি ছিল তাঁর। দুই. ওয়ানডে ইতিহাসে যত আপসেট হয়েছে, তাঁর কোনোটিতেই দুর্বলতর দলটি পরে ব্যাট করে জেতেনি।
অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার ম্যাথু হেইডেনকে বোল্ড করেন নাজমুল