‘বিশ্ব আর কোনো সম্রাট চায় না’, ট্রাম্পকে লুলার হুঁশিয়ারি
Published: 9th, July 2025 GMT
ব্রিকসভুক্ত দেশগুলো ‘যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী’– মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের করা এমন অভিযোগ সোমবার নাকচ করেছেন উন্নয়নশীল দেশগুলোর এ জোটের নেতারা। ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়ে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দ্য সিলভা তাঁকে উদ্দেশ করে সাফ জানিয়ে দেন, বিশ্বের আর কোনো সম্রাটের প্রয়োজন নেই।
এর আগের দিন গত রোববার রাতে ট্রাম্প ব্রিকস দেশগুলোর ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। তিনি বলেন, যারা ‘যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী’ নীতি গ্রহণ করবে বলে মনে হবে, তাদের বিরুদ্ধে ‘প্রতিশোধমূলক’ শুল্ক বসানো হবে। এর পর গতকাল ১৪টি দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন তিনি।
ট্রাম্পের শুল্ক হুমকি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের জবাবে লুলা বলেন, ‘বিশ্ব বদলে গেছে। আমরা আর কোনো সম্রাট চাই না।’ এই দেশগুলোর জোট একটি ভিন্ন অর্থনৈতিক কাঠামোর খোঁজ করছে। তাই হয়তো ব্রিকস এখন অনেকের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
লুলা তাঁর অবস্থানে অনড় থেকে বলেন, বৈশ্বিক বাণিজ্যে মার্কিন ডলারের বিকল্প খোঁজা এখন জরুরি। বিশ্বকে এমন একটি পথ খুঁজে বের করতে হবে, যাতে বাণিজ্যিক লেনদেনের সব কিছু ডলারের মাধ্যমে না করতে হয়। এটা অবশ্যই দায়িত্বশীলতা ও সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে। আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর উচিত, অন্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি এগিয়ে নেওয়া।
ট্রাম্পের হুমকির পর অন্যান্য ব্রিকস সদস্য রাষ্ট্রও নরমভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছে। যেমন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বলেন, ব্রিকস কারও সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চায় না এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি হবে বলে তিনি আশাবাদী।
বেইজিংয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, শুল্ককে চাপে রাখার বা বাধ্য করানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। তিনি বলেন, ব্রিকস ‘উভয় পক্ষের স্বার্থরক্ষামূলক’ সহযোগিতার পক্ষে এবং এ জোট কোনো দেশের বিরুদ্ধে নয়।
ক্রেমলিনের একজন মুখপাত্র বলেন, ব্রিকসের সঙ্গে রাশিয়ার সহযোগিতা একটি ‘অভিন্ন বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি’র ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে এবং এটি কখনোই কোনো তৃতীয় পক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হবে না।
ভারতের পক্ষ থেকে ট্রাম্পের বক্তব্যের বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। ব্রিকস সদস্য ও সহযোগী অনেক দেশ তাদের বাণিজ্যের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল।
ব্রিকসের নতুন সদস্য ইন্দোনেশিয়ার অর্থনীতিবিষয়ক জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী এয়ারলাঙ্গা হারতার্তো ব্রিকস সম্মেলনে উপস্থিত থাকলেও শুল্ক আলোচনা তদারক করতে গতকালই যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন তিনি। ইন্দোনেশিয়ার একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
অন্যদিকে সহযোগী হিসেবে ব্রিকসে অংশ নেওয়া দেশগুলো জানিয়েছে, তারা স্বাধীন অর্থনৈতিক নীতিতে বিশ্বাসী এবং কোনো আদর্শগত পক্ষপাতিত্বের সঙ্গে নেই। সৌদি আরব এখনও পুরোপুরি সদস্য না হলেও অংশীদার দেশ হিসেবে এতে অংশ নিচ্ছে। ইতোমধ্যে ৩০টির বেশি দেশ ব্রিকসে সদস্য বা অংশীদার হিসেবে যোগ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র সহয গ র ওপর সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
‘রব্বানা হাবলানা’: পরিবারের জন্য এক অমূল্য দোয়া
‘হে আমাদের রব! আমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের মধ্য থেকে আমাদের জন্য চোখের শীতলতা দান করো এবং আমাদের নেককারদের নেতা বানাও।’ এই কথাগুলো কোরআনের সুরা ফুরকানের ৭৪ নম্বর আয়াতে লিপিবদ্ধ আছে।
মূল আরবি দোয়াটির উচ্চারণ হলো, ‘রব্বানা হাবলানা মিন আযওয়াজিনা ওয়া জুররিয়্যাতিনা কুররাতা আ’ইয়ুন ওয়াজাআলনা লিল মুত্তাকিনা ইমামা।’
এটি শুধু একটি দোয়া নয়, বরং পরিবারের কল্যাণ, সন্তানের নেক আমল এবং নিজের নেতৃত্বের জন্য আল্লাহর কাছে এক হৃদয়গ্রাহী প্রার্থনা।
আরও পড়ুননবী সুলাইমান (আ.)–এর দোয়া১৪ মার্চ ২০২৪দোয়ার তাৎপর্যপবিত্র কোরআনের সুরা ফুরকানে আল্লাহ তাঁর নেক বান্দাদের গুণাবলি বর্ণনা করেছেন। এই আয়াতে তাঁদের একটি আকাঙ্ক্ষা কথা প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে তাঁরা আল্লাহর কাছে এমন একটি পরিবারের প্রার্থনা করেন, যাঁরা তাঁদের চোখের শীতলতা এবং হৃদয়ের শান্তির উৎস হবে।
আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ শফী বলেন, এই দোয়া মুমিনকে তাঁর পরিবারের জন্য দায়িত্বশীল হতে শেখায়। এটি কেবল স্ত্রী-সন্তানের ভালো থাকার প্রার্থনা নয়, বরং নিজেকে এমন একজন নেতা হিসেবে গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা, যিনি নেককারদের পথ দেখাতে পারেন।
এই দোয়ার দ্বিতীয় অংশ, ‘আমাদের মুত্তাকিদের নেতা বানাও,’ বোঝায় যে একজন মুমিনের উচিত নিজের পরিবারকে নেক পথে পরিচালিত করা এবং সমাজে ন্যায় ও সত্যের পথপ্রদর্শক হওয়া। (মাআরিফুল কোরআন, পৃষ্ঠা ৬৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ১৯৯৮)
আরও পড়ুনদোয়া কীভাবে করতে হয়২০ এপ্রিল ২০২৫এটি কেবল স্ত্রী-সন্তানের ভালো থাকার প্রার্থনা নয়, বরং নিজেকে এমন একজন নেতা হিসেবে গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা, যিনি নেককারদের পথ দেখাতে পারেন।কখন এই দোয়া করতে হয়‘রব্বানা হাবলানা’ দোয়াটি পড়ার নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। যেকোনো সময় পড়া যায়—নামাজের পর, সিজদায় বা দৈনন্দিন জীবনে যখন ইচ্ছা। বিশেষ করে বিবাহিত জীবনে শান্তি, সন্তানের নেক আমল বা পারিবারিক সুখ কামনায় এই দোয়া অত্যন্ত ফলপ্রসূ। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর কাছে সব সময় দোয়া করো, কারণ দোয়া ইবাদতের মূল।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৩৭১)
এই দোয়া স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা, সন্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক এবং পারিবারিক শান্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে।
আল্লামা শানকিতি বলেন, এই দোয়া মুমিনকে তাঁর পরিবারের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ার পাশাপাশি সমাজে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা অর্জনের জন্য প্রস্তুত করে। একটি নেককার পরিবারই সমাজের মূল ভিত্তি এবং এই দোয়া সেই ভিত্তি মজবুত করার জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। (শানকিতি, মুহাম্মদ আল-আমীন, আদ্বাউল বায়ান ফি ঈযাহিল কোরআন, পৃষ্ঠা ৪৭৮, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, ২০০৫)
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই, যে তার পরিবারের জন্য সর্বোত্তম।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১,৯৭৭)
আরও পড়ুনসন্তানকে বদ দোয়া করবেন না২১ এপ্রিল ২০২৫