বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথোপকথনের একটি ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিং থেকে জানা যায়, গত বছরের জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভে প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের অনুমতি তিনি নিজেই দিয়েছিলেন।

বিবিসি আইয়ের যাচাই করা ওই রেকর্ডিং অনুসারে, শেখ হাসিনা তাঁর নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার’ করার অনুমতি দিয়েছেন এবং ‘তাঁরা (এসব বাহিনীর সদস্যরা) যেখানেই তাঁদের (আন্দোলনকারী) পাবেন, গুলি করবেন।’

অজ্ঞাতপরিচয় একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে শেখ হাসিনার কথোপকথনের ফাঁস হওয়া অডিওটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ যে তিনি সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের গুলি করার জন্য সরাসরি অনুমতি দিয়েছিলেন।

ফাঁস হওয়া অডিওটি সম্পর্কে জানেন, এমন একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, গত ১৮ জুলাই নিজের সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে শেখ হাসিনা ওই ফোনালাপ করেন।

চলতি বছরের মার্চের শুরুতে ফোনালাপের অডিওটি কে ফাঁস করেছেন, তা স্পষ্ট নয়। বিক্ষোভের পর থেকে শেখ হাসিনার কলের অসংখ্য ক্লিপ অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে, যার অনেকগুলোই যাচাই করা হয়নি।

গত ১৮ জুলাইয়ের ফাঁস হওয়া রেকর্ডিংয়ের কণ্ঠের সঙ্গে শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বরের মিল শনাক্ত করেছে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ।

বিবিসি ইয়ারশটের অডিও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে এ রেকর্ডিংয়ের সত্যতা যাচাই করেছে। তাঁরা এটিতে এডিট করার বা কোনো রকম পরিবর্তন করার কোনো প্রমাণ পাননি। অডিওটি কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে, এমন সম্ভাবনাও খুবই কম বলে তাঁরা জানিয়েছেন।

বিবিসি আলাদাভাবে ইয়ারশটের অডিও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে এ রেকর্ডিংয়ের সত্যতা যাচাই করেছে। তাঁরা এটিতে এডিট করার বা কোনো রকম পরিবর্তন করার কোনো প্রমাণ পাননি। অডিওটি কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে, এমন সম্ভাবনাও খুবই কম বলে তাঁরা জানিয়েছেন।

মানবাধিকার বা পরিবেশ রক্ষার ইস্যুতে অডিও-সংক্রান্ত তদন্তের কাজ করে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ইয়ারশট। তারা বলছে, ফাঁস হওয়া রেকর্ডিংটি সম্ভবত এমন একটি ঘরে ধারণ করা হয়েছিল, যেখানে ফোনকলটি স্পিকারে বাজানো হয়েছিল। কারণ, এতে স্বতন্ত্র টেলিফোনিক ফ্রিকোয়েন্সি ও ব্যাকগ্রাউন্ডে কিছু শব্দ ছিল।

ইয়ারশটের বিশেষজ্ঞরা রেকর্ডিংজুড়ে ইলেকট্রিক নেটওয়ার্ক ফ্রিকোয়েন্সি বা ইএনএফ শনাক্ত করেছেন। যে ফ্রিকোয়েন্সি অন্য একটি ডিভাইস থেকে অডিও রেকর্ডিংয়ের ক্ষেত্রে প্রায়ই উপস্থিত থাকে। এটি এমন এক সূচক, যার মানে হলো অডিওটিতে হেরফের করা হয়নি।

ইয়ারশটের বিশেষজ্ঞরা শেখ হাসিনার বক্তব্যে ছন্দ, স্বর ও শ্বাসের শব্দ বিশ্লেষণ করেছেন এবং ধারাবাহিক নয়েজের স্তরও শনাক্ত করেছেন। অডিওতে কৃত্রিম কোনো পরিবর্তন আনার প্রমাণ তাঁরা খুঁজে পাননি।

ব্রিটিশ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান বিবিসিকে বলেছেন, রেকর্ডিংগুলো তাঁর (শেখ হাসিনার) ভূমিকা প্রমাণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো স্পষ্ট ও সঠিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে এবং অন্যান্য প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত।

ইয়ারশটের বিশেষজ্ঞরা শেখ হাসিনার বক্তব্যে ছন্দ, স্বর ও শ্বাসের শব্দ বিশ্লেষণ করেছেন এবং ধারাবাহিক নয়েজের স্তরও শনাক্ত করেছেন। অডিওতে কৃত্রিম কোনো পরিবর্তন আনার প্রমাণ তাঁরা খুঁজে পাননি।

টবি ক্যাডম্যান বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন, যেখানে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে।

আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্র বলেছেন, বিবিসির উল্লেখ করা টেপ রেকর্ডিংটি সত্য কি না, তা তাঁরা নিশ্চিত করতে পারছেন না এবং এই টেপটিতে কোনো বেআইনি উদ্দেশ্য বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতিক্রিয়া দিতেও দেখা যায়নি।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০৩ জনকে অভিযুক্ত করেছেন, যার মধ্যে ৭৩ জন গ্রেপ্তার রয়েছেন। আন্দোলনে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও বাংলাদেশের আদালতে বিচার চলছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ত কর ছ ন য চ ই কর র কর ড স হওয়

এছাড়াও পড়ুন:

গুগল ম্যাপে দেখানো পথে হাঁটতে গিয়ে পড়লেন খালে

প্রযুক্তির এই যুগে হাতে স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট থাকলে গুগল ম্যাপ ধরে পৌঁছে যাওয়া যায় যেকোনো জায়গায়। প্রযুক্তির সহায়তায় আজকাল তাই পথচলা দারুণ সহজ হয়ে গেছে। কারও সাহায্যের তেমন প্রয়োজনই পড়ে না।

তবে প্রযুক্তি যতই আধুনিক হোক, এর ওপর চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা উচিত নয়। না হলে আপনাকেও হয়তো সোজা খালে গিয়ে পড়তে হবে।

যেমনটা হয়েছে ভিক্টোরিয়া গুজেনদার বেলায়। পোল্যান্ডের এই তরুণী বেড়াতে গিয়েছিলেন ইতালির ভেনিসে। সেখানে মুঠোফোনের স্ক্রিনে গুগল ম্যাপ দেখতে দেখতে তিনি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছিলেন। ধাপে ধাপে নামতে নামতে শেওলায় ঢাকা একটি সিঁড়িতে পা রেখে পিছলে গিয়ে তিনি খালে পড়ে যান।

নিজের এই অপ্রত্যাশিত পতনের ভিডিও গত ২৬ সেপ্টেম্বর ভিক্টোরিয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেন, ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়।

ভিডিওতে লেখা ওঠে, যখন গুগল ম্যাপ বলবে ‘সোজা যান’, কিন্তু আপনি ভেনিসে। সতর্ক থাকুন।

ভিডিওর শেষ দিকে দেখা যায় ভিক্টোরিয়া বোকা বোকা চেহারা নিয়ে পা মুছছেন। তাঁর একটি ঊরুতে খানিকটা কেটে গেছে।

এই ভিডিওর নিচে কেউ কেউ হাস্যরসাত্মক মন্তব্য করেছেন। কেউ তরুণীকে বিদ্রূপ করেছেন।

একজন লেখেন, ‘সিঁড়ি বেয়ে নিচে পানির দিকে নামার সময় আপনি কী ঘটবে বলে ভেবেছিলেন?’

অন্য একজন লেখেন, ‘অন্ধভাবে জিপিএস অনুসরণ করা বন্ধ করুন, চারপাশ দেখুন, নিজের মস্তিষ্ককে ব্যবহার করুন।’

আরেকজন খানিকটা সহানুভূতির সুরে লেখেন, ‘শুনুন সবাই, তিনি নিশ্চয়ই পানির ওপর সিঁড়ির শেষ ধাপে থামতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সেখানে গিয়ে (পিছলে) পড়ে যান। তিনি সম্ভবত সুন্দর একটি ভিডিও করতে চেয়েছিলেন, আর পড়ে গিয়ে খালের ধার ঘেঁষে থাকা শামুকে লেগে পা কেটে ফেলেছেন। বেচারি, তবে এটা হাস্যকরও বটে।’

কেউ কেউ ভেনিসে পর্যটকেরা প্রায়ই এমন পিছলে পড়েন বলে মন্তব্য করেন।

ভেনিসের অদ্বিতীয় স্থাপনা এবং সেগুলোর বিন্যাস এমনই যে সেখানে গুগল ম্যাপ ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। তাই প্রায়ই পর্যটকদের অপ্রত্যাশিত কাণ্ডের মুখোমুখি হতে হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কাজী মামুনকে ফাঁসানো হয়েছে: যুব সংহতি
  • মুখোমুখি কবি ও কবি
  • বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত একজনের মৃত্যু
  • কিশোরগঞ্জে হত্যা মামলায় একজনের যাবজ্জীবন
  • মুসলিম জীবনে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের ৯ উপায়
  • ১৭ ঘণ্টার মধ্যেই রাকসুর ফল প্রকাশ: প্রধান নির্বাচন কমিশনার
  • দেশে প্রথম পুনর্ব্যবহারযোগ্য ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড এনেছে মেঘনা ব্যাংক
  • গুগল ম্যাপে দেখানো পথে হাঁটতে গিয়ে পড়লেন খালে
  • মেরে আন্দোলন ‘ঠান্ডা’ করার নীতি ছিল শেখ হাসিনার
  • আড়ি পেতে ও ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি হতো