দেশে আবার কোনোভাবে ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা যাতে তৈরি হতে না পারে, সে ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলো ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশন একমত। এ কথা বলেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ১১তম দিনের আলোচনার শুরুতে আলী রীয়াজ এ কথা বলেন।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, ‘আমাদের সবার লক্ষ্য এক। আমরা একটি জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রের কথা বলছি, যাতে করে ক্ষমতা কেন্দ্রীকরণ করা না হয়, সেটার কথা বলছি। নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষার কথা বলছি। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা বলছি। এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যেন এমন ব্যবস্থা তৈরি করা যায়, যাতে এ দেশে আবার কোনোভাবে ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা তৈরি না হয়, সেটি নিশ্চিত করা—এই লক্ষ্যগুলোর ব্যাপারে, উদ্দেশ্যগুলোর ব্যাপারে আমরা সবাই একমত।’

আজকের আলোচনায় প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা, জরুরি অবস্থা ঘোষণা বিষয়ে আলোচনার কথা রয়েছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে আগেও আলোচনা হয়েছিল, তবে ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি।

আজকের আলোচনায় অংশ নিয়েছে বিএনপি, এনসিপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।

আলী রীয়াজ বলেন, এই আলোচনা তাঁদের জাতীয় সনদ তৈরির ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। অনেকগুলো বিষয়ে একমত হওয়া গেছে। পাশাপাশি দরকার হলো, রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য মৌলিক বিষয়গুলোতে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা। কারণ, এখানে যাঁরা আছেন, তাঁদের সবারই লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এক। সেগুলো বাস্তবায়ন করাই হচ্ছে তাঁদের সবার আন্তরিক প্রচেষ্টা।

দ্রুততম সময়ের মধ্যে যতটুকু সম্ভব, ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সবাইকে নিয়ে একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা প্রধান লক্ষ্য বলে জানান জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি। তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে জুলাই মাসের মধ্যেই যেন আমরা এ কাজ সম্পন্ন করতে পারি।’

যে বিষয়গুলোতে ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি, সেগুলো নিয়ে আবার আলোচনার মাধ্যমে একটা মীমাংসার জায়গায় যাওয়ার ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেন আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘এটাই আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এর বাইরে আমাদের কারও কোনো উদ্দেশ্য নেই।’

যে বিষয়গুলোতে আগে আলোচনায় অনেক দূর পর্যন্ত অগ্রসর হওয়া গেছে, সেগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে চান বলে জানান জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ষয়গ ল ব যবস থ আম দ র লক ষ য

এছাড়াও পড়ুন:

‘জুলাই ঘোষণা’ সংবিধানে নয়, তপশিলে চায় বিএনপি

মূল সংবিধান নয়, চতুর্থ তপশিলে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’কে অন্তর্ভূক্ত করে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে চায় বিএনপি। ক্রান্তিকালীন বিধান-সংক্রান্ত এ তপশিলে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকেও অন্তর্ভূক্ত চায় দলটি। যদিও এনসিপির দাবি ‘জুলাই ঘোষণা’ সংবিধানের প্রস্তবনায় রাখতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এ দাবি নাকচ করেছেন। তিনি বলেন, সংবিধান সাহিত্য নয়, আইন। একাত্তরের ১০ এপ্রিল ঘোষিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রই সংবিধানের মূল অংশে ছিল না। পঞ্চদশ সংশোধনীতে সপ্তম তপশিলে যুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু তা সাংবিধানিক নয়। ঘোষণাপত্রের রাজনৈতিক মূল্য রয়েছে। বিএনপি চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে মর্যাদা ও গুরুত্ব ধারণ করে। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে চায়।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ঐকমত্য কমিশনের এগারতম দিনের সংলাপ শেষে এসব কথা বলেছেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি এনসিপির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের চাওয়ায় জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে সরকার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছে। কয়েকদিন আগে সরকারের একজন উপদেষ্টা ঘোষণাপত্রের খসড়া বিএনপি মহাসচিবকে দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি একটি খসড়া সরকারকে দিয়েছিল। এরপর আর অগ্রগতি ছিল না। এবারের খসড়ায় বিএনপির আগে দেওয়া মতামতের কিছু প্রতিফলন রয়েছে। গত বুধবার রাতে সরকারকে এবারের খসড়ায় মতামত জানানো হয়েছে।

জুলাই ঘোষণার মাধ্যমে অভ্যুত্থানের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দাবি করছে এনসিপি। এ প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেছেন, ‘রাজনৈতিক ঐকমত্য হলে ক্রান্তিকালীন বিধান-সংক্রান্ত সংবিধানের চতুর্থ তপশিলে যুক্ত করে জুলাই অভ্যুত্থানকে স্বীকৃতি দেওয়া যেতে পারে। চতুর্থ তপশিলে রাখা যেতে পারে, সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে।’ 

মূল সংবিধানে জুলাই ঘোষণাকে অর্ন্তর্ভূক্ত করতে বিএনপির আপত্তি কেন প্রশ্নে সালাহউদ্দিন বলেছেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানকে রাখলে, প্রশ্ন আসবে পচাত্তরের ৭ নভেম্বর বিপ্লব, নব্বইয়ের অভ্যুত্থান- কোথায় রাখা হবে?।’

সালাহউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেছেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতার মামলায় পঞ্চম, ষষ্ঠ এবং সপ্তম তপশিলকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। তাই, অভ্যুত্থান-সংক্রান্ত জুলাই ঘোষণা চতুর্থ তপশিলে একটি প্যারায় রেখে, স্বীকৃতি দেওয়া যৌক্তিক হবে। আরেকটি প্যারায় বর্তমান সরকারের স্বীকৃতি দেওয়া  যেতে পারে, রাজনৈতিক ঐকমত্য হলে।

তবে এ ধারণাকে নাকচ করে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেছেন, নতুন সংবিধানের প্রস্তাবনায় জুলাই ঘোষণা রাখাত হবে। তা রাষ্ট্র পরিচালনার পাথেয়। জুলাই ঘোষণার সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হবে।

বর্তমান সংবিধানই সংস্কার হলে, জুলাই ঘোষণাকে কীভাবে প্রস্তাবনায় রাখা যাবে-প্রশ্নে আখতার হোসেন বলেছেন, সংবিধান নতুন বা পুরাতন যাই হোক, জুলাইয়ের সাংবিধানিক স্বীকৃতি থাকতে হবে। সংবিধানের বাইরে তপশিলে যোগ করা গ্রহণযোগ্য হবে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই ঘোষণাপত্র সংবিধানের মূলনীতিতে অন্তর্ভুক্তের বিষয়ে একমত নয় বিএনপি
  • ‘জুলাই ঘোষণা’ সংবিধানে নয়, তপশিলে চায় বিএনপি
  • আলোচনায় বেশিরভাগ ইস্যুতে উভয়পক্ষ একমত
  • নাসিরনগরে ছাত্রদল নেতার মৃত্যুর জেরে ৪০ বাড়িঘরে হামলা-লুটপাট, গ্রামছাড়া শতাধিক পরিবার
  • উপজেলা পর্যায়ে আদালত ও জরুরি অবস্থা বিষয়ে কমিশনের প্রস্তাবে এবি পার্টির সমর্থন
  • তরুণেরা চান শিক্ষা-স্বাস্থ্যে সংস্কার, ‘মব’ ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বেগ
  • পর্যায়ক্রমে উপজেলায় আদালত সম্প্রসারণে একমত দলগুলো
  • উপজেলায় স্থায়ী আদালত স্থাপনে সব দল একমত
  • গণঅভ্যুত্থানের সামাজিক শক্তি ও বর্তমান অংশীদারিত্ব