পাঁচ বিভাগের অনেক স্থানে আজ বৃষ্টির সম্ভাবনা
Published: 13th, July 2025 GMT
রাজধানীতে গতকাল রাতে ১৫ মিলিমিটারের মতো বৃষ্টি হয়েছে। দুই দিন বৃষ্টি কমে গেলেও গতকাল রাত থেকে আবার বৃষ্টি বেড়েছে। আজ রোববার সকাল থেকেই উপকূলীয় জেলা কক্সবাজারসহ নানা স্থানে বৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ দেশের পাঁচ বিভাগের অনেক স্থানে বৃষ্টি হতে পারে। রাজধানীতেও আজ বিকেলের দিকে বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ সকাল ৯টায় পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে। সেই পূর্বাভাস অনুযায়ী, আজ ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক স্থানে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এর সঙ্গে থাকতে পারে দমকা হাওয়া। রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু কিছু স্থানেও আজ বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। পাঁচ বিভাগের কোনো কোনো স্থানে আজ ভারী বর্ষণের কথাও বলেছে আবহাওয়া অফিস।
সাগরের লঘুচাপ এবং মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তার কারণে চলতি মাসের শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি শুরু হয়। চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টি হয় অপেক্ষাকৃত বেশি। এর মধ্যে ৮ জুলাই ৪৪০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় ফেনীতে। এ বৃষ্টি ছিল ওই অঞ্চলে এ বছরের সর্বোচ্চ। ভারী বৃষ্টির কারণে ফেনীতে বন্যার সৃষ্টি হয়। নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকায় জলবাদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ফেনীর বন্যা পরিস্থিতির এখন একটু উন্নতি হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার থেকে বৃষ্টি কমে আসে। আবহাওয়া অধিদপ্তর প্রতিদিন দেশের ৫১টি স্টেশনের আবহাওয়া পরিস্থিতি তুলে ধরে। দেখা গেছে, গতকাল শনিবার ২৮টি স্টেশনেই কোনো বৃষ্টি হয়নি। তবে গতকাল রাতের দিকে রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি স্থানে বৃষ্টি হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা আজ সকাল প্রথম আলোকে বলেন, আবার বৃষ্টি শুরু হলো দেশে। এই সপ্তাহজুড়ে বৃষ্টি হতে পারে। তবে দেশজুড়ে যে একটানা বৃষ্টি হবে, তা নয়। বৃষ্টি হবে আবার কমবে। শুক্রবার পর্যন্ত চলতে পারে এই বৃষ্টি। রাজধানীতেও আজ বিকেলের দিকে বৃষ্টি হতে পারে।
এই বৃষ্টির মধ্যেও গরম কমছে না। আফরোজা সুলতানা বলেন, বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অনেক বেশি। আর এ সময়ের বৃষ্টির বৈশিষ্ট্যই এমন। এখন বৃষ্টি হলেও তাপ খুব একটা কমে না। এপ্রিল–মে মাসে প্রচণ্ড গরম থাকে। কিন্তু প্রবল বৃষ্টি সেই তাপ কমিয়ে ফেলে। এখন তেমনটা হয় না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫