বাণিজ্যযুদ্ধে সাধারণত কেউ জেতে না। তবে মার্কিন বিমান কোম্পানি বোয়িং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুরু করা বাণিজ্যযুদ্ধ থেকে কিছুটা লাভবান হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যেসব বাণিজ্য চুক্তিগুলো করছে, সেগুলোর অংশ হিসেবে বোয়িং ধারাবাহিকভাবে নতুন নতুন বিমান সরবরাহের কার্যাদেশ পাচ্ছে। এ ধরনের বিক্রি বোয়িংয়ের জন্য ইতিবাচক হতে পারে, কেননা, কোম্পানিটি কয়েক বছর ধরে নানা সংকটে আছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করতে পারেন, তাঁর ব্যতিক্রমী বাণিজ্যনীতি মার্কিন উৎপাদন খাতের পালে হাওয়া দিচ্ছে।

এই মাসেই ইন্দোনেশিয়া ও জাপান বোয়িংয়ের শত শত যাত্রীবাহী বিমান কেনার ঘোষণা দিয়েছে। এর আগে বছরের শুরুতে বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও কাতার বোয়িংয়ের বিমান কেনার ঘোষণা দেয়।

যুক্তরাষ্ট্রের লবিস্ট প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটল কাউন্সিলের বাণিজ্যনীতি বিশ্লেষক ব্রুস হার্শ বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রথম মেয়াদ থেকেই এ ধরনের চুক্তি করে আসছেন; তাঁর এসব চুক্তির আওতায় দেশগুলোর সঙ্গে বড় অঙ্কের পণ্য কেনাবেচার চুক্তি হয়। আমাদের বাণিজ্য অংশীদারেরাও তা জানে। সে জন্য তারা বোয়িংয়ের মতো বড় জিনিস কেনার প্রস্তাব দেয়।’

বিমান বিশ্লেষকেরা বলছেন, এসব কার্যাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে খুব একটা চাপ দিতে হয়নি। এয়ারলাইনসগুলো বিমান কেনার মতো সিদ্ধান্ত সাধারণত মাসের পর মাস, এমনকি বছরের বেশি সময় ধরে সরবরাহের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এ ছাড়া বিশ্বে বড় যাত্রীবাহী বিমান সরবরাহ করে কেবল দুটি কোম্পানি—বোয়িং ও ফ্রান্সের এয়ারবাস।

এরপরও বোয়িংয়ের নতুন এসব কার্যাদেশ পাওয়ার ঘটনাকে ট্রাম্প প্রশাসন নিজেদের বাণিজ্য চুক্তির বড় সফলতা হিসেবে তুলে ধরছে। বোয়িং যুক্তরাষ্ট্রের লাখো মানুষের কর্মসংস্থানের উৎস এবং অন্যতম প্রধান রপ্তানিকারক। এপ্রিলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই বোয়িংয়ের শেয়ারের দাম বাড়তে থাকে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এসব চুক্তির ঘোষণা আরও নতুন কার্যাদেশের পথ সুগম করতে পারে। অন্য গ্রাহকেরা হয়তো ভাববে, প্রয়োজনের সময় বিমান না পেলে কী হবে—তাই এখনই কার্যাদেশ দেওয়া নিরাপদ। তবে এখন কার্যাদেশ দেওয়া বিমান হাতে পেতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।

বোয়িং এ বিষয়ে মন্তব্য করেনি। তবে ট্রাম্পের আগ্রহে যে তারা সন্তুষ্ট, সেটা বোঝা যায়। মে মাসে কাতারের সঙ্গে বোয়িংয়ের বিমান চুক্তির সময় কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কেলি ওর্টবার্গ ট্রাম্পের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য সফরে যান।

অ্যাভিয়েশন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অ্যাভিটাসের প্রেসিডেন্ট আডাম পিলারস্কি বলেন, ‘যদি প্রেসিডেন্ট নিজে বলেন আমার সঙ্গে চলুন, যুক্তরাষ্ট্রে অনেক কর্মসংস্থান হবে, এমন চুক্তি করা হবে—এ কথা বললে তখন কেউ না বলতে পারেন না।’

তবে পিলারস্কি ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এসব কার্যাদেশের আকার যতটা দেখানো হচ্ছে, বাস্তবে বিষয়টি তার চেয়ে ছোট হতে পারে। এসব চুক্তি নিয়ে এখনো তেমন কোনো তথ্য প্রকাশিত হয়নি। অনেক চুক্তি হয়তো এখনো বিমান কোম্পানি ও এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে আলোচনার পর্যায়ে আছে।

এই মাসেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ইন্দোনেশিয়া ৫০টি বোয়িং বিমান কিনতে রাজি হয়েছে। তবে পরে এক ইন্দোনেশীয় কর্মকর্তা জানান, এটি এখনো গারুদা নামের রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান সংস্থা ও বোয়িংয়ের মধ্যে আলোচনার পর্যায়ে আছে।

বিমান বিশ্লেষক রিচার্ড আবুলাফিয়া বলেন, ‘আমরা একসময় ঠাট্টা করে বলতাম, এই ধরনের চুক্তি হলো এমওইউটিএইচএল, অর্থাৎ মধ্যাহ্নভোজন করার জন্য সমঝোতা স্মারক। প্রেসিডেন্টের সফর শেষে প্রকৃত চুক্তি, অর্থায়নসহ বিস্তারিত আলোচনা শুরু হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চূড়ান্ত চুক্তি না হলেও এসব কার্যাদেশ অনেক সময় এমনিতেই হতো, ট্রাম্প থাকুন আর না থাকুন। যেমন মে মাসে কাতার এয়ারওয়েজ বোয়িংয়ের ১৫০টি দূরপাল্লার বিমান কেনার কার্যাদেশ দেয়। এই চুক্তি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন, করমর্দন—সবই ছিল। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই কার্যাদেশ এমনিতেই হতো, হয়তো ট্রাম্পের সফরের কারণে সময়টা একটু এগিয়ে আনা হয়েছে।

তবে কিছু চুক্তিতে রাজনৈতিক চাপ ছিল বলেই মনে করেন কেউ কেউ। যা–ই হোক, বিমান হাতে পেতে যে সময় লাগে, তত দিনে অনেক কিছু বদলে যেতে পারে। বোয়িং ও এয়ারবাসের কাছে এমনিতেই হাজার হাজার কার্যাদেশ জমা আছে। অনেক এয়ারলাইন অর্ডার বাতিল করতে পারে, ডেলিভারি পিছিয়ে দিতে পারে, এমনকি অর্ডার কমিয়ে ফেলতেও পারে। অনেক সময় নির্মাতা কোম্পানিগুলো এসব পরিবর্তন মেনে নেয়, যদি তারা অন্য কোনো ক্রেতার কাছে সেই বিমান বিক্রি করতে না পারে।

তবে বোয়িংয়ের মূল চ্যালেঞ্জ হলো এই কার্যাদেশগুলো থেকে বাস্তব মুনাফা আদায় করা। কোম্পানিটির ৭৩৭ ম্যাক্সের ছোট ও বড় সংস্করণ এবং ৭৭৭-৯ মডেল সরকারি অনুমোদন এখনো পায়নি। এসব বিমান যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফএএ) পরীক্ষা ও অনুমোদন প্রক্রিয়ায় আছে। আরও একটি বিষয় হলো, নতুন বিমানের চাহিদা অনেক দিন ধরেই বেশি। সমস্যা হচ্ছে, সরবরাহ সীমিত।

বোয়িং এই ঘাটতি পূরণে কাজ করছে। তাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় মডেল ৭৩৭ ম্যাক্স দুটি বড় দুর্ঘটনার কবলে পড়ার পর এই মডেলের বিমান উৎপাদন প্রায় দুই বছর বন্ধ ছিল। এরপর করোনা মহামারির কারণে সরবরাহব্যবস্থায় বিপর্যয় নামে। গত বছর একটি বিমানের অংশ মাঝ আকাশে খুলে যাওয়ার পর উৎপাদনের গতি আরও কমিয়ে দেওয়া হয়। গত বছর কয়েক সপ্তাহব্যাপী ধর্মঘটেও উৎপাদন পিছিয়ে যায়।

তবুও সমস্যা

এমনকি ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণেও বোয়িং সমস্যায় পড়তে পারে। নতুন শুল্কের কারণে বোয়িংয়ের যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিক সংকটে পড়তে পারে। মার্কিন বাণিজ্য অংশীদারেরা পাল্টা শুল্ক আরোপ করলে বোয়িংয়ের বিক্রিতেও প্রভাব পড়তে পারে।

এই সপ্তাহে বাজেট এয়ারলাইনস রায়ানএয়ার বলেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদি মার্কিন বিমান আমদানিতে শুল্ক আরোপ করে, তাহলে তারা বোয়িংয়ের সরবরাহ পিছিয়ে দিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বোয়িং যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য চুক্তিগুলো থেকে অতিরিক্ত সুবিধা পেলে ইউরোপ পাল্টা পদক্ষেপ নিতে পারে। তারা অন্যান্য দেশকে এয়ারবাস কেনায় উৎসাহ দিতে পারে।

বিশ্লেষক কোর্টনি মিলার বলেন, যদি এই খেলা খেলাই হয়, তাহলে প্রশ্ন হলো দীর্ঘ মেয়াদে কে বেশি কৌশলে খেলতে পারে। বিমান ব্যবসা, অর্থনীতি ও কূটনীতির পুরোনো যে টানাপোড়েন, সেটা আবার নতুন করে ফিরে এসেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র এসব ক র য দ শ সরবর হ বলছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

২০২৬ সালে বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের দাম আরও ৭% কমতে পারে, বাংলাদেশে কেন কমছে না

চলতি বছরের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে দাম কমার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে, চলতি বছরে সামগ্রিকভাবে পণ্যমূল্য ৭ শতাংশ কমবে। আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালে পণ্যমূল্য আরও ৭ শতাংশ কমবে। এ দাম হবে ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।

কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব নেই। দেশে মূল্যস্ফীতির হার এখনো ৮ শতাংশের ঘরে। যদিও একসময় তা দুই অঙ্ক ছাড়িয়ে গিয়েছিল। গত সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ হয়েছে। দেশের মানুষকে এখনো বাড়তি দামেই পণ্য ও সেবা কিনতে হচ্ছে। আগামী বছর নিত্যপণ্যের দাম কমবে কি না, সেই নিশ্চয়তাও নেই। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমলেও দেশে এর প্রভাব কম।

বিশ্বব্যাংকের ‘কমোডিটি মার্কেটস আউটলুক অক্টোবর ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ২০২৫ সালের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। যার মূল কারণ হিসেবে তারা চিহ্নিত করেছে জ্বালানির দাম কমে যাওয়া। সেই সঙ্গে আরও কিছু কারণ চিহ্নিত করেছে তারা। সেগুলো হলো চীনে তেলের চাহিদা বৃদ্ধির গতি কমে যাওয়া এবং বিশ্ববাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় তেলের দামে বড় ধরনের পতন ঘটা। খাদ্যপণ্যের দাম বছরের শুরু থেকে ধীরে ধীরে কমতে থাকে, কিন্তু বছরের প্রথমার্ধে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে পানীয় পণ্যের দাম হঠাৎ অনেকটা বেড়ে যায়। এ ছাড়া বছরের দ্বিতীয়ার্ধে সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে। মূলত রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে মানুষ সোনার দিকে ছুটেছেন।

বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্য নির্ধারণে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে জ্বালানি তেলের দাম। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে জ্বালানির দাম আগের বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে আরও ১০ শতাংশ কমবে। ২০২৭ সালে তা আবার প্রায় ৬ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস ২০২৬ সালে কৃষিপণ্য, খাদ্য ও কাঁচামালের দাম কমবে। চলতি বছরেও এসব পণ্যের দাম কমেছে।

জ্বালানি তেল

বিশ্বব্যাংকের ২০২৬ সালের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা বাড়ায় গ্যাসের দাম কিছুটা বাড়লেও তেলের দাম কমে যাবে এবং সেই প্রভাবকে ছাপিয়ে যাবে। ২০২৫ সালে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম হতে পারে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬৮ ডলার; ২০২৪ সালের ৮১ ডলারের তুলনায় যা বেশ কম। ২০২৬ সালে এই দাম আরও কমে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬০ ডলারে নামতে পারে ধারণা করা হচ্ছে।

এই পূর্বাভাস অনুযায়ী, তেলের ব্যবহার বৃদ্ধির হার আরও কমবে—মূলত চীনের চাহিদা কমে যাওয়া, বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড গাড়ির দ্রুত প্রসার ও বৈশ্বিক তেল সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।

২০২৫ সালে বৈশ্বিক তেলের বাজারে সরবরাহ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০২৬ সালে তা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২০ সালের সর্বোচ্চ মাত্রার তুলনায় প্রায় ৬৫ শতাংশ বেশি হবে এ সরবরাহ।

কৃষিপণ্য

বিশ্বব্যাংক গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, কৃষিপণ্যের মূল্যসূচক ২০২৫ সালে স্থিতিশীল আছে। ২০২৬ সালে তা সামান্য ২ শতাংশ ও ২০২৭ সালে আরও ১ শতাংশ কমবে।

খাদ্যপণ্যের দাম, যেমন শস্য, তেল, প্রোটিনজাত খাবারসহ অন্যান্য খাদ্যের দাম সাম্প্রতিক সীমার কাছাকাছি থাকবে। তবে মাঝেমধ্যে সামান্য কিছুটা ওঠানামা থাকবে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রধান ফসলগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধির হার আবার দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতায় ফিরে আসছে।

২০২৫ সালের বাকি সময়ে সয়াবিনের দাম কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের যে সয়াবিন সাধারণত চীনে রপ্তানি হয়, তা এবার কম দামে অন্য ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে হতে পারে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্রে হচ্ছে এই সয়াবিন। চীন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সয়াবিন কিনছে না। ফলে ২০২৬ ও ২০২৭ সালে এই পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্ববাজারে দাম কমে গেলে যুক্তরাষ্ট্রে সয়াবিন চাষের পরিমাণ কিছুটা কমতে পারে, তবে ব্রাজিল তার সয়াবিন আবাদ আরও বাড়ানোর পথে রয়েছে। পানীয় পণ্যের দাম ২০২৬ সালে ৭ শতাংশ ও ২০২৭ সালে প্রায় ৫ শতাংশ কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

এদিকে চলতি বছর সারের দাম সামগ্রিকভাবে ২১ শতাংশ বাড়তি। চাহিদা বৃদ্ধি, বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা ও কিছু অঞ্চলে সরবরাহ–ঘাটতির কারণে এ দাম বেড়ে যাওয়া। ২০২৬ ও ২০২৭ সালে দাম প্রায় ৫ শতাংশ কমতে পারে। তবু ২০১৫-১৯ সালের গড় দামের তুলনায় তা অনেক বেশি থাকবে। এর কারণ হলো উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, রপ্তানি সীমাবদ্ধতা ও চলমান আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা।

চীন ইতিমধ্যে নাইট্রোজেন ও ফসফেট সার রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। অন্যদিকে পটাশ সরবরাহকারী বড় দেশ বেলারুশ এখনো ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছে। রাশিয়া ও বেলারুশ—উভয় দেশই সারের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরোপিত নতুন শুল্কের সম্মুখীন।

দেশে কেন দাম বেশি

বিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশের বাজার দাম না কমার অন্যতম প্রধান কারণ ডলারের দামের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন। গত তিন বছরে ডলার দাম অনেকটা বেড়েছে। সেই সঙ্গে দেশের অনেক আমদানি পণ্যে শুল্ক বেশি বলে মনে করেন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজার ব্যবস্থাপনার কারণে দাম কমছে না। বাজারে চাহিদা কত বা কখন কোন পণ্য আমদানি করতে হবে, সে বিষয়ে যথাযথ তথ্যের ঘাটতি আছে। ফলে সময়মতো পণ্য আমদানি হয় না।

আরেকটি বিষয় হলো দেশে যেসব পণ্য আমদানি করা হয়, তার অনেক কিছু উৎপাদিতও হয়। কিন্তু বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় এসব পণ্যের সরবরাহে টান পড়েছে। বাজারের পণ্যমূল্যে তার প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন মোস্তাফিজুর রহমান।

তিন বছর আগে দেশে ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা। এখন তা বেড়ে ১২২ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েক মাস ধরে আমদানির ঋণপত্র খোলাও কমেছে। এতে আমসদানিতে চাপ পড়ছে।

দেশের বাজার উচ্চ মূল্যের কারণ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক সেলিম রায়হান বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি, কৃষি ও খাদ্যপণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। জ্বালানি ও পরিবহন ব্যয়, শুল্ক ও করের চাপ ও বাজার ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতার কারণে দাম কমছে না। পাইকারি থেকে খুচরা পর্যন্ত অতি মুনাফা ও অস্বচ্ছ বাণিজ্যিক শৃঙ্খলের কারণেও বাজারে কৃত্রিমভাবে উচ্চমূল্য বিরাজ করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে টাকার অবমূল্যায়ন। ফলে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে এবং আন্তর্জাতিক মূল্যহ্রাসের সুফল ভোক্তাপর্যায়ে পড়ছে না।

সেলিম রায়হান আরও বলেন, এ ছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার কারণ ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বিনিয়োগকারীরা নতুন ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। পণ্য পরিবহন ও আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সরবরাহ শৃঙ্খল দুর্বল হয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বাজারে পণ্যের ঘাটতি ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

দেশে তিন বছর ধরেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। সম্প্রতি তা কিছুটা কমলেও সেপ্টেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। গত আগস্ট মাসে এই হার ছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে
  • জ্বালানি খাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন
  • বাজারে আগাম সবজি আসতে দেরি, দাম চড়া
  • নির্বাচনের দিন অমোচনীয় কালি সরবরাহ না হলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে: ছাত্রদল
  • যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
  • টমাহক কত দূরে আঘাত হানতে পারে, রাডারে কেন ধরা পড়ে না
  • সামুদ্রিক মাছে ভরপুর আড়ত, দাম কেমন
  • ২০২৬ সালে বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের দাম আরও ৭% কমতে পারে, বাংলাদেশে কেন কমছে না
  • যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশে আতঙ্ক-উত্তেজনা, ট্রাম্প আসলে কী চান
  • ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিতে পেন্টাগনের সায়, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প